প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময় বিষয়টি ভাবিবার- ১১

সংখ্যা: ১১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান আইনমন্ত্রী সম্প্রতি দেশের বিচারকদের উদ্দেশ্য করিয়া বলিয়াছেন, বেশীর ভাগ জজ বিশেষতঃ নৈতিকতা ও মানবাধিকার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেনা। (দৈনিক ইত্তেফাক ৩১/১২/০২)

অর্থাৎ তিনি খোলামেলাভাবে জজ-ম্যাজিস্ট্রেট তথা বিচারকরা যে নীতিভ্রষ্ট হইয়াছেন সেই কথাই প্রতিধ্বনিত, করিয়াছেন। মূলতঃ এই কথা কথিত সুশীল সমাজকে আশাহত করিলেও ইহাতে বিস্মিত হইবার কিছু নাই। গণতন্ত্রের পীঠস্থান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও বিচারপতিরা, সততা ও নৈতিকতার প্রশ্নে অভিযুক্ত হইয়াছেন।

আর ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে ইহার কারণ বিশ্লেষণ অতি সহজ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইন প্রণেতা, প্রয়োগকারী, আইন নিষ্পত্তিকারী তথা ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, বিচারপতি মহোদয় সবাই বড়জোর গণতান্ত্রিক আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। তাহারা সবাই মানুষ। মানবীয় অনুভূতি, পর্যবেক্ষণশক্তি, গণতান্ত্রিক আইন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী।

কাজেই মানবীয় প্রবৃত্তি যখন মানবীয় অনুভূতির কাছে দায়বদ্ধ থাকে তখন সেইক্ষেত্রে জবাবদিহি মনোভাব কেবলই লোক দেখানো হয় অথবা মানবীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে হয়। অন্তরের আত্মিক অনুভূতি, খোদাতায়ালার কাছে জবাবদিহিসূচক মনোভাব তাহাকে পরিশীলিত করেনা, বিব্রত করেনা।  তাই গণতান্ত্রিক আইন কাঠামোতে কেবল বিচারকই নহে, খোদ আইন প্রবর্তন প্রক্রিয়াও নৈতিকতা বিবর্জিত হইতে পারে। এই বিষয়ে সমালোচনার বা উপলব্ধির জন্য উদাহরণ একটি দু’টি নহে বরং তাহা প্রতিনিয়তই, অহরহ, অগণিত অসংখ্য ধারায় ঘটিতেছে। যদিও তাহার ছদ্মাবরণে থাকিতেছে কল্যাণ ও প্রয়োজনের মুখোশ। ১৯৭৪ সালের যেই বিশেষ ক্ষমতা আইনকে সবাই কালো আইন বলিয়া মানে এবং ক্ষমতায় গেলে তাহা বাতিল করিবে বলিয়া অঙ্গীকার করে কিন্তু বাস্তবে ক্ষমতায় থাকিলে সেই আইনটিও সব সরকারই ব্যবহার করে।                   বর্তমান সরকারও তাহাই করিয়াছে। বর্তমান সরকার তাহার পূর্ববর্তী মেয়াদে আরো বিশেষ আইন তৈয়ার করিয়াছিলো। সন্ত্রাস দমন আইন প্রচলন করিয়াছিলো। অভিযোগ উঠিয়াছিলো, সন্ত্রাস দমনের নামে করা হইলেও এই আইন দিয়া বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়ন করা হইতেছে। কিন্তু তৎকালীন বিরোধীদল যখন ক্ষমতায় আসিলেন তখন ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারীতে তাহারাও জননিরাপত্তা নামক একটি নিজস্ব বিশেষ আইন রচনা করিলেন। আর তাহাদের নামেও অভিযোগ উঠিয়াছিল। ‘জননিরাপত্তা’ আইনটি ভারতের ইন্দিরাগান্ধী আমলের পাবলিক সেফটি বা সিকিউরিটি অ্যাক্টের আদলে প্রণয়ন করা হইয়াছে। ইন্দিরাগান্ধী দৃশ্যত বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সন্ত্রাস দমনের নামে ওই আইনটি প্রণয়ন করে, তবে আইনটির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমতের কারণে শেষ পর্যন্ত ইন্দিরাগান্ধী ওই আইন বাস্তবায়ন করা হইতে বিরত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিগত সরকার তাহাদের শাসনকালের শেষ দিকে আসিয়া ২০০০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে সন্ত্রাস দমনের নামে জননিরাপত্তা আইনটি পাস করে। সন্ত্রাস দমনের নামে আইনটি পাস হইলেও তৎকালে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন তথা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই এই আইনটির প্রয়োগ বেশী হইয়াছে বলিয়া পূর্ববৎ অভিযোগ উত্থাপিত হইয়াছিল। সরকার দলের উদ্দেশ্য ছিল এই আইনের মাধ্যমে হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ-মিছিল ইত্যাদি কর্মসূচীতে রাজপথ বিরোধী নেতা-কর্মীমুক্ত রাখা। অথচ বহুল সমালোচিত এই জননিরাপত্তা আইন সম্পর্কে ইহার প্রবর্তনকারীরা ভাষ্য দিয়া  “জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘœকারী কতিপয় গুরুতর অপরাধ যেমন- ছিনতাই, চাঁদাবাজী, গাড়ী ভাংচুর এবং সরকারী ও বেসরকারী সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, দরপত্র দাখিলে বাধা সৃষ্টি, অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায়, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা, অগ্নি সংযোগ ইত্যাদি অপরাধ দমনে দেশে বিদ্যমান দন্ডবিধি আইন যথেষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না থাকায় বিচার কার্যপরিচালনায় নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়। বর্ণিত পরিস্থিতিতে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে জনজীবনে শান্তি বিনষ্টকারী উপরোক্ত অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করিবার জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন সময়ের চাহিদা।

এমতাবস্থায়, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কতিপয় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে বিশেষ  বিধান সম্বলিত জননিরাপত্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ২০০০ প্রণীত হইলো।  কিন্তু জননিরাপত্তা আইন সম্পর্কে তৎকালীন সরকারী দলের এই ভাষ্যকে বর্তমান সরকারী দল অস্বীকার করিয়া আখ্যা দেয় জঘন্য কালো আইন হিসাবে।

কাজেই ইহার দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, একটি জঘন্য কালো আইনকেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারী দল কি ভালো শিরোনামে ও কল্যাণকর মুখোশে প্রবর্তন করিতে পারে।

অপরদিকে বর্তমান সরকারী দলের ভাষায় এই জঘন্য কালো আইন রদ করিবার জন্য অথবা বিরোধী দলের ভাষায়, জননিরাপত্তা আইনে আটক সকল দলীয় নেতা-কর্মীকে মুক্ত করিবার জন্য বর্তমান সরকার ক্ষমতা পাইয়া ২রা এপ্রিল/২০০২ ঈসায়ী সালে কথিত জননিরাপত্তা আইনকে বাতিল করেন।

কিন্তু তাহারা কেবল বাতিল করিয়াই বসিয়া রহিলেন না; অপরাধীদের দ্রুত বিচারের কথা বলিয়া দ্রুত বিচার আইন বলিয়া, নিজেরা আবারো নিজস্ব ভঙ্গিতে একটি নূতন আইন প্রণয়ন করিলেন।

দ্রুত বিচার আইন অধ্যাদেশ ও দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল প্রবর্তন হওয়ার বিবরণঃ (যে বিবরণ পাঠে বিবেচ্য যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কত সহজে, সংক্ষেপে, একতরফাভাবে, সমগ্র জনগণকে উপেক্ষা করিয়া দলীয় স্বার্থরক্ষার জন্য সাংসদ নামে কথিত মাত্র ১৮০ জনের দল সমগ্র জাতির জন্য একটা শক্ত, কঠিন, নির্মম আইন চাপাইয়া দিতে পারে)

৭ই এপ্রিল বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করেন। বিলটি পাসের পর সরকারী দলের ১৮০ জন এমপি টেবিল চাপড়াইয়া আইনটিকে অভিনন্দিত করেন।

২১শে এপ্রিল ২০০২ তারিখ হইতে বিলটি আইন হিসাবে কার্যকর হয়।

এরপর গত ১৪ই নভেম্বর সংসদের অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এরপর গত ১৮ই নভেম্বর জাতীয় সংসদে “দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল বিল-২০০২” আবারও উত্থাপিত হয়। সেইদিনও বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর প্রতিবাদ করেন। এরপর গত ২৪শে নভেম্বর ২০০২ তারিখে উক্ত বিলটি চূড়ান্তভাবে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়। দিনের কর্মসূচীতে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল বিল উত্থাপনের পর স্পীকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল অধ্যাদেশ অনুমোদন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের উপর আলোচনা শুরু করিলে বিরোধী দলীয় পক্ষে ৩৪ জন, নোটিশদাতার পক্ষে ৮ জন সদস্য আলোচনা করেন। তাহারা অধ্যাদেশ জারির বিরোধিতা ও বিলের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।   তাহারা বলেন, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল অধ্যাদেশ জারি একটি অসাংবিধানিক আইন। এই বিল দ্রুত বিচার আইন নহে। দ্রুত শাস্তি আইন। বর্তমান সরকার সব সময়ই সংসদকে পাশ কাটাইয়া অধ্যাদেশ জারি করিতে ভালবাসে। পক্ষান্তরে বর্তমান আইনমন্ত্রী অধ্যাদেশ ও বিলের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং পরে বিরোধীদলের “আইনটি সকল জনমত যাচাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী” এই প্রস্তাব সরকার দলীয় সদস্যদের কক্ত ভোটে নাকচ হইয়া যায় এবং একইভাবে কণ্ঠভোটে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল বিল পাসও হইয়া যায়।    উল্লেখ্য  একইভাবে বর্তমান সরকারী দল ৭৯ এর সংসদে ১৮টি আইন এবং ৯১ এর সংসদে ৬৮টি  অধ্যাদেশ ও ১৭৩টি আইন প্রণয়ন করিয়াছিলো।

  পাঠক! উপরোক্ত ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে এই দেশের জনগণ, চলমান ফৌজদারী আইন ছাড়াও “বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, জননিরাপত্তা আইন, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল” ইত্যাদি অধ্যাদেশ তথা বিশেষ আইন পাইয়াছে, তাহা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইয়াছে। এবং এই ক্ষেত্রে সব সময় ক্ষমতাসীন দল কোন আইন প্রণয়ন করিবার পাশাপাশি বিরোধী দল তাহার প্রতিবাদ করিলেও আবার সেই প্রতিবাদী বিরোধী দল ক্ষমতায় যাইয়া তাহাদের নিজস্ব বিশেষ আইন রচনার প্রেক্ষিত্রে তৎকালীন বিরোধী দল তাহার বিরোধীতা করিলেও; জনগণকে সব সরকারেরই সব স্বার্থবাদী আইন নির্বিবাদে মানিয়া লইতে হইয়াছে। অর্থাৎ জনগণ হইয়াছে কথিত গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষমতাসীন সরকারের আইন, অধ্যাদেশ ইত্যাদি প্রয়োগের গিনিপিগ মাত্র।

বলাবাহুল্য, গণতান্ত্রিক সরকারের এইরূপ স্বেচ্ছাচারী আইন প্রয়োগের প্রেক্ষিতে জনগণ- গিনিপিগ অপেক্ষা বেশী মর্যাদা পায় বলিয়া প্রতিভাত হয়না।

কিন্তু দেশের জনগণ যেন যমীনের মত প্রতিক্রিয়াবিহীন। যতই খোঁড়া-কাটা হউক তাহারা নির্বাক, নিস্পৃহ, নিস্তেজ। তাহাদের উপলব্ধির, অনুভূতির, চেতনার, প্রতিবাদের দ্বার যেন অবরুদ্ধ। ইহা যেন অবলা স্ত্রীলোককে জালিম স্বামীর জুলুমের সমর্থনে শ্বাশুড়ীর শিখাইয়া দেওয়া সে আপ্ত বাক্য- যতই জুলুম করা হউক, যে প্রকারের হউক, যত ভাবেই হউক সবই মুখ বুজিয়া সহ্য করিতে হইবে। স্বামী মানেই স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি। তাহার কথাই আইন।  ঠিক এই দেশের এই জনগোষ্ঠীকে উলামায়ে “ছূ”রা এইরূপই ধারণা দিয়া আসিতেছে। সংসদ, নির্বাচন, সংসদে আইন প্রবর্তন প্রক্রিয়া সবই মানিয়া লইতে হইবে। অধুনা বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন ব্যতীত কোন উপায় নাই।     অথচ খবর পাওয়া গিয়াছে, গত ৭ই জানুয়ারী/ ২০০৩ সরকারী হিসাবেই সারা দেশের কারাগারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বন্দীর সংখ্যা ছিলো ৪ হাজার ১৮০। আর এই আইনের একটি দিক হইতেছে যে, বিভিন্ন সরকারের আমলে এই আইনে দেওয়া আটকাদেশের সবগুলিই উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত হইয়াছে।

উদাহরণতঃ গত ৭ই জানুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সালে দেখা গিয়াছে, ১৯৮টি বিচার শুনানী শেষে সব কয়টিকেই অবৈধ ঘোষণা করা হইয়াছে।

কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিশেষত্ব এই যে, এই আইনে হাইকোর্টের নির্দেশ জেল হইতে মুক্তি দেওয়ার পরও পুনরায় জেলগেট হইতেই ফের ৩ মাসের জন্য বিনা অপরাধে আটক করা যায়।

গণতান্ত্রিক সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়ই কিরূপ স্বেচ্ছাচারী ও নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করিতে পারে ইহা তাহার একটি জ্বাজ্বল্য নমুনা বটে।

এইদিকে জননিরাপত্তা আইনে ৩২ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটক রাখিবার অভিযোগ উঠিয়াছে। আর দ্রুত বিচার আইনে গত ৭ মাসে ৫ হাজার ৬৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হইয়াছে।

অতএব, পাঠক! আপনারা উপলব্ধি করুন যে, গণতান্ত্রিক সংসদে আইন প্রক্রিয়ার পদ্ধতিটি কি জঘন্য, নির্মম, অমানবিক যদিও আইনটি কাহারো কাহারো মতে কালো আইন, দমন-পীড়নের আইন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের আইন, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের আইন হিসাবে বিবেচিত এবং এই ব্যাপারে তাহাদের যুক্তিও মূল্যায়ন করিবার মত। কিন্তু তাহারপরেও তাহাদের যুক্তি চরমভাবে উপেক্ষিত হয়, পানির তোড়ে ভাসিয়া যায় গণতান্ত্রিক সংসদে কথিত কক্তভোটের জোয়ারে।

আলোচ্য দ্রুত বিচার আইন এর ক্ষেত্রেও একই কথা। এই আইনের বিপক্ষে বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করিবার পরও তাহা সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদের খিলাফ বলিয়া উল্লেখ করিলেও তাহাদের সে মূল্যায়ন অক্কা পাইলো কথিত ১৮০ জন সাংসদের কক্তভোটের প্রেক্ষিতে।

মূলতঃ যৌক্তিকতা এবং ধার্মিকতা বাদ দিয়া শুধুমাত্র সংখ্যাধিক্য দিয়া এইভাবে নিষ্পত্তি করা প্রচলিত গণতন্ত্রের রীতি হইলেও তাহা প্রকৃত অর্থে কতটুকু সঙ্গীন তাহা আজকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই  উপলব্ধি অত্যন্ত জরুরী।  কথিত ক্ষমতাসীন সাংসদ তথা আইন প্রণয়নকারীরা প্রধান ক্ষমতাধরের ইচ্ছায় অনুপ্রাণিত হইয়া দলীয় স্বার্থ রক্ষার সুবিধার তাগিদে তাকাইয়া, অন্য কোন কিছু না বুঝিয়া একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণী কক্ষের ছাত্রদের মত শোরগোল করিয়া মাত্র ১৫০-৬০ জনের একটি ক্ষমতা লিঞ্ঝু দল টেবিল চাপড়াইলেন এবং অদ্ভূত শোরগোল তুলিয়া হ্যাঁ করিলেন তাহাতেই দেশের বাকী ১২ কোটি ৯২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৩ জন লোকের জন্য একটি আইন পাশ হইয়া গেল অথবা না করিলে না হইয়া গেল, ইহা কেবল পাগল আর মূর্খদের সাম্রাজ্যেই বোধ করি সম্ভব। সেই কথা আজকের নামধারী ইসলামী ব্যক্তিত্বরা না বুঝিলেও পাঁচ হাজার বছর পূর্বে প্লেটোর মত বিধর্মীর পক্ষেও বোঝা সম্ভব হইয়াছিল। যে কারণে সে বলিয়াছিল, “গণতন্ত্র হইল মূর্খদের সরকার।”

আর পবিত্র কুরআন শরীফে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত হইয়াছে, “তোমরা যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোককে সমর্থন কর তবে তোমরা গোমরাহ্ হয়ে যাবে।” এই আয়াত শরীফের আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদর্শকে বাদ দিয়া সংখ্যাধিক্যকে মূল্যায়ন করা ও গ্রহণ করা গোমরাহী ও জিহালতী।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে যাহারা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী তথা সক্রিয় নেতা বা কর্মী তাহাদের মাঝে আদৌ এমন কেহই নাই যাহারা একাদিক্রমে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, জননিরাপত্তা আইন, দ্রুত বিচার আইন, দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আইন সবগুলিরই সমর্থক। কেহ একটাতে সমর্থন করিলেও অপরটাতে বিশেষভাবে ভুক্তভোগী এবং সোচ্চার প্রতিবাদী।

আর সেইখানেই আমাদের কথা যে, কেবল কথিত আইনটি নহে, যে আইনী প্রক্রিয়াটা সম্পর্কেও ভাবা চাই। যে প্রক্রিয়ায় ১৬০ জনের কক্তের হ্যাঁ চিৎকারেই অধ্যাদেশ পাশ হইয়া যায় আর না চিৎকারে না হইয়া যায় অথচ সেই চিৎকারের আড়ালে যে প্রকৃত সত্য বিবেক চাপা পড়িয়া যায় দেশের বাকী ১২ কোটি ৯২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৩জনের জন্য আইন হইয়া যায়; তাহা কি করিয়া সুশীল সমাজ গ্রহণ করিতে পারে।

 অথচ গণতন্ত্রের যে তেমনি নিয়ম। কাজেই এখনই সময় আসিয়াছে এই গণতন্ত্র সম্পর্কে ভাবিবার।

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, বাসাবো, ঢাকা।

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৪

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ১০

একটি অভূতপূর্ব ওয়াজ শরীফ এবং কম্পিউটারে কুরআন শরীফ, মাজার শরীফের উপরে ভাসমান দৃশ্য ও তাঞ্জানিয়ার সেই ছেলের কথা

প্রসঙ্গঃ দরসে বুখারীর পঞ্চদশ বছর পূর্তি নামধারী জাহিরী আলিমদের ডামাডোলের বিপরীতে মুজাদ্দিদুয্ যামানের পরিচয়

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্বীন-ই-ইলাহীর আদলে দ্বীন-ই-জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-৫