বিশ্ব সমাদৃত হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনুপম মুবারক চরিতগ্রন্থ: আখবারুল আখইয়ার-১৬৪

সংখ্যা: ২০৫তম সংখ্যা |

হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি

পূর্ব প্রকাশিতের পর

একদিন ছূফীয়ানে কিরাম এবং উলামায়ে কিরাম উনাদের ইখতিলাফ সম্পর্কীয় আলোচনা শুরু হলো- তখন তিনি বললেন যে, ছূফীয়ানে কিরাম এবং আলিমগণ উনাদের মাঝে শুধুমাত্র এই বিষয় ছাড়া অন্য কোনো ইখতিলাফ বা মতভেদ হয় না যে- তাহলো ছূফীয়ানে কিরামগণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার জাতে পাক উনার মধ্যে ফানা হয়ে নিজের অস্তিত্বের ব্যাপারেও বেখবর হয়ে থাকেন।

****

এরপরে কিছু লোক প্রশ্ন করলেন যে, এ বিষয়টি প্রসিদ্ধ হয়েছে যে, ইলম হচ্ছে হিজাবে আকবর বা বড় পর্দা- কথাটির অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উলিল আমর উনারা এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত যত কিছু আছে তা সবই হিজাব, আর যত হিজাব আছে তা সবই ক্ববীহ কাছীফ বা খুব খারাপ। যত হিজাব রয়েছে সব উঠিয়ে দেয়া বা দূরে নিক্ষেপ করা খুব উত্তম এবং খুবই জরুরী। মূলত ইলম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উছূলে ফিক্বাহ, উছূলে হাদীছ। (অর্থাৎ ইলমে তাছাওওফ ব্যতিত ইলমে ফিকাহ) এর দ্বারা মূল ইলমে শরীয়াহ উদ্দেশ্য নয়। বরং প্রকৃত ইলম বলতে এখানে ইলম দ্বারা ওই সকল ইলম উদ্দেশ্য যে ইলম মহান আল্লাহ পাক উনার জাতে পাক ও মুবারক ছিফতের সাথে সংশ্লিষ্ট। কেননা এমন ইলম কোনো দলীলের মুখাপেক্ষী নয় বরং উক্ত ইলম অর্জনের জন্য রিয়াযত মাশাক্কাত বা মুশাহিদা আবশ্যক।

****

এক পর্যায়ে তিনি লিখলেন যে, মুসলমানদের মধ্যে দুটি জিনিস খুব দ্রুত ও ব্যাপকভাবে বিদয়াত কাজ জারি করে। এক হচ্ছে কলন্দরী ছূরত এবং দ্বিতীয় হচ্ছে যে ব্যক্তি তাওহীদের কালিমাকে নিজের জানের চেয়েও বেশি প্রিয় মনে করেন উনাদেরকে কষ্ট দেয়া, উনাদের বদনাম করা, ওই সকল লোকদের আল আওলাদ পরিবার-পরিজন তাদেরকে কয়েদখানায় আবদ্ধ রাখে এবং উনার ছেলে সন্তানদেরকে লাঞ্ছিত করে। ওই সকল কষ্ট দেনেওয়ালা বদলোকগুলো আবার নিজেদেরকে মুসলমান বলেও দাবি করে। যেটা ইসলামের দৃষ্টিতে আশ্চর্য বিষয়।

****

একবার কোনো এক লোক প্রশ্ন করলেন لا هو الا هو এ বাক্যাংশের অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার হাক্বীক্বত উনার জাতে পাক থেকে অধিক নন। বরং উনার হাক্বীক্বতই উনার মূল সত্তা। লাতায়িফে কুশাইরী-এর লিখক বলেছেন, সমস্ত কায়িনাতই দায়িমীভাবে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার ওজুদ পাক উনার সাক্ষ্য দিচ্ছে- এর তাৎপর্য এটাও হতে পারে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জাতে পাক ছিফত মুবারকসহ তামাম আলমেই (সর্বত্র) কার্যকর।

 

****

ছূফীয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, কারো অন্তরে যদি কোনো হারাম জিনিসের খাহেশ বাকী থাকে তাহলে তার তওবা কবুল হয় না। তখন তার উচিত খালিছ দিলে অধিক পরিমাণে তওবা করা। কারণ হক্ব তালাশির জন্য সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে আল্লাহ পাক উনাকে হাছিলের ইচ্ছা ছাড়া তার অন্তরে অন্য কোনো খাহেশ উদ্ভব না হওয়া। সুতরাং খালিছ তওবা দ্বারা তার সমস্ত খাহেশাত দূর হয়ে যাবে। যদিও সকল জ্ঞানীগণ উনারা ওই ব্যক্তির জন্য খালিছ তওবার মাক্বাম হাছিল করা অসম্ভব বলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং ছূফীয়ানে কিরামগণ উনারা ওই ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক রাখাও বর্জন করেন। কেননা মানবীয় স্বভাব শরীয়তের আহকাম পালনের জন্য মানুষকে চিন্তিত করে রাখে। তবে ওই ব্যক্তির অন্তরে গায়রুল্লাহর কারণে যে সকল বিপদ মুছীবত কষ্ট ক্লেশ প্রবেশ করে সেজন্য সে মানুষের কথা (সমালোচনা) শোনা থেকে কখনো বিরত হয় না। (অসমাপ্ত)

মূল: হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহ্লবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ভাষান্তর: মাওলানা মুহম্মদ ফযলুল হক