মেষ চড়ানো সব নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও মেষ চড়িয়েছেন। একদিন মেষ চড়ানোর সময় একটি মেষ এলোমেলো চলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম তার প্রতি রূঢ় আচরণ করার পরিবর্তে উল্টো দয়া পরবশ হয়ে স্নেহভরে তাকে কোলে তুলে নেন। এবং এ দয়ার্দ্র ঘটনার উছীলায়ই হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম নুবুওওয়াত পেয়েছিলেন বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন।
কিন্তু মুহাক্কিক ও মুদাক্কিক আলিমগণ এ মর্মে একমত যে, নুবুওওয়াত কোন আমলের দ্বারা হাছিল করা যায়না। বরং নুবুওওয়াত সম্পূর্ণরূপেই কবুলিয়ত নির্ভর। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক যাদের কবুল করেছেন তাঁরাই কেবল নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এটা অর্জিত ইল্ম, আমল তথা রিয়াজত-মুশাক্কাতের বাইরে। এজন্য বলা হয়, “নবী- নবীই যদিও তিনি শিশু হয়ে থাকেন না কেন।”
প্রসঙ্গতঃ তাছাউফের ইমামগণও একটি কথা বলে থাকেন তা হলো যে, “সাধারণ তথা বেলায়েতে ছোগরা মোটামুটি তথা বেলায়েতে কোবরা পর্যন্ত মানুষ চেষ্টা, কোশেশ, সাধনা, প্রচেষ্টা তথা রিয়াজত, কোশেশ দ্বারা অর্জন করতে পারে। কিন্তু এর উঁচু স্তরে অর্থাৎ কামালতে নুবুওওয়াত তথা তারও ঊর্ধ্বে উঠা কেবল মহান আল্লাহ্ পাক-এর মনোনয়নের ব্যাপার।”
সে প্রসঙ্গে হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “এটা আল্লাহ্ পাক-এর ফযল-করম আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।”
মূলতঃ এ ফযল-করম তথা রহমত ব্যতীত কেউই সে মকবুল মাকাম হাছিল করতে পারেনা তথা ‘মুজাদ্দিদুয্ যামান’ হতে পারেনা এবং সে দায়িত্বও পালন করতে পারেনা। তার উদাহরণ প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্য করা যায়, মুজাদ্দিদুয্ যামান, গাউসুল আযম, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবনে ঘটিত মশহুর সেই ঘটনায়। যার দু’টি বর্ণনা রয়েছে।
একঃ- কয়েকদিন যাবৎ আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। হঠাৎ আকাশে এক ঝিলিক আলো দেখা গেলো। সেখান থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, “হে বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনার ইবাদত-বন্দেগীতে আমি সন্তুষ্ট। তাই আপনার জন্য সব হারামগুলোকে আমি হালাল করে দিলাম।”
গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি পড়লেন, ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্।’
দুইঃ- গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন রোযাদার ছিলেন। ইফতারীর সময় স্বর্ণের থালায়, রূপালী পেয়ালায় সাজানো মনোলোভা খাবার সুন্দরভাবে সাজিয়ে হাজির হলো ফেরেশ্তার পরিচয় দানকারী একজন। সে সুললিত কক্তে জানালো, “হে গাউসুল আ’যম, দাস্তগীর হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি! মহান আল্লাহ্ পাক আপনার জন্য এ ইফতারী পাঠিয়েছেন।”
জবাবে গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্।” সাথে সাথে দৃশ্যপট পরিবর্তন। সব খাবার হাওয়ায় উড়ে গেল। ছূফী বেশধারী লোক পালাতে লাগলো। কিন্তু একটু দূর হতে আওয়াজ ভেসে এলো, “হে গাউসুল আ’যম! আপনার ইল্ম আপনাকে রক্ষা করেছে।’ তিনি আবার বললেন, “লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্। আল্লাহ্ পাক-এর রহমত আমাকে রক্ষা করেছে।” হ্যাঁ, সত্যিই আল্লাহ্ পাক-এর রহমতই গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহিকে হারামকে হালাল জানা থেকে অথবা নেক ছূরতে স্বর্ণের থালায় খাওয়ার মত হারাম কাজ হতে রক্ষা করেছে এবং আল্লাহ্ পাক-এর রহমতই তাঁকে এত বড় ওলী আল্লাহ্ তথা ‘মুজাদ্দিদুয্ যামানে’ পরিণত করেছে।
কিন্তু এ কথাটিই উপলব্ধি করতে অক্ষম জাহিরী মাওলানারা। তারা শুধু ইলমের বড়াই করে। কিন্তু জাহিরীভাবে অর্জিত ইল্ম দিয়ে যে শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচা যায়না বরং এ ধোকায় পড়ে হাজার হাজার জাহিরী মাওলানা হারামকে হালাল করেছে তথা তাদের ঈমান খুইয়েছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ পাক-এর মকবুল ওলী আল্লাহ্ তথা মুজাদ্দিদুয্ যামানগণ যে আল্লাহ্ পাক-এর খাছ রহমত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শয়তানের যাবতীয় ধোকা হতে মাহ্ফুজ এবং তাদের উছীলায় মানুষের ঈমানও যে হিফাযত হয়, আলোচ্য ঘটনাটিই তার সাক্ষ্য বহন করে।
উল্লেখ্য, এ উদাহরণ কেবল সে যুগেই নয় বরং আবারো প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণ পাওয়া গেল বর্তমান পনের শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলার্দু রসূল, হাবীবুল্লাহ্ ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিপরীতে সমসাময়িক অন্য সব জাহিরী মাওলানাদের ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গতঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতীয়ে আ’যম লক্ববধারী ব্যক্তি, পটিয়া মাদ্রাসার মহা পরিচালক মাওলানা, চৌমুহনী ইসলামীয়া মাদ্রাসার মুহতামিম, সিলেট কাজীর বাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, দারুল উলূম খুলনার মুহতামিম, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসার কথিত বিশিষ্ট মাওলানা, বগুড়ার জামিল মাদ্রাসার মুহতামিম, ইমদাদুল উলূম মাদ্রাসার মুফতি, মাওলানা, গোপালগঞ্জের গাওহর ডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথা বেফাকুল মাদারিছ সভাপতি মাওলানা এবং সেই সাথে বি-বাড়িয়ার তথাকথিত বড় হুযূর মাওলানা, পটিয়ার শাইখুল হাদীস, ঢাকার লালবাগ শাহী মসজিদের খতীব, মাওলানা, এমনকি বায়তুল মোর্কারমের খতীব, এদের সম্মিলিত জামায়াত জাহিরী মাওলানাদের কাছে অনেক বড় কিছু। এরা যদি এক সাথে কোন কাজে নামে তবে জাহিরী গংদের অন্তরে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকেনা যে, এরা কোন ভুল করতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, এরা নবী নয় যে তাদের দ্বারা ভুল হতে পারে না। আর ভুলের স্বরূপ যে কি তাও অবর্ণিত নয়। কারণ এরা যেহেতু উম্মত অর্থাৎ আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধীন; সুতরাং তাঁর বিবৃত হাদীস শরীফের খিলাফ পথই ভুল পথ। আর সেক্ষেত্রে তারা যদি এসব হাদীস শরীফের খিলাফ ভুল পথে গিয়ে থাকে তবে তাকে ভুল বলেই গণ্য করতে হবে।
আর ‘ভুলকে ভুল’ না বলাটা হবে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা ইসলামের বিরোধীতা করা। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, “যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা। বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান/২০)
অন্যত্র ইরশাদ করেন, “তারা কি জাহিলীয়াতের হুকুম তালাশ করে? অথচ আল্লাহ্ পাক থেকে উত্তম হুকুমদাতা কে রয়েছে বিশ্ববাসীর জন্যে?” (সূরা মায়িদা/৫০)
এর ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর অনুসরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”
মূলতঃ এরূপ আরো অগণিত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফের বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ সাপেক্ষে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১২তম সংখ্যায় উপরোল্লিখিত জাহিরী মাওলানারা তথাকথিত শাইখুল হাদীসের দরসে বুখারীর পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গণসংবর্ধনার অনুষ্ঠান যে মূলতঃ ইহুদী-নাছারার অনুসরণ এবং তা সম্পূর্ণ হারাম সে বিষয়ে অভূতপূর্ব তাজদীদী ফতওয়া পেশ করা হয়েছে। আর এখানেই এ সত্য প্রকট হয়ে উঠে যে, তারা এত বড় বড় আলিম দাবী করার পরও তাদের ইল্ম তাদের হারাম কাজ করা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। এবং শুধু পঞ্চাশ বছর পূর্তি নয় তারা বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদ দাবী করা, নির্বাচন করা, গণতন্ত্র করা এরূপ আরো অনেক হারাম কাজ ইসলামের নামে নির্বিচারে করে যাচ্ছে। অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে ইবলিসের সেই বিখ্যাত উক্তি, “আমি এরূপ ধোকা দিয়ে হাজার হাজার আলিম, ছূফী লোককে হালাক্ব (ধ্বংস) করে দিয়েছি” পূর্ণ মাত্রায় প্রযোজ্য হচ্ছে।
এর একটি কারণ হচ্ছে, অল্প পানির মাছ লাফায় বেশী। এরা ব-ক্বদরে নেছাবের মাওলানা হয়ে নিজেদেরকে মনে করে অনেক কিছু। এবং এদের অন্ধ ভক্তরা মুহূর্মুহূ উচ্চারণ করে থাকে, “সুবহানাল্লাহ্! তারা ইলমের সাগর, তারা এত বয়োজেষ্ঠ্য আলিম।” মূলতঃ এখানেই এদের গলদ। এদের দৃষ্টি গায়রুল্লাহ্র দিকে। এরা মনে করে দু’চার ফোটা জাহিরী ইলম দিয়েই বিরাট কিছু হয়। ইল্মের প্রতিই এদের দৃষ্টি, আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের দিকে এদের দৃষ্টি নেই। আর থাকবেই বা কি করে? যেহেতু এরা আল্লাহ্ওয়ালা নয়। এরা যে নফ্সের রিয়াজত-মুশাক্কাত তথা আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত-মারিফাতের বিষয়ে সম্পৃক্ত নয়। আল্লাহ্ পাক-এর ইল্মের সিফতের নামেই এরা ঘুরপাক খায়। জাতের দিকে মোটেও ধাবিত নয়। মূলতঃ এরা আল্লাহ্ পাক-এর কাছে মকবুল নয়। এদের অনুভূতি ও আমল তাই প্রমাণ করে। পক্ষান্তরে এরা যখন শয়তানের ধোকায় সব হারামকে হালাল করে দিচ্ছে তখন একমাত্র পনের শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ্ ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী শয়তানের ধোকাকে চিহ্নিত করে দিচ্ছেন। শয়তানের প্রতারণাকে প্রকাশ করে দিচ্ছেন, ফুটিয়ে তুলছেন। যেহেতু তিনিও গাউসুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত আল্লাহ্ পাক-এর রহমতে, শুধু জাহিরী ইলমে বিশ্বাসী নন বরং তিনি আল্লাহ্ পাক-এর রহমতে ভরপুর। আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে বেমেছাল মকবুল। বর্তমান জামানার মুজাদ্দিদ। যা আল্লাহ্ পাক-এর ফযল-করম, আল্লাহ্ পাক যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
-মুহম্মদ ওয়ালীর্উ রহমান।