মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে- মহাম্মানিত ও মহাপবিত্র খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২৩)

সংখ্যা: ২৮৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৫তম ফতওয়া হিসেবে

মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ অর্থাৎ মহাসম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ।

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে যারা কুফরী করে তাদের ফায়ছালা

 

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুসলমান নামধারী যারা কুফরী করে তারা মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। আর মুরতাদের ফায়ছালা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ يَّـرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَـيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓـئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُـهُمْ فِى الدُّنْـيَا وَالْاٰخِرَةِ ۖ وَاُولٰٓـئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

অর্থ : “তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে যাবে অর্থাৎ মুরতাদ হবে এবং মুরতাদ বা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী। তাতে তারা অনন্তকাল সেখানে অবস্থান করবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৭)

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও মশহূর ‘তাতারখানিয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে-

اَجْمَعَ اَصْحَابـُـنَا عَلٰى اَنَّ الرِّدَّةَ تُـبْطِلُ عِصْمَةَ النِّكَاحِ وَاتَّـقَعَ الْفُرْقَةُ بَـيْـنَـهُمَا بِنَـفْسِ الرِّدَّةِ

অর্থ : “আমাদের ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ উনাদের সর্বসম্মত মত এই যে, মুরতাদ হলে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং আহাল (স্বামী) আহলিয়া (স্ত্রী) হতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।” অর্থাৎ তার আহলিয়া (স্ত্রী) তালাক হয়ে যায়, বিবাহ বাতিল হয়ে যায়।

নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবে উল্লেখ আছে-

مَا يَكُوْنُ كُفْرًا اِتِّفَاقًا يُـبْطَلُ الْعَمَلُ وَالنِّكَاحُ وَاَوْلَادُهٗ اَوْلَادُ الزِّنَا وَمَا فِيْهِ خِلَافٌ يُـؤْمَرُ بِالْاِسْتِغْفَارِ وَالتَّـوْبَةِ وَتَـجْدِيْدِ النِّكَاحِ

অর্থ : “সর্বসম্মত মতে যদি কেউ মুরতাদ বা কাফির হয়ে থাকে, তবে তার নিকাহ বা বিবাহ ও আমলসমূহ বাতিল হবে। ওই অবস্থায় সন্তান সন্ততি জন্মগ্রহণ করলে (সে সন্তান) অবৈধ হবে। যদি কারো মুরতাদ বা কাফির হওয়া সম্পর্কে মতভেদ থাকে, তবুও তার কর্তব্য যে, তওবা-ইস্তিগফার করতঃ নিকাহ বা বিবাহ দোহরিয়ে নেয়া।”

‘মিয়াতে মাসায়িল’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-

مَنْ سَـمِعَ الْغِنَاءَ مِنَ الْـمُغَنِّـىْ وَاَمِنَ غَيْـرَ الْـمُغَنِّـىْ اَوْ يَـرٰى شَيْاً مِّنَ الْـحَرَامِ فَـيَحْسُنُ ذَالِكَ بِاِعْتِقَادٍ اَوْ غَيْرِ اِعْتِقَادٍ يَصِيْـرُ مُرْتَدًّا فِي الْـحَالِ بِنَاءً عَلٰى اَنَّهٗ اَبْطَلَ حُكْمَ الشَّرِيْـعَةِ وَمَنْ اَبْطَلَ حُكْمَ الشَّرِيْـعَةِ لَا يَكُوْنُ مُؤْمِنًا عِنْدَ كُلِّ مُـجْتَهِدٍ وَلَا يَـقْبَلُ اللهُ طَاعَتَهٗ وَاَحْبَطَ كُلَّ حَسَنَاتِهٖ وَبَانَتْ مِنْهُ اِمْرَاَتُهٗ فَاِنْ تَابَ لَا يـَجِبُ الْقَتْلُ وَاِلَّا يُضْرَبُ عُنْـقُهٗ

অর্থ : “যদি কোনো ব্যক্তি গায়ক কিংবা গায়িকা অথবা অন্য কোনো লোকের গান শ্রবণ করাকে হালাল মনে করে, কিংবা কোনো হারাম কাজ দেখে ভাল মনে করে, সেটা বিশ্বাস সহকারে হোক বা অবিশ্বাসে হোক, সে ব্যক্তি মুরতাদ হবে। যেহেতু সে সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম বাতিল করলো। যে ব্যক্তি সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম বাতিল করে অর্থাৎ হারামকে হালাল জানে কিংবা হালালকে হারাম জানে সকল মুজতাহিদ উনাদের মতানুসারে সে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মু’মিন থাকবে না এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ইবাদত কবুল করবেন না। তার যাবতীয় নেক কাজ বিনষ্ট হবে এবং তার আহলিয়া (স্ত্রী) তালাক হবে। এরূপ অবস্থায় যদি তওবা করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ক্ষমা চায়, তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া সম্মানিত শরীয়তে ওয়াজিব নয়। অন্যথায় তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। (যদি ইসলামী খিলাফত বা আইন জারী থাকে তবে খলীফা তা বাস্তবায়ন করবেন)”

কেননা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ بَدَّلَ دِيْـنَهٗ فَاقْـتُـلُوْهُ

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে গেছে বা দ্বীন হতে ফিরে গেছে তাকে মৃত্যুদণ্ড দাও।” (নাসায়ী শরীফ)

‘ফতওয়ায়ে আনকারোবিয়াতে’ উল্লেখ আছে-

حُكْمُ الرِّدَّةِ الـخ اِلٰـى قَـوْلِهٖ وَبَيِّنُـوْا لَهٗ اِمْرِيٌّ اٰتَهٗ مُطَلَّقًا وَبُطْلَانَ وَقَّـفَهٗ مُطْلَقًا وَاِذَا مَاتَ اَوْ قُتِلَ عَلٰى رِدَّتِهٖ لَـمْ يُدْفَنْ مَقَابِرَ اَهْلِ الْـمِلَّةِ وَاِنَّـمَا يُـلْقٰي فِيْ حَفِيْـرَةٍ كَالْكَلْبِ

অর্থাৎ, “সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো, মুরতাদ হয়ে গেলে তার আহলিয়া (স্ত্রী) তালাকে বায়িন প্রাপ্ত হবে এবং মুরতাদ ব্যক্তি ওয়াকফ করে থাকলে তা বাতিল হবে। মুরতাদ অবস্থায় মারা গেলে বা নিহত হলে মু’মিনদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।”

বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব ‘কাজীখানে’ উল্লেখ আছে-

وَاِذَا اِرْتَدَّ يُعْرَضُ عَلَيْهِ الْاِسْلَامُ فِي الْـحَالِ فَاِنْ اَسْلَمَ وَاِلَّا قُتِلَ اِلَّا اَنْ يَّطْلُبَ التَّاْجِيْلَ فَـيُـوَجَّلُ ثَلَاثَةَ اَيَّامٍ لِيَـنْظُرُوْ فِيْ اَمْرِهٖ وَلَا يُـوَجَّلُ اَكْثَـرَ مِنْ ذَالِكَ وَيُـعْرَضُ عَلَيْهِ الْاِسْلَامُ كُلَّ يَـوْمٍ مِنْ اَيَّامِ التَّاْجِيْلِ فَاِنْ اَسْلَمَ يُسْقَطُ عِنْدَ الْقَتْلِ وَاِنْ اَبٰـي اَنْ يُّسْلِمَ يُـقْتَلُ

অর্থাৎ, “কোন লোক মুরতাদ হওয়া মাত্রই তাকে (তওবা করে) মুসলমান হতে হবে। যদি এতে সে মুসলমান হয় তবে তো কোনো কথাই নেই। অন্যথায় সম্মানিত শরীয়তে তার প্রতি প্রাণদণ্ডের আদেশ (যদি সে ব্যক্তি সময় বা অবকাশ প্রার্থনা করে তবে খলীফা তাকে বিবেচনা করার জন্য মাত্র তিন দিন সময় দিবেন, এর অধিক সময় দেয়া যাবে না) এ অবকাশের প্রতিদিন তাকে মুসলমান হতে অর্থাৎ তওবা করতে বলতে হবে। যদি সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল করে বা তওবা করে তবে সম্মানিত শরীয়ত মতে তার প্রতি প্রাণদণ্ডের আদেশ হবে না। আর যদি এ সময়ের মধ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল না করে বা তওবা না করে তখন তার মৃত্যুদণ্ড হবে। (প্রকাশ থাকে যে, মৃত্যুদণ্ডের আদেশ, ইহা ইসলামী খিলাফতে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান যা বাস্তবায়ন করা খলীফা উনার অধীন।)”

কাজেই, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুরতাদের ফায়সালা হলো, সে ঈমানহারা হবে। তার বিগত জীবনের সমস্ত নেকী বাতিল হবে। বিয়ে করে থাকলে বিয়ে বাতিল হবে, হজ্জ করলে হজ্জ বাতিল হবে, সে মারা গেলে তার জানাযা পড়া জায়িয হবে না। তাকে মুসলমানের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। তাকে কুকুর, শৃগালের মত মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। ৩ দিনের মধ্যে তওবা না করলে তার একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, যদি সম্মানিত ইসলামী খিলাফত থাকে অর্থাৎ খলীফা তিনিই সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবেন।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত যে সকল ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছেন তা সম্মানিত ইসলামী খিলাফতে সম্পূর্ণই সম্মানিত খলীফা উনারা অধীন। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। কেননা এতে সমাজে ফিৎনা বা সন্ত্রাস সৃষ্টি হবে। অথচ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্ত্রাস বা ফিৎনা সম্পূর্ণরূপেই হারাম।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تُـفْسِدُوْا فِي الْأَرْضِ

অর্থ: তোমরা যমীনে ফিৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করো না। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল আ’রাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

والْفِتْـنَةُ اَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ

অর্থ: ফিৎনা-ফাসাদ হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالْفِتْـنَةُ اَكْبَـرُ مِنَ الْقَتْلِ

অর্থ: ফিৎনা-ফাসাদ হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১৮)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ يَّـقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَـعَمِّدًا فَجَزَآؤُهٗ جَهَنَّمُ

অর্থ: যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো সে জাহান্নামী। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৩)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র  হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

سِبَابُ الْمُسْلِمِ فِسْقٌ وَقِتَالُهٗ كُفْرٌ

অর্থ: কোনো মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী কাজ। আর শহীদ করা কুফরী কাজ।

এ কারণেই সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণরূপে হারাম। সন্ত্রাসীরা সম্মানিত ইসলাম উনার দুশমন, মুসলমান উনাদের দুশমন, দেশের দুশমন, স্বাধীনতার দুশমন। এদেরকে প্রতিহত করা সরকার ও  জনগণ সকলের জন্যই ফরয।

উপসংহার

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে খাছ সুন্নতী পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাহলো-

১.         মহান আল্লাহ পাক তিনি মানবজাতির থেকেই মানবজাতির জন্য জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ বংশ বিস্তারের জন্য পুরুষ ও মহিলার মধ্যে নিকাহ বা বিবাহের বিধান দিয়েছেন।

২.         নিকাহ বা বিবাহ পুরুষ ও মহিলার চরিত্র ও ইজ্জত আবরু হিফাযতের একটি অন্যতম মাধ্যম।

৩.         আমভাবে নিকাহ বা বিবাহ করা হচ্ছে খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

৪.         যাদের নিকাহ বা বিবাহ করার সামর্থ আছে এবং চরিত্র নষ্ট হওয়ারও ভয় আছে তাদের জন্য নিকাহ বা বিবাহ করা ফরয।

৫.         যাদের নিকাহ বা বিবাহ করার সামর্থ নেই অর্থাৎ আহলিয়া বা স্ত্রীর হক্ব আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিবাহ করা হারাম। তাকে বেশি বেশি রোযা রাখতে হবে।

৬.         সম্মানিত শরীয়ত নিকাহ বা বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার জন্য বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়নি। অর্থাৎ যেকোনো বয়সের পুরুষ ও মহিলার মধ্যে নিকাহ বা বিবাহ জায়িয।

৭.         মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়স্কা পুরুষ ও মহিলার বিবাহকে অর্থাৎ পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক উনাকে বৈধতা দান করেছেন।

৮.         অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক করেছেন। অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আছ্ ছালিছাহ্ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে পবিত্র আক্বদ মুবারক করেছেন আর ৯ বছর বয়স মুবারকে পবিত্র হুজরা শরীফে এনেছেন।

৯.         হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক করেছেন, করিয়েছেন এবং সমর্থন করেছেন।

১০.       হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনেকেই পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক করেছেন ও করিয়েছেন।

১১.       পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক জায়িয বা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুজতাহিদ উনাদের মাঝে ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক সম্মানিত শরীয়ত উনার তৃতীয় দলীল ‘পবিত্র ইজমা শরীফ’ দ্বারাও জায়িয প্রমাণিত।

১২.       পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক বিরোধী আইন করার, উক্ত আইন সমর্থন করার, বাস্তবায়ন করার, প্রচার প্রসার করার, পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক বন্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব ও মহাবূব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ও হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরই বিরোধিতা করা, উনাদের বিরুদ্ধে আইন করা। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!! নাঊযুবিল্লাহ!! যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

১৩.      বাল্যবিবাহ বিরোধী বাতিল ফিরক্বার লোকেরা খাছ সুন্নতী বাল্যবিবাহের বিরোধীতা করতে গিয়ে যেসকল বক্তব্য ও দলীল পেশ করে থাকে সে সকল বক্তব্য বা দলীলসমূহের খণ্ডনমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের প্রতিটি বক্তব্যই ভুল,  মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, অপব্যাখ্যামূলক ও দলীলবিহীন। যা মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। বরং সম্পূর্ণরুপে পরিত্যাজ্য।

অতএব, প্রশাসনসহ যারাই খাছ সুন্নতী পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক বিরোধী আইন বা কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে, হয় তাদের বাল্য বিবাহ বিরোধী আইন ও কার্যক্রমের স্বপক্ষে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে দলীল পেশ করা। নতুবা খালিছভাবে তওবা ইস্তিগফার করতঃ অবিলম্বে উক্ত কুফরী আইন প্রত্যাহার করে নেয়া, পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক বিরোধী সর্বপ্রকার কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা এবং যারা পবিত্র বাল্য বিবাহ মুবারক উনার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে, সরকারের উচিত তাদেরকে গ্রেফতার করে পবিত্র শরীয়ত অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। নচেৎ তাদেরকে ইহকালে ও পরকালে অর্থাৎ উভয়কালেই কঠিন কাফফারা আদায় করতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা ব্যক্তি স্বার্থ হাছিলের জন্য এ ফতওয়া বা কিতাব প্রকাশ ও প্রচার করা হয়নি। মুসলমান উনাদের ঈমান-আমল হিফাযত ও ইহকাল ও পরকালে নাজাতের জন্যই এ উদ্যোগ। কেননা প্রেসিডেন্ট হোক, প্রধানমন্ত্রী হোক, প্রধান বিচারক হোক, এম.পি হোক আর সাধারণ মুসলমান হোক সবাইকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে, কবরে যেতে হবে, হাশরের ময়দানে উঠতে হবে। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সামনে দাঁড়াতে হবে। তাই বিষয়টি ফিকির করে সকলকেই খালিছ তওবা ইস্তিগফার করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে প্রতি ক্ষেত্রে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ মুতাবিক আক্বীদা পোষণ করার ও আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।  (সমাপ্ত)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১