মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-১৫)

সংখ্যা: ২৭৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৬তম ফতওয়া হিসেবে

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ও উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এবং বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার সম্মানিত আদব মুবারক-

১১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে এসে কারো ঘাড় ডিঙিয়ে

সামনে না যাওয়া:

বিশিষ্ট তাবে‘য়ী হযরত আবূ যাহিরিয়্যাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

(৬৪০-৬৪৩)

كُنَّا مَعَ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ صَاحِبِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطّٰى رِقَابَ النَّاسِ فَقَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ بُسْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ جَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطّٰى رِقَابَ النَّاسِ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ وَالنَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يـَخْطُبُ فَقَالَ لَهُ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِجْلِسْ فَقَدْ اٰذَيْتَ.

অর্থ: “একদা সম্মানিত জুমু‘আহ্ শরীফ উনার দিন আমরা বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার জুমুয়া শরীফ উনার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত খুৎবা মুবারক দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তুমি বস। তুমি অন্যকে কষ্ট দিচ্ছো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ, শরহুস সুন্নাহ লিল বাগবী ৪/২৬৮, ছহীহ ইবনে হিব্বান ৭/৩০, ফাতহুল বারী লিইবনে রজব ৮/১০৭ ইত্যাদি)

অন্য বর্ণনায় ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

(৬৪৪)

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَـخْطُبُ فِـىْ يَوْمِ الْـجُمُعَةِ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ لَهٗ اِجْلِسْ فَقَدْ اٰذَيْتَ وَاٰنَيْتَ.

অর্থ: “হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জুমু‘আহ্ শরীফ উনার দিন সম্মানিত খুৎবা মুবারক দেওয়া অবস্থায় এক ব্যক্তি আসেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি বসুন। আপনি বিলম্ব করে এসে (মানুষদেরকে) কষ্ট দিচ্ছেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসনাদে বায্যার ৮/৪৩২)

১২. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ আগে আগে যাওয়া এবং  প্রথম কাতারে

সম্মানিত ছলাত আদায় করা:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ আগে আগে যাওয়া এবং  প্রথম কাতারে সম্মানিত নামায মুবারক পড়ার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উৎসাহ মুবারক প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

(৬৪৫-৬৬৯)

عَنْ  حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِـى النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الْاَوَّلِ ثُـمَّ لَـمْ يَـجِدُوْا اِلَّا اَنْ يَّسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِـى التَّهْجِيْرِ لَاسْتَبَقُوْا اِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ مَا فِـى الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি মানুষ জানতে পারতো, সম্মানিত আযান মুবারক দেয়া এবং প্রথম কাতারে (সম্মানিত নামায মুবারক পড়ার) মাঝে কি আছে, আর লটারি ব্যতীত সেটি পাওয়া সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তার জন্য তারা লটারির ব্যবস্থা করতো, আর যদি তারা জানতে পারতো সম্মানিত নামায মুবারক আদায়ের জন্য আগে যাওয়ার মাঝে কি ফযীলত, তাহলে তারা সম্মানিত নামায মুবারক-এ অন্যের আগে পৌঁছার চেষ্টা করতো। যদি মানুষ জানতো সম্মানিত ইশা ও ফজরের নামায মুবারক উনার মধ্যে কি রয়েছে, তাহলে তার জন্য তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসতো।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মুআত্ত্বায়ে ইমাম মালেক ১/৬৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ২/২০৫, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বাইহাক্বী ২/২৬৭, শু‘আবুল ঈমান ৪/৪৪৭, মুস্তাখরাজে আবী ‘আওয়ানাহ্ ২/১০৩, আস্ সুনানুছ ছগীর লিল বাইহাক্বী ১/১৮৬, তাফসীরে বাগবী ৬/৩০৪, ছহীহ্ ইবনে হিব্বান ৫/৫২৭, শরহুস সুন্নাহ লিল বাগবী ২/২৩০, শরহু ইবনে বাত্ত্বাল ৩/৩০৬, ‘উমদাতুল ক্বারী ৮/১৩১, আত্ তাওশীহ্ লিস সুয়ূত্বী ২/৬৫৩, শরহুয যারক্বানী ১/২৬৫, মাশারিকুল আনওয়ার ২/৩৭৯, আল মুন্তাক্বা লিল আন্দালুসী ১/১৩২, আল কাওয়াকিবুদ দুরারী লিল কিরমানী ১১/২১১, শরহুল কুস্তুলানী ৪/৪১৫, আল ইস্তিযকারুল জামি’ ২/১১২, কাওছারুল মা‘আনিইদ দুরারী ৮/২৬০, ফাইদ্বুল বারী ২/২১৫, আল কাওছারুল জারী ৫/২৯৮, মিনহাতুল বারী ৫/৪৭২ ইত্যাদি)

আর যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ আগে আসবেন, কোনো কারণ ছাড়া উনার জন্য প্রথম কাতার বাদ দিয়ে পিছনে বসা উচিৎ নয়।  যে ব্যক্তি আগে আসল এবং কোনো ওযর ছাড়াই প্রথম কাতার বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় বসলো, সে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান লঙ্ঘন করলো। এবং পিছনে বসার কারণে সে সীমাহীন ফযীলত-রহমত, বরকত ও সাকীনাহ হতে বঞ্চিত হলো। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

(৬৭০-৬৭৪)

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِ ۣ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَاٰى فِـىْ اَصْحَابِهٖ تَاَخُّرًا فَقَالَ لَـهُمْ تَقَدَّمُوْا فَاْتَـمُّوْا بِـىْ وَلْيَاْتَـمَّ بِكُمْ مَّنْ بَعْدَكُمْ لَا يَزَالُ قَوْمٌ يَتَاَخَّرُوْنَ حَتّٰى يُؤَخِّرَهُمُ اللهُ

অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কারো কারো সম্মানিত নামায মুবারক-এ পিছনে থাকার ভাব দেখে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা সামনের দিকে অগ্রসর হোন এবং আমার ইক্তেদা মুবারক করুন, যাতে পিছনের লোকেরা আপনাদের ইক্তেদা করতে পারেন। সুবহানাল্লাহ! একটি সম্প্রদায় সবসময় পিছনে থাকবে, এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে পিছনে ঠেলে দিবেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৩/১৪৬, মুসনাদে আবী ইয়া’লা লিল মূছুলী ২/৩২৭, ফাত্হুল মুন‘ইম ২/৫৯৮ ইত্যাদি)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ আগে আসার মাঝে অনেক ফায়দা নিহিত রয়েছে। যথা- সম্মানিত জামা‘আত উনার শুরু থেকে অংশগ্রহণ, তাকবীরে ঊলা পাওয়া, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সুযোগ, সম্মানিত নফল ছলাত আদায় করার সুযোগ, প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর সুযোগ  ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ!

অন্যদিকে কেউ যদি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ এসে সম্মানিত নামায উনার অপেক্ষায় থাকেন, তাহলে তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত নামায উনার অপেক্ষায় থাকবেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত নামায মুবারক আদায়রত আছেন বলে গণ্য হবেন। সুবহানাল্লাহ! দ্দধু তাই নয়; হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ঐ ব্যক্তি উনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন, যতক্ষণ তিনি সম্মানিত ছলাত উনার অপেক্ষায় থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

১৩. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ নামাযীদের সামনে উচ্চস্বরে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত না করা:

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

(৬৭৫-৬৮২)

اِنَّ الْمُصَلِّـىَ يُنَاجِىْ رَبَّهٗ فَلْيَنْظُرْ بـِمَا يُنَاجِيْهِ بِهٖ وَلَا يَـجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلـٰى بَعْضٍ بِالْقُرْاٰنِ.

অর্থ: “সম্মানিত ছলাত আদায়কারী ব্যক্তি তিনি উনার মহাসম্মানিত রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে গোপনে কথা বলেন। উনার খেয়াল রাখা উচিৎ যে, তিনি উনার সাথে কী বলছেন। তোমরা (উচ্চস্বরে) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের উপর শব্দ করো না।” (মুআত্ত্বায়ে ইমাম মালেক ১/৮০, র্শহুস সুন্নাহ লিল বাগবী ৩/৮৭, ফাইদ্বুল বারী ৩/৪২, আত্ তামহীদ ২৩/৩১৫, আল ইস্তিয্কারুল জামি’ লিইবনে আব্দিল র্বার ১/৩৮৩, শরহুয যারক্বানী ১/৩০৯, আল মুন্তাক্বা লিল আন্দালুসী ১/১৫০ ইত্যাদি)

১৪. উচ্চস্বরে কথা না বলা:

এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(৬৮৩-৬৯১)

عَنْ حَضْرَتْ اَلسَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كُنْتُ قَائِمًا فِى الْمَسْجِدِ فَحَصَبَنِـىْ رَجُلٌ فَنَظَرْتُ فَاِذَا حَضْرَتْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ اذْهَبْ فَأْتِنِـىْ بِـهٰذَيْنِ‏.‏ فَجِئْتُهٗ بِـهِمَا‏.‏ قَالَ مَنْ اَنْتُمَا اَوْ مِنْ اَيْنَ اَنْتُمَا قَالَا مِنْ اَهْلِ الطَّائِفِ‏.‏ قَالَ لَوْ كُنْتُمَا مِنْ اَهْلِ الْبَلَدِ لَاَوْجَعْتُكُمْ تَرْفَعَانِ اَصْوَاتَكُمَا فِـىْ مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

 অর্থ: “হযরত সায়িব ইবনে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তিনি বর্ণনা করেন, একদা আমি মসজিদে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আমার প্রতি একটি কঙ্কর নিক্ষেপ করলে আমি তাকিয়ে দেখি, তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, যান, ঐ দুই ব্যক্তিকে আমার নিকট নিয়ে আসুন। আমি তাদেরকে উনার নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কোন গোত্রের ও কোথাকার লোক? তারা বললো, আমরা তায়েফের লোক। তিনি বললেন, যদি তোমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার লোক হতে, তবে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতাম। কারণ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ উনার মধ্যে তোমরা তোমাদের স্বর উচ্চ করেছো।” (বুখারী শরীফ, আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী ২/৪৪৭, শরহুস সুন্নাহ লিলবাগভী ২/৩৭৫, মুসনাদে ফারূক্ব লিইবনে কাছীর ১/১৫৭, তুহফাতুল আশরাফ ৮/২২, জামি‘উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ২৮/২৮১, জামি‘উল উছূল লিইবনে আছীর ১১/৮৭৫১, কানযুল ‘উম্মাল ৮/৩১৫, জাম‘উল ফাওয়াইদ লিল মাগরিবী)

সুতরাং, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ উচ্চস্বরে কথা বলা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং শাস্তি লাভের কারণ। কিন্তু আফসোসের  বিষয় হচ্ছে বর্তমানে মানুষ উচ্চ স্বরে  কথাবার্তা  বলে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, সকলের জন্য দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকা। সুবহানাল্লাহ!

১৫. মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদ মুবারক-এ দুনিয়াবী কথা না বলা:

মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত মসজিদ মুবারক-এ দুনিয়াবী কথা বলা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

(৬৯২)

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِـى الْـمَسْجِدِ اَحْبَطَ اللهُ عَمَلَهٗ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের আমল নষ্ট করে দিবেন। অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (লুবাবুল হাদীছ লিলইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূত্বী ১/১৩)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

(৬৯৩)

وَقَدْ قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَكَلَّمَ بِكَلَامِ الدُّنْيَا فِىْ خَـمْسَةِ مَوَاضِع اَحْبَطَ اللهُ تَعَالـٰى مِنْهُ عِبَادَةَ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً اَلْاَوَّلِ فِـى الْـمَسْجِدِ وَالثَّانِـىْ فِى تِلَاوَةِ الْقُرْاٰنِ وَالثَّالِثِ فِـىْ وَقْتِ الْاَذَانِ وَالرَّابِـــعِ فِـىْ مَـجْلِسِ الْعُلَمَاءِ وَالْـخَامِسِ فِـىْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ

অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ স্থানে দুনিয়াবী কথা বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার ৪০ বছরের ইবাদাত নষ্ট করে দিবেন- অর্থাৎ তার অপরাধের কারণে ৪০ বৎসরের আমল নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে। ১. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে, ২. সম্মানিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার সময়, ৩. সম্মানিত আযান উনার সময়, ৪. আলিম-উলামাগণ উনাদের মজলিসে এবং ৫. ক্ববর যিয়ারতের সময়।” (তাফসীরে আহ্মদী ৭১০ পৃষ্ঠা)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

(৬৯৪)

عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّهٗ قَالَ اِذَا اَتَى الرَّجُلُ الْمَسْجِدَ فَاَكْثَرَ مِنْ الْكَلَامِ تَقُوْلُ لَهُ الْمَلَائِكَةُ اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَقُوْلُ اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ فَاِنْ زَادَ تَقُوْلُ اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক উনার মধ্যে আসার পর দুনিয়াবী কথা বলতে শুরু করে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

اُسْكُتْ يَا وَلِـىَّ اللهِ

‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! চুপ করুন।’

এরপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,

اُسْكُتْ يَا بَغِيْضَ اللهِ

‘হে মহান আল্লাহ পাক উনার দুশমন! চুপ কর।’

তারপরেও যদি সে কথা বলতে থাকে, তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাকে বলেন,

اُسْكُتْ عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللهِ

‘তোর উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, তুই চুপ কর’।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মাদখাল ২/২২৭)

সুতরাং, উল্লেখিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণি হলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ দুনিয়াবী কথা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয়। শুধু তাই নায়, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ সাধারণ দুনিয়াবী কথা বললে চল্লিশ বছরের আমল নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ তার সমস্ত জীবনের আমল নষ্ট হয়ে যায়, সাথে সাথে সে লা’নতের উপযুক্ত হয় এবং তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শত্রু ও মালউন বা অভিশপ্ত হিসেবে সম্বোধনও করা হয়। না‘ঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে দেখা যায়, বিভিন্ন মসজিদে তথাকথিত মুছল্লীরা চেয়ার টেবিল ও মোড়া নিয়ে গোল হয়ে বসে নানা গল্প-গুজব করে থাকে এবং চা-নাস্তা খেয়ে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারকগুলো উনাদেরকে আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

কাজেই, সকলের জন্য ফরযে আইন হচ্ছে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ দুনিয়াবী কথা বলা থেকে বিরত থাকা।

১৬. ইমাম ও মুয়ায্যিন ব্যতীত অন্য কারো

জন্য জায়গা নির্দিষ্ট না রাখা:

ইমাম ও মুয়ায্যিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য জায়নামাজ জাতীয় কিছু দিয়ে কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বর্তমানে দেখা যায় যে, কোনো কোনো মসজিদণ্ডএ সভাপতি ও কমিটির লোকদের জন্য জায়গা নিদিষ্ট করে রাখা হয়। এটা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও না জায়িয়। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার গোলামী করার জায়গা, ইবাদত-বন্দেগী করার জায়গা। এটা আমিত্ব ও বড়ত্ব যাহির করার জয়গা নয়। এখানে ধনী-গরীব সকলেই সমান। সুবহানাল্লাহ!

কাজইে, ইমাম ও মুয়ায্যিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা যাবে না।

১৭. মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ

মুবারক-এ বসার আদব:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক-এ বসার আদব হচ্ছে নামাযের ছূরতে বিনয়ের সাথে বসা। দুই হাঁটু ছড়িয়ে বা দুই পা কিবলার দিকে টানটান করে কিংবা হেলান দিয়ে বসা আদবের খিলাফ। আর চেয়ারে ও মোড়ায় বসা তো সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয ও চরম বেআদবী। আর এটা জায়েয মনে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

স্মরণীয় যে, ইমাম সাহেব যখন জুমুয়ার প্রথম খুৎবা দিবেন, তখন বসে নফল নামায পড়ার সময় যেভাবে বসে সূরা-ক্বিরাত পড়া হয়, সেভাবে বসতে হবে। আর দ্বিতীয় খুৎবার সময়, তাশাহুদ পাঠের ছূরতে বসতে হবে।

অসমাপ্ত- (পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁ, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩২