সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত কতিপয় শব্দ মুবারক সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল বেনযীর অভূতপূর্ব তাজদীদ মুবারক

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

لَا تَجْعَلُوْا دُعَاءَ الرَّسُوْلِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا

অর্থ : তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেরুপ আহবান করো, তদ্রুপ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহবান বা সম্বোধন করোনা। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাধারণভাবে সম্বোধন করা যাবেনা। সর্ব ক্ষেত্রে উনার মুবারক শানে সর্বোচ্চ আদব বজায় রাখতে হবে। উনার মুবারক শানে সামান্য হতে সামান্য আদবের খিলাফ করলে অত্যন্ত কঠিন ও নির্মম পরিণতির শিকার হতে হবে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَـجْهَرُوْا لَه بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ اَنْ تَـحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ

অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল মুনাওউইর বা স্বর মুবারক উনার উপর তোমাদের স্বরকে উঁচু করোনা। তোমরা পরস্পর যেভাবে উঁচু স্বরে কথা বলো, সেভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কথা বলোনা। তোমাদের আমলসমূহ এমনভাবে নষ্ট হবে যে তোমরা তা অনুধাবনও করতে পারবেনা। (পবিত্র সূরা হুজরাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

এখানে দেখা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে শব্দ উচ্চারণ বা কথা বলার ক্ষেত্রেও অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উনার মুবারক শানে প্রতিটি শব্দ ভেবে চিন্তা করে বলতে হবে। কোন ভাবে যদি বেআদবী হয়ে যায়, তাহলে যিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে উম্মাহ যেন সর্বোচ্চ আদব বজায় রাখতে পারে, উনার মুবারক শানে যেন সর্বদা সর্বোচ্চ আদব প্রকাশিত হয়, এ জন্য যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলতানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বেমেছাল বেনযির অভূতপূর্ব এক তাজদীদ মুবারক করেছেন। তিনি সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কতিপয় বিশেষ শব্দ মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে প্রকাশ করেছেন। যে সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী আমলে বাস্তবায়ন করা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ اللهِ نُوْرٌ

অর্থ: নিশ্চয়ই খলিক্ব-মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত নূর মুবারক তাশরীফ  মুবারক গ্রহণ করেছেন। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত নূর এবং মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে ঘোষণা মুবারক করেছেন। উনার পুরো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল কুদরত বা অজুদ মুবারক রহমত ও নূর মুবারক উনাদের মূল। এমনকি উনার আখাছছুল খাছ মুবারক নিসবতপ্রাপ্ত সবই রহমত ও নূর মুবারকে পরিপূর্ণ। আর এ জন্যই উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ মুবারক নূর মুবারক ও রহমত মুবারক ইত্যাদী নিয়ে প্রকাশ করতে হবে।

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রহমত মুবারক। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রহমত মুবারক হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। সঙ্গত কারণেই উনার সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক বস্তু মুবারকই রহমত এবং নূর মুবারক। আর এ জন্যই হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা বা একমত পোষণ করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারক প্রাপ্ত প্রতিটি বস্তুই কায়িনাতের সমস্ত কিছু হতে অধিক মর্যাদা ও ফযীলত প্রাপ্ত। এমনকি তা আরশে আযীম হতেও অত্যধিক শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!

নিম্নে তাজদীদী বিশেষ শব্দ মুবারকসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

নূরুল ফাতাহ মুবারক

ফাতাহ বা ফাতহুন (فَتْحٌ) আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ বিজয়। যে নূর মুবারক উনার মুবারক উসীলায় বিজয় অর্জিত হয়, উনাকে নূরুল ফাতাহ মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা চুল নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুল ফাতাহ মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الْـحَمِيْدِ بْن جَعْفَرَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيْدِ رَضِىَ الله تَعَالٰى عَنْهُ فَقَدَ قَلَنْسُوَةً لَه يَوْمَ الْيَرْمُوْكِ فَقَالَ اُطْلُبُوْهَا فَلَمْ يَـجِدُوْهَا ثُـمَّ طَلَبُوْهَا فَوَجَدُوْهَا وَإِذَا هِيَ قَلَنْسُوَةٌ خَلِقَةٌ  فَقَالَ خَالِدٌ رَضِىَ الله تَعَالٰى عَنْهُ اِعْتَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَلَقَ رَأْسَه وَابْتَدَرَ النَّاسُ جَوَانِبَ شَعْرِهٖ  فَسَبَقْتُهُمْ اِلٰـى نَاصِيَتِهٖ فَجَعَلْتُهَا فِيْ هٰذِهِ الْقَلَنْسُوَةِ  فَلَمْ أَشْهَدْ قِتَالًا وَهِيَ مَعِيَ إِلَّا رُزِقْتُ النَّصْرَ  .

অর্থ : হযরত আব্দুল হামীদ ইবনে জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার একখানা টুপি মুবারক ইয়ারমুকের যুদ্ধের সময় হারিয়ে ফেললেন। তিনি বললেন, আপনারা তা খুঁজে বের করুন। কিন্তু উনারা তা খুঁজে পেলেননা। অতপর, উনারা তা আবারো খুঁজলেন এবং তা খুঁজে পেলেন। দেখা গেলো তা একখানা বিশেষ ধরণের টুপি মুবারক। তখন হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার উমরাহ মুবারক করেন। তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হুদা বা পবিত্র সির মুবারক মুণ্ডন করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল ফাতাহ মুবারক (সাধারণত মানুষ যাকে চুল হিসেবে সম্বোধন করে) গ্রহণ করার জন্য লোকেরা প্রতিযোগিতা করতে লাগলেন। আমি প্রতিযোগিতায় অগ্রবর্তী হলাম এবং নূরুল ফাতাহ মুবারক লাভ করলাম। যা আমি এই টুপি মুবারকে সংরক্ষণ করেছি। আমি এমন কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি যেখানে এই টুপি মুবারক আমার সাথে ছিলো কিন্তু আমি বিজয় লাভ করিনি। অর্থাৎ, এই টুপি মুবারক নিয়ে আমি যে যুদ্ধেই অংশ নিয়েছি, সে যুদ্ধেই আমি বিজিত হয়েছি। সুবহানাল্লাহ। (মুসতাদরাকে হাকিম, মু’জামুল কবীর)

অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে চুল হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুল ফাতাহ মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

পবিত্র নূরুর রহমত মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا اَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْـمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সারা কায়িনাতের জন্য সম্মানিত রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মূল রহমত মুবারক। তিনি সারা আলমের জন্য রহমত স্বরূপ। আর রহমত মুবারক প্রকাশিত হওয়ার মূল কেন্দ্র মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিশেষ স্থান মুবারক, যাকে সাধারণত মানুষ চেহারা মুবারক নামে সম্বোধন করে থাকে।  অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা চেহারা নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুর রহমত মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে।

পবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক

বারাকাত  (بَرَكَاتٌ) আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ সমৃদ্ধি। যে নূর মুবারক উনার উছিলায় বারাকাত বা সমৃদ্ধি অর্জিত হয়, উনাকে নূরুল বারাকাত মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা থুথু নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুল বারাকাত মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ سَـمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ يَوْمَ خَيْبَرَ لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يَفْتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ فَقَامُوْا يَرْجُوْنَ لِذٰلِكَ أَيُّهُمْ يُعْطٰى فَغَدَوْا وَكُلُّهُمْ يَرْجُوْ أَنْ يُّعْطٰى فَقَالَ أَيْنَ عَلِيٌّ فَقِيْلَ يَشْتَكِيْ عَيْنَيْهِ فَأَمَرَ فَدُعِيَ لَه فَبَصَقَ فِيْ عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ مَكَانَه حَتّٰـى كَأَنَّه لَـمْ يَكُنْ بِهٖ شَيْءٌ

অর্থ : হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, খাইবার জিহাদের দিন তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি যে, আমি এমন একজনের হাত মুবারকে পতাকা মুবারক অর্পন করবো, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক বিজয় প্রকাশ করবেন। তখন প্রত্যেকেই পতাকা লাভকারী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করলেন। প্রত্যেকে সকাল করলেন এ আশা নিয়ে যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকেই পতাকা মুবারক সোপর্দ করবেন। অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি কোথায়? মুবারক খিদমতে বলা হলো, তিনি চক্ষু মুবারকের মারিদ্বী শান মুবারকে রয়েছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে ডাকার জন্য আদেশ মুবারক করলেন এবং উনাকে ডাকা হলো। (তিনি যখন তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করলেন তখন) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার চক্ষু মুবারকে নূরুল বারাকাত মুবারক (তথা মানুষ যা থুথু হিসেবে বলে) তা লাগিয়ে দিলেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি এমন সুস্থ হলেন, যেন উনার চক্ষু মুবারকে কখনো কোনো মারিদ্বী শান প্রকাশ করেনি। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল বারাকাত মুবারক উনার বরকতে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি মারিদ্বী শান মুবারক হতে পূর্ণাঙ্গরূপে ছিহাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন।

এরুপ আরো অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরুল বারাকাত মুবারক উনার বরকতে রোগ-বালাই দূর হয়েছে, কর্তিত হাত,পা ও জিহ্বা জোড়া লেগেছে, পানির সংকট দূর হয়েছে, অল্প খাবার দ্বারা বহু সংখ্যক লোক পরিতৃপ্ত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।

অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে থুথু হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুল বারাকাত মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

নূরুল মুহব্বত মুবারক

মুহব্বত আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ ইশক্ক বা ভালোবাসা। যে নূর মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেন, উনাকে নূরুল মুহব্বত মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা অশ্রু নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুল মুহব্বত মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ  حَضْرَتْ اَسْـمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدَ بْنِ السَّكَنِ  رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا قَالَتْ لَمَّا تُوُفِّـىَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَكٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنْتَ اَحَقُّ مَنْ عَلِمَ اللهٌ حَقَّهٗ فَقَالَ تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيـَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلَا نَقُوْلُ مَا يُسْخِطُ الرَّبَّ لَوْلَا اَنَّهٗ وَعْدٌ صَادِقٌ وَّمَوْعُوْدٌ جَامِعٌ وَّاَنَّ الْاٰخِرَ مِنَّا يَتْبَعُ الْاَوَّلَ لَوَجَدْنَا عَلَيْكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَجْدًا اَشَدَّ مِـمَّا وَجَدْنَا وَاِنَّا بِكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.

অর্থ: “হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! এমতাবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার যথার্থ হক্ব ও অধিকার অনুধাবনে আপনিই সকলের অনুসরণীয়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত চোখ মুবারক নূরুল মুহব্বত মুবারক যুক্ত, সম্মানিত হৃদয় মুবারক ব্যথিত। আর আমরা এমন কিছু বলি না, যা মহান আল্লাহ পাক উনাকে অসন্তুষ্ট করে। অর্থাৎ আমরা যা বলছি এবং করছি সবকিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক উনার কারণ। সুবহানাল্লাহ! যদি তা (মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক) বাস্তব অঙ্গীকার ও সমবেতকারী প্রতিশ্রুতি না হতো এবং যদি এমন না হতো যে, আমাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে, তবে হে হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম অবশ্যই আমরা আপনার জন্য যত মর্মাহত হয়েছি, বেক্বারার হয়েছি, সম্মানিত মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেছি, তার চেয়ে অত্যধিক মর্মাহত হতাম, বেক্বারার হতাম, সম্মানিত মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করতাম। সুবহানাল্লাহ! আর হে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম! আপনার (জুদায়ী মুবারক উনার) কারণে আমরা অবশ্যই দুঃখ ভারাক্রান্ত, চিন্তিত, পেরেশান।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ, ত্ববারনী, বিদায়া-নিহায়াহ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চক্ষু মুবারক হতে প্রকাশিত পানি মুবারক দ্বারা ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রবি’ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি উনার মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেন। অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে অশ্রু বা চোখের পানি হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুল মুহব্বত মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

পবিত্র নূরুন নিয়ামত মুবারক

সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা দাড়ি নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুন নিয়ামত মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই বিশেষ নূর মুবারক যুগে যুগে যে বা যারাই সংরক্ষণ করেছেন এবং করছেন, উনারা বেহিসাব নিয়ামত মুবারক লাভ করেছেন। আর এ নূর মুবারক সম্পর্কে কিতাবাদীসমূহে অনেক ঘটনা বর্ণিত রয়েছে।

নূরুত্ব ত্বীব মুবারক

ত্বীব (طِيْبٌ) আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ সুগন্ধি। যে নূর মুবারক দুনিয়ার সমস্ত সুগন্ধিকে বিলীন করে দিয়ে সর্বাধিক বেমেছাল সুগন্ধি মুবারক প্রকাশ করেন, উনাকে নূরুত্ব ত্বীব মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা ঘাম নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুত্ব ত্বীব মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عِنْدَنَا فَعَرِقَ وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُوْرَةٍ فَجَعَلَتْ تَسَلَّتِ الْعَرَقَ فِيْهَا فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ‏”يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هٰذَا الَّذِيْ تَصْنَعِيْنَ‏”‏ ‏.‏ قَالَتْ هٰذَا عَرَقُكَ نَـجْعَلُه فِيْ طِيْبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيْبِ ‏.‏

অর্থ : হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের মাঝে তাশরীফ মুবারক রাখলেন এবং বিশ্রাম মুবারক নিলেন। তখন উনার পূতপবিত্র জিসম মুবারক হতে বিশেষ নূর মুবারক (যাকে মানুষ ঘাম বলে থাকে) প্রকাশিত হলেন। তখন মাতা একখানা শিশি নিলেন এবং তাতে প্রকাশিত বিশেষ নূর মুবারক ভরতে লাগলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চক্ষু মুবারক খুললেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, হে উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আপনি এটা কি করছেন? তিনি বললেন, এ আপনার পূতপবিত্র জিসম মুবারক হতে প্রকাশিত বিশেষ নূর মুবারক (যাকে মানুষ ঘাম বলে থাকে)। যা বরকতময় সুগন্ধি মুবারক হিসেবে ব্যবহার করবো। এ সুগন্ধি মুবারক সমস্ত সুগন্ধি হতে অধিক সুঘ্রাণময়। (মুসলিম শরীফ)

অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أبِـيْ هُرَيْرَة رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَجُلًا اَتَى النَّبِـيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنِّـيْ زَوَّجْتُ اِبْنَتِـيْ وَاِنِّـيْ اُحِبُّ اَنْ تُعِيْنَنِـيْ بِشَيْءٍ فَقَالَ مَا عِنْدِيْ مِنْ شَيْءٍ وَلٰكِنْ اِذَا كَانَ غَدٍ فَتَعَالِ فَجِىْءَ بِقَارُوْرَةٍ وَاسِعَةِ الرَّأْسِ وَعُوْدِ شَجَرَةٍ، وَّاٰيَةً بَيْنِـيْ وَبَيْنَكَ اَنِّـيْ اَجِيْفُ نَاحِيَةَ الْبَاب. فَأَتَاهُ بِقَارُوْرَةٍ وَاسِعَةِ الرَّاْسِ وَعُوْدِ شَجَرَةٍ فَجَعَلَ يُسَلِّتُ الْعَرَقَ مِنْ ذِرَاعَيْهِ حَتّٰـى اِمْتَلَأْتُ فَقَالَ خُذْ وَمُرْ اِبْنَتَكِ اِذَا أَرَادَتْ اَنْ تَطْيَبَ اَنْ تُغْمِسَ هٰذَا الْعُوْدَ فِـي الْقَارُوْرَةِ وَتَطْيَبَ بِهٖ”. قَالَ: فَكَانَتْ اِذَا تَطَيَّبَتْ شُمَّ اَهْلِ الْـمَدِيْنَةِ رَائِحَةَ الطِّيْبِ فَسُمُّوْا بِبَيْتِ الْـمُطِيْبِيْنَ.

অর্থ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এক ব্যক্তি এসে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!  আমি আমার কন্যা সন্তানকে বিয়ে দিবো, আমার প্রবল ইচ্ছা যে, আপনি আমাকে (সুগন্ধি জাতীয় কোন কিছু দান করে) সাহায্য করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সুগন্ধি জাতীয় কোন কিছু এই মূহুর্তে আমার কাছে জাহিরান নেই। আগামীকাল যখন আমি হুজরা শরীফ উনার দরজা মুবারকে আওয়াজ করবো, আপনি একটি শিশি বোতল এবং একটি কাঠি নিয়ে আসবেন। অতপর, সে ব্যক্তি কাঠিসহ একটি শিশি বোতল নিয়ে আসলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহু মুবারক হতে বিশেষ নূর মুবারক নিলেন, যাকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ঘাম বলা হয়, তা দ্বারা শিশিখানা পূর্ণ করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি এই শিশিখানা নিয়ে যান এবং আপনার কন্যাকে বলুন যে, যখন সে সুগন্ধি ব্যবহারের ইচ্ছা করবে, তখন যেন সে এই শিশি হতে সুগন্ধি মুবারক ব্যবহার করে। রাবী বলেন, সেই শিশি মুবারকে অবস্থিত বিশেষ নূর মুবারক সুগন্ধি মুবারক হিসেবে সে মেয়ে যখন ব্যবহার করেন, তখন পুরো মদীনা শরীফ সুগন্ধি মণ্ডিত হয়ে যায়। সেই বাড়ীকে বাইতুল মুতীবীন বা সুগন্ধির বাড়ী নামে নামকরণ করা হয়। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ)

অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে ঘাম হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুত্ব ত্বীব মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

নূরুন নাজাত মুবারক

নাজাত  (نَـجَاةٌ) আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ মুক্তি লাভ করা, জান্নাত লাভ করা, রেযামন্দি মুবারক লাভ করা। যে নূর মুবারক লাভের মাধ্যমে মাখলুকাত জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করে, জান্নাত লাভ করে, চিরস্থায়ী রেযামন্দি হাছিল করে, উনাকে নূরুন নাজাত মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা দম বা রক্ত নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুন নাজাত মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْه قَالَ حَجَمَ النَّبِـيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غُلَامٌ لِبَعْضِ قُرَيْشٍ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ حِجَامَتِهٖ اَخَذَ الدَّمَ فَذَهَبَ بِهٖ فَشَرِبَه ثُـمَّ اَقْبَلَ فَنَظَرَ فِـيْ وَجْهِهٖ فَقَالَ وَيـْحَكَ مَا صَنَعْتَ بِالدَّمِ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ نَفَّسْتُ عَلٰى دَمِكَ اَنْ اَهْرِيْقَه فِـي الْأَرْضِ فَهُوَ فِـيْ بَطْنِـىْ فَقَالَ اِذْهَبْ فَقَدْ اَحْرَزْتَ نَفْسَكَ مِنَ النَّارِ

অর্থ : হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরাইশী এক গোলাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূতপবিত্র জিসম মুবারকে শিংগা মুবারক লাগালেন। অতপর, তিনি যখন শিংগা মুবারক লাগানোর কাজ হতে অবসর হলেন, তখন (শিংগা মুবারক লাগানোর কারণে প্রকাশিত বিশেষ নূর মুবারক) নিয়ে তিনি চলে গেলেন এবং তা পান করলেন। অতপর মুবারক খিদমতে আবার ফিরে আসলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই ব্যক্তি উনার তাকালেন এবং বললেন, (শিংগা মুবারক লাগানোর কারণে প্রকাশিত) বিশেষ নূর মুবারক আপনি কি করেছেন? তখন তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার বিশেষ নূর মুবারক আমি বিশেষ জমীনে রেখেছি। আর তা হচ্ছে আমার পেট। অর্থাৎ, তা আমি পান করে ফেলেছি। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি জাহান্নামের আগুন হতে চিরমুক্ত করলেন। অর্থাৎ, আপনি জাহান্নাম চির নাজাত লাভ করলেন। (খ্বছায়েছুল কুবরা)

অন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حَضْرَتْ اَبِـيْ سَعِيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ اَبَاهُ مَالِكَ بْنَ سِنَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْه لَـمَّا اُصِيْبَ رَسُوْلُ الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـيْ وَجْهِهٖ يَوْمَ اُحُدٍ مَصَّ دَمَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَازْدَرَدَه فَقَالَ لَه اَتَشْرَبُ الدَّمَ ؟ قَالَ اَشْرَبُ دَمَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِـيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ خَالَطَ دَمِيْ دَمَه لَا يَضُرُّهُ اللهُ

অর্থ- হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি উনার পিতা হযরত মালেক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে বলেন, ওহুদের জিহাদে কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ নূর মুবারক প্রকাশিত হলে হযরত মালেক ইবনে সিনান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তা চুষে চুষে পান করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি তা পান করছেন? তিনি বলেন, আমি তা পান করছি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার বিশেষ নূর মুবারক যার রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক কখনোই তাকে পাকড়াও করবেননা। অর্থাৎ, তিনি সুনিশ্চিতভাবে নাজাত লাভ করবেন। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফী সীরাতি খইরিল ইবাদ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ নূর মুবারক যে বা যারাই লাভ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য নাজাত তথা জান্নাত ওয়াজিব এবং জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ।

অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে রক্ত হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুন নাজাত মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

নূরুশ শিফা মুবারক

শিফা  (شِفَاءٌ)আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ আরোগ্য। যে নূর মুবারক উনার মুবারক উছীলায় চিরস্থায়ী আরোগ্যতা লাভ হয়, উনাকে নূরুশ শিফা মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা প্র¯্রাব বা ছোট ইস্তিঞ্জা নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুশ শিফা মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ اَيـْمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ لِرَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَّارَةٌ يَّبُوْلُ فِيْهَا فَكَانَ اِذَا اَصْبَحَ يَقُوْلُ يَا اُمَّ اَيـْمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ صُبِّـىْ مَا فِى الْفَخَّارَةِ فَقُمْتُ لَيْلَةً وَّاَنَا عَطْشٰى فَشَرِبْتُ مَا فِيْهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا اُمَّ اَيـْمَنَ عَلَيْهَا السَّلَامُ صُبِّـىْ مَا فِى الْفَخَّارَةِ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُمْتُ وَاَنَا عَطْشٰى فَشَرِبْتُ مَا فِيْهَا فَقَالَ اِنَّكِ لَنْ تَشْتَكِىْ بَطْنَكِ بَعْدَ يَوْمِكِ هٰذَا اَبَدًا.

অর্থ: “সায়্যিদাতুনা হযরত উম্মু আয়মন আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাটির পাত্র মুবারক ছিলো, সে পাত্র মুবারক-এ তিনি (রাতের বেলায়) সম্মানিত নূরুশ শিফা মুবারক রাখতেন। যখন সকাল হতো, তখন তিনি বলতেন হযরত উম্মু আইমান আলাইহাস সালাম! মাটির পাত্র মুবারক-এ যা রয়েছে, তা আপনি ফেলে দিন। একরাতে আমি পিপাসার্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠি, ফলে মাটির পাত্রে যা ছিলো (নূরুশ শিফা’ মুবারক), আমি তা পান করে ফেলি। সুবহানাল্লাহ! তারপর (সকালে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, হে হযরত উম্মু আইমান আলাইহাস সালাম! মাটির পাত্র মুবারক-এ যা রয়েছে, তা আপনি ফেলে দিন। হযরত উম্মু আইমান আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি পিপাসার্ত অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম, তাই মাটির পাত্র মুবারক-এ যা ছিলো (নূরুশ শিফা’ মুবারক), আমি তা পান করে ফেলেছি। সুবহানাল্লাহ! তখন তিনি বললেন-

اِنَّكِ لَنْ تَشْتَكِىْ بَطْنَكِ بَعْدَ يَوْمِكِ هٰذَا اَبَدًا

নিশ্চয়ই আপনি আজকের পর থেকে চিরকালের জন্য আর কখনও পেটের পীড়ায় ভুগবেন না।” সুবহানাল্লাহ! (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ)

অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে মূত্র হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুশ শিফা মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

নূরুল গ¦ইব মুবারক

গ¦ইব  (غَيْبٌ)আরবী শব্দ। শাব্দিক অর্থ অদৃশ্য হওয়া, দৃষ্টির অন্তরালে যাওয়া। যে নূর মুবারক সাধারণত মাখলুকাতের দৃষ্টির বাহিরে অবস্থান মুবারক করেন বা যে নূর মুবারক স্বাভাবিকভাবে মানুষ দেখতে পায়না, উনাকে নূরুল গ্বইব মুবারক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা মল বা বড় ইস্তিঞ্জা নামে অভিহিত হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা ‘নূরুল গ্বইব মুবারক’ নামে সম্বোধন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِقَضَاءِ حَاجَتِهٖ فَدَخَلْتُ فَلَمْ أَرَ شَيْئًا وَوَجَدْتُّ رِيْحَ الْمِسْكِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ لَـمْ أَرَ شَيْئًا قَالَ إِنَّ الْأَرْضَ أُمِرَتْ اَنْ تَكَفَّتْهُ مِنَّا مَعَاشِرَ الْاَنْبِيَاءِ

অর্থ : হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর মুবারক স্থানান্তরিত করার জন্য (বাইতুল খ্বলা শরীফে) তাশরীফ মুবারক রাখলেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, (তিনি সেখান হতে বাহিরে তাশরীফ মুবারক রাখার পর) আমি সেখানে প্রবেশ করলাম। আমি সেখানে কিছুই দেখতে পেলামনা। বরং সেখানে আমি অত্যধিক সুঘ্রাণ মুবারক পেলাম। তখন আমি আরযী মুবারক করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (বাইতুল খ্বলা শরীফ হতে বাহিরে তাশরীফ মুবারক রাখার পর আমি সেখানে প্রবেশ করে) কোন কিছুই দেখতে পেলামনা। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন যে, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক হতে যা কিছু বাহিরে মুবারক তাশরীফ রাখেন তা গিলে ফেলতে মাটিকে আদেশ করা হয়েছে। (তবারানী শরীফ)

অর্থাৎ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইতুল খ্বলা শরীফে যে বিশেষ নূর মুবারক প্রকাশ করতেন, সে নূর মুবারক সাধারণ মানুষ হতে গ¦ইব থাকতেন। অতএব, সাধারণত মানুষ যাকে বড় ইস্তিঞ্জা হিসেবে সম্বোধন করে থাকে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে তা নূরুল গ¦ইব মুবারক নামে সম্বোধন করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার সমস্ত কিছুই পবিত্র হতে পবিত্রতম। উনার মুবারক শানে কোন ধরণের নাপাকীর কল্পনা করাও ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ। ‘ইস্তিঞ্জা’ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে মল-মূত্র ত্যাগ করা। আরেকটি অর্থ হচ্ছে নাজাত তলব করা। এ দুটি অর্থই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ব্যবহার করা উনার শান মুবারক উনার খিলাফ। কেননা সাধারণভাবে মল-মূত্র হচ্ছে নাপাক। অথচ উনার সবকিছুই পাক ও পবিত্র। আবার তিনি কেন নাজাত তলব করবেন বরং সমস্ত কিছুই উনার উসীলায় নাজাত তলব করবে এবং নাজাত পাবে।

কাজেই, যেসকল শব্দ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ অর্থ বহন করে, তা ব্যবহার না করে শান মুবারকসম্মত শব্দ ব্যবহার করতে হবে। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رَاعِنَا وَقُوْلُوا انْظُرْنَا وَاسْـمَعُوْا ۗ وَلِلْكَافِرِيْنَ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

অর্থ- (ভাল-মন্দ উভয়ই অর্থ প্রদানকারী শব্দ) ‘রয়িনা’ শব্দ তোমরা বলবেনা। বরং তোমরা বলো ‘উনযুরনা’। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুউচ্চ শান মুবারক উনার খিলাফ কোন শব্দই ব্যবহার করা যাবেনা। উনার শান মুবারকের প্রতি খেয়াল রেখে সর্বাধিক উত্তম শব্দ ব্যবহার করতে হবে। কেননা, এ বিষয়টি অত্যধিক স্পর্শকাতর। আক্বীদার সামান্যতম চু-চেরা জাহান্নাম ওয়াজিব করে।

মূলকথা হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুম মুজাসসাম বা জিসিম মুবারক উনার প্রতিটি বিষয়ই কায়িনাতকে পবিত্রকারী, জান্নাত ওয়াজিবকারী, চির সুস্থতা প্রদানকারী, চিরস্থায়ী সুস্বাস্থ্য ও সুঘ্রাণ মুবারক প্রদানকারী। সুবহানাল্লাহ।

উপরোক্ত আলোচনায় বর্ণিত তাজদীদী শব্দ মুবারকসমূহ নিম্নে এক নজরে দেখানো হলো-

 

মুবারক শানে যা বলতে হবে যা বলা যাবে না
নূরুল ফাতাহ মুবারক চুল মুবারক
নূরুর রহমত মুবারক চেহারা মুবারক
নূরুল মুহব্বত অশ্রু মুবারক
নূরুল বারাকাত মুবারক থুথু মুবারক
নূরুন নিয়ামত মুবারক দাড়ি মুবারক
নূরুত ত্বীব মুবারক ঘাম মুবারক
নূরুন নাজাত মুবারক রক্ত মুবারক
নূরুশ শিফা মুবারক ছোট ইস্তিঞ্জা মুবারক
নূরুল গইব মুবারক বড় ইস্তিঞ্জা মুবারক

এরূপ আরো অনেক তাজদীদী শব্দ মুবারক রয়েছে, যা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

অতএব, এ বিষয়ে হুসনে যন বা সুধারণা পোষণ করা ঈমানদার উনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলতানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আহলে বাইতে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার এ বেমেছাল বেনযীর অভূতপূর্ব তাজদীদ মুবারক সম্পর্কে জেনে তা আমলে বাস্তবায়ন করার তাওফীক্ব সকলকে নসীব করুন। আমিন।

আহমদ নুছাইর।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম