মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ ও মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭৪

সংখ্যা: ২৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”- পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে  অনুসরণীয় ইমামগণের মন্তব্য

পূর্ব প্রকাশিতের পর

মানুষ যত বেশী গুণের অধিকারী হয় তার সমালোচক ও হিংসুকের সংখ্যাও ততো বেশী হয়। এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনিভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু ইমাম আযম তাই স্বভাবতই হিংসুকদের পক্ষ থেকে উনার উপর অভিযোগ ও সমালোচনার তীর অধিক বর্ষিত হয়েছে। সেই ধারা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে এতে এই মহান ইমাম উনার মর্যাদা কমেনি, বরং নিন্দুকেরাই শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখাত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

কারণ যে কোন সমালোচনা যদি গৃহীত হতো তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ মহান ইমামগণও অবাঞ্চিত হয়ে যেতেন।  কারণ উনাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উনারাও সমালোচনা থেকে মুক্ত নন। তাই বলে আমরা কি ওইসব সমালোচকদের সমালোচনা মেনে নিয়েছি? উনাদের মাযহাব থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছি? তাহলে কেন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমালোচকদের সমালোচনায় কান দেব? উনার রেখে যাওয়া মাযহাব থেকে বঞ্চিত হব?

এই কথাটি শাফিয়ী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম আল্লামা সুবুকী রমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলে গেছেন, আমরা যদি এই পথ খুলে দিই এবং সর্বপ্রকার অভিযোগকেই গুণের ওপর প্রাধান্য দেই তাহলে আমাদের কোনো ইমামই মুক্ত থাকবেন না। কারণ প্রত্যেক ইমামের ব্যাপারেই সমালোচকরা সমালোচনা করেছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্তরা ধ্বংস হয়েছে। (কায়িদাতুন ফিল জারাহ ওয়াত তাদীল পৃষ্ঠা ১৩)

হাফিয ইবনে আব্দুল বার মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ত্রুটি-বিচ্যুতি নকল করার ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, ততটা অন্য কারো ক্ষেত্রে করা হয়নি। কারণ উনার ইমাম আ’যম হওয়া। তাছাড়া তিনি হিংসার শিকার হয়েছেন এবং উনার ব্যাপারে এমন কিছু মিথ্যা রটনা করা হয়েছে যেগুলো সমীচিন নয়। তাছাড়া আলিমদের এক বিশাল জামায়াত উনার প্রশংসা করেছেন। উনার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! (জামিউ বায়ানিল ইলমী-২/১৪৮)

হাফেয ইবনে আব্দুল বার মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, “ইমাম আবুল আসওয়াদ আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন-

حسدوا الفتى إذا لم ينالوا سعيه * فالاناس اعداء له و خصومهم

অর্থ: হিংসুকরা যখন যুবকের (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার) চেষ্টা ও সাধনা দ্বারা প্রাপ্ত মর্যাদার আসন ছুঁতে পারেনি তখন তারা উনার বিরুদ্ধে হিংসায় মেতে উঠেছে। মূলত লোকগুলো উনার শত্রু ও বিদ্বেষী। (জামিউ বয়ানিল ইলমী  ২/২৬২)

হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে জারাহকারীদের জারাহ (শাস্ত্রীয় সমালোচনা) গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমন কেউ কেউ এ বলে জারাহ করে যে, তিনি আরবী কম জানতেন । আবার কেউ এ বলে জারাহ করে যে, তিনি ক্বিয়াস বেশি করতেন। সত্যিকার অর্থে এগুলো এমন বিষয় যেগুলোর মাধ্যমে কোনো রাবীকে জারাহ করা যায় না। (আছহাবুহুল মুহাদ্দিসীন- পৃষ্ঠা ৩২)

আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সমালোচকরা কখনো বলে যে, তিনি ফিকহ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পাঠক লক্ষ্য করুন! তারা যা বলছে তাতে খারাপের কী আছে? বরং ফকীহ থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রহণ করাই তো উত্তম। (আর রফউত তাকমীল- পৃষ্ঠা ৭০)

ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুকাল্লিদগণের ওপর আশ্চর্য হই যে, তারা কীভাবে এমন ইমাম উনার সমালোচনায় মুখর হয়, যার সঙ্গে স্বয়ং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আদব বজায় রাখতেন। এটাতো নিরেট আপন মাযহাবের  সমালোচনার শামিল। (কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা- পৃষ্ঠা ১০)

ইমাম আব্দুল ওহহাব শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহ উনাদের মুকাল্লিদগণ যদি ইনসাফ করতেন তাহলে তাদের কেউ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো উক্তিকে জঈফ বলে সাব্যস্ত করতেন না। কারন উনারা জানেন যে, খোদ উনাদের ইমামই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রশংসা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, কুতুবে সিত্তাহ যা আমাদের সমাজে সিহাহ সিত্তাহ নামে প্রসিদ্ধ। এই ছয়  কিতাবের রাবীদের জীবনীর ওপর বড় বড় কিতাব রচিত হয়েছে। নিচে এ সম্পর্কিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলো।

১. তাহযীবুল কামাল (২২ খণ্ড)

৩. ইকমালু তাহযীবুল কামাল (অসম্পূর্ণ ১২ খণ্ড)

৪. তাহযীবুত তাহযীব (১০ খণ্ড)

৫. তাকরীবুত তাহযীব (সংক্ষিপ্ত ২ খণ্ড)

৬. আল কাশেফ (সংক্ষিপ্ত ২ খণ্ড)

এসব গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য হলো-এসব গ্রন্থে একজন রাবী সম্পর্কে ভালোমন্দ সবধরণের মন্তব্যই উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু খুশির বিষয় হল এসব গ্রন্থের গ্রন্থকার সকলে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে নিন্দাবাচক একটা শব্দও নিজ কিতাবে স্থান দেননি। শুধু তাই নয়, বরং ইমাম মিয্যী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনীতে কোনো প্রকার বিরূপ মন্তব্য উল্লেখ করলেন না, তখন এই কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠলেন ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি স্বীয় গ্রন্থ তাহযীবু তাহযীবিল কামাল-এ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী উল্লেখ করে বলেন, আমার শায়েখ আবুল হাজ্জার মিয্যী রহমতুল্লাহি আলাইহি (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনীতে) কোনো প্রকার বিরূপ মন্তব্য উল্লেখ না করে অতি উত্তম কাজই করেছেন।

এমনিভাবে শায়খুল ইসলাম ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাহযীবুত তাহযীব গ্রন্থে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শুধু প্রশংসা উল্লেখ করে বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুণাবলী অনেক। মহান আল্লাহ পাক উনার ওপর সন্তুষ্ট হোন এবং জান্নাতুল ফেরদাউসে উনার স্থান করে দিন। আমীন।

উনারা ছাড়াও আরো অনেক হাফেযে হাদীছ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে শুধু উনার গুণাবলী উল্লেখ করে ক্ষান্ত হয়েছেন, নিন্দাসূচক একটি বাক্যও উল্লেখ করেননি। নিম্নে এমন কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হল-

১. ইবনুল আছীর জাযারী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল কামেল ফিত তারীখ-এর মধ্যে ।

২. ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদায়া নিহায়া-এর মধ্যে ।

৩. হাফেজ সামআনী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল আনসাব-এর মধ্যে ।

৪. হাফেজ মুহিউদ্দীন নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত-এর মধ্যে

৫. খতীবে তিবরীযী রহমতুল্লাহি আলাইহি আসমাউর রিজাল-এর মধ্যে ।

৬. হাফেযে হাদীস ইবনে আল্লান শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘আল ফুতুহাতুর রব্বানিয়্যাহ আলাল আযকারিন নবাবিয়্যাহ’-এর মধ্যে ।

৭. শায়েখ আব্দুল ওয়াহ্হাব শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মীযানুল কুবরা-এর মধ্যে। (মাকানাতুল ইমাম: পৃষ্ঠা- ৮৭)

এসব আলোচনা দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে নিন্দুকের নিন্দা, বিরূপ মন্তব্যকারীদের কোনোপ্রকার মন্তব্য গ্রহনযোগ্য নয়। কেননা উনার সম্পর্কে কোনো নিন্দা যদি গ্রহণযোগ্য হতো তাহলে অবশ্যই এসকল হাফিযে হাদীছ নিজ নিজ গ্রন্থে তা উল্লেখ করতেন।  যেহেতু উনারা নিজ নিজ গ্রন্থে শুধু উনার গুণাবলী উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। কোনোপ্রকার নিন্দার ধার ধারেননি; তাই আমরা শতভাগ আস্থার সঙ্গে বলতে পারি, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্পর্কে কৃত সব অসার মন্তব্য থেকে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!

শাফেয়ী আলেম হযরত শায়েখ আব্দুল ওয়াহ্হাব শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল মীযানুল কুবরা গ্রন্থে এই ঘটনা বর্ণনা করেন। হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুকাতিল ইবনে হায়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত হাম্মাদ ইবনে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মিলে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন-আপনি নাকি ক্বিয়াসকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর প্রাধান্য দেন?

উত্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি তো শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ নয়, আছারে ছাহাবাকে পর্যন্ত কিয়াসের ওপর প্রাধান্য দিই। এভাবে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সামনে স্বীয় অনেক চিন্তাধারা ও মূলনীতিসমূহ তুলে ধরেন। অবশেষে উনারা একথা বলে বিদায় গ্রহণ করেন যে, আপনি হলেন আলেমকুল শিরোমণি। আপনার সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান না থাকায় অতীতে যে ভুল ধারণার শিকার ছিলাম? সে সম্পর্কে আমাদেরকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সুবহানাল্লাহ!

হাফেয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় ইতিহাসগ্রন্থ (বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১০/১১১)-এর মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারক এভাবে শুরু করেছেন- ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইরাক অঞ্চলের ফকীহ, মুজতাহিদ, দ্বীন ইসলাম উনার শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীদের একজন। জ্ঞানের একটি স্তম্ভ, ওই চার ইমাম উনাদের একজন যাঁদের মাযহাব অনুসৃত।

আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ বিশারদ ইমাম ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফতওয়ার ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুনা হযত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতামত গ্রহণ করতেন। আর ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেই বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে মিথ্যা বলা সম্ভব নয়। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, মাসায়িলের ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতামতের  চেয়ে উত্তম কোনো মতামত আমি দেখিনি। আমি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উনার মতামত অনুসরণ করি। সুবহানাল্লাহ!

নামধারী আহলে হাদীছ ও সালাফীরা কি ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ কাত্তান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হাদীছ ও রিজালশাস্ত্রবিদ ইমামের চেয়েও ঊর্ধ্বে চলে গেছে, যে কারণে তারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুসরণকে আপত্তিকর মনে করে? নাউযুবিল্লাহ!

আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যদি মহান আল্লাহ পাক আমাকে ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত ব্যক্তিদ্বয়ের সাহচার্য লাভের সুযোগ না দিতেন তাহলে আমি অন্য দশটা সাধারণ মানুষের মতই থেকে যেতাম। সুবহানাল্লাহ! (বিদায়া ওয়ান নিহায়া-১০/১১১)

হাফেয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, ইমাম ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ ফিকাহ অর্জন করতে চাইলে সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি মুখাপেক্ষী। তাই ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কনিষ্ঠ ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে ফিকাহ অর্জন করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (বিদায়া ওয়ান নেহায়া-১০/১১১)

আল্লামা ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, হযরত সুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সময়ে দুনিয়ার বড় ফকীহ অর্থাৎ মুজতাহিদ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (বিদায়া ওয়ান নিহায়া-১০/১১১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের দুই নক্ষত্র ইমাম সুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মন্তব্য দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সময়ের সবচেয়ে বড় মুজতাহিদ ছিলেন।

ইমাম আব্দুল্লাহ বিন ফররুখ মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র হওয়ারও সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। উনার জীবনীতে মালেকী ইমামগণ একটি ঘটনা উল্লেখ করেন।

ইমাম আব্দুল্লাহ বিন ফররুখ মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ছিলাম। ইতিমধ্যে হঠাৎ উনার ঘরের ছাদ থেকে একটা ইট খসে আমার মাথায় পড়ে। এতে মাথা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তুমি চাইলে এই যখমের ক্ষতিপূরণ নিতে পারো, আবার চাইলে এর পরিবর্তে ৩০০ পবিত্র হাদীছ শরীফও শুনতে পারো। কোনটা গ্রহণ করবে বলা? আমি বললাম, পবিত্র হাদীছ শরীফ শোনাই আমার জন্য উপকারী, তাই আমাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ শোনান। তিনি তৎক্ষণাৎ আমাকে তিনশত পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তারতীবুল মাদারিক: পৃষ্ঠা ১/৩৪৪)

ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে অধিক পারদর্শী আর কাউকে দেখিনি। আর তিনি ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে আমার চেয়ে অনেক বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। (খইরাতুল হিসান পৃষ্ঠা ৩৯, আল ইনতিকা পৃষ্ঠা ২৫৭)

অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬