সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২০৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব হামদ কেবল সবকিছুর স্রষ্টা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সব ছলাত-সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার প্রতি। উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের প্রতি। সাইয়্যিদুস ছিদ্দীক্বীন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি। জুমাদাল উখরা মাসে এ মহান ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিছাল শরীফ-এর মাস হওয়ায় তা বিশেষ মর্যাদা ও তাৎপর্যের দাবি রাখে।
মূলত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বোত্তম এ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনার মর্যাদার মূল্যায়ন করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। উনার ভূয়সী প্রশংসায় বহু আয়াত শরীফই নাযিল হয়েছে। সূরা তওবা-এর চল্লিশ নম্বর আয়াত শরীফটি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। এই এক আয়াত শরীফ-এই উনার তিনটি প্রশংসার উল্লেখসহ উনাকে ‘ছানী ইছনাইন’ (দুজনের দ্বিতীয়) বলে সুমহান মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তিবরানী শরীফ-এর হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই সর্বোত্তম মানুষ।” রসূল আক্বদাস ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার সম্পর্কই ছিল প্রগাঢ়। অধিক পছন্দের, মর্যাদার ও অধিক আস্থার। উনার চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র মুবারক-এর সাথে সর্বাধিক সামঞ্জস্যশীল এবং একীভূত। যে কারণে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেননি, মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর জানাযায়। বিমর্ষ হননি হুদাইবিয়ার সন্ধিতে। এমনকি হুঁশ হারাননি আজীবনের আক্বা হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ-এ।
স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই ছিল মূল মূল্যায়ন। এর ভিত্তিতেই হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খলীফা হিসেবে মুবারক অধিষ্ঠান। অতএব প্রতিভাত হয় যে, “তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামে গণতন্ত্রের ভিত তিনিই সর্বপ্রথম স্থাপন করেন।” নাউযুবিল্লাহ! এসব কথা সর্বৈব মিথ্যা। তাই তিনি জনগণের নির্বাচিত খলীফা হিসেবে পরিচিত না হয়ে খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মনোনীত হন।
উল্লেখ্য ইতিহাসে বর্ণিত দামেস্কের উমাইয়া ও বাগদাদের আব্বাসীয় খলীফাদের কথিত খিলাফত ৬৫৬ হিজরী বাংলা ১২৫৮ সালে ব্যাহত হয়। অতঃপর ১২৬২ সালে মিসরে এ খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২৫০ বছরের বেশি অব্যাহত থাকে। এর পরে ১৫১৭ সালে তুর্কী সুলতান সেলিম খিলাফতের ধারাবাহিকতা জারি করেন। খিলাফতের ধারণা পরবর্তীতে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকে। আর তুরস্কে কামাল পাশার গণতন্ত্র চর্চার কারণেই সে ধারণা অবলুপ্ত হয়। অথচ সে গণতান্ত্রিক রীতিতেই খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্রিটিশ আমল থেকেই, উপমহাদেশের মুসলমানগণ বিভ্রান্তির, বিড়ম্বনার শিকার হয়ে আসছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নিখিল ভারত খিলাফত কমিটি’ গঠন থেকে একইরূপে চালিত সকল জমিয়ত, আঞ্জুমান বা ইসলামিক পার্টি ঐক্যজোট, জামাত, শাসনতন্ত্র, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ইত্যাদি মুসলমানদের ভুল দিক নির্দেশনা, ব্যর্থতা আর হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পূর্বোক্ত কমিটির কার্যকলাপে প্রথম পর্যায়েই বাংলার আট হাজার এবং পরবর্তীতে পঞ্চাশ হাজার স্কুল-মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। বহু লোক চাকরি ছাড়ে, আশি হাজার লোক কারাবরণ করে। অথচ যে হিন্দু গান্ধীর সাথে মিলে তারা হরতাল, ধর্মঘট ও অসহযোগ আন্দোলন করেছে, সে হিন্দুদের স্কুল-কলেজে হরতাল-ধর্মঘট হয়নি। চাকরিচ্যুতদের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই ছিল মুসলমান, যা পরবর্তীতে হিন্দুদের দ্বারাই পূরণ হয় এবং গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হিন্দুদের তালিকা, ক্ষেত্রে বিশেষে ছিল শূন্য। অপরদিকে যেসব মুসলিম নেতৃবৃন্দ বিদেশী পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন, তাদেরকেই আবার কোনো কোনো সভায় দেখা গিয়েছে বিদেশী সিগারেট টানতে। অর্থাৎ আমলহীন, ফাসিক বা আলিমরূপী মুনাফিকদের বিশেষ সমাবেশও তাদের মাঝে হয়েছিল।
বলাবাহুল্য, তারা নির্মূল হয়নি। বরং তাদের উত্তরসূরিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিশাল সমারোহে পরিণত হয়েছে। তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির নামে তারা যা করছেন তা শুধুই ধর্মব্যবসা; আর ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, হরতাল, লংমার্চ ও গণতন্ত্রের মতো হারাম ও বিজাতীয় আমল। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত এদের আমলহীনতার কারণেই সরকার অনেক সময় অনেক অনৈসলামিক আমল আমভাবে মুসলমানের উপর চাপিয়ে দেয়। তবে অস্তিত্বের খাতিরে, সত্যের নিরীখে সরকারকে বুঝতে হবে যে, ধর্মব্যবসায়ী, আমলহীন মাওলানারা যা করে তাই ইসলাম নয়।
প্রসঙ্গত একটা কথা আজ খুব স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের এদেশে, শতকরা সাতানব্বই ভাগ মুসলমানের এ দেশে মুসলমানের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষিত আছে কি নাই? থাকবে কী? না থাকবেনা? মুসলমান এখানে স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে কি পারবেনা? সরকার বা সরকারের প্রতিনিধি দ্বারা মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া চলবে কি চলবেনা?
বলাবাহুল্য, এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ বোধক’ হয় তাহলে তার অন্তরালে অস্পষ্টতা, অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে তার জবাব যদি সরকারের পক্ষ থেকে ‘না বোধক’ হয় তবে তাও অবিলম্বে অবগতি প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রে সরকার নিজেই যে হবে দেশদ্রোহী, সংবিধান বিরোধী তাও সরকারের উপলদ্ধি প্রয়োজন।
কারণ বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায়ও লিখিত রয়েছে “সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস।” উল্লেখ্য এ তখনই সত্য হবে যখন আল্লাহ পাক ও তার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণিত বিধি নিষেধ পরিপূর্ণ মানা যাবে ও তার পরিবেশ তথা খিলাফতের আবহ সৃষ্টি হবে।
মূলত খিলাফত আল্লাহ পাক উনার দান। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “হে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম! আমি আপনাকে প্রতিনিধি (খলীফা) করেছি।” (সূরা যুমার) আর এ দান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল খাছ ওলী আল্লাহগণ ব্যতীত দান করেন না। আমাদেরকে তাই বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার ছোহবতে যেতে হবে। তবেই যেমন জানা যাবে, গণতন্ত্র চর্চার কুফল, নেতার প্রকৃত গুণ। তার সাথে তেমনি সুগম হবে, খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহগণ উনাদের সান্নিধ্য ও খিলাফত নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়