সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৭২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

সম্প্রতি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে মন্ত্রীসভা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর আকস্মিক ও গুরুতর অসুস্থতার প্রেক্ষিতে এ দোয়ার আহ্বান জানায় মন্ত্রীসভা। বলাবাহুল্য দেশবাসী দোয়া করেছে এবং সে দোয়া কবুলও হয়েছে। এ লেখা পর্যন্ত ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আগের থেকে অনেক ভালো এবং ক্রমাগত ভালোর দিকে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, সেতু মন্ত্রীর অসুস্থতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অসহায়ত্ব চোখে পড়ার মতো। রাষ্ট্রকে বলা হয় শক্তিশালী দৈত্যের মতো। কিন্তু সে দৈত্যটিও নিতান্তই নিস্ক্রিয়, নির্জীব, নিথর অমোঘ মৃত্যুর ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রযন্ত্র সে অসাহায়ত্ব স্বীকার করেই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে এবং সে দোয়ার সুফলও পেয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

এদিকে এ ঘটনার কিছু দিন আগে পুরান ঢাকায় আগুন লাগে। এবং সে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় শ’খানেক লোক মারা যায়। বীভৎস হয় অনেক লোক। বিধ্বস্ত হয় ঘর-বাড়ী অবকাঠামো। কিন্তু অক্ষত অবিচল দাঁড়িয়ে থাকে ছয় তলা মসজিদ। তবে আগুন নিভানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের দমকল বাহিনীসহ অন্যান্য ইউনিট সর্বাত্মকরণে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সর্বোতভাবে সফল হতে পারেনি। অতি আংশিক সফল হয়েছে। এক্ষেত্রেও রাষ্ট্রযন্ত্রের অসহায়ত্ব প্রকটভাবে প্রকাশ পায়।

কেউ কেউ বলেছেন যে, কেমিক্যালের কারণেই দুর্ঘটনা। এসব কথা অর্বাচীনের মতো। কারণ কেমিক্যাল এতোদিনও ছিল তখন দুর্ঘটনা হয়নি কেন? অপরদিকে বিদেশে যেখানে রাস্তা অনেক প্রশস্ত; নিয়ম-কানুন শক্ত, উপযোগীতাও যথেষ্ট। তারপরেও সেখানে যান-বাহনে দুর্ঘটনা ঘটে এবং আমাদের দেশের চেয়েও অনেক বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে।

মূলতঃ নাগরিক তথা ব্যক্তির দুরাবস্থা হোক, আর যানবাহন বা অবকাঠামোর দুর্ঘটনা হোক আর তথাকথিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক সব কিছুতেই কিন্তু রাষ্ট্রের অসহায়ত্বই ধরা পড়ে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের অজ্ঞতা বিশেষভাবে প্রতিভাত হয়- যখন অসহায় অবস্থায় রাষ্ট্রের ত্রাণকর্তা কে সেটা নির্ণয় করতে রাষ্ট্র করুনভাবে ব্যর্থ হয়।

বস্তুতঃ রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। অভিজ্ঞমহল যাকে বায়বীয় বলে থাকেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র। আর রাজনৈতিক মতবাদ গণতন্ত্র চালু বিধায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। অথচ এদেশে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্টের দ্বীন অনুযায়ী এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল- পবিত্র দ্বীন ইসলাম। যেমন উপজাতি অনেক সম্প্রদায় থাকার পরও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা হয়েছে বাংলা। ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পরিবর্তে যারা ধর্মনিরপেক্ষতাকে পছন্দ করে তাদের যুক্তি হলো- “মানুষ ধর্ম কর্ম করে পরকালে বিশ্বাসের জন্য। কিন্তু রাষ্ট্রের কী কোন পরকাল আছে?” মানুষ ইন্তিকাল করলে জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে। কিন্তু রাষ্ট্রের কী কোনো জান্নাত-জাহান্নাম আছে? রাষ্ট্রের কী কোন মৃত্যু আছে? রাষ্ট্রের আকার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের মৃত্যু নেই। তাই রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারেনা। নাঊযুবিল্লাহ!

এসব প্রতারণামূলক কথা যারা বলেন, তারা মূলতঃ শরীয়তের পরিভাষায় জালিম এবং জাহিল।

প্রথম কথা হলো এই্ যে, রাষ্ট্রের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য রাষ্ট্র? মানুষের জন্য যদি রাষ্ট্র হয় তাহলে মানুষের ধর্ম বা দ্বীন আছে। যারা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে তাদের ধর্ম বা দ্বীন রয়েছে। যাদের জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাদের ধর্ম বা দ্বীন রয়েছে। যাদের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের জাহান্নাম বা জান্নাত রয়েছে। যে নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের জন্ম হয় সে নাগরিকের মৃত্যু বা পরকাল রয়েছে। আবার দুনিয়াবী ভাষায় রাষ্ট্রযন্ত্রের নিজস্ব মৃত্যুও রয়েছে। এ ধরণের মৃত্যু ঘটলে তখন তাকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে আখ্যা দেয়া হয়।

বলাবাহুল্য, আমাদের বাংলাদেশকে ব্যার্থরাষ্ট্র আখ্যা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কম ষড়যন্ত্র করা হয়নি। তবে ষড়যন্ত্র যেটা কোটিভাগ সফল হয়েছে সেটা হলো ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসার। ধার্মিক মুসলমান জান্নাতে যাবেন সবাই জানেন, মানেন। কিন্তু মুলমানকে কখন ধার্মিক মুসলমান বলা যাবে? যখন মুসলমান শরীয়তের পূর্ণ পায়রবি করবেন। শরীয়তের পায়রবি কি? যেটা হালাল তা করবেন; আর যা হারাম তা থেকে বিরত থাকবেন। হারাম যা কিছু তা থেকে বিরত থাকার জন্যই ধার্মিক মুসলমানকে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত দেয়া হবে। হারাম বলতে বেপর্দা-বেহায়া, গান-বাজনা, সিনেমা-নাটক, সুদ ঘুষ, মদ-জুয়া ইত্যাদি মোটা দাগের হারাম সম্পর্কে সবাই অবগত। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে এসব হারাম কাজের ব্যাপক পৃষ্টপোষকতা রাষ্ট্রযন্ত্র করছে। আর তা করছে ওই ধর্মনিরপেক্ষতার কারণেই। আর এসব আবহে বা প্রবাহে পরিচালিত হবার কারণে একজন মুসলমান তার দ্বীন অনুযায়ী জাহান্নামী হন। নাঊযুবিল্লাহ! কাজেই ধর্মনিরপেক্ষতা মূলতঃ মুসলমানের জন্য ধর্মহীনতা। মুসলমানের ধর্মীয় স্বাধীনতা তখনই নিশ্চিত হয় যখন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শতভাগ পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। শতভাগ ইসলামী আবহের যোগান দেয়া হয়। তখনই একজন মুসলমান স্বতঃস্ফূর্তভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালন করতে পারেন। স্বাচ্ছন্দে জান্নাতে যেতে পারেন। কাজেই আবারো বলতে হয়- ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুলমানের জন্য রাষ্ট্রদেশ তথা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য মুসলমান নয়।

এদিকে চুরিহাট্টার জনগণ আগুনের মুখোমুখি হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকেই বারে বারে ডেকেছেন। সেখানে কেউ এমনকি বিধর্মীরাও ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ বলে উচ্চারণ করেনি। এবং কথিত রাষ্ট্রকে উল্লেখ করে তার কাছে আশ্রয়ও চায়নি। অপরদিকে সড়ক পরিবহান মন্ত্রীর মৃত্যুসন্ধিকালেও তার শুভাকাঙ্খীরা ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ বলে প্রার্থনা করেনি। তারা দোয়া করেছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে। এবং গোটা দেশবাসীও যাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করেন সে আহ্বানও রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্বাহীরা উদাত্ত কণ্ঠে করেছেন।

প্রতিভাত হচ্ছে- সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। রাষ্ট্র নয়। রাষ্ট্র আক্ষরিক অর্থেই বায়বীয় ধারণা। ঈমানদার মুসলমান এই বায়বীয় ধারণার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা। নিছক ধারণার কাছে নিজেদের নিবেদিত করতে পারেনা। আত্মসমর্পণ করতে পারেনা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কাছে মুসলমানের ঈমান আমল নিরাপদ থাকতে পারেনা। ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসে অটল যা কোন মুসলমান মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং কথিত রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহায্য চাইতে পারেনা। কিন্তু শুধু ব্যক্তি মুসলমান নন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ কর্তাব্যাক্তিরাও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ছাপিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করেছেন। দোয়া চেয়েছেন। অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার অবসান এখন সময়ের জোর দাবী।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়