সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮১তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।

অধিকাংশ ছহীহ হাদীছ শরীফ গ্রন্থের শুরুতেই সংকলিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই সব কাজের ফলাফলের মূল হচ্ছে নিয়ত অনুযায়ী।” প্রসঙ্গত সংবিধানকে বলতে হয় কথিত রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়তসমূহ। সংবিধানের দেখানো পথেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।”

১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদ সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য প্রথম সংবিধান গৃহীত হয়। গণপরিষদে সংবিধানের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৎকালীন সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতিক হয়ে বেঁচে থাকবে।” (সূত্র: স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন ও পটভূমি)

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা, সমালোচকরা সংবিধানে পরস্পর বিরোধী অনুচ্ছেদ আছে বলে লেখালেখি করেন। আলোচনা করেন। মন্তব্য করেন। আবার রাজনীতিক, বিচারক, আইনজ্ঞরা ‘সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক’ কথাটিও প্রায়ই উচ্চারণ করেন। আবার সংবিধানে জনস্বার্থ পুরো সংরক্ষিত হয়নি বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। পাশাপাশি সংবিধানে জনমত পুরে প্রতিফলিত হয়নি বলেও অভিজ্ঞমহল মনে করেন। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান জনগণের আশা আকাঙ্খার মূর্তপ্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে- এই ছিল সংবিধান প্রণয়নকালীন প্রত্যাশা।

এই প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু হয়েছে? জনগণের প্রাপ্তি কতটুকু হয়েছে? এ বিষয়ে চু-চেরা বিশ্লেষণ তো হয়ইনি। এমনকী নূন্যতম অনুসন্ধানও হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক সে চেতনা বা প্রেরণা আজও অর্জন করতে পারেনি। সংবিধান বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিচারবিভাগও এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়নি। ভূমিকা রাখেনি। প্রশাসনও আদৌ পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। কোনো কিছুই করেনি। সরকারের জরীপ বিভাগ অন্ধকারে থাকলেও কার্যত বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। এই ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের কাছে সবচেয়ে বড় অনুভূতি, স্পর্শকাতর বিষয় হলো তাদের ঈমান। কিন্তু ঈমানের যত অনুভূতি, যত দাবী, যত আবহ, যত কর্মকা-, যত অধিক্ষেত্র, যত নিয়ম, যত নিষেধ তার প্রতিফলন- সংবিধানে আছে বলে মুসলমানরা কি মনে করতে পারছেন?

উল্লেখ্য, দেশে প্রায় ৩০ লাখ মসজিদ-মাদরাসা রয়েছে। প্রতি জুমুয়াবার জুমুয়ার নামাজ পড়ছেন প্রায় সাত কোটি মুসলমান। ঈদের নামাজ পড়ছেন তারচেয়েও বেশি। যা দৃশ্যমান। এছাড়া ঘরের ভিতরে মহিলা, বালিকারা নামায পড়ছেন। ৩০ কোটি জনগণ হিসেবে সব মিলিয়ে এদেশে নামাজীর সংখ্যা ২৫ কোটিরও বেশি। নামাজে সবাই কি বলছেন? মাদরাসাগুলোতে ওস্তাদ-শিক্ষক কি পড়াচ্ছেন? কি পড়ছেন? কি বলছেন? সারাদেশে লক্ষ লক্ষ ওয়াজ মাহফিলে কি আলোচনা হচ্ছে? কিন্তু সংবিধানে এসব ইসলামী নির্দেশনার প্রতিফলন কোথায়?

ঈদ, জুমুয়া, পাঞ্জেগানা নামাজে, দোয়ায়, মাদরাসায়, মাহফিলে কথাবার্তায় এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান হাজার কোটিবার মহান আল্লাহ পাক উনাকেই হুকুমদাতা, মালিক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জীবনের অনুপম ও উত্তম আদর্শ বা উসওয়ানেহ হাসানা বলে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধারণ করছেন এবং মুখে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। কিন্তু সংবিধানে, রাষ্ট্রযন্ত্রে এর বহিপ্রকাশ কোথায়? এসব ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন কোথায়?

এদেশে ব্যক্তি মুসলমান প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের আযানে ও ইক্বামতে ২০বার করে শুনে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং বিতরসহ ৫ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে তাশাহ্হুদে কমপক্ষে ১৭বার সাক্ষ্য দেয়, “……ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ।” অর্থাৎ ব্যক্তি মুসলমান দৈনিক ৩৭ বার সাক্ষ্য দেয়, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

অপরদিকে খোদ সংবিধানেই ২(ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিধিবদ্ধ আছে। আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম নিজেই পরিপূর্ণ। কিন্তু সংবিধানের অন্যান্য ধারায় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সম্পৃক্ততা আছে কতটুকু? সামঞ্জস্যতা আছে কতটুকু? সহঅবস্থান আছে কতটুকু? কার্যত একটুও নেই। এবং মূলত বাকী সব ধারাই সাংঘর্ষিক। তাহলে এ সংবিধানে জনগণের আশা, আকাঙ্খা, চিন্তা-চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে কতটুকু?

সত্যিকার অর্থে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মনে করেন, বর্তমান সংবিধানে তাদের আশা-আকাঙ্খা, চিন্তা-চেতনার আদৌ প্রতিফলন হয় নাই। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে জনগণের তথা ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের চিন্তা-চেতনার, আশা-আকাঙ্খার মূর্তপ্রতীক হয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংবিধানের ধরণটাই বদলাতে হতে হবে। এবং অনিবার্যভাবে তাতে সম্মানিত ইসলামী আদর্শই পুরোই অন্তর্ভুক্ত এবং সমুন্নত করতে হবে। সাথে সাথে সঙ্গতকারনেই সরকারের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের নিস্ক্রিয়তায়, সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণকেই তার জন্য নিবেদিত ও সোচ্চার হতে হবে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা জালিমও হয়োনা, মজলুমও হয়োনা।”

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।

ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আল ওয়াসীলাতু ইলাল্লাহ, আল ওয়াসীলাতু ইলা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। আর ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম দিচ্ছেন অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মহামহিম নিয়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়