সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক-এর জন্য যিনি উনার মহব্বত মা’রিফাত প্রাপ্ত, কাশফ বা অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন ওলী আল্লাহগণ সম্পর্কে ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহ পাককে বেশি ভয় করেন।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দরূদ ও সালাম। যিনি মহান ওলী আল্লাহগণ সম্পর্কে বলেন, “তোমরা মু’মিনের ফিরাসাত বা অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর। কারণ তারা আল্লাহ পাক-এর নূর দিয়ে দেখে থাকেন।”

কাশফ বা অর্ন্তদৃষ্টি সম্পূর্ণই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ স্বীকৃত। ফিরাসাত সম্পন্ন ব্যক্তিগণ আল্লাহর নূর দিয়ে দেখার কারণে অদৃশ্য, সুক্ষ্ম বা রূহানী জগতেরও অনেক কিছু অবলোকন করেন। তাছাউফের পরিভাষায় এটি কাশফ রূপে অভিহিত। এদিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জ্ঞানের মধ্যে এক প্রকার নিগূঢ় জ্ঞান রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ব্যতীত অন্য কেউই তা জানে না। তারা যখন এর প্রকাশ করেন আল্লাহ পাক সম্বন্ধে অনজ্ঞ ব্যক্তিগণ ব্যতীত কেউ তা প্রত্যাখ্যান করে না। (ফেরদৌস)

মুলতঃ কাশফ, অতিলৌকিক কোন বিষয় নয়। বরং ইসলামী জিন্দেগীর এটা সহজ প্রাপ্তি। এটা মু’মিনের ধন। বর্তমান স্যাটেলাইট যুগে বিধর্মীদের অত্যাধুনিক দূরদর্শনযন্ত্রের মোকাবিলায়, ক্ষেত্র ও ব্যাপকতার দিক থেকে কাশফ অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কাশফের অর্জন তাই, একদিকে যেমন বিজ্ঞানের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া, বিধর্মীদের হাতে মার খাওয়া, দুনিয়াবী শক্তিবিহীন, বর্তমানের মুসলমানদেরকে আত্মস্থ করতে পারে, রূহানী শক্তিতে বলীয়ান করতে পারে তেমনি মুসলমানের আক্বীদাগত বিষয়- ফেরেশ্তা, কবরের অবস্থা, বেহেশ্ত দোযখ অবলোকন, নবী আলাইহিস্ সালাম এমনকি আল্লাহ পাক-এর মেছালী ছূরতও দর্শনের দ্বারা হাক্বীক্বী মুসলমানে পরিণত হবার সবচেয়ে ফলদায়ক মাধ্যমের অন্তর্ভুক্ত।

কাশফ ওলী আল্লাহগণের ইলম। ক্বলব বা অন্তঃকরণ যখন কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসাসহ যাবতীয় নফসানিয়ত হতে পবিত্র থেকে পবিত্রতর হতে থাকে তখন সেথায় এক নূরের বিকাশ ঘটে। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যখন নূর হৃদয়ে প্রবেশ করে তখন হৃদয় প্রশস্ত হয়ে যায়।” প্রশস্ত হৃদয়ের সে শক্তি বা কাশফ দ্বারাই ওলী আল্লাহগণ জ্ঞান ও মা’রিফাতের শীর্ষে আরোহন করেন।

পক্ষান্তরে জাহেরী আলেমগণ কেবল চিন্তা ও ফিকিরের দ্বারাই ইসলাম বুঝতে চেষ্টা করেন। এতে তারা প্রকারান্তরে নফস ও শয়তানের ওয়াসওয়াসা দ্বারাই প্রতারিত হয়। অন্তরস্থ অহঙ্কার, রিয়া, লোভ, হিংসা ইত্যদি বদগুণের কারণে কাশফের অভাবে যে জ্ঞান লাভ হয় তাকে শুউর বলা হয়। আর ক্বলবের পর্দা খুলে যাবার যে জ্ঞান লাভ হয় তাকেই ইলম বলে মূল্যায়ন করা হয়।

কাশফের একান্ত প্রয়োজনীয়তা ও প্রভূত উপকারীতার প্রেক্ষিতে তাই মুহাক্কীকগণ কাশফহীন ব্যক্তিকে আলেমরূপে স্বীকারই করেন না। কারণ কাশফহীন ব্যক্তি মানেই দুনিয়ার লোভ, অহঙ্কার, রিয়া, ক্রোধ, হিংসা ইত্যদি নফসানিয়তে আক্রান্ত ব্যক্তি তথা নফসের পূজারী- আব্দুন নফস বা নফসের বান্দা। শাইখুল হাদীস, মুফাস্সিরে কুরআন, মুহাদ্দিস, মুফতী ইত্যদি কিতাবী সনদ অর্জনের পরও কাশফহীনতার কারণে দ্বীনি সমঝ ও হাক্বীক্বত দর্শন থেকে তারা পুরোই আন্ধা। তাই কাশফহীন এসব শাইখুল হদস, মুফতে, মুহদেসগণের পক্ষেই সম্ভব হয় মাওসেতুং এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, খ্রিস্টান প্রোটেষ্ট্যান্টদের মৌলবাদ, ইহুদী-নাছারার গণতন্ত্র, ব্লাসফেমী, নির্বাচন ইত্যাদি হারাম, কুফরী, বিদ্য়াতী কাজ এস্তেমাল করা। কাশফের বিপরীতে তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “তাদের ক্বলবের উপর পর্দা পড়ে রয়েছে।”

পাশাপাশি জ্ঞাতব্য, কাশফের গুরুত্ব এই নয় যে, কাশফকেই মূল বস্তুবলে মূল্যায়ন করা। কাশফ জাহির করার নামে ইমাম মেহেদী আলাইহি ওয়া সালাম কয়েক বছর পরেই আবির্ভুত হবেন অথবা ওমুক হবে, তমুক শেষ হবে ইত্যাদি ব্যক্ত করা নেহায়েত বালখিল আচরণ রূপেই গণ্য।

স্মর্তব্য, কাশফের মূল ব্যবহার হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার আসমা, সিফত, আফয়াল ও তাজাল্লিয়াতের সঠিক ইলম-হাসিল করা। একে কাশফে ইলাহী বলে অভিহিত করা হয়।

বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রায় সর্বস্তরে কাশফ-বিহীন, নামধারী আলেমের দৌরাত্ম থাকায়, কাশফ সম্পর্কে সাধারণের ধারণা খুবই কম। নামধারী আলেমের গাফলতির কারণে তাদের মাঝে ভুল বিশ্বাস জমে আছে যে, কাশফ অর্জন খুবই দূরূহ অথবা খুব কম লোকেরই তা হতে পারে।

মূলতঃ এটিকেবল অমূলক ধারনাই নয়, নিছক ওয়াসওয়াসাও বটে। আল্লাহ পাকে বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমান বান্দাই সহজে এই কাশফ অর্জনে সক্ষম।

স্মর্তব্য কাশফ, তাছাউফের বিষয়। হক্বানী পীর ছাহেবের হাতে বাইয়াত হয়ে ক্বলবী যিকিরের মাধ্যমেই এ অমূল্য প্রাপ্তি সম্ভব। তবে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ওলী আল্লাহর ছোহবতে, তাঁর নেক দৃষ্টিতে এ প্রাপ্তি সহজেই ঘটে। এমনটি ঘটেছিল, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গাউসুল আযম, ইমামুল আইম্মা, হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওসীলায়। বর্তমান রবীউস সানী মাসে তাঁর মুবারক ফাতেহা-ই-ইয়াজদহমের প্রাক্কালে আমাদেরও তাই আরজু, মহান আল্লাহ পাক যেমন আমাদের সকলকে, বর্তমান জামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে জামান, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত পীর সাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহবতের ওসীলায় সহজেই এ নিয়ামত নসীব করেন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়