মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২০৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের চতুর্থ মাস রবীউছ ছানী। এ মাসের এগারো তারিখ সোমবার শরীফ মুবারক দিনটিতে ষষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গওছুল আ’যম, আওলাদুর রসূল, বড় পীর হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।

খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম অতঃপর আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার যাঁরা ক্বায়িম-মাক্বাম, খাছ নায়িব ও ওয়ারিছ উনাদের পথে চলার জন্য কুরআন শরীফ-এর বহু স্থানে আদেশ-নির্দেশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সূরা লুক্বমান-এর ১৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

واتبع سبيل من اناب الى

অর্থ: “ওই ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে বা অবলম্বন করে চল যিনি আমার দিকে রুজু হয়েছেন।”

কারণ আখিরী নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী কিংবা রসূল আলাইহিস সালাম আগমন করবেন না। এ সময় মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হবে কেবল ওলীআল্লাহগণ উনাদের মাধ্যমে।

এজন্য স্বয়ং খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে মুহব্বত করার সাথে সাথে উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করে চলার জন্য বলেছেন এবং তার বিপরীতে উনাদের বিরোধিতা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

احبوا اولياء الله فانهم هم الـمقبولون ولا تبغضوهم فانهم هم الـمنصورون.

অর্থ: “তোমরা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদেরকে মুহব্বত কর; নিশ্চয়ই উনারা মকবূল বা কবুলকৃত। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কর না; নিশ্চয়ই উনারা সাহায্যপ্রাপ্ত।” (কানযুল উম্মাল)

বিশেষ করে ক্বায়িম-মাক্বামে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওলীআল্লাহগণ উনারা আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে তদ্রƒপ কবুলকৃত ও সাহায্যপ্রাপ্ত যেরূপ কবুলকৃত ও সাহায্যপ্রাপ্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! আর এ মাক্বামেরই একজন খাছ ওলীআল্লাহ হলেন গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

মূলত যারা মুজাদ্দিদ উনারা পূর্ব থেকেই মনোনীত। যেমন গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বিশ্ব সমাদৃত ‘আখবারুল আখইয়ার’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, লোকেরা একবার গওছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনি যে খোদা তায়ালা উনার ওলী, তা কিরূপে বুঝতে পেরেছিলেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি যখন নিজ গৃহ হতে মক্তবে গমন করতাম তখন পথিমধ্যে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আমার চারপাশে গমন করতে দেখতাম। যখন আমি মক্তবে উপস্থিত হতাম তখন শ্রবণ করতাম, উনারা (হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম) বালকদেরকে বলতেন, তোমরা আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার জন্য জায়গা প্রশস্ত করে দাও।

বর্ণিত রয়েছে, হযরত শায়েখ কিমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, প্রায়শ উনার ওয়াজের মজলিসে ইহুদী ও খ্রিস্টানরা মুসলমান হত, দস্যু ও বিদয়াতীরা তওবা করতো, একজন খ্রিস্টান উনার কাছে মুসলমান ও মুরীদ হয়ে বলল, আমি একজন ইয়েমেন অধিবাসী, আমার মুসলমান হওয়ার কারণ হল, আমি একদা স্বপ্নে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে দেখলাম, তিনি আমাকে বললেন, হে ছিনান! তুমি বাগদাদে গমনপূর্বক হযরত শায়েখ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা তিনি এই সময় যমীনবাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব।

মূল কথা হল, যিনি যামানার মুজাদ্দিদ তিনি উনার যামানার শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন। নবী ও রসূল হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে যামানার মুজাদ্দিদগণ উনারাই হতেন তার অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই মুজাদ্দিদ উনার যামানা পাওয়ার পর সকল জিন-ইনসানের দায়িত্ব-কর্তব্য হল উনার নিকট বাইয়াত হয়ে নিজেদের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব পরিশুদ্ধ করে নেয়া। আর উনার বিরোধিতা না করা। অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য।

আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে বর্তমান যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদ আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার ছোহবত ইখতিয়ার করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা