সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক উনার জন্য। তিনি যা জানেন, আমরা তা জানিনা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরূদ শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সালাম শরীফ। উনাকে সৃষ্টির শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সব মহাসম্মানিত ইলম বা জ্ঞান মুবারক দেয়া হয়েছে।

হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ও কিয়ামতের সম্পর্ক দু’আঙ্গুলের মত। দু আঙ্গুলের মাঝে যেমন ব্যবধান কম ঠিক তেমনি আমার আর্বিভাবের পর খুব তাড়াতাড়ি কিয়ামত এসে যাবে।” প্রসঙ্গতঃ কিয়ামতের আলামত সম্পর্কেও আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বহু নিদর্শন মুবারক ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, “তখন বেপর্দা, বেশরা তথা ব্যভিচার চরম বৃদ্ধি পাবে, হত্যা-সন্ত্রাস ব্যাপক হারে হবে, মদণ্ডনেশার বহুল প্রচলন হবে এবং ইলম উঠে যাবে ও আলিম নামধারীরা জায়গা দখল করবে, যাদের ইলমের ব্যাপ্তি ও গভীরতা কোনটাই থাকবেনা।”

উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে, বর্ণিত নিদর্শন সবগুলোই আক্ষরিকভাবে জাহির হলেও তন্মধ্যে শেষোক্ত ইলম উঠে যাওয়ার বিষয়টিই অন্য সব অরাজকতার মূল বলে বিবেচিত। মূলতঃ ইলম উঠে যাওয়ার বিষয়টি এই নয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ বা ইসলামী কিতাবাদি অপ্রতুল হয়ে পড়বে। বরং এসব উপকরণ আরো নতুন প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার গবেষণালব্ধ পুস্তক এর সহজলভ্যতার পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক নানা নতুন অনুষঙ্গও যোগ হচ্ছে। এর সাথে সাথে ইউটিউব, অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন চ্যানেলে আলিম নামধারীদের প্রাদুর্ভাবও অতিমাত্রায় প্রকট হয়ে উঠছে।

অধুনা কথিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হরেক রকমের বিষয়ে গবেষণার নামে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী বের হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ ‘কামিল’ বা দাওরায়ে হাদীস ডিগ্রীধারী হাজার হাজার ব্যক্তির সূচনা হচ্ছে। কিন্তু হাক্বীক্বত এই যে, ঈমান যেন ঐসব তাত্ত্বিক ডিগ্রীধারীদের কণ্ঠনালীর নীচে নামেনা। আর আমলের ক্ষেত্রে, ওদের উদাহরণ ঐরকম যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, কিয়ামতের পূর্বে বহু স্থানে অনেক সুন্দর সুন্দর অট্টালিকার মসজিদ তৈরী হবে, অতি আকর্ষণীয় ও মূল্যবান কারুকার্য খচিত নকশাময় স্থাপত্য তৈরী হবে কিন্তু সেগুলো হবে নিতান্তই আমলশূন্য।

উল্লেখ্য, হালে দশা এতই করুণ যে, শুধু আলিম নামধারীদের ক্ষেত্রেই ইলম উঠে যাওয়ার বিষয়টি সমালোচনার ডোরে সীমাবদ্ধ হবার অবকাশ রাখেনা, পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানেরও, মুসলমানীয় অনুভূতি ও উপলদ্ধি তথা ঐতিহ্যগতভাবে লব্ধ প্রয়োজনীয় সাধারণ ইলম ও আক্বল এখন এতটা পর্যুদস্থ হয়েছে যে, এ পর্যায়ে কাউকে মুসলমান বলে স্বীকার করা দুস্কর।

পাশাপাশি আলিম নামধারীরা, একটা গড্ডালিকা প্রবাহের প্রক্রিয়ায়, সাধারণ মুসলমানের কাছে তাদের তথাকথিত ইসলামী ব্যক্তিত্বের ভূমিকা আগলে রেখেছে।

অধুনা আলিম নামধারীদের একটা মহল সর্বদা ‘প্রসূতির ঘরে অবস্থানকারী বিজ্ঞানের’ মাপকাঠিতেই পবিত্র দ্বীন ইসলামকে বর্ণনা করতে প্রচেষ্ট হয়ে পড়ছে। এরা স্বশরীরে পবিত্র মিরাজ, জ্বীন জাতির অস্তিত্ব ইত্যাদি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মৌলিক বিশ্বাসকেই কেবল অবিশ্বাস করছেনা, সাথে পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ, বিশ রাকায়াত তারাবীহ, এমনকি পবিত্র শবে বরাত, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফসহ মুত্বহহার, মুত্বহহির, ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উনার অকাট্ট সুমহান তাজদীদ মুবারককে তারা অস্বীকার করছে। অথচ উনার সাথে কি ইলম, কি সমঝ এবং আমল ও রূহানীয়তের দিক থেকে এসব নামধারী আলিম তথা হারাম ছবি নির্ভর প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরণের অনলাইন ভিত্তিক চ্যানেল তথা বিভিন্ন টিভি চ্যানেল যথা এ. টি. এন, টি.ভি মার্কা মাওলানা, মুফাস্সীরের তুলনা ঐরকমই যেমন রয়েছে হযরত ঈসা মসীহ্ আলাইহিস্ সালাম ও দাজ্জাল মসীহের মধ্যে পার্থক্য। বরং তার চেয়েও অকল্পনীয় বেশি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গতঃ এদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “কিয়ামতের আগে কিছু দাজ্জালের চেলা বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষ শোনেনি।”

নামধারী আলিম মহলের সাথে সাধারণের একটা বিরাট অংশও রয়েছে। যারা ইসলামের আলোচনা করতে কেবল ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, কাশ্মীর ইত্যাদি স্থানে মুসলমানদের উপর আক্রমণ হচ্ছে শুধু সে তথ্যই করুণ সূরে আওয়াজ তুলে ইসলাম দরদী সাজতে চায়, মুসলমান হিসেবে নিজের পূর্ণ কর্তব্য পরায়ণতার পরিচয় দিতে চায়। অথচ মুসলমান কেন আজকে এরূপ দুদর্শাগ্রস্থ এবং কোন পথে তার উদ্ধার? সে বিষয়ে তারা বড়ই নির্বিকার। দেখা যাচ্ছে কলমে এরা মার্কিনীদের বিরুদ্ধে বিশেষ বিষোদগার করলেও, মুখে ইহুদীদের বিরুদ্ধে বললেও কার্যতঃ এরা সেই মার্কিনী-ইহুদীদেরই অনুকরণ-অনুসরণ করে। ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব গ্রহণ করা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, মৌলবাদ চাওয়া, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, নির্বাচন করা, গণতন্ত্র করা ইত্যাদি ইহুদী নাছারার কর্মসূচীতেই নিজেদের সম্পৃক্ত রাখে। অথচ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন নিয়ম-নীতি তালাশ করে, তার থেকে তা কখনই গ্রহণ করা হবেনা। বরং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

পাশাপাশি আরেকটি মহল রয়েছে যারা মনে করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে যেনোতেনো কিছু প্রকাশ পেলেই বুঝি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মাহাত্ম্য বাড়ে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, দাজ্জালের ডান হাতে বেহেস্ত থাকবে, বাম হাতে দোযখ থাকবে। উল্লেখ্য বেহেশত, দোযখের ধারণা ইসলাম থেকেই উৎসারিত। আর সে ইসলামী চেতনা দিয়েই দাজ্জালও ধোকা দিতে চাবে এবং মানুষও ধোকায় পড়বে।

মূলতঃ এর উপজীব্য বিষয় হল পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামেই আলোড়িত হওয়া যাবেনা যদি তার ভিত্তিটি, তার আদলটি, তার ব্যাপ্তিটি তা পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ভিত্তিক না হয়। আর পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মূল্যায়ন না করে, শুধু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামেই আলোড়িত হওয়া, ইসলামী ইলমের পরিচয় নয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার এ বিষয়টিকেই ‘যখন ইলম উঠে যাবে’ বলে সাবধান করা হয়েছে।

মূলতঃ এ সাবধানতার সুফল পেতে হলে ইলমে লাদুন্নী সমৃদ্ধ মহান ব্যক্তিত্ব সুলত্বানুন নাছীর সাইয়্যিদুনা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার ব্যতীত আর কোন বিকল্প নেই। (আমীন)

 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়