মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩য় পর্ব)

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং অশেষ-অসীম সম্মানিত ছলাত ও সালাম মুবারক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ। মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাছ রহমত, বরকত, সাকীনাহ, দয়া-দান, ইহসান মুবারক উনাদের কারণে – “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” উনার ফতওয়া বিভাগ উনার তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা’ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্ট দলীলের আলোকে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” পত্রিকায়- “৩৮তম সম্মানিত ফতওয়া মুবারক হিসেবে” মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক পরিধান করা প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া মুবারক পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খিদমত মুবারক-এ বেশুমার শুকরিয়া আদায় করছি।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার বর্ণনায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারক

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারক উনার বিষয়ে যিনি খালিক, যিনি মালিক, যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ وَرِيْشًا. وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ .ذٰلِكَ مِنْ اٰيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ ـ يَا بَنِيْۤ اٰدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِّنَ الْـجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْاٰتِهِمَا إِنَّهٗ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيْلُهٗ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ. إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِيْنَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ. وَإِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً قَالُوْا وَجَدْنَا عَلَيْهَاۤ اٰبَآءَنَا وَاللّٰهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَآءِ أَتَقُوْلُوْنَ عَلَى اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

অর্থ: হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী) পোশাক অবর্তীণ করেছি। যার দ্বারা তোমরা তোমাদের সতরকে আবৃত করবে এবং সৌন্দর্য মন্ডিত হবে। আর সম্মানিত তাক্বওয়া বা পরহেযগারী উনার পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক মুবারক। উহা মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন উনার অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা নছীহত গ্রহন করে।

হে বনী আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে ফেৎনায় না ফেলে, যেমন তোমাদের পিতা মাতা জান্নাত থেকে জমিনে তাশরীফ মুবারক গ্রহনকালে উনাদের সতর মুবারক অনাবৃত করার উদ্দেশ্যে উনাদের থেকে উনাদের পোশাক মুবারক নিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ফেৎনা করেছিলো।

নিশ্চয়ই সে ও তার দলবল তোমাদেরকে যেভাবে দেখে থাকে, তোমরা তাদেরকে সেভাবে দেখতে পাও না। আর নিশ্চয়ই যারা (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সম্মানিত সুন্নতী লিবাস মুবারক উনাকে) অবিশ্বাস করে, আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি (অর্থাৎ তারা শয়তানের দল)। আর যখন তারা অশ্লীল কাজ করে (বিদয়াতী পোশাক পরিধান করে, পবিত্র সুন্নতী পোশাক বর্জন করে) তখন তারা বলে আমরা আমাদের বাপ-দাদা, আকাবীরদেরকে এর উপর পেয়েছি (এমন পোশাক পরিধান করতেই দেখেছি।) এবং মহান আল্লাহ পাক তিনিও আমাদেরকে এইরূপ আদেশ করেছেন (এই পোশাক পরিধান করতেই নির্দেশ দিয়েছেন।) (নাঊযুবিল্লাহ)। আপনি তাদেরকে বলে দিন যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনও কাউকে অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না। তোমরা কি মহান আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে এমন কথা বলো যা তোমরা জাননা অর্থাৎ তারা পবিত্র সুন্নতী পোশাক বর্জন করে, নিজেদেরকে মুরুব্বীদের অনুসরণ করে, সঠিক পথে রয়েছে বলে মনে করতেছে। (নাঊযুবিল্লাহ) (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৬, ২৭, ২৮)

উপরোল্লেখিত পবিত্র সূরাতুল আ’রাফ শরীফ উনার ২৬ নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি তিন প্রকার পোশাক মুবারক উনার কথা উল্লেখ করেছেন, তা হলো:

১। يُّـوَارِىْ سَوْاٰتِكُمْ لِبَاسٌ সতরকে আবৃত করার পোশাক মুবারক অর্থাৎ ফরয পরিমাণ পোশাক।

২। لِبَاسٌ رِيْشٌ সৌন্দর্য মন্ডিত পোশাক অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নতী পোশাক মুবারক।

৩। لِبَاسُ التَّـقْوٰى তাক্বওয়া বা খোদাভীতি উনার পোশাক মুবারক।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا بَنِىْ اٰدَمَ قَدْ أَنْـزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا

অর্থ: হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি।

কিন্তু কার নিকট ? কোথায় মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত পবিত্র পোশাক অবতীর্ণ করেছেন?

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস মুবারকই পবিত্র জান্নাতী লিবাস মুবারক, যা হযরত ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে

যিনি সমস্ত সৃষ্টির মূল, উনার মুহব্বতেই সকল কিছুই অস্তিত্বে এসেছে, সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামসহ সমস্ত সৃষ্টির যিনি মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ঈমান ও মুবারক ক্বিবলা, উনার ছানা-ছিফাত হলো সমস্ত হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নবুওয়াত ও রিসালাত উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ভিত্তি মুবারক। সেই মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার থেকেই সমস্ত হযরত নবীÑরাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সম্মানিত শরীয়ত দিয়ে নবী ও রাসূল হিসেবে দুনিয়ার যমীনে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সম্মানিত শরীয়ত উনার একটি বিষয় হলো সম্মানিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী লিবাস বা পোশাক মুবারক। যা মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই হযরত ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সকল নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। সে জন্য হযরত আবূল বাশার ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আখিরী নবী ও রাসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ও উনাদের উম্মতগণ মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন।

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নতী জান্নাতী ক্বামিছ তথা লিবাস মুবারক সর্ব প্রথম পবিত্র জান্নাত মুবারকে হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট অবতীর্ণ করেছিলেন। তার পর উক্ত পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম হয়ে আজ পর্যন্ত চলে এসেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত সুন্নতী লিবাস মুবারক দুনিয়ার মধ্যে জারী থাকবে।

হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল পবিত্র নূর মুবারক উনার যা দেখতে নখের রংয়ের মত।

পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল পবিত্র নূর মুবারক উনার। এ বিষয়ে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

كَانَ لِبَاسُ حَضْرَتْ اٰدَمَ وَ حَضْرَتْ حَوَّاءَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ نُـوْرًا

অর্থ: হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিলেন সম্মানিত নূর মুবারক উনার। (তাফসীরে খাযিন ২/১৯২, তাফসীরে ত্ববারী ১২/৩৫৫, ছফওয়াতুত তাফাসির ১/৪০৮, ফতহুল বারী লি ইবনি হাজার ৮/২৯৯, আদ দুররুল মানছূর ফীত তাফসীরি বিল মা-ছূর ১/৪৬, আল আসাসুন ফীত তাফসীর, ইবনে কাছীর ৩/৩৫৮)

এই বিষয়ে আরো বর্ণিত রয়েছে,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُيَـيْـنَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ ثَـنَا حَضْرَتْ عَمْرٌو رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ سَمِعْتُ حَضْرَتْ وَهْبَ بْنَ مُنَبِّهٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يَـقُوْلُ فِيْ قَـوْلِهٖ يَـنْزِعُ عَنْـهُمَا لِبَاسَهُمَا قَالَ كَانَ لِبَاسُ اٰدَمَ وَحَوَّاءَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ نُـوْرًا

অর্থ: হযরত ইবনে ওয়াইনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আমর রহমাতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমি হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ রহমাতুল্লাহি উনাকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ক্বওল শরীফ “হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনারা উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক রেখে জমিনে তাশরীফ মুবারক আনেন প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে, হযরত আবূল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিলেন সম্মানিত নূর মুবারক উনার। (হযরত মুহম¥দ ইবনে জারীর আত্ব-ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরে ত্ববারী শরীফে (১০/১১৪) ছহীহ সনদে উক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, তা উল্লেখ রয়েছে “মিরকাতুল মাফাতীহ ফী শরহে মিশকাতিল মাছাবীহ ৭/২৮১৫, তাফসীরে খাযিন ২/২১৭, তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/৩৯৮, ছফওয়াতুত তাফাসির ১/৪০৮)

উল্লেখিত পবিত্র নূরানী পোশাক মুবারক, যা দেখতে নখ সদৃশ। এই বিষয়ে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে যে,

أَخْرَجَ الْفِرْيَابِيُّ وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ وَابْنُ جَرِيْرٍ وَابْنُ الْمُنْذِرِ وَابْنُ أَبِيْ حَاتِمٍ وَأَبُو الشَّيْخِ وَابْنُ مَرْدَوَيْهِ وَالْبَيْهَقِيُّ وَابْنُ عَسَاكِرَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ لِبَاسُ آدَمَ وَحَوَّاءَ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ كَالظُّفْرِ

অর্থ: হযরত ফিরইয়াবী, হযরত আব্দ ইবনে হুমাইদ, হযরত ইবনে জারীর, হযরত ইবনে মুনযির, হযরত ইবনে আবী হাতিম, হযরত আবূ শাইখ, হযরত ইবনে মারদাওয়াই, হযরত বাইহাক্বী, হযরত ইবনে আসাকির রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন, হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল নখ সদৃশ। (আদ্বওয়াউল বয়ান ফী ঈদ্বাহিল ক্বুরআন ৯/৯, তাফসীরে মাজহারী ৩/৩৩৬, আদ দুররুল মানছূর ফী তাফসীরিল ক্বুরআন ৩/৪৩২, আল মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন লিল হাকিম ৪/১৭২)

এই বিষয়ে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে যে,

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْـهُ كَانَ لِبَاسُ حَضْرَتْ اٰدَمَ وَحَضْرَتْ حَوَّاءَ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ الظُّفُرَ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়া’লা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন: তিনি বলেন, হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাদের পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল নখ সদৃশ। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৪/২৫৩, মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাইন ২/৩৫০, জামিউ গরীবিল হাদীছ, আল মুহাজ্জাব ফী ইখতিছারিস সুনানিল কুবরা ২/৬৮৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখিত كَالظُّفْرِ এর অর্থ প্রসংগে কিতাবে রয়েছে,

وَفِي الْـحَدِيْثِ كَانَ لِبَاسُ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ الظُّفُرَ”بِتَشْدِيْدِ الظَّاءِ وَالضَّمُّ أَيْ شَيْءٌ يَشْبَهُ الظُّفُرُ فِيْ” بَيَاضِهٖ وَصِفَائِهٖ وَكَثَافَتِهٖ

অর্থ: হযরত ইবনুল আছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল নখ সদৃশ অর্থাৎ শুভ্রতা, সচ্ছতা ও সৌন্দর্যের ঘনত্বের ক্ষেত্রে নখের সদৃশ। (নিহায়া-৩/১৫৮, আত-তাফসীরুল বাসীত-৯/৬৯, ফুতূহুল গইব ফীল কাশফি আন ক্বিনায়ির রইব ৫/৩৩০, জামিউ গরীবিল হাদীছ, উমদাতুল হুফ্ফাজ ফী তাফসীরি আশরাফিল আলফাজ)

পবিত্র জান্নাত মুবারক থেকে চামড়া ও পশমের পোশাক পরিহিত অবস্থায়

উনাদের দুনিয়াতে আগমন

وَقَالَ حَضْرَتْ وَهْبٌ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ كَانَ لِبَاسُ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي الْجَنَّةِ الظُّفُرَ يَـزْدَادُ كُلَّ يَـوْمٍ جِدَّةً وَّحَسَنًا فَـلَمَّا أَخْرَجَهٗ مِنَ الْجَنَّةِ أَلْبَسَهُ الْجُلُوْدَ وَالصُّوْفَ وَكَانَ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَمْرَدٌ فَـعُوْقِبَ بِإِنْـبَاتِ اللِّحْيَةِ

অর্থ: হযরত ওহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জান্নাতী পোশাক মুবারক ছিল নখ সদৃশ। উক্ত পবিত্র জান্নাতী নূরানী পোশাক মুবারক প্রতিদিন নতুন করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেতে থাকত। অতঃপর তিনি যখন জান্নাত  হতে জমীনে তাশরীফ মুবারক আনেন, তখন উনাকে চামড়া এবং পশমী পোষাক মুবারক পরিধান করিয়ে দেন। হযরত আবুল বাশার ছফীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন আমরাদ তথা দাড়িহীন যুবক, কিন্তু পরবর্তী সময়ে উনার চেহারা মুবারকে দাড়ি মুবারক উঠার দ্বারা উনার আমরাদী শান মুবারক পরিবর্তন হয়ে যায়। (মিরয়াতুয যামান ফী তাওয়ারিখিল আ’ইয়ান-১/২৫৩, কানযুদ্দুরার ওয়া জামিউল গুরার-২/৫০, হুছূলুল বাগিয়্যাহ লিস-সায়িল-১৯ পৃঃ)

(অসমাপ্ত- পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৭