আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন, “যখন আসবে আল্লাহ্ পাক-এর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।” এ সূরাটি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সর্বশেষ অবতীর্ণ ‘সূরা আন নসর। ’
এ সূরাটিতে মহান আল্লাহ্ পাক সাইয়্যিদুল বাশার, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর বিজয় ও কামিয়াবী নিশ্চিত বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সূরাটি নাযিল হওয়ার পর মক্কার অন্যান্য কাফিরদের পিঠ বক্র হয়ে গিয়েছে। তাদের সারাজীবনের জল্পনা-কল্পনা সব ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। কেননা তারা সারাজীবন মানুষকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার, ছোহবত এবং ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছে। এখন আর মদীনার শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তারা হাজার চেষ্টা করলেও একটা লোকও আর তাদের দিকে ফিরে তাকাবে না। কেননা মানুষের নিকট এখন তাদের গোমর ও কুটচাল ফাঁস হয়ে গেছে। মানুষ এখন বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মত দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করছে।
পাঠকবর্গ! আমার এ লিখা রেজভী গ্রুপকে উপলক্ষ করে তাদের নিকৃষ্ট পূঁজি ফজলুল হকের লিখার প্রতিবাদে। কেননা ইতোমধ্যেই আল বাইয়্যিনাত-এর হুংকারে বহু রেজভীপন্থী লিখক পাঠকের ঘৃণা, বিদ্বেষ নিয়ে লজ্জায় অবনত মস্তকে পলায়ন করেছে।
রেজভীদের লিখক ফজলুল হকের দাবী, “সে যখন লিখে তখন গর্তের সকল মুখ বন্ধ করে লিখে।” কিন্তু এটাও সত্য যে, সে সকল গর্তের মুখ বন্ধ করেছে বলে দাবী করলেও, যে গর্তে এবার সে চাপা পড়ে দাফন হবে, সে গর্তের মুখটা বোধ হয় তার মুর্খতা-অজ্ঞতা ও বেখেয়ালের কারণে বন্ধ হয়নি। তার প্রতিটি লিখার শুরুতেই বাইয়্যিনাতকে সে ‘বন্ধু’ হিসেবে সম্বোধন করেছে। আমার দাবী, কেউ যদি কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নেয় তাহলে তো তার সাথে বন্ধুত্ব সূলভ আচরণ করা উচিত। কেননা বন্ধু বন্ধুর নিকট থেকে ভাল ব্যতীত কখনোই মন্দ ব্যবহার আশা করেনা। কিন্তু ফজলু ছাহেবের এ কি আচরণ! প্রথমে বন্ধু সম্বোধন, তারপর গালিগালাজ! অতঃপর বন্ধুর নামে অহেতুক মিথ্যা দুর্ণাম রটানো এবং বক্তব্য কাঁটছাট করে পাঠক সমাজে বিভ্রান্তি পয়দা করা, এটা কি বন্ধুত্ব না মুনাফিকী?
আসলে ফজলু ছাহেব যে আস্ত একটা মুনাফিক, বা উবাই যে তার অন্তরে বাসা বেঁধে বসে আছে সে কথা সে হাতে-কলমে পাঠক সমাজে প্রকাশ করছে।
সম্মানিত পাঠক সমাজ! মনে রাখবেন, বাইয়্যিনাত কিন্তু কখনোই ফজলু ছাহেবকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবেনা।
হে ফজলু ছাহেব! আপনি আল বাইয়্যিনাত-এর নামে খোলা চিঠি দিয়ে একেকবার একেক শিরোনামে আর্টিকেল লিখেন আর নিজের লিখার প্রতিবাদে অহংকার করে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। আপনি কি ভুলে গেছেন সকল চ্যালেঞ্জ-এর মুকাবিলা করা শরীয়তে জায়িয নেই।
কেননা কেউ যদি ফিরআউনের সূরে বলে, “আমি যে এ যুগের খোদা বা মাবুদ নই” এটা যদি কেউ প্রমাণ করে দিতে পারে তবে তাকে দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তাহলে এ ধরণের চ্যালেঞ্জ-এর মুকাবিলা করাটা একটা বোকামি। বরং এ ধরণের দাম্ভিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীর সামনে শিশু হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর মত জালালী তবিয়তের একজনই যথেষ্ট। যিনি নাকি তাকে এক থাপ্পড় মেরে তার আপাদ-মস্তক কম্পিত করে দিবেন।
হে ফজলু ছাহেব! এবার আসুন আপনার সেই কোদাল, শাবল দিয়ে খোঁড়া গর্তটি সম্পর্কে। যে গর্তটির মুখ বন্ধ করতে আপনি ভুলে গিয়েছেন। এবার আমরা আপনারই খোঁড়া গর্তে আপনাকে চির তরে দাফন করে দিবো। আপনি জুলাই-আগষ্ট/২০০২ ঈসায়ী রেজভী মুখপত্র সংখ্যার ৩৭, ৩৮ পৃষ্ঠায় আল বাইয়্যিনাত-এর খোলা চিঠি পরিচ্ছদে ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইউস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একটি বাক্যের কিছু অংশ উধাও করেছেন আর কিছু অংশ তুলে দিয়ে বিভ্রান্তি পয়দা ও পরিস্থতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করেছেন।
আপনি মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০৩তম সংখ্যার ৬০ পৃষ্ঠায় আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত ও মাহ্ফিল সংবাদ প্রতিবেদন থেকে উদ্বৃতি দেবার পূর্বে নিজের বক্তব্য লিখেছেন এভাবে, “সম্মানিত পাঠক, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সত্যিই রাজারবাগী …. এরকম বলেই ছেড়েছে। তবে আর দেরী না করে চলুন আল বাইয়্যিনাত ১০৩তম সংখ্যার ৬০ পৃষ্ঠায়। রাজারবাগী কি বলেছে তার ভাষাতেই শুনুন।” এটুকু লিখার পর আল বাইয়্যিনাত-এর ১০৩তম সংখ্যার ৬০ পৃষ্ঠা থেকে উদ্বৃতি দিয়েছেন এরূপ, “উম্মতের জন্য নবীর প্রতি তাজিম-তাকরীম করা, আদব রক্ষা করা যেরূপ ফরজ মুরীদের জন্যও স্বীয় পীর ছাহেবের প্রতি অনুরূপ তাজীম-তাকরিম, আদব রক্ষা করা ফরজ।” (আল বাইয়্যিনাত ১০৩/৬০) ব্যাস! এ পর্যন্তই ছিলো বাইয়্যিনাত-এর উদ্বৃতি। আর এ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ উদ্বৃতিকে কেন্দ্র করে এরপর প্রায় দেড় পৃষ্ঠা আপনার মধ্যে যত খারাবী ও নাপাকি বিদ্যমান ছিলো তার সবকটি দিক দিয়েই আপনি রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বিরোধীতা করার চেষ্টা করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফের ভাষায়, “খারাপ থেকে খারাপ ছাড়া আর কিছুই বের হয়না।” আর সেটাই আপনার মাঝে প্রতিফলিত হলো।
আমি বিস্ময়ে হকবাক! আপনার কারচুপি ও চুরিবিদ্যার দৌরাত্ম দেখে। আপনি একজন মাদ্রাসায় পড়ুয়া মৌলভী হয়ে এত সাংঘাতিক মিথ্যা কথাটি কিভাবে লিখলেন? সত্যি করে বলুন তো, বাইয়্যিনাত-এর যে উদ্বৃতি আপনি পাঠক সমাজের সামনে পেশ করলেন তার আগে-পরে কি কিছুই ছিলোনা? আবার ভাল করে আল বাইয়্যিনাত ১০৩তম সংখ্যার ৬০ পৃষ্ঠা খুলে দেখুন। সেখানে আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর উদ্যোগে দিনাজপুর শাখার মুহম্মদিয়া নূরীয়া হাফিজীয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত একটি মাহ্ফিলে তাছাউফের আদব বয়ান করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে মাহ্দুহ্ মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একটি মশহুর ও বিখ্যাত হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন। আর মূল হাদীস শরীফ বর্ণনা করার পর তিনি পবিত্র হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা করেন এভাবে, “উম্মতের জন্য নবীর প্রতি তাজিম-তাকরীম করা, আদব রক্ষা করা যেরূপ ফরয মুরীদের জন্যও স্বীয় পীর ছাহেবের প্রতি অনুরূপ তাজীম-তাকরীম, আদব রক্ষা করা ফরয।”
হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর বয়ানকৃত এই হাদীস শরীফটি বহু মশহুর হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে- যেমন, জামউল জাওয়ামেহ, ফাইদুল ক্বাদীর, কানজুল উম্মাল, আল আসরারুল মারফুয়া, আদ দাইলামী, আল খালিলী, ইবনে নাজ্জার, আস সিরাজী ফিল আলকাব, আল মাকাসিদুল হাসানা, তানজিয়াতুশ্ শরীয়া, আল মিযান, আল জামিউস্ ছগীরী লিস্ সূয়ূতী, আদ দোরারুল মুনতাশারাহ, হুব্বুন ফিদ দুয়াফা লিস্ সূয়ূতী ইত্যাদি।
স্বয়ং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “আল ফিরদাউস” কিতাবে উক্ত হাদীস শরীফটি লিপিবদ্ধ করেছেন। আর ইলমে তরীক্বতের আকাবিরে মাশাইখ-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি মনে করেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এই হাদীস শরীফটি প্রকৃতপক্ষে কামিল মুর্শিদ বা কামিল শায়খদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। আর এজন্য তরীক্বতের অনেক বড় বড় ওলী আল্লাহ্গণের লিখিত কিতাবাদীতেও উল্লিখিত হাদীস শরীফটি দেখতে পাওয়া যায়। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাছাউফ গ্রন্থ “মাকতুবাতে ইমামে রব্বানী” কিতাবে এ হাদীস শরীফটি লিপিবদ্ধ করেছেন। পবিত্র হাদীস শরীফটি হচ্ছে, “পীর ছাহেব মুরীদের নিকট এমন যেমন নাকি উম্মতের নিকট নবী।” হে ফজলু ছাহেব! আল বাইয়্যিনাত-এর ১০৩তম সংখ্যার ৬০ পৃষ্ঠায় প্রথমেই হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা-এর বাণী- “তিনি হাদীস শরীফের বরাত দিয়ে বলেন।” এ কথাটি লিখা ছিলো। তারপর ছিলো, হযরত ইমাম দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণিত হাদীস শরীফ। আর এর নিচেই ছিলো হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলার পবিত্র হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাকৃত শরাহ্। যাকে মূল কেন্দ্রবিন্দু ভেবে আপনি বাইয়্যিনাত-এর বিরোধীতায় নেমেছেন। এখানে আপনি হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর জবান মুবারকে বর্ণিত আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র হাদীস শরীফ সরাসরি না তুলে বরং এর অপব্যাখ্যা শুরু করে বেঈমান, গোমরাহ্ ও মুরতাদ হয়ে গেছেন। (চলবে)
-মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, ঢাকা।
ইল্মে আক্বলিয়ার দৈন্য এবং বিলায়েতের অনুপস্থিতির কারণে প্রকৃত আলিমে দ্বীন তৈরী হচ্ছে না