সম্মানিত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাই হায়াতুল ওলী হলে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম  উনারা হায়াতুন নবী নন কি?

সংখ্যা: ২৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা শরীফ উনার মধ্যে নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের পথে চলার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে এবং উক্ত নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের পরিচয় মুবারক প্রদান করা হয়েছে পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৬৯ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

أَنْعَمَ الله عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন নাবিয়্যীন, ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছালিহীন উনাদেরকে। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ নিয়ামতপ্রাপ্ত  বান্দা উনাদের প্রথম স্তর হচ্ছেন নাবিয়্যীন তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা। আর দ্বিতীয় স্তর হচ্ছেন ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা, ছালিহীন অর্থাৎ হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা।

হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের শান মুবারকে পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان اولياء الله لا يموتون بل ينتقل من دار الفناء الى دار البقاء

অর্থ: নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ উনারা মারা যান না। বরং উনারা অস্থায়ী নিবাস থেকে স্থায়ী নিবাস প্রত্যাবর্তন করেন। সুবহানাল্লাহ! (মিরকাত শরীফ ৩য় খ- ২৪১ পৃষ্ঠা)

স্মরণীয় যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের মধ্যে আবার তিনটি স্তর- (এক) ছিদ্দীক্বীন (দুই) শুহাদা (তিন) ছালিহীন। উক্ত দুই নং স্তর অর্থাৎ শুহাদা বা শহীদগণ উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ولاتقولوا لـمن يقتل فى سبيل الله اموات بل احياء ولكن لا تشعرون.

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছেন উনাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। বরং উনারা হায়াতপ্রাপ্ত বা জীবিত। কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারছো না। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لا تحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله امواتا بل احياء عند ربهم يرزقون.

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছেন উনাদেরকে মৃত (বলা তো দূরের কথা) ধারণাও তোমরা করো না। বরং উনারা জীবিত এবং উনাদের খ¦ালিক মালিক রব তায়ালা উনার তরফ থেকে উনারা রিযিকপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৯)

হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের দ্বিতীয় স্তর হযরত শুহাদায়ে কিরাম উনাদেরকে যেখানে হায়াতপ্রাপ্ত বা জীবিত বলা হয়েছে, রিযিকপ্রাপ্ত বলা হয়েছে এবং মৃত বলতে ও মৃত ধারণা পর্যন্ত করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের যারা প্রথম স্তর হযরত ছিদ্দীক্বীনে কিরাম উনাদের শান মুবারকে কি ফায়ছালা হবে? অবশ্যই উক্ত ফায়ছালা অপেক্ষা উন্নত ফায়ছালা হবে।

বলাবাহুল্য যে, হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও যিনি নবী ও রসূল, যিনি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ইমামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক অন্য সকল মনোনীত ও নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দা উনাদের চেয়ে অবশ্য অবশ্যই উন্নত। এতে কারো শক, শোবাহ, সন্দেহ, বক্তব্য, মন্তব্য থাকতে পারে না। এ বিষয়ে যারা চু-চেরা করবে তারা মুসলমান থাকতে পারে না। নিঃসন্দেহে তারা মুরতাদ, মুনাফিক, কাফির ও জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন উনার উম্মতের শ্রেণী বিন্যাসে যারা দ্বিতীয় স্তরে, সেই শহীদগণ যদি কবরে জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত হন, তাহলে উনার আযীমি শান মুবারক তো সকলের কল্পনারও বাহিরে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا كَانَ لَكُمْ اَن تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللّـهِ وَلَا ان تَنكِحُوا ازْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ ابَدًا ۚ إِنَّ ذلِكُمْ كَانَ عِندَ اللّـهِ عَظِيمًا

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া এবং উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনোই বৈধ নয়। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট এটা গুরুতর অপরাধ। (পবিত্র আহযাব শরীফ:পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ওহাবী দেওবন্দীদের মুরুব্বীদের তাফসীরে লিখেছে, “এরূপ বলাও অবান্তর নয় যে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা শরীফে পবিত্র হায়াত মুবারকে (জীবিত) রয়েছেন। উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ কোনো জীবিত স্বামীর আড়াল হয়ে যাওয়ার অনুরূপ। এজন্যই উনার ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই উনার সম্মানিত নিসাগণ উনারা অন্যান্য নারীদের মতো নন।”

হযরত কাজী ছানাউল্লাহ পানি পথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে লিখেছেন –

بل حياة الانبياء عليهم السلام اقوى منهم واشد ظهور اثارها فى الخارج حتى لا يجوز النكاح ازواج النبى صلى الله عليه وسلم بخلاف الشهداء.

অর্থ: বরং হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র হায়াত মুবারক শহীদগণ উনাদের হায়াত মুবারক হতেও বহু বেশি শক্তিশালী এবং অত্যধিক তড়িৎ গতিতে প্রকাশিত হওয়াতে শ্রেষ্ঠতর। আর এ কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ উনাদেরকে বিবাহ করা জায়িয নেই। পক্ষান্তরে শহীদগণ উনাদের আহলিয়াগণকে বিবাহ করা জায়িয রয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী ১৫২, যিকরে জামীল ৪২পৃ:)

এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

لا عدة لانه صلى الله عليه وسلم حى فى قبره وكذالك سائر الانبياء.

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত আলাইহিন্নাস সালামগণ অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের উপর কোন ইদ্দত নেই। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার রওজা শরীফে জীবিত। আর উনার ন্যায় অন্যান্য হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনাদের রওজা মুবারকে যিন্দা আছেন। (শরহুশ শিফা ১ম খ- ১৫২ পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

قالت ام الـمؤمنين حضرت عائشة الصديقة عليها السلام كنت ادخل بيتى الذى فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وانى واضع ثوبى واقول انما هو زوجى وابى فلما دفن حضرت عمر الفاروق عليه السلام معهم فوالله ما دخلته الا وانا مشدودة على ثيابى حياء من حضرت عمر الفاروق عليه السلام

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আমার হুজরা শরীফে প্রবেশ করতে পর্দার প্রস্তুতি নিতাম না, যেহেতু সেখানে শুধু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমার পিতা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনারা দুজন অবস্থানরত ছিলেন। আর উনারা আমার মাহরাম হওয়ায় পর্দার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু যখন সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম উনাকে আমার হুজরা শরীফে দাফন মুবারক করা হলো, তখন থেকে আমি উনাকে লজ্জা করতঃ খাছ শর’য়ী পর্দা ব্যতীত তথায় গমন করতাম না। কারণ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন গাইরে মাহরাম। (মিশকাত শরীফ-১৫৪ পৃ.)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বীদা মুবারক ছিল এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারা উনাদের পবিত্র রওযা শরীফে শুধু যিন্দাই নন বরং উনারা সবকিছু দেখেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال ان الله تعالى حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء فنبى الله حى يرزق

অর্থ : হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক  তিনি হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক যমীনের জন্য ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ, জালাউল আফহাম ৬৩ পৃ:)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে –

قال حضرت فضل بن عباس رضى الله تعالى عنه اذا رأيت شفتيه يتحرك فادنيت اذنى عندها. فسمعت وهو يقول اللهم اغفر لامتى فاخبر تهم بهذا بشفقته على امته

অর্থ: হযরত ফযল বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র রওযা শরীফে তাশরীফ মুবারক নিলেন, তখন আমি শেষ বারের মত পবিত্র চেহারা মুবারক যিয়ারত করত: দেখতে পেলাম যে, উনার পবিত্র ঠোট মুবারক নড়ছে, তখন আমি আমার কর্ণ পবিত্র ঠোট মুবারকের নিকটস্থ করে শুনতে পেলাম যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করছেন, ইয়া আল্লাহ পাক! আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করুন। আমি উম্মতের প্রতি দয়ালু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুভ সংবাদ উপস্থিত সবাইকে শুনিয়েছি। (মাদারিজুন নুবুওয়াত ২য় খ-, ৪৪২ পৃ.)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখার পরও পবিত্র ঠোট মুবারকের কম্পন ছাবিত হলো। আর কম্পন মুবারক দেয়া “হায়াত” মুবারক ব্যতীত সম্ভব নয়।

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

قال حضرت زبير بن بقاء رضى الله تعالى عنه فى اخبار الـمدينة لم ازل اسمع الاذان والاقامة من  قبر رسول الله صلى الله عليه وسلم ايام حرة حتى عاد الناس.

অর্থ: হযরত যুবাইর ইবনে বাক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আইয়্যামে হাররার সময় পবিত্র মদীনা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা মুবারক থেকে আযান ও ইক্বামতের ধ্বনি অনবরত শ্রবণ করতে থাকি যতক্ষণ না জনগণ প্রত্যাবর্তন করেছে। (মিশকাত শরীফ)

বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আপনার নিকটবর্তী, দূরবর্তী এবং পরবর্তীতে আগন্তুকদের পবিত্র দুরূদ শরীফসমূহের অবস্থা কি হবে? তদুত্তরে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اسمع صلوة اهل محبتى واعرفهم

অর্থ: আমাকে যারা মুহব্বত করে আমি স্বয়ং নিজে সরাসরি তাদের পাঠকৃত পবিত্র দূরূদ শরীফ শুনি এবং আমি তাদেরকে চিনি। সুবহানাল্লাহ! (দালাইলুল খায়রাত, মাতালিউল মুসাররাত)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন –

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُه،

অর্থ : “যে ব্যক্তি আমার পবিত্র রওযা মুবারক উনার নিকটে এসে আমার প্রতি পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করে আমি অবশ্যই উনার পবিত্র দুরূদ  শরীফ শুনি।” সুবহানাল্লাহ! (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৮৭)

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে –

اصحابى اخوانى صلوا على فى كل يوم الاثنين والجمعة فانى اسمع صلوتكم بلا واسطة.

অর্থ : “হে আমার ছাহাবীগণ, হে আমার উম্মতগণ! আপনারা আমার প্রতি প্রত্যেক ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার ও ইয়াওমুল জুমুয়া পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করুন। নিশ্চয়ই আপনাদের সেই পবিত্র দুরূদ শরীফ আমি বিনা মধ্যস্থতায় শুনতে পাই।” (মিশকাত শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে –

سمعته سمعا حقيقيا بلا واسطة.

অর্থ: “(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন),  আমি হাক্বীক্বীভাবে বিনা মধ্যস্থতায় তা শুনতে পাই।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)

কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে –

ان النبى صلى الله عليه وسلم فى قبره حى

অর্থ : “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওযা মুবারকে জীবিত অবস্থায়ই আছেন।” (মিরকাত শরীফ ২য় খন্ড ২২৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা মুবারকে স্বীয় উম্মতের দুরূদ ও সালাম শুনতে পান। যদি তিনি হায়াতুন্ নবী না-ই হন তবে কি করে তা শুনতে পান? অবশ্যই তিনি হায়াতুন্ নবী।

কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

قال حضرت ابراهيم بن شيبان رضى الله تعالى عنه حججت فجئت المدينة فتقدمت الى القبر الشريف فسلمت على رسول الله صلى الله عليه وسلم فسمعت. من داخل الحجرة يقول وعليك السلام.

অর্থ: হযরত ইবরাহীম বিন শায়বান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি পবিত্র হজ্জ শেষে পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায় হাজির হলাম। তারপর পবিত্র রওযা মুবারক উনার নিকটস্থ হয়ে সালাম মুবারক পেশ করলাম। তখন পবিত্র রওযা শরীফ উনার ভিতর থেকে “ওয়া আলাইকাস সালাম, উনার ধ্বনি মুবারক শ্রবণ করলাম। (আল কাউলুল বাদী’)

সুলত্বানুল আরিফীন, মুজাদ্দিদে যামান আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার সম্মানিত পিতা মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহন করেন, তখন তিনি ওসিয়ত করলেন যে আমার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা মুবারক উনার নিকটে নিয়ে গিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করতঃ একথা বলবেন যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছুক। আর তিনি আমাদেরকে অসিয়ত মুবারক করেছেন যে, যদি আপনি আমাদেরকে অনুমতি মুবারক দান করেন তবে আমরা প্রবেশ করবো। নতুবা আমরা ফিরে যাবো। এরূপ করার পর আমাদেরকে শুনানো হলো যে, আপনারা উনাকে প্রবেশ করিয়ে দিন অর্থাৎ দাফন মুবারক করুন। আমরা এ পবিত্র কালাম শরীফ শুনলাম কিন্তু কাউকে আর দেখলাম না। অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি দেখলাম দরজা মুবারক এমনিভাবেই খুলে গেছে। আর আমি একথা বলতে শুনলাম যে, বন্ধুকে বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন। একথা নিশ্চিত যে, বন্ধু বন্ধুর সঙ্গে মিলনের আশিক্ব হন। সুবহানাল্লাহ! (আল খাছাইছুল কুবরা ২য়, খ-, ২৮২ পৃষ্ঠা)

উপরে উল্লেখিত রিওয়ায়েত দ্বারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বিশ্বাস স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আালাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হায়াতুন নবী, তাই উনার দরবার শরীফে গিয়ে আরয করার পর যে হুকুম মুবারক হবে তার উপর আমল করবেন।

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

روى حضرت ام الـمؤمنين عائشة الصديقة عليها السلام انها كانت تسمع صوت الوتد والمسمار يضرب فى بعض الدور المطنبة لمسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم فترسل اليهم لا تؤذوا رسول الله صلى الله عليه وسلم.

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার সংলগ্ন ঘরসমূহ হতে পেরেকের শব্দ শুনলে মিস্ত্রীর নিকট সংবাদ পাঠিয়ে দিতেন যে, এরকম শব্দ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিবেন না। (শিফাউস সিক্বাম- ১৫৫ পৃষ্ঠা)

অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাও প্রমাণিত যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বীদা মুবারক ছিল এই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রওযা শরীফে শুধু যিন্দাই নন বরং তিনি সবকিছুই দেখেন এবং অনুভব করেন যা উনার হায়াতুন নবী হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হিজরী ৫৫৫ সনে সম্মানিত রেফায়িয়া তরীক্বার ইমাম হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে গেলেন। মহা সম্মানিত রওজা শরীফ উনার নিকট গিয়ে সালাম মুবারক পেশ করলেন-

السلام عليك ياجدى صلى الله عليه وسلم

অর্থ: আসসালামু আলাইকা হে আমার মহাসম্মানিত নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে তৎক্ষনাৎ জবাব আসলো

وعليك السلام يا ولدى

অর্থ: ওয়া আলাইকাস সালাম হে আমার দৌহিত্র!

মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি জাওয়াব মুবারক শুনে হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ হাল পয়দা হলো। তিনি ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করতে শুরু করলেন।

এক পর্যায়ে তিনি বললেন-

فى حالة البعد روحى كنت ارسلها

تقبل الارض عنى وهى نائبتى.

وهذة دولة الاسباح قد حضرت

فامدد يمينك  كى كخطى بـها شفتى.

ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুরে অবস্থানকালে আমি আমার রূহকে আপনার মুবারক খিদমতে প্রেরণ করতাম, যেন তা আমার পক্ষ হতে আপনার মুবারক ক্বদমবুছী করে যায়। এখন তো আমি সরাসরি আপনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং আপনি যদি আপনার পূত পবিত্র দাস্ত মুবারক জাহির করে দিতেন, তাহলে তা চুম্বন মুবারক করে আমি ধন্য হতাম।

হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত আরজী শেষ হওয়া মাত্রই মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পূত পবিত্র ডান হাত মুবারক জাহির করে দেন। তৎক্ষনাৎ হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সেই সময়ে পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থানকারী ৯০ হাজার লোক পূত পবিত্র দাস্ত মুবারক চুম্বন করে নিজেদেরকে চিরদিনের জন্য ধন্য করে নেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বুনিয়ানুল মুশাইয়াদ)

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা অকাট্যভাবেই হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হলো। কারণ পবিত্র রওযা শরীফ হতে উচ্চস্বরে সালাম উনার জবাব দেয়া এবং পবিত্র হাত মুবারক বের করে দেয়া পবিত্র হায়াত মুবারকে থাকার পূর্ণ নিদর্শন। পবিত্র হায়াত মুবারকে না হলে সালামের জবাব দেয়া এবং পবিত্র হাত মুবারক বের করা সম্ভব নয়।

মূলত, যারা ‘হায়াতুন নবী’ শান মুবারক অস্বীকার করে, তারা ইহুদীদের চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ, সুলতান নূরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কালে ইহুদীরা রওজা শরীফ হতে জিসিম মুবারক চুরির জন্য লোক পাঠিয়েছিলো। তারা যদি হায়াতুন নবী শান মুবারক বিশ্বাস না করতো, তাহলে জিসিম মুবারক চুরির জন্য কখনোই লোক পাঠাতো না।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিস্তারিত জানার জন্য পাঠ করুন মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৪৯তম সংখ্যা)

-আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ শুয়াইব

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম