প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ৬১তম পর্ব

সংখ্যা: ২২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-উনার ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব উনার অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) ৩০. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯৫-২১৩তম সংখ্যা), ৩১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে “কুলাঙ্গার, পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ লা’নাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” (২০৩তম সংখ্যা) পেশ করা হয়েছে।

আর বর্তমানে ২৮তম ফতওয়াটি অর্থাৎ “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াটি” এখনো পত্রস্থ হচ্ছে। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলাম উনার নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” উনার মধ্যে এমনসব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে-

استحلال الـمعصية كفر.

অর্থাৎ “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী শরীফ)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “সূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نـمير فراى فى صفته تـماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”  উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থ: ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “সূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

 

প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল প্রমাণ

 

স্মর্তব্য যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শরাহ, পবিত্র ফিক্বাহ-ফতওয়া ও উনাদের ব্যাখ্যামূলক নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য সকল কিতাব উনাদের মধ্যে “প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন,  পুতুল ইত্যাদি তৈরি করা-করানো, তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয” বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে সেসকল কিতাবসমূহ থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পর্কিত দলীল প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

 

পবিত্র ফিক্বাহ, ফতওয়া ও উনাদের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহ থেকে প্রমাণিত যে, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি হারাম, কুফরী ও শিরকী কাজ

 

পবিত্র ফিক্বাহ-ফতওয়া ও উনাদের ব্যাখ্যামূলক নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য সকল গ্রন্থসমূহে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি প্রাণীর ছবি ইত্যাদি তৈরি করা, এদের পূজা করা এগুলোর ব্যবসা করা এবং যে কোন অবস্থায় এগুলোর অনুশীলন করাকে নিষেধ করা হয়েছে। এগুলো তৈরি করা হারাম, এগুলোর পূজা করা কুফরী শিরকী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদতের বিপরীতে গাইরুল্লাহর ইবাদত করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ!

নিম্নে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রাণীর ছবি নিষেধ সম্পর্কিত বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য পবিত্র ফিক্বা ও ফতওয়া উনাদের কিতাব থেকে ছহীহ সমাধান তুলে ধরা হলো-

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার ফিকাহ ও ফাতাওয়ার কিতাব থেকে দলীল

সম্মানিত ফিকাহ ও সম্মানিত ফাতাওয়া উনাদের কিতাব উনাদের থেকে প্রমাণিত যে- মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিমা, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর অনুশীলন করা হারাম, নাজায়িয, কুফরী ও র্শিকী কাজ।

আস-সিয়ারুল কবীর লিল্ ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

অত্র কিতাব মুবারকখানা লিখেছেন, হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন ফারকাদ শাইবানী কূফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বিলাদত মুবারক: ১৩২ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৮৯ হিজরী। উনি ছিলেন মাযহাব চতুষ্ঠয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব ‘হানাফী মাযহাব’ উনার মহান ইমাম, আল-মুজতাহিদুল্ মুতলাক, হাকিমুল হাদীছ,  ইমাম আ’যম, বিশিষ্ট তাবিয়ী, হযরত আবূ হানীফাহ নু’মান বিন ছাবিত বিন জাওতী কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান যাহিরী-বাতিনী ছাত্র। সুবহানাল্লাহ।

উক্ত কিতাবে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিমা, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর অনুশীলন সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে তা নিম্নে পেশ করা হলো-

(১০৩৩)

ولو وجدوا في الغنائم صليبا من ذهب او فضة او تماثيل، او دراهم، او دنانير فيها التماثيل، فانه ينبغى للامام ان يكسر ذلك كله فيجعله تبرا. لانه لو قسمه أو باعه كذلك، ربما يبيعه من يقع في سهمه من بعض المشركين بأن يزيدوا له من ثمنه رغبة منهم في لباسه، أو في أن يعبدوه. فليتحرز عن ذلك بكسر الصليب والتماثيل. (السير الكبير باب ما يحمل عليه الفئ وما يركبه الرجل من الدواب وما يجوز فعله بالغنائم في دار الحرب من القسمة وغير ذلك قال رضى الله عنه المؤلف : الامام ابو عبد الله محمد بن الحسن بن فرقد الشيباني الحنفى رحمة الله عليه سنة الولادة ۱۳۲- سنة الوفاة ۱۸۹(

অর্থ: সোনা, রুপা, রৌপ্য মুদ্রা অথবা স্বর্ণ মুদ্রার তৈরী খ্রিষ্টানদের ক্রুশ যাতে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি বিদ্যমান এমন সম্পদ যদি যুদ্ধলব্ধ গনীমত হিসেবে পাওয়া যায়, তাহলে ইমাম বা খলীফা উনার জন্য ওয়াজিব হবে উক্ত গনীমতের মাল থেকে সমস্ত ক্রুশ, মূর্তি ও প্রাণীর ছবির আকৃতি নিশ্চিহ্ন করে‎ দিয়ে মালগুলোকে পবিত্র করা। যদি সেগুলোকে পূর্ব অবস্থায় (মূর্তি, প্রাণীর ছবি ও ক্রুশ আকৃতি অবস্থায়) মুজাহিদগণের মধ্যে বন্টন করা হয় অথবা কারো কাছে বিক্রয় করা হয়, তাহলে কতক মুশরিক এগুলোকে ক্রয় করে নিয়ে উৎসাহের সাথে তাদের মালপত্রে ও পোশাকে তা বেশী পরিমানে ব্যবহার করা শুরু করে দিবে অথবা এগুলোর উপাসনা করবে। ফলে ক্রুশ ও মূর্তি-প্রাণীর ছবি নিশ্চিহ্ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

(আস-সিয়ারুল কবীর লিশ্ শাইবানী পরিচ্ছেদ: মা ইয়াহমিলু আলাইহিল্ ফাই ওয়া মা ইয়ারকাবুহুর রজুলু মিনাদ্ দাওয়াব্ব ওয়া মা ইয়াজূযু ফি’লুহূ বিল্ গানায়িম ফী দারিল র্হাব মিনাল ক্বিসমাহ ওয়া গইরু যালিক ক্বালা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু লেখক: হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন ফারকাদ শাইবানী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম মুবারক: ১৩২ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৮৯ হিজরী)

আল-মাবসূত লিল্ ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

অত্র কিতাব মুবারক খানা লিখেছেন, হযরত ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন ফারকাদ শাইবানী কূফী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বিলাদত মুবারক: ১৩২ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৮৯ হিজরী। উনি ছিলেন মাযহাব চতুষ্ঠয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব ‘হানাফী মাযহাব’ উনার মহান ইমাম, আল-মুজতাহিদুল্ মুতলাক, হাকিমুল হাদীছ,  ইমাম আ’যম, বিশিষ্ট তাবিয়ী, হযরত আবূ হানীফাহ নু’মান বিন ছাবিত বিন জাওতী কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান যাহিরী-বাতিনী ছাত্র। সুবহানাল্লাহ।

উক্ত কিতাবে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিমা, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর অনুশীলন সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে তা নি¤েœ পেশ করা হলো-

(১০৩৪)

قلت أرأيت رجلا صلى في بيت وفي القبلة تماثيل مصورة وقد قطع رؤسها قال لا يضره ذلك شيئا لأن هذه ليست بتماثيل. (المبسوط للشيبانى فصل: فيمن صلى فاقعى من غير عذر المؤلف : الامام ابو عبد الله محمد بن الحسن بن فرقد الشيباني الحنفى رحمة الله عليه سنة الولادة ۱۳۲/ سنة الوفاة ۱۸۹)

অর্থ: (হযরত আবূ সুলাইমান জূযাজানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি (হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে) জিজ্ঞাসা করলাম: আপনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি ফাতাওয়া দেন- যে ব্যক্তি কোনো ঘরে নামায আদায় করতেছে, আর তার ক্বিবলার দিকে মাথাকাটা প্রাণীর ছবি বা মূর্তি বিদ্যমান। হযরত ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি জাওয়াবে বলেন, এতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা, মাথা কাটার কারণে এটা প্রাণীর ছবি বা মূর্তির অন্তর্ভুক্ত থাকে না। (যদি মাথা কাটার পর ছবি বা মূর্তির আকৃতি বুঝা না যায় বা গাছের আকৃতির মত বুঝা যায় আর মাথা কাটার পর যদি প্রাণী বা মূর্তি বুঝা যায় তাহলে সেখানে নামায পড়া যাবে না।) অর্থাৎ মাথা কাটা না থাকলে এমন ঘরে নামায আদায় করা ক্ষতির কারণ তথা হারাম-নাজায়িয হবে। (আল-মাবসূত লিশ্ শাইবানী অনুচ্ছেদ: ফী মান ছল্লা ফাআক্য়া মিন্ গাইরি উয্র লেখক: হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন ফারকাদ শাইবানী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম মুবারক: ১৩২ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৮৯ হিজরী)

(১০৩৫)

قلت أرأيت الستر الذي يكون فيه التماثيل أتكره أن يكون في قبلة المسجد قال نعم. (المبسوط للشيبانى فصل: فيمن صلى فاقعى من غير عذر المؤلف : الامام ابو عبد الله محمد بن الحسن بن فرقد الشيباني الحنفى رحمة الله عليه سنة الولادة ۱۳۲/ سنة الوفاة ۱۸۹)

অর্থ: (হযরত আবূ সুলাইমান জূযাজানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি (হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বিন হাসান শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে) জিজ্ঞাসা করলাম: যে প্রাণীর ছবি সম্বলিত পর্দা নামাযের স্থানের সামনে থাকে, এমতাবস্থায় সেখানে নামায পড়া কি মাকরূহ তাহরীমী হবে? জাওয়াবে ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হ্যাঁ, মাকরূহ তাহরীমী হবে। (আল-মাবসূত লিশ্ শাইবানী অনুচ্ছেদ: ফী মান ছল্লা ফাআক্য়া মিন্ গাইরি উয্র লেখক: হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন ফারকাদ শাইবানী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্ম মুবারক: ১৩২ হিজরী, ওফাত মুবারক: ১৮৯ হিজরী)

আল-মাবসূত লিস্ সারাখ্সী শরহুল কাফী লিল্ হাকিম শহীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি

অত্র ‘আল-মাবসূত লিস্ সারাখ্সী শরহুল কাফী লিল্ হাকিম শহীদ’ ব্যাখ্যামূলক কিতাব খানা লিখেছেন, আল-ইমামুল আজাল, আয-যাহিদ, হযরত ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ সাহাল শামসুল্ আইম্মাহ সারাখ্সী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত: ৪৮৩ হিজরী। উনি ছিলেন মাযহাব চতুষ্ঠয়ের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ‘হানাফী মাযহাব’ উনার মুক্বাল্লিদ মুজতাহিদ এবং ‘ত্ববাক্বাতুল ফুক্বাহা রহমাতুল্লাহি আলাইহিম’ উনাদের মধ্যে তৃতীয় ত্ববক্বা অর্থাৎ ‘ত্ববাক্বাতুল মুজতাহিদীন ফিল্ মাসায়িল’ উনার অন্তর্ভুক্ত। অত্র কিতাবখানার মতন বা মূল কিতাব হলো ‘আল-কাফী লিল হাকিম শহীদ’, যা লিখেছেন হযরত ইমাম হাকিম শহীদ হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত মুবারক: ৩৪৪ হিজরী। উনার ‘আল-মুন্তাক্বা লিল্ হাকিম শহীদ’ নামেও হানাফী মাযহাবের একখানা মৌলিক কিতাব আছে। সুবহানাল্লাহ।

উক্ত কিতাবে মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিমা, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর অনুশীলন সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে তা নিম্নে পেশ করা হলো-

(১০৩৬)

قَالَ : ( وَلَا بَأْسَ بِالصَّلَاةِ فِي بَيْتٍ فِي قِبْلَتِهِ تَمَاثِيلُ مَقْطُوعَةُ الرَّأْسِ ) لِأَنَّ التِّمْثَالَ تِمْثَالٌ بِرَأْسِهِ فَبِقَطْعِ الرَّأْسِ يَخْرُجُ مِنْ أَنْ يَكُونَ تِمْثَالًا، بَيَانُهُ فِيمَا رُوِيَ { أَنَّ النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُهْدِيَ إلَيْهِ ثَوْبٌ عَلَيْهِ تِمْثَالُ طَائِرٍ فَأَصْبَحُوا وَقَدْ مَحَا وَجْهَهُ} وَرُوِيَ {أَنَّ جِبْرِيلَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ اسْتَأْذَنَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَذِنَ لَهُ فَقَالَ كَيْف أَدْخُلُ وَفِي الْبَيْتِ قِرَامٌ فِيهِ تِمْثَالُ خُيُولِ رِجَالٍ، فَإِمَّا أَنْ تَقْطَعَ رُءُوسَهَا أَوْ تُتَّخَذُ وَسَائِدَ فَتُوطَأُ }، وَلِأَنَّ بَعْدَ قَطْعِ الرَّأْسِ صَارَ بِمَنْزِلَةِ تَمَاثِيلِ الشَّجَرِ وَذَلِكَ غَيْرُ مَكْرُوهٍ إنَّمَا الْمَكْرُوهُ تِمْثَالُ ذِي الرُّوحِ، هَكَذَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا أَنَّهُ نَهَى مُصَوِّرًا عَنْ التَّصْوِيرِ فَقَالَ : كَيْفَ أَصْنَعُ وَهُوَ كَسْبِي قَالَ : إنْ لَمْ يَكُنْ بُدٌّ فَعَلَيْكَ بِتِمْثَالِ الْأَشْجَارِ، وَإِنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ مَنْ صَوَّرَ تِمْثَالَ ذِي الرُّوحِ كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيهِ الرُّوحَ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ مَقْطُوعَةَ الرَّأْسِ كَرِهْتُهَا فِي الْقِبْلَةِ؛ لِأَنَّ فِيهِ تَشْبِيهًا بِمَنْ يَعْبُدُ الصُّوَرَ، وَلَكِنَّ هَذَا إذَا كَانَ كَبِيرًا يَبْدُو لِلنَّاظِرِينَ مِنْ بَعِيدٍ، فَإِنْ كَانَ صَغِيرًا فَلَا بَأْسَ؛ لِأَنَّ مَنْ يَعْبُدُ الصُّورَةَ لَا يَعْبُدُ الصَّغِيرَ مِنْهَا جِدًّا، وَقَدْ كَانَ عَلَى خَاتَمِ أَبِي مُوسَى ذُبَابَتَانِ، وَلَمَّا وُجِدَ خَاتَمُ دَانْيَالَ صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِ كَانَ عَلَى فَصِّهِ أَسَدَانِ بَيْنَهُمَا رَجُلٌ يَلْحَسَانِهِ كَأَنَّهُ كَانَ يَحْكِي بِهَذَا الِابْتِدَاءِ، أَوْ لِأَنَّ التِّمْثَالَ فِي شَرِيعَةِ مَنْ قَبْلِنَا كَانَ حَلَالًا، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: {يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِنْ مَحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ}. (الـمبسوط للسرخسى شرح الكافى للحاكم الشهيد المؤلف: الامام الاجل الزاهد حضرت امام ابو بكر محمد بن احمد بن ابى سهل شمس الائمة السرخسى الحنفى رحمة الله عليه المتوفى ۴۸۳ هجرى كتاب الصلوة باب صلت المرأة و ربع ساقها مكشوف اعادت الصلوة(

অর্থ: আল-ইমামুল আজাল, আয-যাহিদ, হযরত ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ সাহাল শামসুল্ আইম্মাহ সারাখসী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: (হযরত ইমাম হাকিম শহীদ হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ঘরে ক্বিবলার দিকে মাথা কাটা প্রাণীর ছবি বা আকৃতি থাকলে এমন ঘরে নামায পড়তে অসুবিধা নেই)। (যদি মাথা কাটার পর ছবি বা মূর্তির আকৃতি বুঝা না যায় বা গাছের আকৃতির মত বুঝা যায়) কেননা প্রাণীর ছবি তখনই প্রাণীর ছবি হিসেবে বিবেচিত যখন তা মাথাসহ থাকে। পূর্ণ মাথা কাটার কারণে তা প্রাণীর ছবির হুকুম থেকে বের হয়ে যায়। যেমনটি বর্ণিত আছে যে, {একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনি একটি কাপড় হাদিয়া পেলেন যাতে পাখির ছবি ছিলো, তাই তিনি ঐ কাপড় থেকে পাখির মাথাটি কেটে দিলেন}। আরো বর্ণিত রয়েছে যে, {একদা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি উনাকে অনুমতি দিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি কিভাবে প্রবেশ করি অথচ ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি আছে। যদি তার মাথা কাটা হয় অথবা ছবি কেটে বাকী অংশ দিয়ে বালিশ বানানো হয় তাহলে প্রবেশ করা সম্ভব}। কেননা প্রাণীর ছবির মাথা কাটার পর তা গাছের আকৃতির মতো হয়ে যায়। যা মাকরূহ নয়। কিন্তু প্রাণীর ছবির আকৃতি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। অনুরূপ বর্ণিত আছে যে, “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক অংকনকারীকে প্রাণীর ছবি মূর্তি ভাস্কর্য ইত্যাদী তৈরী করতে নিষেধ করলেন। লোকটি বললেন, আমি একাজ কিভাবে ছাড়তে পারি, অথচ এটা আমার উপার্জনের পথ। জবাবে তাকে বলা হলো, তোমার যদি ছবি অঙ্কন করতেই হয় তাহলে গাছ-পালার ছবি আঁকতে পারো।” হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি মূর্তি ভাস্কর্য ইত্যাদী তৈরী করে ক্বিয়ামতের দিন তাতে প্রাণ দেয়ার জন্য উক্ত ব্যক্তিকে চাপ দেয়া হবে, কিন্তু সে তাতে প্রাণ দিতে পরবে না।” যদি মাথা কাটা না হয় তাহলে নামাযের ক্বিবলার দিকে রাখা মাকরূহ তাহরীমী হবে। কেননা, এতে মূর্তি পূজার মতোই পূজা করা হয়, যখন ছবিটি দূর থেকে চোখে দেখার মতো বড় হয়। আর যদি ছবিটি ছোট হওয়ার কারণে কাছে ও দূর থেকে কিছুই অনুভব না হয়, তাহলে তাতে মাকরূহ হবে না। কেননা, যারা মূর্তিপূজক তারা বুঝা যায় না এমন মূর্তির পূজা করে না। আবূ মূসা-র আংটিতে দুটি মাছির আকৃতি ছিল। হযরত দানইয়াল আলাইহিস সালাম উনার আংটিতে দেখা গেল দুটি সিংহের মাঝখানে একজন ব্যক্তি যে বিচার ফায়সালা করছে। আমাদের পূর্ব শরীয়াতে তো এগুলো হালাল ছিলো। কিন্তু আমাদের শরীয়াতে এগুলোর চর্চা করা হারাম। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, {তারা (জিনরা) হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ইচ্ছানুযায়ী মাসজিদ ও প্রতিকৃতি (যা পূজার জন্য ছিল না) নির্মাণ করতো। পবিত্র সূরাহ সাবা: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২-১৩}। (আল-মাবসূত লিস্ সারাখ্সী শরহুল কাফী লিল্ হাকিম শহীদ লেখক: আল-ইমামুল আজাল, আয-যাহিদ, হযরত ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ সাহাল শামসুল্ আইম্মাহ সারাখসী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওফাত: ৪৮৩ হিজরী কিতাবুছ ছলাহ বাবু ছল্লাতিল মারয়াতু ওয়া রুবুয়ু সাক্বিহা মাকশূফুন আয়াদাতিছ ছলাহ)

(১০৩৭)

فَلَا يَجُوزُ اتِّخَاذُ شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ وَلَا بَيْعُهُ. (الـمبسوط للسرخسى شرح الكافى للحاكم الشهيد المؤلف: الامام الاجل الزاهد حضرت امام ابو بكر محمد بن احمد بن ابى سهل شمس الائمة السرخسى الحنفى رحمة الله عليه الـمتوفى ۴۸۳ هجرى كتاب الاكراه)

অর্থ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরী করা বা চর্চা করা এবং এগুলোর ব্যবসা করা নাজায়িয। (আল-মাবসূত লিস্ সারাখ্সী শরহুল কাফী লিল্ হাকিম শহীদ লেখক: আল-ইমামুল আজাল, আয-যাহিদ, হযরত ইমাম আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবূ সাহাল শামসুল্ আইম্মাহ সারাখসী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওফাত: ৪৮৩ হিজরী কিতাবুল ইকরাহ)

১. মূর্তি পূজা করা, প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, দেখা ইত্যাদী অনুশীলন করার অর্থই হলো মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে শরীক করা।

২. মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন, পুতুল, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর পূজা করা, সম্মান করা, দেখা, ঘরে রাখা, দেখতে সাহায্য করা, এগুলো বিস্তারকারী যন্ত্র ঘরে রাখা, এগুলোর চর্চা করা ইত্যাদী সবই হারাম কুফ্রী র্শিক ও বড় ধরনের নাফরমানী। এগুলোর অনুশীলনকারী ব্যক্তি জাহান্নামী। ক্বিয়ামতের দিন এদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।

৩. মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন, পুতুল, প্রাণীর ছবি ইত্যাদীর অনুশীলন করা হারাম, কুফ্রী ও র্শিক। এগুলোকে সম্মান দেখানোর অর্থ হলো মহান আল্লাহ তায়ালা উনার পরিবর্তে অন্য ইলাহ বা উপাস্যকে গ্রহণ করা। নাঊযু বিল্লাহ।

৪. কুফ্রী, র্শিকী ও যত বড় গুনাহই হোক না কেন, যদি বান্দা তার থেকে খাছ তাওবাহ করে ঈমান ও আমলে ছালেহ উনাদের দিকে ফিরে আসে, তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাদের জীবনের সকল গুনাহ-খতা ক্ষমা করে দিয়ে নিস্পাপ করে দেন এবং নেককার বান্দাহ-বান্দী হিসেবে কবূল করে নেন। সুবহানাল্লাহ।

এ জন্য সকল মু’মিন-মুসলমান ইনসান-জিন পুরুষ-মহিলা সকলের দায়িত্ব কর্তব্য হলো এই যে, উল্লেখিত ও যাবতীয় হারাম, কুফ্র, র্শিক ও নাফরমানীমূলক কাজ থেকে ফিরে এসে খাছ তাওবাহ করে ঈমান ও আমলে ছালেহ উনাদের দিকে ধাবিত হওয়া। আর মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দী মুবারক অর্জন করা। মহান আল্লাহ তায়ালা রব্বুল আলামীন তিনি সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

অসমাপ্ত

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬