সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন “মু’মিনদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার ইহসান যে, তাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাযকিয়া মুবারক (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত মুবারক শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলোনা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)

“নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি, সৃষ্টি মুবারক করেছি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)

তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক এনেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান। তিনি মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, সীমাহীন দয়ালু।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৮)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ওই মহাসম্মানিত হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখন তুমি কোন বিপদে-আপদে বা দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হও তখন তুমি আমার নিকট দো‘আ করলে আমি তোমার দুঃখ-দূর্দশা দূর করে দেই, যখন তোমার জমিনে ফসল হয় না, তখন তুমি আমার নিকট দো‘আ করলে আমি তোমার ক্ষেতে ফসল ফলিয়ে দেই, যখন তুমি কোন জনমানব শূন্য স্থানে, (খাল-বিল, নদী বা পানিতে) নির্জন প্রান্তরে, নির্জন মরুভূমিতে অথবা বনে, ঝোপ-ঝার, জঙ্গলে থাকো আর তোমার বাহন হারিয়ে যায় বা বাহন না থাকে, তখন তুমি আমার নিকট দো‘আ করলে আমি তোমার বাহন ফিরিয়ে দেই, বাহনের ব্যবস্থা করে দেই।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ মুসলমান তাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক, মান মুবারক, দয়া-ইহসান মুবাবার সম্পর্কে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও অবগত নয়। উনার সম্পর্কে ইলম অর্জনে নিবেদিত নয় এবং উনার এতটুকু অনুসরণ অনুকরণে বিন্দু মাত্রও স্বপ্রণোদিত নয়। অথচ উনিই রিযিক বন্টনকারী যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন- দাতা আর আমি হচ্ছি বন্টনকারী। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে: “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজের জীবন থেকে আমাকে বেশি মুহব্বত করতে না পারবে।”

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রেক্ষিতে জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা ব্যক্তি মুসলমান থেকে রাষ্ট্রের প্রতি- আমরা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে পেরেছি কি?’

অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আলোচনা মুবারককে বুলন্দ থেকে বুলন্দতর করেছি।”

কতটুকু বুলন্দ? এতটুকু যে- মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উনার সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তি শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমান হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ‘মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ না পড়বেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলামে সাধারণ শিক্ষায়, সর্বোত্তম আদর্শ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য নিবন্ধ স্থান পায়নি। নাউযুবিল্লাহ! এভাবে পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করে এ দেশের মুসলমান সন্তান প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কিত কোনো ইলম বা জ্ঞান হাছিল না করেই। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর মুসলমান নাগরিকটি থেকে যাচ্ছে তার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্বন্ধে নেহায়েত অজ্ঞতাবস্থায়। আর সেক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনে সর্বোচ্চ বাজেট তথা হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট করেও সুশিক্ষিত সন্তান পেতে জাতি করুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষাঙ্গনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসঙ্গে এত সঙ্কুচিত হবার ক্ষেত্রটি মূলতঃ ব্রিটিশ বেনিয়াদেরই কর্মফসল। ১৮১৩ সালে কোম্পানী এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম নজর দেয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৮২৩ সালে শিক্ষার ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ ও পরামর্শদানের জন্য ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ নামে সংস্থা গঠিত হয়। মুসলিম ভাবধারায়, ফার্সী ভাষায় শিক্ষাদানের সুপারিশ করা হলেও ইংরেজ বেনিয়ারা প্রভূভক্ত রামমোহনগং ও খ্রিস্টান মিশনারীদের সহযোগিতায় মুসলমানদের সে ন্যায্য দাবীকে ভূলুণ্ঠিত করে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে বেন্টিঙ্কের সময় তার প্রিয়ভাজন, খ্রিস্টান মিশনারীদের মদদদাতা মেকলে ১৮৩৫ সালে তার কুখ্যাত মেমোরেন্ডমে সম্পূর্ণ ব্রিটিশ ধাঁচে এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার কথা বলে। এক্ষেত্রে তার অহমিকা ভরা বক্তব্য এখনো স্মর্তব্যের বিষয়। সে বলেছিল ‘আমরা এমন একটি শ্রেণী তৈরি করবো, যারা রক্তে গোশতে এদেশীয় হলেও চিন্তা-চেতনায় হবে বিলেতী।’ বলা চলে, সে হীনউদ্দেশ্য সাধনে ব্রিটিশরা সার্থক হয়েছে। আর সেটি তারা করতে পেরেছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিবর্জিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক শূন্য সেক্যুলার শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমেই।

বলাবাহুল্য, ব্রিটিশ-উত্তর, চিন্তা-চেতনায় কুখ্যাত মেকলে কথিত বাঙালী সাহেবরাই এ দিকটি সঞ্জীবিত করে রেখেছে। তথাকথিত কুদরাত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনসহ বর্তমান কুফরী শিক্ষানীতি মূলতঃ তারই প্রবাহ।

স্মর্তব্য, বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষা অর্থাৎ হালাল কামাই করার জন্য যে শিক্ষা যা হুনরের অন্তর্ভুক্ত। তার প্রয়োজনীয়তা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার  মধ্যে বলা হয়েছে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে তার সাথে সম্মানিত ইসলামী আদর্শ উনার সমন্বয়। অর্থাৎ সর্বকালের, সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদর্শের যোগসাধন ও রূপায়ণ।

উল্লেখ্য, এদেশের রাষ্ট্রদ্বীন হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ উনার উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র ইসলাম উনার বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?

বলাবাহুল্য, ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরিল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব হ্যাঁ বোধক হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরম-পরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

প্রসঙ্গত জান্নাতের সুসংবাদ এবং জাহান্নামের ভয় এখানে উল্লেখ্য।

বলাবাহুল্য, দেশের মুসলমান এখনও জান্নাত আশা করে জাহান্নামকে ভয় পায়। আর জান্নাত-জাহান্নামের আমল সম্পর্কেও তারা অজ্ঞাত নয়। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে জান্নাত-জাহান্নাম-এর মূলত মালিক- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা মুবারক, মূল্যায়ন মুবারক, শান-মান মুবারক অনুধাবন, আদেশ-নিষেধ মুবারক পালন থেকে তারা কী করে পিছিয়ে থাকতে পারে?

কাজেই মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।

মূলত; সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র ১২ই শরীফ যথাযথ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের দ্বারাই মুসলমান সে সম্মানিত ঈমানী চেতনা ও প্রেরণা তথা কুওওয়াত বা নিয়ামত পাবে।

খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়