শুধু পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধানই নয়; ৭২-এর সংবিধানও ৭২-এর সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য ও অসত্য

সংখ্যা: ২০৬তম সংখ্যা |

শুধু পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধানই নয়; ৭২-এর সংবিধানও

৭২-এর সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য ও অসত্য

জনগণের নামে ৭২-এর সংবিধান রচনা করা হলেও জনগণের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধানকে পঞ্চদশ সংশোধনীতে স্বীকার করা হলেও আসলে জনগণের সিংহভাগই ৭২-এর সংবিধানও গ্রহণ করে নাই পঞ্চদশ সংশোধনীর সংবিধানও স্বীকার করে নাই

সংবিধান নিয়ে জনগণ তথা ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের নামে শুরু থেকেই চলছে নিখাদ মিথ্যাচারিতা। এসব মিথ্যাচারিতার অবসান হওয়া দরকার। ৯৭ ভাগ মুসলমান যেমন আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া কাউকে ‘রব’ মানতে পারে না।

তেমনই ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমান ‘আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ উঠিয়ে দেয়ার সংবিধান

তথা ধর্মনিরপেক্ষতার সংবিধান কখনই গ্রহণ করতে পারে না

দেশের দশ লাখের ঊর্ধ্ব মসজিদে প্রতি পাঁচ ওয়াক্তের আযানে ত্রিশবার  করে মোট ৩ কোটিবার উচ্চারিত ‘আল্লাহু আকবর’ ‘আল্লাহ পাক মহান’ বলাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারে না।

 

 

এমপি থেকে মন্ত্রীরাও এখন হরদম শুধু মামলার আসামি হচ্ছেন না বরং রীতিমতো জেল খাটছেন।

শাস্তি ভোগ করছেন। অপরাধী প্রমাণিত হচ্ছেন।

শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয় নারী কেলেঙ্কারিসহ খুনের আসামি

এমনকি বোমা তৈরির অপরাধেও সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

অতি লজ্জাকর হলেও সত্য যে, সংসদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে অনেক এমপি বদনা, মশারী পর্যন্ত আত্মসাৎ করে চলছেন।

এমনকি ক্ষমতাসীন অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিও পর্যন্ত অন্যায়ভাবে ন্যাম ভবন কক্ষ দখল করে আছেন।

এমপিদের বিরুদ্ধে এ যাবৎ অনেক মামলা হয়েছে।

কিন্তু সে মামলাও খুব বেশি ও গভীরভাবে হতে পারত- তা এখনো জনসচেতনতার অভাবে হয়নি।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমপিরা সংসদে জনগণের মত প্রতিফলন করবেন- এটাই ছিল কাঙ্খিত।

কিন্তু জনগণ যা হৃদয়ে অনুভব করেন, কাজে প্রতিফলন করেন

তার বিপরীত বক্তব্য যখন এমপিরা দেন, সংসদে বিল পাস করেন

তখন এমপিরা জনগণের আবেগ-অনুভূতি ও বিশ্বাস এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন।

গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অপরাধ করেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কিন্তু এ অপরাধের অভিযোগ আজ পর্যন্ত সংগঠিতভাবে করা হয়নি।

এর মূল কারণ হল জনসচেতনতার অভাব।

আর সে কারণেই এদেশে জনগণের নামে বার বার মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

জনগণের আদর্শ ও অনুভবের বিপরীত সংবিধান রচনা করে জনগণের নামে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল একচেটিয়া একপেশেভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে।

কিন্তু কাগজে-কলমে তা এসেছে জনগণের নামে।

অথচ ক্ষমতাসীন দল মানেই দেশের গোটা জনসাধারণ নয়।

সম্প্রতি সাত বিভাগের ২৩৬টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, বিএনপি বিজয়ী হয়েছে ৯৭টি পৌরসভায় আর আওয়ামী লীগ ৯৩টিতে। একই সঙ্গে দুটি বড় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও বিজয়ী হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের সংখ্যা বেশি- ১৬ জন, বিএনপির ৮ জন। জামায়াত ৫টি আসনে, জাতীয় পার্টি ১টি, এলডিপি ১টি ও স্বতন্ত্ররা ১৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। এই যে নির্বাচন, একে আমরা কীভাবে মূল্যায়ন করব? বিএনপি বলেছে, জনগণ সরকারকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। আর মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, পৌর নির্বাচনের ফল মহাজোটের জন্য অশনি সংকেত। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরও অনেকটা এ সুরে কথা বলেছেন।

প্রতিভাত হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্রমশই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে অথবা জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তারপরেও সে জনবিমুখ ক্ষমতাসীন দল কী করে এককভাবে সংশোধনী করে তা জনগণের নামে চাপিয়ে দিতে পারে? এটা জনগণের নামে অসত্য প্রচার নয়?

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ দেশে সংসদীয় রাজনীতি পুনরায় শুরু হয়েছে। ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল থেকে শুরু করে যদি ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দেখি, তাহলে দেখব ভোটাররা এ দুটি বড় দলকেই বেছে নিয়েছে। সুতরাং কোন একটি বড় দলই দাবী করতে পারেনা তারা যা করে তাই জনগণ চায়।

৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩০.৮১ (আসন ১৪১), আর আওয়ামী লীগের ৩০.০৮ (আসন ৮৮)। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) এ ফলাফল কিছুটা পাল্টে যায়। আওয়ামী লীগ পায় ৩৭.৪৪ ভাগ ভোট (আসন ১৪৬) আর বিএনপি পায় ৩৩.৬১ ভাগ ভোট (আসন ১১৬)। আবার পটপরিবর্তন ঘটে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এবার বিএনপির প্রাপ্ত ভোট ৪০ দশমিক ৯৭ (আসন ১৯৩), আর আওয়ামী লীগের ৪০ দশমিক ১৩ (আসন ৬২)। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৪৮.০৬ ভাগ ভোট (আসন ২৩১), আর বিএনপি পেয়েছে ৩২.৪৫ ভাগ ভোট (আসন ২৯+১)। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের মোট ভোটারদের অর্ধেকেরও কম সমর্থন পেয়েছে। আর বিএনপি আওয়ামী লীগের বাইরে আরো রয়েছে প্রায় বিশ ভাগ ভোটার। আবার দেশের সব জনগণই ভোটার নয়। এবং সব ভোটারই ভোট দেয়না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যখন বলেন যে, æক্ষমতায় গেলে সংবিধান ছুঁড়ে ফেলা হবে।”

তখন কী এই প্রতিভাত হয়না যে, বিএনপির সাথে দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনগোষ্ঠী এই সংবিধানকে মানেনা, গ্রহণ করে না।

তাহলে কী করে সাংবিধানিকভাবে এ কথা সংকলিত করা যায় যে, জনগণের চরম অভিব্যক্তিরূপে এ সংবিধান গ্রহণ করা হল।

এ কী সংবিধানের মালিক জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা নয়?

এ কী খোদ সংবিধানের সাথে অসাংবিধানিক আচরণ নয়?

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।