সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২০১তম সংখ্যা | বিভাগ:

লা-শারিক আল্লাহ পাক উনার সকল নিয়ামত, হামদ ও বাদশাহীর মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই সকল ছলাত ও সালাম।
মানুষ আল্লাহ পাক উনার পছন্দনীয় সৃষ্টি। আল্লাহ পাক উনি তাই মানুষকে তাদের চরম শত্রু- শয়তান সম্পর্কে সম্যক অবহিত করেছেন। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা ইয়াসীন/৬০)
পবিত্র কুরআন শরীফ-এ উচ্চকিতভাবে ঘোষিত এই প্রকাশ্য শত্রু সম্পর্কে মানুষ বড়ই বে-খবর। উল্লেখ্য, শয়তানের কূটচাল সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর। ফরয-ওয়াজিব-নফল সব ইবাদতের ক্ষেত্রেই শয়তান নেকীর ছূরতে ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত বর্তমান যিলহজ্জ মাসের প্রাণ হজ্জ ও কুরবানীর ক্ষেত্রেও ইবলিসের নেকীর ছূরতে ওয়াসওয়াসা দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনই কমতি নেই।
উল্লেখ্য, হজ্জ সম্পূর্ণই আল্লাহ পাক উনার নির্দেশিত আহকাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মনগড়া কোন কিছু অনুপ্রবেশের অবকাশ নেই। যদিও অন্যকিছু আপাতভাবে ভালো ও প্রয়োজনীয় মনে হোক না কেন? তাই তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের এই অভিমত সম্পূর্ণই ভুল যে, “ছবি তুলে হজ্জ করতে কোন অসুবিধা নেই।” পাশাপাশি তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিবিদদের এই অভিমতও সম্পূর্ণ বেঠিক যে, “আরাফার ময়দানে উম্মাহর রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সব সমস্যা তুলে ধরতে হবে, সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।” আসলে এ আহবানও নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াসওয়াসা ভিন্ন অন্য কিছু নয়।
হজ্জের পাশাপাশি কুরবানীর ক্ষেত্রে শয়তানের নেকীর ছূরতে ওয়াসওয়াসা বিস্তারে ঘাটতি নেই। এক ধরনের তথাকথিত পশু প্রেমিকরা এই ক্ষেত্রেও শয়তানের কণ্ঠস্বররূপে কাজ করে। তারা আওয়াজ তুলে এত জীব এভাবে নিধন না করে সে পরিমাণ ব্যয়িত টাকা দুস্থ-অসহায়দের দান করলে তারাও উপকৃত হয় আর পশুরাও বেঁচে যায়। ভাবখানা এই যে, তারাই যেন সেসব জীবের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। অথচ আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহর বিধান দিয়েছিলাম, যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিত নয়।” (সূরা হজ্জ)
তথ্যে প্রকাশ, ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডে গরুর ‘Bovine spongi form cephalopathy’ নামে যে রোগ দেখা দেয় তাতে বিবিসি, তাদের এক কোটি দশ লাখ গবাদি পশু মেরে ফেলার কথা জানায়। এতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয় পনেরশ কোটি ডলার। এর আগেও ১৯৮৫ সালে দেড় লক্ষাধিক গরু মারা যায়।
গত ডিসেম্বর-২০০৩ এ আমেরিকায় দেখা দেয় ম্যাডকাউ ডিজিজ। ম্যাডকাউ রোগের কারণে আমেরিকার ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের গবাদি পশু শিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সরাসরি ক্ষতি হয় প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। এছাড়াও কানাডায় ম্যাডকাউ রোগে ক্ষতি হয় আড়াইশ কোটি ডলার।
কিন্তু প্রতি বৎসরই কুরবানী দেয়ার উসীলায় বাংলাদেশের গরুর ক্ষেত্রে আজো এ ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি।
এ ধরনের জ্বলন্ত নিদর্শন থাকার পরও এ সময়ের লোকেরা ইসলামকে তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানতে অপ্রস্তুত। ইসলামী চেতনা এখন বিরাজ করছে একটা ক্ষয়িষ্ণু ধারার মত। “গান-শোনা পাপ” সে অনুভূতি এ প্রজন্মকে আলোড়িত করেনা। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যতিরেকে বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো দিকে তাকানো পাপ, শক্ত গুনাহ্, ব্যভিচার সমতুল্য সে বোধ এ যুগের লোকদের পীড়াগ্রস্ত করেনা। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতির কামাই এ যুগের লোকদের যন্ত্রণাদগ্ধ করেনা।
এ সময়ে মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনের সর্বত্রই এমনকি মাদরাসা-মসজিদের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অর্থ আত্মসাৎ করার মত ঘটনা এতই বেশি হচ্ছে যে, অতি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য হলেও এটাই যেন এখন সকলের কাছে সহনীয় হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ সর্বত্রই হারামের অবাধ সয়লাব। পাশাপাশি তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী তথা বুদ্ধিজীবী মহল প্রগতিশীলতা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নামে ক্রমাগতভাবে যেসব নাজায়িয উৎসবের অনুশীলন করছেন তাতে করে সাধারণ মানুষের নফস আরো প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ইবলিস শয়তান তাতে ওয়াসওয়াসা দিয়ে সাধারণের দিল ক্রমাগতই মুর্দা করে দিচ্ছে।
আর এই মুর্দা দিল, দুনিয়া ও আখিরাত- কোথাও শান্তি, স্বস্তি ও সফলতা কিছুই দেয়না। কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “ক্বিয়ামতের দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনই উপকারে আসবেনা, কিন্তু যে সুস্থ দিল নিয়ে আল্লাহ পাক উনার কাছে আসবে।” (সূরা শোয়ারা/৮৮-৮৯)
মুহাক্কিক মহল মনে করেন যে, বর্তমানে সেক্যুলার শিক্ষা, সমাজ, দর্শন, ব্যাপক গান-বাজনা, টিভি, ভিসিআর, সিনেমা, ডিশ-এন্টিনা, সিডি, কনসার্ট, লেজার লাইট শো,

র‌্যাগ ডে পার্টি, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার, বসন্তবরণ, ভ্যালেন্টাইন ডে, ইত্যাদি অনৈসলামিক সংস্কৃতি ও অনুষঙ্গের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের অন্তর যেভাবে মুর্দা হয়ে পড়ছে,; ইসলামের নূর, ঈমানের নূর, নেক আমলের স্বাদ, বদ আমলের অন্তঃজ্বালা যেভাবে তাদের অন্তর থেকে তিরোহিত হচ্ছে- তাতে করে এ মুর্দা দিল বিশিষ্ট লোকদের অন্তরে যদি ফের ঈমানের চেতনা, আমলের জজবা, ইসলামের মুহব্বত জাগাতে হয় তাহলে অনিবার্যভাবে দরকার রূহানী শক্তি। ইল্মে তাছাউফের পরিভাষায় একে বলা হয় ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সমাজের সর্বস্তরে “নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াসওয়াসা” সম্পর্কে সচেতনতা বোধের বড়ই অভাব। আলিম নামধারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
এ কারণেই তাদের দ্বারা হচ্ছে, ছবি তোলা, মেয়ে লোকের নেতৃত্বে চলা, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, কুশপুত্তলিকা দাহ, ইসলামের নামে গণতন্ত্র অনুশীলন ও নির্বাচন, বোমা হামলা তথা জঙ্গিপনা ইত্যাদি যাবতীয় হারাম কাজ। আর নেকীর ছূরতে শয়তানের ওয়াসওয়াসা অনুধাবনে অক্ষমতাই তাদের এরূপ গোমরাহীর মূল কারণ।
উল্লেখ্য, নেকীর ছূরতে শয়তানের ওয়াসওয়াসা উপলব্ধির জন্য চাই রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ তথা তায়াল্লুক মায়াল্লা। কেবলমাত্র হক্ব ওলীআল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার ছোহবতের মাধ্যমেই তা প্রাপ্তি সম্ভব।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়