সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৬৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি অনন্তকালের জন্য অপরিসীম, অব্যক্ত, অশেষ পবিত্র দুরূদ শরীফ এবং ছলাত সালাম শরীফ।

স্বদেশের প্রতি মুহব্বত শুধু মহানই নয়; বরং অনিবার্য একটি গুণ। এই গুণের অধিকারী ছিলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। উনাদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদেরকেও উনাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত।

স্বদেশকে মুহব্বত করা ও দেশের কল্যাণ কামনা করা মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহি আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ ছিল। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার কল্যাণ কামনাকে এভাবে প্রকাশ করেছেন, “স্মরণ করুন, যখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেছিলেন যে, হে আমার প্রতিপালক, এ ভূখণ্ডকে নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং অধিবাসীদেরকে নানাবিধ ফলমুল দ্বারা জীবিকা দান করুন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বদেশের প্রতি মুহব্বতকে গ্রহণ করেছেন বলেই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নিজেও দেশের শপথ করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি শপথ করছি সে নগরীর, যে নগরীর আপনি অধিবাসী।” (পবিত্র সূরা বালাদ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১-২)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় মাতৃভূমির মুহব্বতকে বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিলেন। একারণে ঐতিহাসিক হিজরত মুবারকের প্রাক্কালে তিনি বিশেষ রহমতভরে স্বদেশকে সম্বোধন করে বলেছেন, “কত চমৎকার শহর আপনি, হে পবিত্র মক্কা শরীফ, আমি আপনাকে কত মুহব্বত করি।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

এই মুহব্বতের প্রতি সম্মান জানিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি আপনার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে বিধান করেছেন, তিনি (মহান আল্লাহ পাক) আপনাকে অবশ্যই স্বদেশে (পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে) ফিরিয়ে আনবেন।” (পবিত্র সূরা কাসাস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

স্বদেশের প্রতি মুহব্বত মানুষকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলে, স্বদেশের উন্নতি সাধনে সজাগ রাখে, দেশের জাতীয় সম্পদ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে। স্বদেশের প্রতি মুহব্বতে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে এবং দেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকবে, তাদের প্রতি বিশেষ পুরস্কারের আশ্বাসবাণী ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘এক দিন এক রাতের প্রহরা ক্রমাগত এক মাসের নফল রোজা এবং সারা রাত ইবাদতে কাটিয়ে দেয়া অপেক্ষাও উত্তম।’ (মুসলিম শরীফ)

যারা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশমাতৃকাকে গভীর মুহব্বত করে এবং মাতৃভূমির পাই ইঞ্চি সীমানা রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, “এক দিন ও এক রাতের সীমান্ত প্রহরা ধারাবাহিকভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনা ও সারা রাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)

স্বদেশের প্রতি মুহব্বতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের উপায় হিসেবে উল্লেখ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা দেশরক্ষার উদ্দেশ্যে সীমান্ত পাহারায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে, তাদের জন্য জান্নাত।” সুবহানাল্লাহ! “দুই প্রকারের চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। প্রথমত, সেই চক্ষু, যা মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ক্রন্দন করে; দ্বিতীয়ত, যে চক্ষু মহান আল্লাহ পাক উনার পথে (সীমান্ত) পাহারাদারি করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয় বা বিনিদ্র রজনী যাপন করে।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)

স্বদেশের প্রতি মুহব্বত বা স্বদেশের সম্পদ ও সর্বোভৌমত্ব রক্ষাকারী তথা সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের পরকালীন অশেষ প্রতিদান সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মৃত ব্যক্তির সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তার আমল বৃদ্ধি পেতে পারে না। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি কোনো ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের প্রশ্নোত্তর থেকেও সে বেঁচে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ ও আবূ দাঊদ শরীফ)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে স্বদেশের প্রতি মুহব্বত একধরনের পরিশুদ্ধ ভাবাবেগ, যা মুসলমানদের কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বসচেতন করে তোলে। দেশের স্বাধীনতা ও সম্পদ সুরক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ করে দেশের স্বার্থবিরোধীদের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে নিবেদিত করে।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার এই দেশের সরকার নাগরিকদের মাঝে স্বদেশের প্রতি মুহব্বতের ক্ষেত্রে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা নাগরিকদের দেয়নি এবং এ ধরনের কোনো তৎপরতাও সরকারের কর্মকাণ্ডে নেই। যা অতীব দুঃখজনক। তবে মুসলমান হিসেবে দেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানরা তাদের ঈমান রক্ষার্থে স্বদেশের প্রতি মুহব্বত তথা দায়িত্ব-কর্তব্যকে অস্বীকার করে মুসলমান থাকতে পারে না।

উল্লেখ্য, সীমান্তে প্রতিদিনই আমাদের দেশের লোকদেরকে ভারতীয় হানাদার বিএসএফ নির্বিচারে গুলি করে মারছে। কিন্তু তার বিপরীতে দেশবাসীর প্রতিবাদ কই? সম্প্রতি ভারত আন্তঃসংযোগ নদী প্রকল্পের দ্বারা এদেশের ৫৪টি নদীর পানি শুষে নেয়ার ষড়যন্ত্রমূলক পাঁয়তারা করছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে জিহাদ কই? ভারত হিন্দি সিরিয়ালের দ্বারা এদেশের শিশু-কিশারদের মুখে হিন্দু অপসংস্কৃতি ও হিন্দিভাষা তুলে দিয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ৫২-তে ভাষার জন্য রক্তদানকারী এদেশবাসীর তীব্র রোষ কই? এদেশের মা-বোন, নারী সমাজকে পরকীয়া, চরিত্রহীনতায় নিমজ্জিত করে দিচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ কই? ঈদের পোশাক থেকে মসলা- সব জায়গায় ভারতীয় অশ্লীল পোশাকের নির্লজ্জ আগ্রাসন। কিন্তু তার বিপরীতে স্বদেশের পণ্য কিনে ধন্য হওয়ার মানসিকতা কই? খুলনার রামপালে সুন্দরবন ধ্বংস করে ভারতের স্বার্থে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কাঙ্খিত জনসচেতনতা কই? এদেশে ১০ কোটি লোক চরম দরিদ্র। অথচ এদেশ থেকে লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে কীভাবে? স্বদেশের প্রতি যদি মুহব্বতই থাকে, তাহলে কানাডা, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, মালয়েশিয়ায় হাজার হাজার বাংলাদেশী সেকেন্ড হোম করে কী করে?

দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রীই পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে দেশের সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে আঁতাতের অভিযোগ করেছে। দেখা যাচ্ছে, রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়েই স্বদেশের প্রতি মুহব্বতের ঘাটতির অভিযোগ গুরুতর। তবে এ অভিযোগ থেকে রেহাই নেই সাধারণ মানুষেরও। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষ্যানুযায়ী ঈমানদার তথা মুসলমান থাকতে হলে কোনো অন্যায় দেখলে তথা স্বদেশের প্রতি কোনো অবিচার দেখলে, স্বদেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি কোনো অনাচার দেখলে হাত দিয়ে বাঁধা দিতে হবে। মুখে বলতে হবে।

কিন্তু এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান বাংলাদেশের প্রতি যেসব অন্যায় করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠছে কি? অথচ তারা দাবি করছে তারা মুসলমান। কিন্তু স্বদেশের প্রতি মুহব্বত তথা হক আদায় না করা পর্যন্ত কেউই পাক্কা মুসলমান হতে পারে না। থাকতে পারে না। দাবি করতে পারে না। এখন দেশের সব মুসলমানকে ঠিক করতে হবে- তারা কি ঈমান বিসর্জন দিবে? নাকী ঈমান রক্ষার্থে স্বদেশের প্রতি মুহব্বতে সক্রিয় ও সোচ্চার হবে।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। আর ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম দিচ্ছেন অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মহামহিম নিয়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়