সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র ও নূরান্বিত জিসিম বা দেহ মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিল না সংক্রান্ত ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক ফতওয়া

সংখ্যা: ২৫৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৫তম বিশেষ ফতওয়া

“সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্র ও নূরান্বিত জিসিম বা দেহ মুবারক উনার ছায়া মুবারক যে ছিল না সে বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে সঠিক ফতওয়া” প্রকাশ করতে পারায় যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করছি। আলহামদুলিল্লাহ!

সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান সৃষ্টি মুবারক উনার ওজূদ (উপাদান) মুবারক সম্মানিত নূর মুবারক।

সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। যারা বলবে ছায়া মুবারক ছিলো তারা কুফরী করবে। কেননা খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللّـهِ نور وكتاب مبين

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক এনেছেন সম্মানিত নূর মুবারক এবং স্পষ্ট কিতাব মুবারক। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় সমস্ত মুফাসসিরীণ উনাদের মতে, মহান আল্লাহ পাক এখানে সম্মানিত নূর মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝিয়েছেন।

যেমন ক্বাজিউল কুজাত হযরত ইমাম আবূ সউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহূর তাফসীর “তাফসীরে আবী সউদ”-এর ৩য় জিলদ ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(قد جاءكم من الله نور.) … الـمراد بالنور هو الرسول صلى الله عليه وسلّم

অর্থ: বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি।”

এছাড়া আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজেকে নূর মুবারক উনার সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلّم انت بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر رضى الله تعالى عنه ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك.

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! মহান আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী উনার নূর মুবারক উনাকে সৃষ্টি করেন।” মুসনাদে আব্দির রয্যাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত ইত্যাদি।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এ আক্বীদাই রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ সম্মানিত নূর মুবারক উনার সৃষ্টি। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী।

(বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকা উনার ফতওয়া বিভাগ “৬০তম থেকে ৮২তম” সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে পবিত্র কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীলসহ বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।)

সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ উনার সমস্ত জিসিম মুবারক নূর মুবারক দ্বারা তৈরী নূরময় তাই উনার কোন ছায়া মুবারক ছিল না

অনুসরণীয় অনুকরণীয় হক্কানী-রব্বানী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম তথা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের সকলে একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম। চন্দ্র-সূর্যসহ কোন আলোতে কখনো উনার কোন প্রকার ছায়া মুবারক দেখা যেত না। উনার কোন প্রকার ছায়া মুবারক ছিলো না।

এখন যে বিষয়টা উল্লেখ করা দরকার সেটা হচ্ছে, ছায়া মুবারক না থাকার কারণ কি ছিলো? সকলেই যে বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন সেটা হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নূর মুবারক। নূরে মুজাসসাম হওয়ার কারণে উনার জিসিম মুবারক উনার কোনো ছায়া মুবারক পড়তো না। যুগশ্রেষ্ঠ সকল ইমাম ও মুহাদ্দিছগণ এ কারণটা উল্লেখ করেছেন তা সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো-

বাহরুল উলূম, শায়খুল মাশায়িখ, আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

ان ظله كان لا يقع على الارض كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس اوالقمر لا ينظر له ظل

অর্থ: নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর। তিনি যখন সূর্য ও চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার কোনো ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতোনা। সুবহানাল্লাহ! (শিফাউছ ছুদুর, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামিন ৬৬৮)

এ প্রসঙ্গে হাফিযে হাদীছ, বিখ্যাত  মুহাদ্দিছ, আল্লামা সাইয়্যিদ যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لم يكن له صلى الله عليه و سلم ظل فى شمس و لا قمر لانه كان نورا

অর্থ: চাঁদ ও সূর্যের আলোতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক হতো না অর্থাৎ পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ নূর। (শরহে মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়াহ ৫/৫২৪)

ইমামুল জলীল, মুহাদ্দিছুশ শাহীর, আল্লামা ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

وما ذكر من انه لا ظل تشخصه فى شمس ولا قمر لانه كان نورا

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরী জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক সূর্য ও চাঁদের আলোতেও পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন সম্পূর্ন নূর।(শিফা শরীফ ১/৪৬৩)

হাফিযে হাদীছ,ওলীয়ে কামিল, হযরত ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন-

انه صلى الله عليه و سلم صار نورا انه كان اذا مشى فى الشمس لا يظهر له ظل

অর্থ: নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক প্রকাশ পেতো না।”(আফদ্বালুল ক্বোরা ১৮৬ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

من دلاءل نبوته صلى الله عليه و سلم ماذكر من انه لا ظل لشخصه اى جسده الشريف اللطيف اذا كان فى شمس او قمر لانه صلى الله عليه و سلم نور

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত মুবারক উনার প্রমাণের মধ্যে একটি প্রমাণ যে, উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। যখন তিনি চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা তিনি (আপাদমস্তক) নূর।” (নাসীমুর রিয়ায ১/২৪২)

ইমামুল আল্লাম, জালালু মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মু’জামুল লবীব ফী খাছায়িছিল হাবীব” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বিতীয় বাবের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেন-

 لم يقع ظله على الارض ولايرى له ظل فى شمس ولا قمر قال ابن سبع لانه كان نورا قال رزين لغبة انواره

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক মাটিতে পড়েনি। চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও উনার ছায়া মুবারক দেখা যেতোনা। হযরত আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্পূর্ণ নূর ছিলেন। হযরত ইমাম রাজীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেতো।

বিরোধীতাকারীদের অন্যতম মুরুব্বীরাও এই বিষয় বিনা আপত্তিতে মেনে নিয়েছে। যেমন, দেওবন্দীদের মুরুব্বী মৌলুবী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তার রচিত কিতাব “ইমদাদুস সুলূক” এর ৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে-

بتواتر ثابت شد کہ ان حضرت صلی اللہ علیہ وسلم سایہ نداشتند – وظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسام ظل می دارند-

অর্থ: “একথা মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার “ছায়া মুবারক” ছিলনা। প্রকাশ থাকে যে, নূরী জিসিম মুবারক ছাড়া সকল কিছুরই ছায়া মুবারক রয়েছে।”

এমনকি দেওবন্দী মুরুব্বী মৌলবী আশরাফ আলী থানবী তার কিতাবে উল্লেখ করেছে-

یہ بات مشھور ھے کہ ھمارے حضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے سایہ نھی تھا (اس لئے کہ( ھمارے حضرت صلی اللہ علیہ وسلم صرتا پا نوری ھی نور تہے

অর্থ: একথা প্রসিদ্ধ যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপাদমস্তক নূর তথা নূরে মুজাসসাম!” (শুকরুন নি’মাহ ৩৯ পৃষ্ঠা)

বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ আল্লামা হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “নাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন-

ان رسول الله صلى الله عليه وسلّم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر

অর্থ: নিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “ছায়া মুবারক মুবারক” দেখা যেত না।”

সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক না থাকার কারণই হচ্ছেন তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম এ সংক্রান্ত হাদীছ শরীফ উনার সনদ তথা বর্ণনাকারীদের প্রতি বাতিল ফিরক্বা ওহাবী দেওবন্দীদের মিথ্যা অভিযোগের জাওয়াব

 

প্রকাশ থাকে যে, ইমামুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার “খাছায়িছুল কুবরা” নামক কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে এ মতের সমর্থন করেন। অথচ বাতিল ফিরকা ওহাবী দেওবন্দীরা উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিরোধিতা করে তারা বলে থাকে, এ বর্ণনাটি জাল ও ভিত্তিহীন। নাউযুবিল্লাহ! তারা বলে, এই হাদীছ শরীফ উনার সূত্রে রয়েছেন আব্দুর রহমান বিন কাইস যাফরানী, যার সম্পর্কে মুহাদ্দিছীনে কিরাম উনাদের কঠোর মন্তব্য রয়েছে। এছাড়া তারা বলে থাকে উক্ত রাবী সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ প্রখ্যাত ইমাম উনাদের কঠোর উক্তি  রয়েছে.. ইত্যাদি।

তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ নয়, তারপরও উছুল অনুযায়ী উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ। কারণ কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ যদি সনদগতভাবে ছহীহ নাও হয়, কিন্তু উলামায়ে কিরামগণ যদি গ্রহণ করে নেন তবে তা ছহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিখ্যাত আলিমে দ্বীন হযরত খতীব বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি কয়েকটা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন যা সনদগতভাবে দুর্বল। কিন্তু সকল আলিম এই পবিত্র হাদীছ শরীফগুলো আমল করে আসছেন। আর তাই তিনি বলেন-

لـما احتجوا به جميعا غنوا عن طلب الاسناد له

অর্থ: আমলের মাধ্যমে যুগযুগ ধরে এগুলো ছহীহ হিসেবে অনুসরণ করে একথার প্রমাণ করেছেন যে, এগুলোর সনদ তালাশ করার  প্রয়োজন নেই। (আল ফক্বিহ ওয়াল মুতাফাককিহ ১/৪৭১, ইবনুল কাইয়্যিম এর ই’লামু মুওয়াককিঈন ১/২০২)

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়ে বলেন-

يحكم للحديث بالصحة اذا تلقاه الناس بالقبول وان لم يكن له اسناد صحيح

অর্থ: কোন হাদীছ শরীফ উনার পবিত্র ছহীহ সনদ না পাওয়া গেলেও যদি সকলের আমলের মাধ্যমে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্য অনুসৃত হয় তাহলে সে হাদীছ শরীফখানা ছহীহ বলে গন্য হবে। (তাদরীবুর রাবী ১/৬৬)

হাফিযুল হাদীছ, বুখারী শরীফ উনার অন্যতম ব্যাখাকারক হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে বৈশিষ্ট্যের কারণে হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় তার মধ্যে একটি হলো কোন হাদীছ শরীফ উনার বক্তব্য অনুযায়ী আমল করার ব্যাপারে সকল আলিম ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তাহলে সে হাদীছ শরীফটি গ্রহনযোগ্য ও তার বক্তব্য অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। উছূলে হাদীছ শরীফ উনার অনেক ইমাম এই নীতি সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য, “কোন পানির যদি স্বাদ, গন্ধ, রং পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে তা ব্যবহার যোগ্য নয়।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার সনদকে যদিও পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ ছহীহ মনে করেন না, তথাপি এটাই সকলের বক্তব্য, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। “ওয়ারিশদের জন্য অছিয়ত প্রযোজ্য নয়” এ পবিত্র হাদীস শরীফখানাও উলামায়ে কিরামগণ (সনদগতভাবে) প্রমাণিত মনে করেন না, কিন্তু সকলের আমলের মাধ্যমে এটি অনুসৃত হয়েছে। (তাউযীহুল আফকার ১/২৫৭, সহীহ ইবনে খুযায়মা : হাদীছ শরীফ ১৬৪৩)

সুতরাং বাহ্যিকভাবে যদি কোন হাদীছ শরীফ উনার সনদ ছহীহ বলে মনে না হলেও যদি সে হাদীছ শরীফখানা উলামায়ে কিরামগণ গ্রহণ করে নেন তাহলে হাদীছ শরীফখানা ছহীহ হয়ে যায়। হযরত হাকীম তিরমীযি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাদীছ শরীফখানাও তেমনি একাটি হাদীছ শরীফ। উক্ত হাদীস শরীফখানা সকল মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেছেন এবং স্বস্ব কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (বিস্তারিত জানতে আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৫৯তম সংখ্যা পাঠ করুন)

এখানে মূল বিষয় হচ্ছে কোন ইমাম এই হাদীছ শরীফ উনার একজন রাবী সর্ম্পকে মন্তব্য করেছেন অর্থাৎ সনদ নিয়ে কথা বলেছেন কিন্তু মতন নিয়ে কারো কোন অপত্তি নাই। এই হাদীছ শরীফ উনার মতন নিয়ে কেউ আপত্তি করেছেন এমন দলীল ক্বিয়ামত পর্যন্তও কেউ দিতে পারবেনা। আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে কেউ কোন বিরূপ মন্তব্যও করেননি। বরং সকল ইমাম ও মুহাদ্দিছগণ একমত হয়েছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। আর শুধু এই একটা সনদেই নয়, আরো অনেক সনদে এই পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে।

ছহীহ সনদে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারকে ছায়া মুবারক মুবারক ছিলো না। যা ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের দাদা উস্তাদ, হাফিযে হাদীছ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে আব্দির রাজ্জাক কিতাবের মধ্যে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন-

عن عبد الرزاق رحمة الله عليه عن ابن جريج رحمة الله عليه قال اخبرني حضرت نافع رحمة الله عليه ان حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لم يكن لرسول الله صلى الله عليه و سلم ظل ولم يقع مع الشمس قط الا غلب ضوءه ضوء الشمس ولم يقع مع سراج قط الا غلب ضوءه ضوء السراج

অর্থ: “হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত না’ফে রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ছায়া মুবারক ছিল না এবং সূর্যের আলোতে কখনও উনার ছায়া মুবারক পড়তোনা। উনার আলো সূর্যের আলোকে অতিক্রম করে যেত। সুবহানাল্লাহ! আর বাতির আলোতেও কখনো উনার ছায়া মুবারক পড়তোনা। কেননা উনার নূর মুবারক বাতির আলোকে ছাড়িয়ে যেতো।” সুবহানাল্লাহ! (আয যুযউল মাফক্বুদ মিনাল যুযউল আউয়াল, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ের  ১ম খন্ড ৫৬ পৃষ্ঠার ৪ নম্বর হাদীছ শরীফ, জামিউল ওসায়িল ফি শরহে শামায়িল লি মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ২১৭ পৃষ্ঠা, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলা শামায়িলে মুহম্মদিয়া ১০৫ পৃষ্ঠা)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত সকল রাবী ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য। হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে জুরাইজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত না’ফে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা প্রত্যেকে ছিলেন উঁচু স্তরের ছিকাহ রাবী। (তাহযীবুত তাহযীব, মিযানুল ই’তিদাল)

আর মূল বর্ণনাকারী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফিযে হাদীছ হযরত ইমাম যাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফিযে হাদীছ ইমাম যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন।  এই হাদীছ শরীফ থেকে যে বিষয়টা স্পষ্ট হচ্ছে তা হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। এই ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন পৃথিবীর সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ। পৃথিবীর কোন ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ এই হাদীছ শরীফ উনার ব্যাপারে কোন আপত্তি করেননি। বরং বিনা দ্বিধায় উক্ত হাদীছ শরীফ গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং এই আক্বীদাই পোষণ করেছেন।

এছাড়া আরো অসংখ্য ইমাম মুহাদ্দিছগণ উনাদের স্ব স্ব কিতাবে এই বিষয় উল্লেখ করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক না থাকার কারণ হচ্ছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম। সুবহানাল্লাহ! যে বিষয়টা সকল ইমাম মুহাদ্দিসগণ একমত হয়েছেন। কোন ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ একথা কখনো বলেন নাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো। এখান থেকে যে বিষয়টা প্রমাণিত হয়, সকল ইমাম মুহাদ্দিসগণের আক্বীদাই ছিলো নূরে মুজাসসাম হওয়ার কারণে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। এমনকি বর্তমান দেওবন্দী কওমীরা যে ছায়া মুবারক ছিলো বলে মিথ্যা অপবাদ দেয় তাদের মুরুব্বীরাও একবাক্যে বলে গেছে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম তাই উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না।

ওহাবী দেওবন্দীরা ছায়া মুবারক ছিলো বলে যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে তা কি উপরোক্ত ইমাম ও মুহাদ্দিছ উনাদের জানা ছিলো না? অবশ্যই জানা ছিলো। শুধূ জানাই ছিলো না উনারা এক একজন ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ও হাফিযে হাদীছ অনেকে হুজ্জাতও ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! বিরোধীতাকারীরা যেন উছূলে হাদীছ উনার কিতাব খুলে মুহাদ্দিছ, হাফিযে হাদীছ ও হুজ্জাতের সংজ্ঞা পড়ে নেয়। কিন্তু যেহেতু ঐ সকল হাদীছ শরীফ দ্বারা ছায়া মুবারক থাকা প্রমাণ হয় না বরং ঐ হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখামূলক অর্থ নিতে হবে এ বিষয়ে উনারা পূর্ণ অবগত ছিলেন। তাই উনারা একবাক্যে উল্লেখ করেছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার কোন ছায়া মুবারক মুবারক ছিলো না।

 

সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক থাকার মিথ্যা দাবির স্বপক্ষে বাতিল ফিরক্বা ওহাবী দেওবন্দীদের লিখিত বিভ্রান্তিকর ‘প্রচলিত জাল হাদীস নামক’ বইতে মুস্তাদরেকে হাকিম কিতাবের ৫ম খন্ড ৬৪৮ পৃষ্ঠার ৮৪৫৬ নম্বর হাদীছ শরীফ এবং মুসনাদে আহমদ শরীফের ৭ম খন্ড ৪৭৪ পৃষ্ঠার ২৬৩২৫ নম্বর হাদীছ শরীফ দুটির ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا ابائكم اياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم

অর্থ: আখিরী যামানায় বহু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে। তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্য, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা শুননি এবং তোমাদের বাপ দাদারাও শোনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখো। তাহলে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ কিতাবুল ঈমান- বাবুল ই’তিছাম বিল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ-১ম পরিচ্ছেদ-হাদীছ শরীফ নং- ১৪৬)

আমরা এখন সেই আখিরী যামানায় বাস করছি। এই সময়ে অনেক মিথ্যাবাদী, ধর্মব্যবসায়ী, উলামায়ে ছূরা এমন সব কথা বলছে যা সাধারণ মানুষদের ঈমান ও আক্বীদার জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। সাধারন মানুষদের বিভ্রান্ত করার জন্য উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভুল ব্যাখা করছে। সাধারন মানুষ এদের ফাঁদে পা দিয়ে ঈমানহারা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ।

এই ধর্মব্যবসায়ীরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান মুবারক কিভাবে ইহানত করা যায় সেই ফিকিরে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তারা তাদের বিভিন্ন বই পুস্তক এবং পত্রিকায় মাঝে মাঝে একটা কথা বলে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম নন তাই উনার শরীর মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো।” নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! তাদের এই ভ্রান্ত দাবির পক্ষে তারা কিছু দলীলও দিয়ে থাকে।

দুইটা হাদীছ শরীফ উপস্থাপন করে ভুল ব্যাখা করে তারা বলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!

১ম হাদীছ শরীফ

عَنْ حَضرت اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ : بَيْنَمَا النَّبِىُّ صلي الله عليه وسلم وَالِه وَسَلَّمَ يُصَلِّى ذَاتَ لَيْلَةٍ صَلاةً إِذْ مَدَّ يَدَهُ ثُمَّ أَخَّرَهَا فَقُلْنَا : يَا رَسُولَ اللّهِ صلي الله عليه وسلم، رَأَيْنَاكَ صنعت فِى هَذِهِ الصَّلاةِ شَيْئًا لَمْ تَكُنْ تَصْنَعُه فِيمَا قَبْلَه، قَالَ : “أَجَلْ، إِنَّه عُرِضَتْ عَلَىَّ الْجَنَّةَ فَرَأَيْتُ فِيهَا دَالَيَةً قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَنَاوَلَ مِنْهَا شَيْئًا فَأُوحِىَ إِلَىَّ أَنِ اسْتَأْخِرْ  فَاسْتَأْخَرْتُ، وَعُرِضَتْ عَلَىَّ النَّارُ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ، حَتَّى رَأَيْتُ ظِلِّى وَظِلَّكُمْ فِيهَا

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, কোন এক রাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়াচ্ছিলেন। তিনি সহসা সামনের দিকে হাত মুবারক বাড়ান এবং পিছন দিকে টেনে নেন। আমরা বললাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই নামাযে আপনাকে এমন কাজ করতে দেখেছি, যা ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ। আমার কাছে জান্নাত উনাকে উপস্থিত করা হয়েছিল। তাতে বিশাল বৃক্ষরাজী দেখতে পাই। যেগুলোতে ছড়া ঝুকানো ছিলো। তা থেকে কিছু নিতে চাইলে আমার প্রতি অহী মুবারক হলো, আপনি পেছনে সরে দাঁড়ান। আমি পেছনে সরে দাঁড়ালাম। তারপর আমার নিকট জাহান্নাম উপস্থিত করা হলো যা আমার ও আপনাদের সামনেই ছিলো। এমনকি সেখানে আমাকে ও আপনাদেরকে দেখতে পেলাম এমনভাবে, যেমনভাবে আয়নায় দেখা যায়। সে হিসেবে “যিল্লুন” শব্দ মুবারক ব্যবহার করা হয়েছে। (মুসতাদরাকে হাকিম)

এই হাদীছ শরীফ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক প্রমাণিত হয় না। (উল্লেখ্য ছায়া তো বিপরীত দিকে দেখা যায়। কাজেই, এটা ছায়া মুবারক নয়। বরং আয়নার মতো দেখা গিয়েছে।) মূল বিষয় হচ্ছে চন্দ্র, সূর্য অথবা বাতির আলোতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক মুবারক পড়তো না। অথচ বাতিল ফিরকার লোকেরা দলীল দিলো জাহান্নামে ছায়া মুবারক দেখার বিষয়ে। নাউজুবিল্লাহ! আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ওহাবী দেওবন্দীরা বলে থাকে, জাহান্নামের আগুনের আলোতে ছায়া মুবারক দেখেন। অথচ উক্ত হাদীছ শরীফে জাহান্নামের আগুনের আলোতে ছায়া মুবারক দেখার কথা মোটেও উল্লেখ নাই। যে “যিল্লুন”-এর কথা বলা হয়েছে সেটা দ্বারা আয়নায় যেমন দেখা যায় তদ্রƒপ দেখার কথা বলা হয়েছে। সাধারণভাবে আমরা যে ছায়া মুবারক বুঝি তা বোঝানো হয়নি। বরং এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অর্থ হচ্ছে পবিত্র জান্নাতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আয়নায় দেখার মতো দেখতে পাচ্ছিলেন। হাস্যকর কথা হচ্ছে, পৃথিবীর যমীনে ছায়া মুবারক পড়েছিলো এই বিষয়ে স্পষ্ট দলীল না দিতে পেরে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এমন এক হাদীছ শরীফ পেশ করলো যার দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাযির নাযির এবং ইলমে গইবের দলীলই সাব্যস্ত হলো। কারণ জান্নাত ও জাহান্নাম গইবের বিষয়। এই সকল বাতিল ফিরকা কেন তাহলে ইলমে গইব ও হাযির নাযির বিশ্বাস করে না?

২য় হাদীছ শরীফ

فلما كان شهر ربيع الأول دخل عليها فرأت ظله فقالت إن هذا لظل رجل وما يدخل علي النبي صلى الله عليه وسلم فمن هذا فدخل النبي صلى الله عليه وسلم

অর্থ: পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট গেলেন। হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার প্রাক্কালে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “যিল্লুন” মুবারক দেখতে পান। তখন বললেন, এতো কোনো পুরুষের “যিল্লুন” মুবারক বলে মনে হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো আমার নিকট তাশরীফ মুবারক রাখেন না। রাখার কথা নয়। তাহলে এ ব্যক্তি তিনি কে? ইত্যবসরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক রাখেন। (মুসনাদে আহমদ ৭/৪৭৪)

এই পবিত্র হাদীছ শরীফ ওহাবীদের কাছে আরো একটা দলীল। এই হাদীছ শরীফে যে ظل শব্দের কথা বলা হয়েছে তা দ্বারা ছায়া মুবারক বুঝানো হয়নি। এই ظل হচ্ছে নিছবত, নৈকট্য, প্রশান্তি, রহমত মুবারক বুঝানো হয়েছে। অনেকদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার হয়নি। দীর্ঘ সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক থেকে দূরে থাকা সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ সকলের জন্যই অনেক কষ্টের বিষয়। তাই, দীর্ঘ সময় পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম উনার জন্য ছিলো অপরিসীম প্রশান্তি ও আনন্দের। আর “যিল্লু” শব্দের অর্থ যেহেতু শুধু ছায়া মুবারকর অর্থই প্রকাশ করে না। বরং রহমত, প্রশান্তি, আশ্রয়, নৈকট্য ইত্যাদিও বুঝায়। (মিছবাহুল লুগাত, ফিরোজুল লুগাত, কামুস)

তাই এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো সেটা প্রমাণিত হয়না বরং উনার আগমন, উনার ছোহবত মুবারক যে প্রশান্তি ও রহমত মুবারক উনার কারণ সেটাই প্রমাণিত হয়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে “এতো কোনো পুরুষের ظل বলে মনে হয়”। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফের দিকে অন্য কোন পুরুষ মানুষ আগমন করবে এটা চিন্তা করলেও কুফরী হবে। অর্থাৎ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করেছেন। আর দীর্ঘ সময় পর এই আগমন মুবারক ছিলো বেশুমার আনন্দের ও প্রশান্তির। তাই তিনি সেই বিষয়টাই প্রকাশ করেছেন। যেটা বাতিল ফিরকার লোকেরা তাদের বইতেও পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছে। তারা এই হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছামিনাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন “এমনি এক সময় দিনের শেষার্ধে, নিজেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ظل মুবারক উনার মধ্যে পাই। তিনি আমার দিকে এগিয়ে আসছিলেন।” (মুসনাদে আহমদ, ৬/১৬৪-১৮২, আত্ ত্বাবাকাত আল্ কুবরা, ৮/১০০)

ظل মুবারক উনার মধ্যে পাই অর্থ এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে উনার নৈকট্যের মাঝে নিজেকে পাই। যেমন আমরা অনেকে বলে থাকি, “আব্দুর রহিম সাহেব তার পরিবারের জন্য ছায়া মুবারক।” এই ছায়া মুবারক দ্বারা আব্দুর রহিম সাহেবের ছায়া মুবারক বোঝানো হচ্ছে না বরং  পরিবারের জন্য আব্দুর রহিম সাহেবের গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছে।

ব্যাখামূলক এমন পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ থেকে বাতিল ফিরকার লোকেরা বলতে চায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারকে ছায়া মুবারক মুবারক ছিলো। নাউযুবিল্লাহ! যা তাদের অজ্ঞতা ও মূর্খতাই বারংবার প্রকাশ করে। পবিত্র হাদীছ শরীফে “যিল্লু” শব্দ লেখা থাকলেই তার অর্থ সরাসরি “ছায়া মুবারক” করা যাবে না। আরবী অনেক শব্দের অর্থই সরাসরি করা যায় না। করলে সেটা ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী পর্যন্ত হয়ে যায়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা অনুযায়ী অর্থ করতে হবে। কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। যেমন- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার শানে সরাসরি “যিল্লু” ব্যবহার করা হয়েছে। তাই বলে কি একথা বলা যাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক আছে? নাউযুবিল্লাহ। ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حضرت أَبِىْ هُرَيْرَةَ رضى الله تعالى عنه، عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلّم قَالَ: ” سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللّهُ فِىْ ظِلّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّه

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক নিজের ছায়া মুবারকয় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক ব্যতীত কোন ছায়া মুবারক থাকবে না। (বুখারী শরীফ, কিতাবুল হুদুদ, বাবু ফাদ্বলি মান তারাকাল ফাওয়াহিশ, মুসলিম শরীফ, কিতাবুয যাকাত বাবু ফাদ্বলি ইখফাহিছ ছদাকাহ তিরমিযী শরীফ, কিতাবুয যুহুদ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষেত্রে ছায়া মুবারক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কি ছায়া মুবারক আছে? নাউযুবিল্লাহ! এখানে ছায়া মুবারক দ্বারা সাধারণ অর্থে ছায়া মুবারক বলতে যা বুঝায় তা অর্থ করা যাবে না। এখানে ছায়া মুবারক হচ্ছে রহমত, দয়া, করুণা। সরাসরি অর্থ করলে সেটা শিরিক এবং কুফরী হবে। উক্ত হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

عَنْ حضرت أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله تعالى عنه، عَنِ النَّبِيّ  صلى الله عليه وسلّم قَالَ: ” سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাত ব্যাক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজের ছায়া মুবারকয় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক ব্যতীত কোন ছায়া মুবারক থাকবে না। (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল হাদীছ শরীফ নম্বর- ৯৪৯১)

বিখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিছ হযরত তাবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একটা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছেন-

وَمَنْ كَفَلَ يَتِيمًا أَوْ أَرْمَلَةً أَظَلَّهُ اللّهُ فِىْ ظِلّهِ وَأَدْخَلَهُ جَنَّتَهُ

অর্থ: যে ব্যক্তি কোন ইয়াতীম অথবা কোন বিধবার ভরণ পোষণের ভার নেয় মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে উনার ছায়া মুবারকে আশ্রয় দান করবেন এবং তাকে উনার জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মু’জামুল আওসাত লি তাবরানী, হাদীছ নম্বর ৯২৯২)

এই পবিত্র হাদীছ শরীফেও “জিল্লু” শব্দটির সরাসরি অর্থ করা যাবে না। তাবীলী অর্থ গ্রহণ করতে হবে। ছায়া মুবারক উনার অর্থ হবে রহমত মুবারক। এরপর আরো একটা পবিত্র হাদীছ শরীফ যা বিখ্যাত মুজতাহিদ, হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেছেন-

عن ام الـمؤمنين حضرت عائشة عليها السلام عن رسول الله صلى الله عليه وسلم  قال : أتدرون من السابقون إلى ظل الله عز وجل يوم القيامة ؟ قالوا : الله ورسوله أعلم ، قال : الذين إذا أعطوا الحق قبلوه ، وإذا سئلوه بذلوه ، وحكموا للناس كحكمهم لأنفسهم

অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামতের দিনে কারা মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারকয় আশ্রয় গ্রহনে অগ্রগামী হবেন? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালো জানেন। অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ঐসব ব্যক্তি যাদের সামনে হক্ব কোন বিষয় পেশ করা হলে তা গ্রহণ করে নেয়। যাদের কাছে কিছু চাওয়া হলে দান করে এবং অন্যদের ব্যপারেও নিজের মত ফায়সালা করে থাকে। (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২৩৮২২, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাক্বী ১০৩৭৮)

ইমামুল মুহাদ্দিছীন মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি মিশকাত শরীফের শরাহতে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন-

عَنْ أَبِي رَجَاءٍ الْعُطَارِدِىِّ رضى الله تعالى عنه قَالَ : سَمِعْتُ حضرت أَبَا بَكْرٍ عليه السلام، وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ ، يَقُولُ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ : ” الْوَالِي الْعَادِلُ الْمُتَوَاضِعُ ظِلُّ اللَّهِ وَرُمْحُهُ فِي الأَرْضِ ، “

অর্থ: হযরত আবু র’জা উতারিদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দানকালে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইনসাফগার ও বিনয়ী শাসক পৃথিবীতে মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক ও বর্শা বা যুদ্ধাস্ত্র। (মিরকাত শরীফ শরহে মিশকাত শরীফ, কিতাবুল ইমরায়াত ওয়াল কাজী)

হাফিযে হাদীছ, মুজাদ্দিদে যামান হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-

أدبوا أولادكم على ثلاث خصال: حب نبيكم، وحب أهل بيته، وقراءة القرآن، فإن حملة القرآن في ظل الله يوم لا ظل إلا ظله مع أنبيائه وأصفيائه

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি গুণ শিক্ষা দাও। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক, সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত। কারণ পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও সুফীয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক-এ থাকবেন, সেদিন এই ছায়া মুবারক ব্যতীত আর কোন ছায়া মুবারক থাকবে না। (জামিউছ ছগীর লি ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাদীছ শরীফ নম্বর ৩১০)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

إِنَّمَا السُّلْطَانُ ظِلُّ اللَّهِ فِي الأَرْضِ، وَرُمْحُهُ فِي الأَرْضِ

অর্থ: নিশ্চয়ই নেককার সুলতান যমীনে মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক ও উনার বর্শা স্বরূপ। (সুনানে কুবরা বায়হাকী, হাদীছ শরীফ নং ১৫৩০৪, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাক্বী: হাদীছ শরীফ নং ৬৮৭২)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহে “জিল্লুল্লাহ” দ্বারা কোনটাতেই সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার ছায়া মুবারক বোঝানো হয়নি, বরং রহমত, করুণা, নৈকট্য, দয়া, ইহসান ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। এবং সকল ইমাম মুহাদ্দিসগণ উনারা এই ব্যাখ্যাই করেছেন। প্রতিটা শব্দের শাব্দিক অর্থ করলে সেটাতো গ্রহণ করা যাবেই না বরং ঈমানহানীর কারণ হবে। এ বিষয়ে কতিপয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وكلوا واشربوا حتى يتبين لكم الخيط الابيض من الخيط الاسود.

“এই আয়াত শরীফে বর্ণিত خيط শব্দের শাব্দিক অর্থ সুতা। তৎকালীন আরবে শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হত। এখন خيط শব্দের শাব্দিক অর্থ অনুযায়ী আয়াত শরীফ উনার অর্থ দাঁড়ায় তোমরা সাহরী খাও যতক্ষণ না তোমাদের জন্য সাদা সুতা কালোসুতা থেকে পার্থক্য হয়।”

উল্লিখিত আয়াত শরীফ নাযিল হলে বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আদী ইবনে হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একটি সাদা সূতা ও কালো সুতা নিয়ে আমার বালিশের নীচে রাখলাম, সকাল পর্যন্ত উভয়টার মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারলাম না। পরে এ সম্পর্কে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফে الخيط الاسود দ্বারা রাতের অন্ধকার  অর্থাৎ ছুবহি কাযিব এবং الخيط الابيض দ্বারা ছুবহি ছাদিক বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মূল অর্থ হলো- ‘তোমরা সাহরি খাও রাতের অন্ধকার হতে সুবহি ছাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।” (বুখারী শরীফ কিতাবুছ ছিয়াম, মুসলিম শরীফ কিতাবুছ ছিয়াম, তিরমিযী শরীফ ২য় জি: ১২০ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর ১ম জি: ২৯০ পৃষ্ঠা)

এখানে যদি সাদা সূতা ও কালো সূতা অর্থ করে সাহরী খাওয়া চলতে থাকে তাহলে একটা রোযাও কি হবে? সর্বক্ষেত্রেই শাব্দিক অর্থ নেয়া যায় না। আলোচ্য বিষয়ে শান, মান, অবস্থা বুঝেই অর্থ করতে হয়। তদ্রƒপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে “যিল্লু” লেখা থাকলেই উনার ছায়া মুবারক আছে এটা প্রমাণ হয় না। বরং এখানে তাবীলী ব্যাখা গ্রহণ করতে হবে। কারণ ছহীহ হাদীছ শরীফ এবং অসংখ্য ইমাম মুজতাহিদ উনাদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার কোন ছায়া মুবারক ছিলো না।

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনেক স্থানে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং তা’বীলী তথা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহন করতে হবে। কারণ যে সকল শব্দের সরাসরী অর্থ করলে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ হয়; সে সকল শব্দের সরাসরি অর্থ করলে কুফরী হবে। বরং সেক্ষেত্রে তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ গ্রহন করতে হবে। অনুসরণীয় ইমাম মুজতাহিদগণ সকলেই এরূপ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা’বীলী বা ব্যাখ্যামুলক অর্থ গ্রহন করেছেন।

উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক ‘পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ’ উনার ৫৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

ومكروا ومكر الله والله خير الـمكرين.

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রকৃত বা সরাসরী অর্থ হলো- “আর কাফিরেরা ধোকাবাজী করলো, মহান আল্লাহ পাক তিনিও ধোকাবাজী করলেন, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন উত্তম ধোকাবাজ।” (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!)

এরূপ অর্থ যে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত এ ব্যাপারে কারোই কোনরূপ দ্বিমত নেই। কারণ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা মতে মহান আল্লাহ পাক (مكر) “মকর” বা ধোকাবাজী হতে সম্পূর্ণই পবিত্র। অথচ দুনিয়ার সকল লুগাত বা অভিধান সমূহেই (مكر) “মকর” শব্দের অর্থ “ধোকাবাজী” বলে উল্লেখ আছে।

ইমামুল লুগাবী, আল্লামা মুহিব্বুদদ্বীন, আবুল ফাইজ সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুরতাজা আল হুসাইনী আল ওয়াসেত্বী আল যাবেদী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরিল কামুস”-এর ৩য় জিঃ ৫৪৮ পৃষ্ঠায়  উল্লেখ করেন-

)المكر) الخديعة والاحتيال وقال الليث احتيال فى خفية …….. وقال ابن الاثير مكر الله ايقاع بلائه باعدائه دون اوليائه.

অর্থ: مكر “মকর” শব্দের অর্থ হচ্ছে- ধোকাবাজী, প্রতারণা, ঠগবাজী। হযরত আবু লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, গোপন প্রতারণা। ….. হযরত ইব্নুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক “মকর” করেছেন, একথার অর্থ হলো, উনার শত্রুদের শাস্তি প্রদান করেছেন, বন্ধুদেরকে নয়।”

সকল ইমাম মুহাদ্দিছগণ একমত “মকর” শব্দের সরাসরি অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারক-এ ব্যবহার করা যাবে না। তা’বীলি বা ব্যাখামূলক অর্থ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে সরাসরি অর্থ করলে স্পষ্ট কুফরী হবে।

এখানে অর্থ হবে তারা ধোকাবাজী করলো আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হিকমত করলেন। তিনি উত্তম হিকমতওয়ালা।

মহান আল্লাহ পাক “সূরা দুহা”- উনার ৭নং আয়াত শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন-

ووجدك ضالا فهدى.

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সরাসরি বা প্রকৃত অর্থাৎ লুগাতী বা শাব্দিক অর্থ যদি করা হয় তবে এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অর্থ দাঁড়ায়- মহান আল্লাহ পাক আপনাকে গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত পেয়েছেন অতঃপর হিদায়েত দিয়েছেন।” (নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!)

অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা মোতাবেক এ অর্থ যে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই এবং এ ব্যাপারে কারো  মধ্যেই কোন প্রকার দ্বিমত নেই। কুফরী তো হবেই সেই সাথে অন্য একটি আয়াত শরীফ উনাকে অস্বীকার করা হবে। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

ما ضل صاحبكم وما غوى.

অর্থ: “তোমাদের ছাহিব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো গোমরাহ হননি এবং কখনো বিপথগামী হননি।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

ليس بى ضللة ولكنى رسول من رب العلمين.

অর্থ: “হে আমার ক্বওম! আমার নিকট গোমরাহী বলতে কিছুই নেই বরং আমি মহান রব্বুল আলামীন উনার প্রেরিত রসূল।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদাই হিদায়েতের উপর ছিলেন অর্থাৎ তিনি হিদায়েতসহ প্রেরিত হয়েছেন এবং তিনিই হচ্ছেন হিদায়েত উনার মূল অর্থাৎ হিদায়েত দানকারী।

অথচ সমস্ত লুগাত বা আরবী অভিধান সমূহে (ضال) শব্দের অর্থ গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি বলে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্বখ্যাত আরবী লুগাত “তাজুল আরুস” এর ৭ম খন্ডের ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

)والضلل محركة قد الهدى) والرشاد وضال الراغب هو العدو عن الطريق الـمستقيم وتضاد هداية.

অর্থ: الضلل বলা হয় হিদায়েতের বিপরীত বিষয়কে অর্থাৎ গোমরাহী, পথভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তিকে।”

“সূরা দুহায়” বর্ণিত ضالا শব্দের প্রকৃত বা লুগাতী অর্থ হলো- গোমরাহ্, পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ইত্যাদি।

এখন প্রশ্ন হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ضالا শব্দের শাব্দিক বা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করা জায়িয হবে কি? মূলতঃ কশ্মিনকালেও তা জায়িয হবে না। বরং এরূপ অর্থ গ্রহন করলে কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হবে।

তাই অনুসরণীয় সকল মুফাস্সিরীনে কিরামগণ উক্ত আয়াত শরীফ উনার সরাসরী বা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ না করে তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন মুফাস্সিরীন বিভিন্নভাবে উক্ত আয়াত শরীফ উনার তা’বীল করেছেন। তন্মধ্যে-

ووجدك ضالا فهدى.

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সুন্দরতম তা’বীলী অর্থ হলো, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে মহান আল্লাহ পাক কিতাবহীন পেয়েছেন, অতঃপর আপনাকে কিতাব হাদিয়া মুবারক করেছেন।” এখানে ضالا শব্দটি কিতাবহীন অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে।

উপরোক্ত দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো সবক্ষেত্রে শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক শানে “মকর” এবং সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ضالا শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এই শব্দ উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ। এখানে তা’বীলী বা ব্যাখামূলক অর্থ গ্রহণ করতে হবে।  যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, দেওবন্দী তাবলিগীদের মুরুব্বী মালানা যাকারিয়া সাহেবকে তার মেয়ে একটা চিঠি লেখে। চিঠির শুরুতে যে ভাষায় সম্মোধন করে,

মহতারাম, মুকাররম!

“আল্লাহ আমাদের উপর আপনার ছায়া মুবারক দীর্ঘায়িত করুন।” (শায়খুল হাদিস এর পাঁচ কণ্যা, পৃষ্ঠা ৬২। লেখক: শাহেদ সাহারানপুরী, প্রকাশনা: আকিক পাবলিকেশন্স, ১১/১ বাংলাবাজার ১১০০)

এখানে “ছায়া মুবারক” মানে কি বোঝানো হয়েছে? নিশ্চয়ই শরীরের ছায়া মুবারককে বোঝানো হয়নি? নিজেদের ব্যাপারে ছায়া মুবারক মানে যদি আশ্রয় বুঝানো হয় তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে এমন পারিভাষিক অর্থ বুঝতে তাদের কষ্ট হয় কেন?

এরপরও যদি কেউ ছহীহ হাদীছ শরীফ ও ইমাম, মুজতাহিদ উনাদের মতামতকে উপেক্ষা করে, তাদের ফয়সালা সর্ম্পকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ومن يشاقق الرسول من بعد ماتبين له الـهدى و يتبع غير سبيل الـمؤمنين نوله ماتولى و نصله جهنم

অর্থ: যে কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর মু’মিন উনাদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে চলে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো যেদিকে সে ফিরেছে এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)

যেখানে ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার কোন ছায়া মুবারক ছিলো না আর এই বিষয়টাই সকল ইমামগণ বিনা সন্দেহে মেনে নিয়েছেন তাই এই মতের বিরোধীতাই হচ্ছে নিজেকে জাহান্নামী সাব্যস্ত করা।

যেহেতু আমরা দেখতে পেলাম সকল মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। তাই এই মতের বিরোধীতা করা উম্মতের ঐক্যমত্যের বিরোধীতা করার নামান্তর। যার ফলাফল নিশ্চিত জাহান্নাম।

আর এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا يَجْمَعُ اللّهُ أُمَّتِى عَلَى الضَّلالَةِ، يَدُ اللّهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ، فَإِنَّه مَنْ شَذَّ شَذَّ فِى النَّارِ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার উম্মতকে কখনো গোমরাহীর মধ্যে একমত করবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক রয়েছে। যারা এই জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী শরীফ- কিতাবুল ফিতান, মুস্তাদরাকে হাকিম ৩৫৯)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ

অর্থ: যে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করলো সে যেন নিজের গলা থেকে পবিত্র ইসলাম উনার বন্ধন খুলে ফেললো। (সুনানে আবু দাউদ- কিতাবুস সুন্নাহ)

পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قال رسول الله صلى الله عليه و سلم اتبعوا السواد الاعظم فانه من شذ شذ فى النار.

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা বড় দলের অনুসরন করো! কারণ যে জামাত (আহলে সুন্নাহ) হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাকে পৃথকভাবে অগ্নীতে নিক্ষেপ করা হবে !” (মিশকাত শরীফ- কিতাবুল ঈমান-বাবুল ই’তিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ- পবিত্র হাদীছ শরীফ ১৬৪)

সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার ছায়া মুবারক ছিলো না এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা। এ বিষয়েই সকলে একমত। উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো এই বিষয়কে যারা অস্বীকার করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত বা জুদাকারী, যাদের শেষ পরিণতি জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আ’ইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, ক্বাইয়্যুমুয্ যামান, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আউলিয়া ওয়াল মাশায়িখ, সুলত্বানুন নাছীর, মাহিউল বিদয়াহ, রসূলে নুমা, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল উমাম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আস সাফফাহ, হাবীবুল্লাহ্, আওলাদে রসূল, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকে এসে পৃথিবীর সকল মুসলামানদের আক্বীদা বিশুদ্ধ করার সাথে সাথে সর্বোচ্চ হুসনে যন হাছিল করে ইখলাছ উনার সাথে আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন। (সমাপ্ত)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০