মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ ও মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৬৫

সংখ্যা: ২৮৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রƒপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-

عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَهٗ وَتَـوْفِيْـقَهٗ فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّهٗ وَسَخْطَهٗ وَمَقْتَهٗ فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبِ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّـوْنَ وَالْـمَالِكِيُّـوْنَ وَالشَّـفِعِيُّـوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّـوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَـهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি।

১। হানাফী ২। মালিকী

৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-

 

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমঝ

ও বিচক্ষণতা

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সব সমস্যার সমাধানদাতা। যত কঠিন ও জটিল মাসয়ালা-মাসায়িল হউক না কেন তিনি তার অতি সহজভাবে সমাধান দিতেন। উনার সমঝ ও বিচক্ষণতা যতদূর অগ্রসর হতো, সমসাময়িক ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের পক্ষে তার নাগাল পাওয়া সম্ভব ছিল না। নিম্নোক্ত কয়েকটি ঘটনা থেকে তার সত্যতা প্রমাণিত হয়-

১। জনৈক ব্যক্তি তার দুই ছেলের বিয়ের আয়োজন করলো একই দিনে। ঘটনাক্রমে ধুমধামের মধ্যে কনে পরিবর্তন হয়ে গেল। একের স্ত্রী অন্যের কাছে চলে গেল। স্বামী স্ত্রীর পূর্ব পরিচয় ছিল না। তাই উভয়ের রাতযাপন সম্পন্ন হলো। সকালে বাস্তব অবস্থা জানার পর শুরু হলো কানাকানি। আনন্দ পরিণত হলো বিষাদে। অনেক ইমাম-মুজতাহিদ ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উপস্থিত হয়েছিলেন অলিমায়। হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফতওয়া দিলেন, “প্রত্যেক স্ত্রী ‘ওয়াতী বিশ শুবা’ তথা সন্দেজনক নির্জনবাসের কারণে ইদ্দত পালন করবে এবং স্বামী থেকে পৃথক থাকবে। ইদ্দত শেষে গমন করবে আসল স্বামীর কাছে।” এ ফতওয়া যদিও সম্মানিত শরীয়তসম্মত; কিন্তু এ ফতওয়ার ফলে ধুলায় মিশে যায় বর-কণে উভয়ের বিয়ের আনন্দ। অতঃপর ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উভয় বরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, যেই কনের সাথে তুমি রাত যাপন করেছ সে কি তোমার পছন্দ হয়েছে? প্রত্যেকে বলল, আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও। তারা তালাক দিয়ে দিল। যেহেতু প্রকৃত স্বামীর সাথে স্ত্রীদের খালওয়াতে ছহীহা বা সঠিক অভিসার হয়নি, তাই ইদ্দতের কোনো প্রয়োজন নেই।

হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তখনই প্রত্যেকের তালাকপ্রাপ্তা আহলিয়াকে অন্যের কাছে বিবাহ দিয়ে দিলেন এবং বললেন যাও সুখে থাক। এভাবে নির্বিঘেœ সমস্যার সমাধানও হয়ে গেল এবং তাদের আনন্দও ব্যহত হলো না বিন্দুমাত্র। হযরত ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ ফতওয়া শুনে বিস্মিত হলেন এবং ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কপাল মুবারকে বুছা দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের)

২। কিছু লোক বসে আছে একটি গৃহে। হঠাৎ উপর থেকে একটি সাপ পড়ে গেল। যার উপর সাপটি পড়ে, সে তা ছুড়ে মারে দ্বিতীয় ব্যক্তির উপর। দ্বিতীয় ব্যক্তি তৃতীয় ব্যক্তির উপর। তৃতীয় ব্যক্তি চতুর্থ ব্যক্তির উপর। চতুর্থ ব্যক্তি পঞ্চম ব্যক্তির উপর। পঞ্চম ষষ্ঠের উপর। ষষ্ঠ ব্যক্তির কাছে গিয়ে সাপটি তাকে দংশন করে। ফলে সে মারা যায়। এখন তার দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) কে বহন করবে? এ নিয়ে দেখা দেয় সঙ্কট। হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে। একেকজন একেক রকম জাওয়াব দেন। অতঃপর হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, দ্বিতীয় ব্যক্তির উপর নিক্ষেপ করার পর যেহেতু সাপ তাকে দংশন করেনি, তাই প্রথম ব্যক্তি দিয়াতের দায়ভার থেকে মুক্ত। এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তিও মুক্ত। কেননা তাদের নিক্ষেপের কারণে কোন ক্ষতি সৃষ্টি হয়নি বা কেউ মারা যায়নি। যখন পঞ্চম ব্যক্তি ষষ্ট ব্যক্তিকে নিক্ষেপ করলো, তখন যদি নিক্ষেপের সাথে সাথেই তাকে দংশন করে আর তাতে সে মারা যায়, তাহলে দিয়াত আরোপিত হবে পঞ্চম ব্যক্তির উপর। আর যদি নিক্ষেপ ও দংশনের মাঝে বিরতি হয়, তাহলে পঞ্চম ব্যক্তিও দায়মুক্ত থাকবে। কেননা তখন ষষ্ঠ ব্যক্তি নিজেই এর জন্য দায়ী। কেননা, সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। সুবহানাল্লাহ!

৩। আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক সময় নিজের সম্মানিত শায়েখ হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুমতি ব্যতিরেকেই শুরু করে দেন তা’লীম-তরবিয়ত। অথচ মুহাক্কিক পর্যায়ে পৌঁছতে উনার আরো কিছুদিন শায়েখ উনার ছোহবত বা সান্নিধ্যে থাকার প্রয়োজন ছিলো। ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্যে এক ব্যক্তিকে কয়েকটি মাসায়ালা ভালোভাবে বুঝিয়ে উনার কাছে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি এ মাসয়ালাগুলোর সমাধান উনার নিকট জিজ্ঞাসা করো। লোকটি এসে এক একটি করে জিজ্ঞাসা করলো, যার বিবরণ নিম্নরূপ:

ক. এক ধোপা কাপড় গ্রহণের পর অস্বীকার করে বলে তোমার কোনো কাপড় আমার কাছে নেই। কিন্তু পরে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় সৃষ্টি হয় তার অন্তরে। তাই ধৌত কাপড় ফেরত দেয়। এখন উক্ত ধোপা পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে কিনা? হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, অধিকারী হবে। লোকটি বলল, ভুল হয়েছে। তিনি আবার বললেন, অধিকারী হবে না। লোকটি বলল, তাও ভুল। অতঃপর সে নিজেই ব্যাখ্যা করে বলল, যদি কাপড় অস্বীকারের পূর্বেই ধুয়ে থাকে, পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে। আর যদি পরে ধৌত করে, তাহলে পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে না।

খ. লোকটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলো, নামাযে প্রবেশ করা হয় ফরযের মাধ্যমে না পবিত্র সুন্নত উনার মাধ্যমে? তিনি বললেন, ফরযের মাধ্যমে। লোকটি বলল, ভুল হয়েছে। তিনি আবার বললেন, পবিত্র সুন্নত উনার মাধ্যমে। সে বলল, তাও ভুল। অতঃপর সে নিজেই সঠিক কথা ব্যক্ত করে বলল, উভয়টির মাধ্যমেই মানুষ নামাযে প্রবেশ করে। কেননা তাকবীরে তাহরীমা ফরয এবং রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত।

গ. তৃতীয় মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করলো, চুলার উপর ডেগ রয়েছে। তাতে গোশত ও শুরা। উপর থেকে একটি পাখি এতে পড়ে মরে যায়। এমতাবস্থায় ডেগের তরকারি খাওয়া জায়িয হবে কিনা? তিনি বললেন, খাওয়া জায়িয হবে। সে বলল, ভুল হয়েছে। তিনি বললেন, জায়িয হবে না। সে বলল, তাও ভুল। অতঃপর লোকটি নিজেই প্রকৃত মাসয়ালা ব্যাখ্যা করে বলল, যদি পূর্বেই তরকারি রান্না করা পাতিলের মধ্যে শুরা টগবগ না করে, তাহলে শুরা ফেলে দিয়ে গোশতগুলো ধুয়ে আবার রান্না করা হবে। আর যদি তরকারি রান্না হয়ে থাকে, তাহলে গোশত ও শুরা উভয়টি ফেলে দেয়া হবে।

ঘ. চতুর্থ মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করলো, এক মুসলমানের ইহুদী স্ত্রী মারা যায়। তার পেটে রয়েছে বাচ্চা। এমতাবস্থায় তাকে কোথায় দাফন করা হবে? তিনি বললেন, মুসলমানদের কবরস্থানে। সে বলল, ভুল হয়েছে। তিনি আবার বললেন, ইহুদীদের কবরস্থানে দাফন করা হবে। সে বলল, তাও হলো ভুল। হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চিন্তা করতে লাগলেন। অতঃপর লোকটি নিজেই সঠিক সমাধান ব্যক্ত করে বলল, তাকে ইহুদীদের কবরস্থানে দাফন করা হবে, তবে পিঠ রাখা হবে পবিত্র ক্বিবলা উনার দিকে। যাতে বাচ্চার চেহারা ক্বিবলামুখী থাকে। কেননা মায়ের পেটে বাচ্চার চেহারা থাকে মায়ের পৃষ্ঠের দিকে।

৪। একবার হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সামনে এক জটিল মাসয়ালা পেশ করা হলো। সমসাময়িক সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন উনারা সমাধান দিতে অপারগ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “এক মহিলা ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মই বেয়ে উপরে উঠছিল, হঠাৎ করে তার স্বামী তাকে দেখে ফেললো। স্ত্রীর এই কাজ তার খুব অপছন্দ হল তাই সে রাগান্বিত হয়ে বলল, যদি তুমি উপরে উঠ তাহলে তিন তালাক, আবার নিচে নামলেও তিন তালাক। এমতাবস্থায় তালাক থেকে বাঁচার জন্য মহিলা কি পন্থা অবলম্বন করবে? হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, একদম সহজ সমাধান রয়েছে। সেটা হল, মহিলা আর উপরে উঠবেনা এবং নিচেও নামবেনা। যেখানে আছে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। আর কিছু লোক যেয়ে মইসহ তাকে নামিয়ে এনে মাটিতে রেখে দিবে তাহলে তালাক পড়বে না। আর তার স্বামীর কসমও ভঙ্গ হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, এর অন্য কোন সমাধান আছে কিনা? তিনি বললেন, দ্বিতীয় আরেকটা সমাধান আছে সেটা হল কিছু মেয়ে লোক গিয়ে ঐ মহিলাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তুলে নিয়ে এসে মাটিতে রেখে দিবে। তাহলে তালাক পড়বে না।

৫। আযহার ইবনে কাইসান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক লাভ করলাম। দেখলাম উনার পিছনে আরো দুজন মহান ব্যক্তিত্ব। আমাকে বলা হলো যিনি সামনে তাশরীফ রেখেছেন তিনি হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর উনার পিছনের দুজন হচ্ছেন- হযরত ছিদ্দীকে আকবার আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় জন হচ্ছেন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। আমি উনাদের দুজনের নিকট আরয করলাম যে, “আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই।” উনারা বললেন, অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন, তবে আওয়াজ যেন উঁচু না হয়। তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলিম সম্মন্ধে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এমন ইলিম আছে, যা হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার থেকে সংগৃহীত।

উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনাকে “ইলমে লাদুন্নী” দিয়েছেন। ইলমে লাদুন্নী হচ্ছে এমন ইলিম যা কোন মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি মহান আল্লাহ পাক তিনি দান করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا

অর্থ: “আমার পক্ষ থেকে আমি উনাকে (হযরত খিযির আলাইহিস সালাম) বিশেষ ইলিম দান করেছি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

৬। জনৈক ব্যক্তি হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলল, আমি একটা সমস্যায় পড়েছি। আপনার সমাধান ছাড়া বাঁচার কোন পথ দেখছি না। আমি কসম খেয়েছি, “যদি আমি ফরয গোসল করি তাহলে আমার আহলিয়ার উপর তিন তালাক পড়বে।” এখন গোসল করলে আহলিয়ার উপর তালাক পড়ে যায়, আবার নাপাক অবস্থায় থাকলে মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি?

হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন উত্তর না দিয়ে উক্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলতে লাগলেন। চলতে চলতে এক সময় একটা নদীর পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং  কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলেন। সে ব্যক্তি হাবুডুবু খেতে লাগলো। অতঃপর তাকে পানি থেকে টেনে তুললেন এবং বললেন যাও, তোমার গোসলও হয়ে গেছে আবার তোমার আহলিয়ার উপর তালাকও পড়েনি।

৭। ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সিরিয়ার বিখ্যাত ইমাম ছিলেন। পবিত্র মক্কা শরীফে উনার সাথে একদিন ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মোলাকাত (সাক্ষাত) হয়। ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার উদ্দেশ্যে বললেন, ইরাকের মানুষরা আশ্চর্য ধরণের। উনারা রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু হতে মাথা উঠাবার সময় রফয়ে ইয়াদাইন করে না তথা দু হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠায় না। অথচ আমি ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে শুনেছি, তিনি হযরত ইমাম সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছ থেকে তিনি উনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছ থেকে শুনেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ সকল কাজে নূরুন নুবুওওয়াহ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কাঁধ মুবারক) পর্যন্ত হাত মুবারক উঠাতেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ কথার প্রতি উত্তরে বললেন, হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মাধ্যমে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ সকল কাজে নূরুল মাগফিরাহ বা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দু’ হাত মুবারক উঠাতেন না। রফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।

ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আপনাকে ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের দ্বারা বর্ণিত হাদীছ শরীফ বর্ণনা করলাম। আর আপনি তার বিপরীত হযরত হাম্মাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবরাহীম নখয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণ করলেন?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমার উল্লেখিত রাবীগণ আপনার উল্লেখিত রাবী অপেক্ষা অনেক বেশী ইলিম ও হিকমত মুবারক উনার অধিকারী ও মাশহূর। আর ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সম্পর্কে তো সবাই অবগত আছেন। যে কারণে উনার রেওয়ায়েত (বর্ণনা) বেশী গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। এ কথা শুনে ইমাম আওয়াযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লা-জাওয়াব হয়ে গেলেন। (সীরাতে নু’মান-৫৬)

৮। কুফা শহরে এক ব্যক্তি ছিলো গোঁড়া শিয়া। সে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় খলীফা, আমীরুল মু’মিনীন, আজওয়াদুন নাস, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে ইহুদী বলে বেড়াতো। নাঊযুবিল্লাহ! ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন তাকে বললেন, “তোমার মেয়ের জন্য কি বর খুঁজছ? আমার সন্ধানে একজন ছেলে আছে। তিনি অত্যন্ত শরীফ বংশের ছেলে। অধিক ধনাঢ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয, খুবই পরহেযগার, মুত্তাক্বী, সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করেন। কর্তব্য পরায়ন, বড় দানশীল, খুবছূরত মুবারকের অধিকারী।

শিয়া লোকটি বললো- এমন সুযোগ্য ছেলে পাওয়া তো খুবই কঠিন। আপনি দয়া করে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন বললেন, তবে ছেলেটির একটি মাত্র দোষ আছে। তাহলো তিনি ইহুদী। একথা শুনামাত্র শিয়া লোকটি রেগে গেলো। বললো, “আপনি কি আমাকে ইহুদীর সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন?

তিনি বললেন, “তোমার ধারণানুযায়ী যিনি ইহুদী উনার সাথে তো স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুজন বানাত আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ  বা শাদী মুবারক দিয়েছেন, তাহলে ইহুদীর সাথে তোমার মেয়ে বিয়ে দেয়াতে আপত্তি কোথায়?

একথা শুনে সেই গোঁড়া শিয়া লোকটির চেতনা ফিরে আসলো। সে তওবা করে নিজের ধারণা ও স্বভাব পরিবর্তন করলো। (সীরাতে নু’মান-৭০)

৯। একবার খারিজী সম্প্রদায়ের অনেক  লোক সংঘবদ্ধ হয়ে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপর চড়াও হয়। তারা উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আপনি কুফরী থেকে তওবা করুন।” সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তোমাদের কুফরী থেকে তওবা করছি।

উল্লেখ্য যে, খারিজীদের ধারণা, মানুষ গোনাহ করলে কাফির হয়ে যায়। অর্থাৎ গোনাহ ও কুফরী একই বিষয়।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল, যে কাজকে তোমরা কুফরী মনে করো, আমি তা হতে তওবা করছি। কোন একজন লোক গিয়ে খারিজীদেরকে উস্কে দিয়ে বললো, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তো তোমাদেরকে বোকা বানিয়েছেন।

খারিজীরা এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, আপনি আমাদের সাথে চালাকি করলেন কেন? তিনি বললেন, তা তোমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস নাকি ধারণা যে, আমি তোমাদের সাথে চালাকি করেছি?

তারা বললো, ধারণা। তিনি বললেন, তাহলে তোমাদেরই তো তওবা করা উচিত। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْـمٌ

অর্থ: “নিশ্চয়ই কোন কোন ধারণা পাপ।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

একথা শুনে তারা সবাই লা-জাওয়াব হয়ে ফিরে গেলো। (সীরাতে নু’মান-৬৯)

১০। হযরত লাইস ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিশরের প্রসিদ্ধ আলিম ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন,  আমি ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনেক সুনাম, সুখ্যাতি শুনেছি। উনাকে দেখার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলাম। একবার পবিত্র হজ্জের মৌসুমে পবিত্র মক্কা শরীফ গেলাম। এক স্থানে অনেক লোকের সমাগম দেখতে পেলাম। সেখানে এক ব্যক্তির নিকট অনেকেই প্রশ্ন করছেন। আর তিনি খুবই সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তার জওয়াব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি “ইয়া আবা হানিফা” নামে ডাকতেই আমি বুঝতে পারলাম ইনিই আমার কাঙ্খিত ব্যক্তি, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি।

সেই লোকটি বললো, হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমার একটি বদ মেজাজী ছেলে আছে। আমি যদি তাকে বিয়ে দেই সে তার বউকে তালাক দিয়ে দেয়। আর যদি তাকে বাঁদী কিনে দেই, তবে সে তাকেও আযাদ বা স্বাধীন করে দেয়। আমি এখন কি করতে পারি?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে বাজারে যাবে। গোলাম-বাঁদী যেখানে বিক্রি করে সেখানে যাবে। তার পর তার পছন্দমত একটি বাঁদী কিনে তার সাথে তোমার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিবে। যদি সেই বাঁদীকে সে আযাদ করে দেয় তাহলে আযাদ হবে না। কারণ, বাঁদী তো তার সম্পত্তি নয় যে, আযাদ হবে। আর যদি সে তালাকও দেয়, তাতেও তোমার কোন ক্ষতি হবে না। তোমার বাঁদী কোথাও যেতে পারবে না। সে তোমরই থাকবে। হযরত লাইস ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি এই জাওয়াব শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে অভিভূত হলাম এবং উনার অনেক তা’রীফ  বা প্রশংসা করলাম। (সীরাতে নু’মান-৬৮)

১১। আব্বাসীয় শাসক মানসূরের দরবারে আবুল আব্বাস নামক একজন প্রভাবশালী অমাত্য ছিলো। সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলো। উনার অনিষ্ট, ক্ষতি সাধনের জন্য সে সবসময় তৎপর ছিলো। একদিন সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন প্রয়োজনে মনসূরের দরবারে গেলেন। আবুল আব্বাস সেখানে উপস্থিত ছিল। সে মনে মনে ভাবলো, আজ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিপাকে ফেলার জন্য সে বললো, হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমীরুল মু’মিনীন আমাদেরকে অনেক সময়ই আদেশ দেন, “অমুককে হত্যা করো।” আমরা জানিনা, সে ব্যক্তি আদৌ অপরাধী কিনা। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে শাসকের আদেশ পালন করা উচিত কিনা?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বললেন, তোমাদের বিবেচনায় শাসকের আদেশ ন্যায়, নাকি অন্যায়?

আব্বাসীয় শাসক মানসূরের সামনে তার আদেশ অন্যায় বলার সাহস কারো নেই। কাজেই, আবুল আব্বাসকে বাধ্য হয়ে বলতে হলো, শাসকের আদেশ সর্বদাই ন্যায়। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তাহলে ন্যায় সঙ্গত হুকুম তামিল করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসার কি প্রয়োজন থাকতে পারে?” (সীরাতে নু’মান-৭০)

১২। একদিন অনেক লোক একত্রিত হয়ে ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল ফুক্বাহা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত মুবারকে হাজির হলো। জিজ্ঞাসা করলো, জামায়াতের সাথে নামায আদায়কালে ইমাম সাহেবের সাথে মুক্তাদিকেও সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করতে হবে কিনা? সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে বললেন, তোমাদের এতো লোকের সাথে আমি একাকী কথা বলবো কিভাবে? বরং তোমরা একজনকে আমার সাথে কথা বলার জন্য মনোনীত করো। তার সাথে আমার কথোপকথনকেই পুরো জামায়াতের সাথে কথোপকথন বলেই তোমরা স্বীকার করে নাও।

এই প্রস্তাব অনুসারে তারা তাদের একজনকে ইমাম বা নেতা নির্ধারণ করলো। সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই তো সব প্রশ্নের ফায়সালা হয়ে গেল। তোমরা যেভাবে একজনকে তোমাদের মুখপাত্র ঠিক করলে, সেভাবে জামায়াতের সাথে নামায আদায় করার সময় ইমাম সাহেব সকল মুক্তাদীর মুখপাত্র হয়ে থাকেন। কাজেই, ইমাম সাহেবের ক্বিরাআত পাঠ করাই সকল মুক্তাদির ক্বিরাআত পাঠের মধ্যে গন্য হয়ে থাকে।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইহাই বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ صَلَّى خَلْفَ الْاِمَامِ فَقِرَائَةُ الْاِمَامِ قِرَائَةٌ لَّهٗ

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের পিছনে নামায আদায় করে তার জন্য ইমাম সাহেবের ক্বিরাআতই তার ক্বিরাআতের অন্তর্ভুক্ত।”

উল্লেখ্য যে, ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম অসাধারণ গুণ ছিল যে, তিনি অত্যন্ত জটিল ও কঠিনতম বিষয়কেও অল্প কথায় এবং সুন্দর দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝিয়ে দিতে পারতেন। যা সর্বসাধারণ সবাই সহজেই বুঝতে পারতো। কাজেই, অতি সহজেই তর্ক-বিতর্কও মিটে যেত।

কাজেই উনার বেমেছাল ছহীহ সমঝ ও অসাধারণ বিচক্ষণতার কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না। মূলত এসবই ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রদত্ত।

অসমাপ্ত-

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০