মুহম্মদ মুহ্সিন উদ্ দৌলা খান পোর্ট কলনী, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত পত্রিকার জানুয়ারী/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার ৩৫৩৯ নং জিজ্ঞাসার-সমাধানে বলা হয়েছে, “…. ফুক্বহায়ে কিরাম জামাআতের গুরুত্ব দিতে গিয়ে জামাআতের সাথে নামায পড়াকে ফরয বলেছেন। আবার কেউ ওয়াজিব বলেছেন।”(তিরমিযী-১/৫২, মিশ্কাত-১/৯৭, মিরক্বাত-৩/১৬১, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী-১/১৮৮) এবং এপ্রিল/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার ৩৬১৬ নং জিজ্ঞাসার-সমাধানে বলা হয়েছে, “…. জামাআতের সাথে নামায পড়া ওয়াজিব। বিনা ওজরে এই ওয়াজিব তরককারী অবশ্যই গুনাহ্গার হবে।” (মিশ্কাত-১/৯৬, ৯৭) আর মাসিক মদীনা মে/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগের ৭২ নং প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “…. জামাতে শরীক হয়ে নামায আদায় করা ওয়াজেব।” এখন আমার সুওয়াল হলো- জামায়াতে নামায আদায় করা ফরয না ওয়াজিব? আর জামায়াতের সাথে নামায আদায় করা সম্পর্কে হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকা এবং ‘মাসিক মদীনার’ উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “জামায়াতের সাথে নামায আদায় সম্পর্কে” হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকা এবং মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। যা ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যদিও কোন কোন কিতাবে জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব, ওয়াজিবে কিফায়া, ফরযে আইন, ফরযে কিফায়া, মুস্তাহাব ইত্যাদি বলে উল্লেখ আছে, কিন্তু এগুলোর উপর ফতওয়া নয়। বরং মূল ফতওয়া হলো, জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ক্বারীবাতুম মিনাল ওয়াজিব। অর্থাৎ ওয়াজিবের কাছাকাছি। মূলতঃ জামায়াতে নামায আদায় করা ফরয-ওয়াজিব কোনটিই নয়। কেননা বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব-
(১)
“ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল” কিতাবের ৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اداء اصلوة بالجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(২)
“আল মুখ্তাছারুল কুদুরী” কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৩)
“জাওয়াহিরুল ইকলীল শরহে মুখতাছারিল ইমাম খলীল” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة اى الصلاة معها بفرض غير جمعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জুমুয়া ব্যতীত ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৪)
“শরহুল কুদূরী আললুবাব লিল মায়দানী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة لرجال سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৫)
“মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৬)
“খুলাছাতুল ফতওয়া, মা’আ মাজমুআতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৭)
“তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة لرجال.
অর্থঃ- “পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৮)
“রওজাতুন্ নারীয়্যা শরহে দুরারিল বাহিয়্যা” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة هى من اكد السنن.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা এটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৯)
“মুখতাছারুল ইমাম খলিল” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة بفرض غير جمعة سنة.
অর্থঃ- “জুমুয়া ব্যতীত ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নত।”
(১০)
“হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১১)
“তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৬২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১২)
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة كذا فى المتون والخلاصة والمحيط ومحيط السرخسى.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অনুরূপ মাতুন, খোলাছা, মুহীত্ব এবং মুহীত্বে সারাখছী-এর মধ্যে উল্লেখ আছে যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৩)
“হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৪)
“কানজুদ দাক্বায়িক” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৫)
“কিফায়াতুল আখইয়ার ফি হাল্লি গায়াতিল ইখতিছার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجما عة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৬)
“মা’দানুল হাক্বায়িক শরহে কানজুদ দাক্বায়িক” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعة سنت مؤكدة ……
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৭)
“হাশিয়ায়ে ইয়ানাতুত্ ত্বলিবীন” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة فى اذاء مكتوبة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৮)
“শরহুন্ নিক্বায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة فى اصلوة الفريضة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(১৯)
“ফিক্বহুস্ সুন্নাহ্” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(২০)
“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعة سنت موكده بى.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(২১)
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعت مردوں کے لبے سنت موکدہ ہی.
অর্থঃ- “পুরুষ লোকদের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(২২)
“নূরুল ইজাহ্” কিতাবের ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والصلوة بالجماعة سنة للرجال الاحرار بلا عذر.
অর্থঃ- “ওজর ব্যতীত স্বাধীন পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নত।”
(২৩)
“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة وهو قريب من الواجب.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”
(২৪)
“বাহরুর রায়িক”-এর ১ম খন্ডের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة اى قوية تشبه الواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ খুবই শক্তিশালী যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।” (২৫)
“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة اى تشبه الواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”
(২৬)
“আল ফিক্বহুল মু-ইয়াস্সার” কিতাবের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تسن الجماعة للرجال سنة عين مؤكدة شبيهة بالواجب فى القوة للصلوات الخمس.
অর্থঃ- “পুরুষ লোকের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আইনী যা ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”
(২৭)
“শরহে ইলিয়াস” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة اى تشبه اواجب فى القوة وقيل فرض عين وقيل فرض كفاية.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে। কেউ কেউ বলেছেন ফরযে আইন এবং কেউ কেউ বলেছেন ফরযে কিফায়াহ।”
(২৮)
“আইনুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جو امام مصنف نے اختبار کیا جماعت سنت مؤکدہ ھے یعنی مردوں کے واسطے یہ سنت بقوت واجب ھے.
অর্থঃ- “ইমাম মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ পুরুষের জন্য এই সুন্নতটা শক্তিশালীর দিক দিয়ে ওয়াজিব যা মূলতঃ ওয়াজিব নয়।”
(২৯)
“বেনায়া শরহে হিদায়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة يعنى سنة فى قوة الواجب ……… وقال صاحب الدراية تشبه الواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের শক্তিতে সুন্নত। আর ছাহেবে দেরায়া বলেন, এই সুন্নতে মুয়াক্কাদাটি শক্তিগত দিক দিয়ে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”
(৩০)
“হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২১ পৃষ্ঠার ১৮ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
مؤكدة اى قوية يشبه اواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ শক্তিশালী যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”
(৩১)
“নূরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعت سنت مؤکدہ ھے قریب واجب کے.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”
(৩২)
“জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة اى قريبة من الواجب.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”
(৩৩)
“মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والصلوة بالجماعة سنة فى الاصح مؤكدة شبيهة بالواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নত। অধিক সহীহ্ মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”
(৩৪)
“বিনায়া শরহে হেদায়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وفى الجواهر عن مالك سنة مؤكدة وليست بواجبة.
অর্থঃ- “জাওয়াহির” কিতাবে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে উল্লেখ আছে যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা, তবে ওয়াজিব নয়।”
(৩৫)
“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعت در نمازہای پنجگانہ فرض است نزد احمد رح لیکن نماز منفر د ہم صحیح ست ونزد شافعی رح جماعت فرض کفایہ است ونزد ابی حنیفہ رح ومالک رح جماعت سنت مؤکدہ است قریب واجب.
অর্থঃ- “ইমাম আহ্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে জামায়াত ফরয। তবে একাকী ব্যক্তির নামাযও ছহীহ্ হবে। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জামায়াত ফরযে ক্বিফায়া। ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, ওয়াজিবের কাছাকাছি।”
(৩৬)
“হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعلى القول بانها سنة فى اكد من سنة الفجر وهى سنة عين.
অর্থঃ- “এই ক্বওলের উপর ফতওয়া যে, নিশ্চয়ই জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর এটাকে ফযরের নামাযের দু’রাকায়াত সুন্নতের চেয়েও বেশী তাক্বীদ করা হয়েছে। আর এটাই হলো সুন্নতে আইনী।” (৩৭)
“আল ফিক্বহুল ইসলামিয়্যূ ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فقال الحنفية والمالكية الجماعة فى الفرائض غير الجمعة سنة مؤكدة للرجال.
অর্থঃ- “হানাফী এবং মালিকীগণ বলেন, জুমুয়া ব্যতীত ফরয নামাযসমূহ জামায়াতে আদায় করা পুরুষ লোকের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”
(৩৮)
কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছে। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, “হাশিয়ায়ে আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومنهم من قال انها فرض كفاية وبه قال الكرخى والطحاوى وجماعة من اصحابنا وقيل انها فرض عين وهو قول الامام احمد.
অর্থঃ- “যারা জামায়াতে নামায আদায় করা ওয়াজিব বলেছেন। তাদের থেকে কেউ কেউ আবার জামায়াতকে ফরযে কিফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, ইমাম কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমাদের আসহাবগণ থেকে একটি জামায়াত। আর ফরযে আইনও বলেছেন। যেমন, ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক মতে ফরযে কিফায়া।”
আর এখানে ওয়াজিবের অর্থ এই যে, সুন্নতে মুয়াক্কাদাটি ফায়দা দানের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কিন্তু হাক্বীক্বতান বা প্রকৃত অর্থে ওয়াজিব নয়।
(৩৯)
যেমন “ফতহুল কাদীর” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
لكن يفيد الوجوب كما ذهب اليه عامة مشايخنا.
অর্থাৎ- জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা এটা ওয়াজিবের ফায়দা দিবে। আমাদের অধিকাংশ মাশায়িখগণ এ ফতওয়া দিয়েছেন।”
(৪০)
“বেনায়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ان الجماعة سنة مؤكدة ……… ودل على ان الجماعة ليست بواجبة.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। … আর এটাই দালালত করে যে, জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়।”
(৪১)
“কাশফুল হাকায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাকায়িক্ব” কিতাবের ১ খন্ডের ২০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فقھاء نے لکھا ہے کہ سنت مؤکدہ قریب قریب واجب ہی کے حکم میں ہوتی ہے.
অর্থঃ- “ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ লিখেছেন যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা ওয়াজিবের নিকটবর্তীর হুকুম রাখে।”
(৪২)
“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ২৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مشھور یہ ہے کہ جما عۃ سے نماز کا پڑھنا سنت موکدہ ہے جو قریب قریب واجب کے ہے.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী; এটাই প্রসিদ্ধ বা মশহুর ফতওয়া।”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ক্বারীবাতুম মিনাল ওয়াজিব। অর্থাৎ ওয়াজিবের নিকটবর্তী। এর উপরই ফতওয়া। সমস্ত বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফক্বীহগণ এ মতটিকেই ফতওয়াগ্রাহ্য মত বলে উল্লেখ করেছেন। অবশ্য মূল ফতওয়াটি উল্লেখ করার পর অন্যান্য মতগুলোও উল্লেখ করেছেন। ফতওয়ার কিতাবসমূহে একাধিক মত উল্লেখ আছে। যেমন ,সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ক্বারীবাতুম্ মিনাল ওয়াজিব, ওয়াজিব, ওয়াজিবে কিফায়া, ফরযে আইন, ফরযে ক্বিফায়া, মুস্তাহাব ইত্যাদি। কিন্তু সেগুলোর উপর ফতওয়া নয়। কেননা কিতাবে একাধিক মত উল্লেখ থাকতে পারে। তাই বলে একাধিক মতের উপর ফতওয়া হবেনা, বরং ফতওয়া হবে যে কোন একটির উপর। আর এই ফতওয়া দিতে হলে দু’একখানা কিতাব পড়ে দেয়া যাবে না। বরং সমস্ত নির্ভরযোগ্য, বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলো পর্যালোচনা করে তাহক্বীক করে দেখতে হবে, কোন মতটির উপর প্রাধান্য দিয়ে তাঁরা তাঁদের বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবে ফতওয়া দিয়েছেন বা লিখেছেন।
সুতরাং যে মতটির উপর প্রাধান্য দিয়ে সমস্ত বিশ্ব বিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার কিতাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে সেটির উপরেই ফতওয়া হবে। অন্যথায় দু’একটি কিতাবে ফরয-ওয়াজিব বললেই তার উপর ফতওয়া হবে না। যেমন, হাটহাজারী মৌলভীরা দু’একটি কিতাবের ক্বওলের উপর ভিত্তি করে বলেছে, “ফুক্বহায়ে কিরাম ….. জামাআতের সাথে নামায পড়াকে ফরয বলেছেন। আবার কেউ ওয়াজিব বলেছেন।” এর জবাবে বলতে হয় যে, কোন্ কোন্ মাযহাবের ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ জামায়াতের সাথে নামায আদায় করাকে ফরয বলেছেন তা হাটহাজারীর মৌলভীরা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেনি।
সেহেতু আমরা উপরোক্ত দলীলের মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি যে, ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি জামায়াতে নামায আদায় করাকে ফরয বলেছেন। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি জামায়াতের সাথে নামায আদায় করাকে ফরযে ক্বিফায়া বলেছেন। আর আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুতরাং আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর “কেউ কেউ যে ওয়াজিব বলেছেন” এর জবাবে আমরা উপরোক্ত দলীলের মাধ্যমে জবাব দিয়েছি যে, এখানে ওয়াজিবের অর্থ হবে সুন্নতে মুয়াক্কাদাটি ফায়দা দানের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কিন্তু হাক্বীক্বতান বা প্রকৃতপক্ষে ওয়াজিব নয়।
দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারী মৌলভীরা বলেছে, “…. ফুক্বহায়ে কিরাম …. জামাআতের সাথে নামায পড়াকে ফরয বলেছেন। আবার কেউ ওয়াজিব বলেছেন।”(তিরমিযী-১/৫২, মিশ্কাত-১/৯৭, মিরক্বাত-৩/১৬১, তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী-১/১৮৮)
অথচ দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে তিরমিযী, মিশকাত ইত্যাদি হাদীস শরীফের কিতাব। অর্থাৎ তারা ফুক্বাহা-ই-কিরামের উদ্বৃতি দিয়েছে অথচ ফিক্বাহ্র কিতাবের দলীল দেয়নি। বরং ফিক্বাহ্র কিতাবের দলীল না দিয়ে হাদীস শরীফের কিতাবের দলীল দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। তৃতীয়তঃ হাটহাজারী মৌলভীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রথম দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে, তিরমিযী শরীফ। অথচ “তিরমিযী শরীফের” ১ম খন্ডের ৩০ পৃষ্ঠার ২ নং হাশিয়ায় হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,,
وقال ابن حجر لادليل فيه لوجوب الجماعة.
অর্থঃ- “ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জামায়াত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এতে কোন দলীল নেই।”
দ্বিতীয় দলীল দিয়েছে, মিশকাত শরীফ। অথচ “মিশকাত শরীফের” ৯৬, ৯৭ পৃষ্ঠায় আমাদের হানাফী মাযহাবে জামায়াতে নামায আদায় করা ফরয-ওয়াজিব বলা হয়নি। তৃতীয় দলীল দিয়েছে, মিরকাত শরীফ। অথচ “মিরকাত শরীফের” ৩য় খন্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والاصح انها سنة مؤكدة وعليه الاكثرون.
অর্থঃ- “অধিক ছহীহ্ মতে নিশ্চয়ই জামায়াত অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর এর উপরেই অধিকাংশগণের ফতওয়া।” অনুরূপ “তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী” কিতাবেও জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়েছে। সুতরাং ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ক্বারীবাতুমমিনাল ওয়াজিব। মূল ফতওয়া হলো, “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা তবে ইহা ক্বারীবাতুমমিনাল ওয়াজিব বা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”
অতএব, প্রমাণিত হলো, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র ও মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য অশুদ্ধ ও ভুল। কারণ এটা সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহের ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। {দলীলসমূহঃ (১) ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল, (২) আল মুখতাছারুল কুদূরী, (৩) কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, (৪) মিনহাতুল খালিক্ব, (৫) খুলাছাতুল ফতওয়া, (৬) তানবীরুল আবছার, (৭) মুখতাছারুল ইমাম খলীল রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৮) জাওয়াহিরুল ইকলীল, (৯) দুররিল বাহিয়্যা, (১০) রওযাতুন্ নারিয়্যা, (১১) মাতুন, (১২) আল লুবাব, (১৩) আল মুহায্যাব, (১৪) বাদায়াতুল মুজতাহিদ, (১৫) মুহিত্ব, (১৬) মুহিত্বে সারাখসী, (১৭) আল ফিক্বহুল মু-ইয়াস্সার, (১৮) ইয়ানাতুত্ ত্বলিবীন, (১৯) হাশিয়ায়ে ইয়ানাতুত্ ত্বলিবীন, (২০) হিদায়া, (২১) বেনায়া, (২২) ইনায়া, (২৩) কিফায়া, (২৪) বিকায়া, (২৫) দেরায়া, (২৬) হাশিয়ায়ে চলপী, (২৭) শরহুছ্ ছগীর, (২৮) শরহে বিক্বায়া, (২৯) শরহে ইনায়া, (৩০) শরহে ইলিয়াস, (৩১) আল আছল, (৩২) বাহরুর রায়েক, (৩৩) তাবয়ীনুল হাকায়িক, (৩৪) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (৩৫) আত্তানক্বীহুদ যুরুরী, (৩৬) কিফায়াতুল আখইয়ার ফি হাল্লি গায়াতিল ইখতিছার, (৩৭) ফিক্বহুস্ সুন্নাহ্, (৩৮) তাতারখানিয়া, (৩৯) কুনীয়া, (৪০) জাওহারাতুন নাইয়্যিরাহ, (৪১) জাওয়াহির, (৪২) খাওয়াহির যাদা, (৪৩) দুররুল মুখতার, (৪৪) গায়াতুল আওতার, (৪৫) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার (৪৬) মা’দানুল হাক্বায়িক, (৪৭) নূরুল ইজাহ, (৪৮) নূরুল হিদায়া, (৪৯) নূরুদ দিরায়া, (৫০) কুররাতুল আইনি বি মুহমমাতিত দ্বীন, (৫১) ফতহুল মুঈন, (৫২) ফতহুল কাদীর, (৫৩) মারাকিউল ফালাহ, (৫৪) হাশিয়াত্তু তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ, (৫৫) মালাবুদ্দা মিনহু, (৫৬) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (৫৭) শামী, (৫৮) আহসানুল মাসায়িল ইত্যাদি)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ রাহমানী পয়গাম মে/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় কুশপুত্তলিকা তৈরী করা ও দাহ্ করা জায়িয প্রমাণ করতে গিয়ে যে সমস্ত যুক্তি উপস্থাপন করেছে তা তুলে ধরছি- (১) কুশপুত্তলিকাকে ছবির সাথে তুলনা করেছে, (২) কুশপুত্তলিকার নাক, মুখ, কান ইত্যাদি অসম্পূর্ণ হলে তা তৈরী জায়িয, (৩) কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ করার উদ্দেশ্য হলো বাতিলের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করা, (৪) কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ করার উদ্দেশ্য হলো যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস না পায়, (৫) কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ দোষী ব্যক্তির জন্য জায়িয। নির্দোষ ব্যক্তির জন্য জায়িয নেই, (৬) কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ বাতিল প্রতিরোধের জন্য জায়িয। নিছক পার্থিব স্বার্থ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা জায়িয নেই, (৭) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বণী নজিরের খেজুর বৃক্ষ আগুন দ্বারা জালিয়ে দিয়েছিলেন ইহুদীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য। কাজেই ভীতি প্রদর্শনের জন্য কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ করা জায়িয আছে।
এখন আমার সুওয়াল হলো- উপরোক্ত যুক্তিগুলো শরীয়ত সম্মত কিনা? আর প্রকৃতপক্ষে কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ করা জায়িয আছে কিনা? কুরআন-সুন্নাহ্র দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ প্রথমেই সুওয়ালকারীর সুওয়ালের জাওয়াবে বলতে হয়, রাহমানী পয়গাম পত্রিকার কর্তৃপক্ষ আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল। কারণ কুশপুত্তলিকা হচ্ছে মূর্তি। অথচ তারা এটাকে তুলনা দিয়েছে ছবির সাথে। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয়, কুশপুত্তলিকা হিসেবে যা তৈরী করা হয় তার নাক, কান, মুখ সব সময় অসম্পূর্ণই থাকে। তৃতীয়তঃ বলতে হয়, কুশপুত্তলিকা দাহ্ ও ফাঁসী দেয়া সম্পর্কে যা বলা হয়, তা হলো- (১) কুশপুত্তলিকা দাহ্ বাতিলের উপর প্রভাব বিস্তার করবে, (২) বাতিল বিরোধীতা করতে সাহস পাবেনা, (৩) দোষী ব্যক্তির জন্যই করবে, নির্দোষ ব্যাক্তির জন্য করবে না, (৪) বাতিল প্রতিরোধের জন্য, (৫) ভীতি প্রদর্শন করা। অর্থাৎ এসব মতবাদই ফ্রান্সে খ্রীষ্টানদের দ্বারা প্রবর্তিত ও প্রচলিত হয়েছিলো। চতুর্থতঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর বৃক্ষ জালিয়েছিলেন এর সাথে কুশপুত্তলিকা তৈরী ও দাহ্ করার কোনই সম্পর্ক নেই। কারণ কুশপুত্তলিকা তৈরী হচ্ছে মূর্তি তৈরী, আর দাহ্ হচ্ছে বিধর্মীদের অনুসরণ। অথচ স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই মূর্তি তৈরী করতে ও বিধর্মীদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন; তাই তুলনা দেয়া কুফরী হয়েছে। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম মূর্তি সংস্থাপনকারী সম্পর্কে আকসাম ইবনুল জাউন আল খুযায়ীকে বললেন, “হে আকসাম! আমি আমর ইবনে লুহাই ইবনে কায়াআ তার নাড়ি-ভুঁড়িকে আগুনে টেনে নিয়ে বেড়াতে দেখলাম ….. কেননা, সেই সর্বপ্রথম হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বীনকে পরিবর্তন করেছিলো এবং সর্বপ্রথম মূর্তি স্থাপন করেছিলো।” (ইবনে হিশাম, দারুত তাইয়্যিবা ১/৬৪) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফের তাওয়াফ সমাপ্ত করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কা’বা গৃহের ভিতর প্রবেশ করে সাইয়্যিদুনা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর ছবি (প্রতিকৃতি) অঙ্কন করা দেখে বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! এ কাজ যারা করেছে তাদেরকে ধ্বংস করুন।” সেখানে কাঠের তৈরী একটি কবুতরও সংরক্ষিত ছিলো। তিনি তৎক্ষণাৎ দু’জন নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর প্রতিকৃতি ও কবুতরের কাঠের মূর্তিটি অপসারণ করলেন।” (আর রাহীকুল মাখতুম/৪০৪ পৃষ্ঠা) পরবর্তীতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূর্তি ধ্বংসের জন্যে বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য পাঠান। আউস ও খাজরাজ গোত্রের পূজনীয় মূর্তি ছিলো মানাত। হযরত আবূ সূফীয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মতান্তরে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে পাঠান উক্ত মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্যে। তিনি উক্ত মূর্তিটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন।” (ইবনে হিশাম- ১/৭১-৭২) দাউস, খাছআম এবং বাজালাহ্ গোত্রের সম্মানিত মূর্তি ছিলো যুলখালাছাহ্। তারা কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে এ মূর্তির সম্মুখে এসে লটারীর মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ্ আল বাজালীকে তা ধ্বংসের জন্যে প্রেরণ করেন।” (ইবনে হিশাম- ১/৭২)
খোদ কা’বা গৃহেই ছিলো মুশরিকদের অন্যতম মূর্তি হোবল। এ ছাড়াও আরো অসংখ্য মূর্তি স্থান পেয়েছিলো কা’বা শরীফে। যেগুলো মক্কা বিজয়ের সময় ধ্বংস করা হয়। প্রকৃতপক্ষে কুশপুত্তলিকা তৈরী হচ্ছে মূর্তি তৈরী আর দাহ্ করা ও ফাঁসী দেয়া হচ্ছে বিধর্মী ও বিজাতীয়দের ধর্মীয় সংস্কৃতির অনুসরণ। বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দু ও ফ্রান্সীয় খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য।
কুশপুত্তলিকা কাকে বলে?
কুশপুত্তলিকা হচ্ছে ‘কুশ’ ও ‘পুত্তলিকা’ পৃথক দু’টি শব্দের সমন্বিতরূপ। ‘কুশ’ হচ্ছে এক প্রকার তৃণ বা ঘাস যা স্বনামখ্যাত তৃণ। যা যজ্ঞাদি কর্মে ও শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। ‘পুত্তলিকা’ অর্থ হচ্ছে মূূর্তি, নকল মূর্তি, প্রতি মূর্তি, পুতুল স্বরূপ মূর্তি, মানুষের মূর্তি, জীব-জন্তুর মূর্তি ইত্যাদি। অর্থাৎ কুশপুত্তলিকা হলো খাছ মূর্তি। একে ছবির সাথে তুলনা দেয়া চরম মূর্খতা ও জাহিলীপনা। ছবি হলো যা হাতের দ্বারা হোক, কলমের দ্বারা হোক, কালির দ্বারা হোক, ক্যামেরার দ্বারা অর্থাৎ আলোর দ্বারা হোক ইত্যাদির দ্বারা মানুষ বা জীব-জন্তু ও পশু-পাখির চিত্র অংকন করা হয়। আর মূর্তি হলো যা দূর্বা, ঘাস, খড়-কুটা, তুলা, কাপড়, সুতা, ঝিনুক, কাঠ, লোহা, তামা, পিতল, রূপা, সোনা, প্লাষ্টিক, মাটি, পাথর, চিনি, আটা, ময়দা, মিষ্টি, মোম ইত্যাদি দ্বারা মানব বা জীব-জন্তু ও পশু-পাখির প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়। শরীয়তে মূর্তি ও ছবি উভয়টি তৈরী করা, বানানো, আঁকা সম্পূর্ণ হারাম। আর হারামকে হালাল বলা কুফরী। বিধর্মী ও বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, নিয়ম-কানুন, অনুসরণ-অনুকরণ করাও সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এটাকেও হালাল মনে করা কুফরী। শরীয়ত তথা দ্বীন ইসলামে কুশপুত্তলিকা বা মূর্তি তৈরী করা এবং তা দাহ্ করা, ফাঁসী দেয়া প্রত্যেকটিই নাজায়িয ও হারাম। কারণ এ কাজগুলো মূলতঃ বিধর্মী ও বিজাতীয়দের দ্বারা প্রবর্তিত এবং তাদের শেয়ারের অন্তর্র্ভুক্ত। তাই তা জায়িয মনে করে করা কাট্টা কুফরী।
উল্লেখ্য, কুশপুত্তলিকা একটি সর্বজন স্বীকৃত হিন্দু ঐতিহ্য যা অন্যান্য দেশে প্রচলন লাভ করে। বিশেষ করে প্রাচীনকালে হিন্দুরা মনে করত যে, তাদের মৃত ব্যক্তির শবদেহ দাহ্ না করলে শ্রাদ্ধাদি কার্য হতে পারে না। নিখোঁজ মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তারা যখন শবদেহ পেতনা তখন তারা কুশের বা অন্য কিছুর দ্বারা মানবমূর্তি নির্মাণ করতো। এটাই কুশপুত্তলিকা। আর এ কুশপুত্তলিকা নির্মাণ করে দাহ্ করা হলে তাকে কুশপুত্তলিকা দাহ্ বলা হয়। ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে, প্রায় ৩০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে হিন্দুদের মধ্যে এ কুশপুত্তলিকার প্রচলন চালু হয়। ১৫৩৯ সালে ফ্রান্সে ভারতীয় হিন্দু কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির বিপরীতভাবে ঘৃণা ও তিক্ততা প্রকাশের কৌশল হিসেবে কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির প্রচলন হয়। ফ্রান্সের জনগণ কোন ব্যক্তিকে তার প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ বা অসন্তোষ প্রকাশের জন্য তার অবিকল প্রতীক বা প্রতিমূর্তি পোড়াতো বা ফাঁসীতে ঝুলাতো। তারা এ কথাও বিশ্বাস করতো যে, একটি প্রতিমূর্তির উপর শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা প্রকৃত ব্যক্তির উপর যাদুক্রিয়া করবে। তারা যখন প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে পেত না তখন তারা প্রতিমূর্তিকে ফাঁসী দেয়ার ব্যবস্থা করতো। আমেরিকার ওহীও উইসকনসাইন এবং অন্যান্য স্থানেও এই ভারতীয় হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা সংস্কৃতির প্রচলন হয়েছিল। উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, (১) মৃত ব্যক্তির মরা দেহের অনুপস্থিতিতে তার শ্রাদ্ধ পালন করার জন্য মৃত ব্যক্তির মূর্তি তৈরী করে পোড়ানোকে কুশপুত্তলিকা দাহ্ বলা হয়। এই কুশপুত্তলিকা দাহ্ প্রথার প্রথম প্রবর্তক হলো হিন্দু সম্প্রদায় এবং পরবর্তীতে ফ্রান্সের খ্রীষ্টানগণ। (২) কোন ব্যক্তিকে অপমান করার জন্য তার অনুপস্থিতিতে তার মূর্তি তৈরি করে পোড়ানোকে বলা হয় কুশপুত্তলিকা দাহ্, যার প্রবর্তক হচ্ছে ফ্রান্স দেশীয় খ্রীষ্টান সম্প্রদায়। কোন কোন সময় তারা এই কুশপুত্তলিকাকে ফাঁসীও দিতো। (৩) কুশপুত্তলিকা দাহ্ বা ফাঁসী দেয়ার সাথে সাথে তারা এ আক্বীদাও পোষণ করতো যে, যার কুশপুত্তলিকা দাহ্ বা ফাঁসী দেয়া হলো তার উপর প্রভাব বিস্তার করবে ও যাদুক্রিয়া করবে। অর্থাৎ তারা যাদুকেও বিশ্বাস করতো। অথচ যাদু বিশ্বাস করাও কুফরী। শুধু তাই নয়, যাদু সংশ্লিষ্ট গণক, জ্যোতিষ, মুনাজ্জিম এদেরকে বিশ্বাস করাও কুফরী। যেমন, এ প্রসঙ্গে “মিশকাত শরীফে” বর্ণিত হয়েছে, “একদিন বা’দ ফজর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আজকে কিছু লোক ঈমানদার হয়েছে, আর কিছু লোক কাফির হয়ে গেছে।” হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কারা ঈমানদার হলো, আর কারা কাফির হলো?” তিনি বললেন, “গত রাত্রে বৃষ্টি হয়েছে। যারা এ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্ পাক-এর ইচ্ছায় বৃষ্টি হয়েছে তারা ঈমানদার হয়েছে। আর যারা এ বিশ্বাস করবে যে, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে তারা কাফির হয়ে গেছে।” হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
من اتى عرافا فساله عن شيى فلم يقبل له صلوة اربعين ليلة.
অর্থঃ-“যে ব্যক্তি কোন যাদুকর, জ্যোতিষ, গণক ইত্যাদির কাছে যেয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করে তাহলে তার চল্লিশ দিনের ইবাদত কবুল হবেনা।” আর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, “যদি বিশ্বাস করে তাহলে সে কাফির হবে।” আরো বর্ণিত আছে,
من اقتبس بابا من علم النجوم فقد اقتبس بابا من علم السحر المنجم كاهن والكاهن ساحر والساحر كافر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নুজুম (নক্ষত্র) শাস্ত্রের একটি অধ্যায় শিক্ষা করলো সে যেন যাদুবিদ্যার একটি অধ্যায় শিক্ষা করলো। মুনাজ্জিম হলো কাহিন, কাহিন হলো সাহির আর সাহির হলো কাফির।”(মুনাজ্জিম, কাহিন, সাহির-এর অর্থ হলো জ্যোতিষ, গণক, যাদুকর, ভবিষ্যৎ বক্তা, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বর্ণনাকারী ইত্যাদি।)
অতএব, যাদু করার উদ্দেশ্যেও কুশপুত্তলিকা তৈরী, দাহ্ করা ও ফাঁসী দেয়া ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজই কুফরী।
কাজেই কুশপুত্তলিকা তৈরী করা প্রকৃতপক্ষে মূর্তি নির্মাণ করারই শামিল। তারা নানান জনের নামে কুশপুত্তলিকা হিসেবে মূর্তি তৈরী করে উক্ত কুশপুত্তলিকাকে খ্রীষ্টানদের ন্যায় ঘৃণা প্রকাশার্থে, অশুভ প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য, বাতিল প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য দাহ্ও করে, কোন কোন সময় ফাঁসীও দেয়। অথচ শরীয়তে কঠোরভাবে মূর্তি নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং মূর্তি নির্মাণকারীদের ভয়াবহ পরিণতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خقتم.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর মূর্তি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এবং তাদেরকে বলা হবে, যে মূর্তিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ)
عن ابى هريرة رضى اله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى اله عليه وسلم يقول قال الله تعالى ومن اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ পাক বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি তৈরী করে।” (মিশকাত)
عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি তৈরী করবে।” (মিশকাত শরীফ) এর ব্যাখ্যায় অন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
بعثت لكسر المزامير والاصنام.
অর্থঃ- “বাদ্যযন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।”
তিনি আরো ইরশাদ করেন,
ان الله بعثنى رحمة للعالمين وهدى للعالمين وامرنى ربى عز وجل بمحق المعازف والمزامير والاوثان والصليب وامر الجاهلية.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আমাকে প্রেরণ করেছেন সমস্ত জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ এবং হিদায়েতস্বরূপ। আর আদেশ করেছেন বাদ্যযন্ত্র, মূর্তি, ত্রুশ ও জাহিলী কাজসমূহ ধ্বংস করার জন্য।” (আবু দাউদ, আহ্মদ) আর শরীয়তে ছবি আঁকা, তোলা ও রাখা সম্পর্কেও কঠোর নিষেধবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এবং এর ভয়াবহ পরিণতির কথাও বলা হয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
لاندخل بيتا فيه كلب ولا صورة.
অর্থঃ- “হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম বলেন, আমরা (রহমতের ফেরেশ্তারা) ঐ ঘরে প্রবেশ করিনা, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে।” (মুসলিম, মিশকাত)
عن ابن عباس اتاه رجل من اهل العراق فقال انى اصور هذه التصاوير فما تقول فيها فقال ادنه ادنه سمعت محمدا صلى الله عليه وسلم يقول من صور صورة فى الدنيا كلف يوم القيمة ان ينفخ فيها الروح وليس بنافخه.
অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি ইরাক থেকে আসলো এবং বললো, আমি এ রকম প্রাণীর ছবি আঁকি। এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন? হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি তা দূরে নিক্ষেপ কর, তুমি তা দূরে নিক্ষেপ কর। কেননা আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, তাকে ক্বিয়ামতের দিন ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু সে ওটার মধ্যে প্রাণ দিতে পারবে না।” (নাসাঈ শরীফ কিতাবুজ্ জিনাত বাবুত তাছাবীর ২য় জিঃ, ৩০০ পৃষ্ঠা)
عن عائشة انها اشترت نمرقة فيها تصاوير فلما راها رسول الله صلى الله عليه وسلم قام على الباب فلم يدخل فعرفت فى وحهه الكراهية قالت فقلت يا رسول الله اتوب الى الله والى رسوله ماذا اذنبت فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بال هذه النمر قة قلت اشتريتها لك لنقعد عليها وتوشدها فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اصحاب هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم وقال ان البيت الذى فيه الصورة لاتدخله الملئكة.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, একবার তিনি একটি আসন খরিদ করলেন। তাতে প্রাণীর অনেকগুলো ছবি ছিল। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বাইর হতে) সেটা দেখে; ঘরে প্রবেশ না করে দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি তাঁর চেহারা মুবারকে ঘৃণার ভাব দেখতে পেলাম। হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূলের নিকট তওবা করছি। বলুন তো, আমি কি অপরাধ করেছি? তখন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই আসনটি কেন? আমি বললাম, আপনার বসার এবং বিছানা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমি এটা খরিদ করেছি। তখন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই সমস্ত ছবি যারা তৈরী করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা বানিয়েছ তাতে জীবন দান কর, অতঃপর বললেন, ফেরেশ্তাগণ কখনো এমন ঘরে প্রবেশ করেন না, যেই ঘরে (প্রাণীর) ছবি থাকে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, মিরকাত)
অতএব, শরীয়তে মূর্তি ও ছবি উভয়টি তৈরী করা, বানানো ও আঁকা সম্পূর্ণ হারাম। আর হালাল জানা কাট্টা কুফরী। অনুরূপ বিধর্মী ও বিজাতীয়দের অনুসরণ ও অনুকরণ নাজায়িয ও হারাম আর জায়িয মনে করা কুফরী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেছেন,
ان الدين عند الله الاسلام.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হলো ইসলাম।” (সুরা আলে ইমরান/১৯)
আর এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ পাক অন্য আয়াত শরীফে বলেছেন,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (নিয়ম-নীতি, ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” আর এ আয়াত শরীফের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
وعن جار عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود تعجبنا افترى ان نكتب بعضها فقال امتهوكون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথাবার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে থাকি যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা এটার থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরাও কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্থ বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে ইহুদী-নাছারারা বিভ্রান্ত রয়েছে? আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম যদি এখন থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” তাই আমরা দেখতে পাই ইহুদী-খ্রীষ্টান তথা বিধর্মীরা যে সকল আমল করত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সে আমল করতেন না, তাদেরকে কোনরূপ অনুসরণও করতেন না; এবং তিনি আমাদেরকেও কঠোরভাবে বিধর্মীয় আমল ও অনুসরণ না করার জন্য তাকিদ দিয়েছেন। অথচ কুশপুত্তলিকা তৈরী, দাহ্ বা ফাঁসী দেয়া ভারতীয় হিন্দু ও ফ্রান্সীয় খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত। যা করা মুসলমানদের জন্য শুধু হারামই নয় বরং তা করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, শুধু এক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়নি বরং প্রতিক্ষেত্রেই নিষেধ করা হয়েছে।
যেমন, ইহুদী-নাছারারা আশুরার একদিন রোযা রাখত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহম্মদীকে দুইদিন রোযা রাখতে বললেন। ইহুদী-নাছারারা দেরী করে ইফতার করত এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদের তাড়াতাড়ি ইফতার করতে বলেন। আবার ইহুদীরা শুধুমাত্র পাগড়ী ব্যবহার করত এর পরিপ্রেক্ষিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি ছাড়া পাগড়ী পরতে নিষেধ করেছেন এবং টুপিসহ পাগড়ী ব্যবহার করতে বলেছেন। দাড়ী ও মোচের ব্যাপারে মজুসী (অগ্নি উপাসক) ও মুশরিকদের বিরোধীতা করতে বলেছেন। যেমন, তারা দাড়ী কাটতো ও মোচ বড় করত। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা দাড়ী বড় কর ও মোঁচ ছোট কর।’ ইত্যাদি প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের আস্তিক-নাস্তিক, ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা বিজাতীয়, বিধর্মীদের অনুসরণ না করে খিলাফ করতে বলেছেন। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ্ পাক বলেন, তিনিই একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শ, যা কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
لقد كان كم فى رسول الله اسوة حسنة.
অর্থঃ- “তোমাদের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মধ্যে (চরিত্র মুবারকে) সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহ্যাব/২১) আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই একমাত্র আদর্শ এবং এ আদর্শের খিলাফ কোন কাজ করা যাবেনা।
যার ব্যাখ্যায় হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن مالك بن انس رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تضلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنتى.
অর্থঃ- হযরত মালিক ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত তোমরা সে দু’টো জিনিস আঁকড়ে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত গোমরাহ্ হবে না। একটি হলো, আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব ও অপরটি হলো, আমার সুন্নাহ্।” (বুখারী)
কাজেই, আমাদেরকে শরীয়ত মুতাবিক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পূঙ্খানুপূঙ্খরূপে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে এবং এর ব্যতিক্রম নিয়ম-কানুন, তর্জ-ত্বরীকা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, কথা-বার্তা, আমল-আখলাক, ছীরত-ছূরত, মত-পথ ও নীতি-আদর্শ ইত্যাদি কোনটাই শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুসরণ-অনুকরণযোগ্য নয়। অথচ আজকাল মুসলমানদেরকে এ আদর্শের কথা বললে তারা এ আদর্শের বিপরীত বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরুব্বী, পূর্ব পুরুষের নানা প্রকার আদর্শকে দলীল হিসেবে পেশ করে। তাদের উপর নিম্নলিখিত আয়াত শরীফই যথেষ্ট। আল্লাহ্ পাক বলেন,
واذا قيل لهم تعالوا الى ما انزل الله والى الرسول قالوا حسبنا ماوجدنا عليه ابائنا اولو كان اباؤهم لايعلمون شيئا ولايهتدون.
অর্থঃ- “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন ওটার দিকে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে আস (অনুসরণ কর) তখন তারা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে (ওস্তাদ-মুরুব্বী) যার উপর পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই জানে না এবং হিদায়েতের উপর ছিলনা অর্থাৎ গোমরাহ্ ছিলো।” (সূরা মায়িদা/১০৪) আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,
واذا قيل لهم اتبعوا ما انز الله قالوا بل نتبع ما الفينا عليه ابا ئنا اولو كان اباؤهم لا يعقلون شيئا ولا يهتدون.
অর্থঃ- “এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন তা অনুসরণ কর, তারা বলে, বরং আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে যার উপর পেয়েছি তাই অনুসরণ করব। যদিও তাদের বাপ-দাদারা আক্বলহীন ও গোমরাহ্ ছিল।” (সূরা বাক্বারা/১৭০) সুতরাং তাদের এই বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরব্বী ইত্যাদিকে অনুসরণ করা তাদের নফসানিয়ত বা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ومنهم اميون لايعلمون الكتب الا امانى وان هم الا يظنون.
অর্থঃ- “তাদের মধ্যে অনেক মূর্খ লোক আছে যারা মিথ্যা আকাংখা ছাড়া কিতাবের কিছুই বুঝেনা এবং তারা শুধুমাত্র জল্পনা-কল্পনা করে।” (সূরা বাক্বারা/৭৮) আরো বলেন,
وما هم به من عم ان يتبعون الا الظن وان الظن ايغنى من احق شيئا.
অর্থঃ- “এ বিষয়ে তারা একেবারেই মূর্খ, তারা শুধু জল্পনা-কল্পনার অনুসরণ করে এবং সত্যের মুকাবিলায় কল্পনা মোটেই ফলপ্রসূ নয়।” (সূরা নজম/২৮) কাজেই, যারা তাদের কাজের স্বপক্ষে বাপ-দাদা, ওস্তাদ-মুরুব্বী ইত্যাদিগণের উদাহরণ পেশ করে তাদের সে কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং কুশপুত্তলিকা দাহ্ করা, ফাঁসী দেয়া এবং যারা কুশপুত্তলিকা দাহ্ করে, ফাঁসী দেয় তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ, সমর্থন করা বা এর সংশ্লিষ্ট কোন কিছুতে জড়িত থাকা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। কারণ কোন মুসলমানের কাজের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দলীল পেশ করতে হবে। যেমন, কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
قل هاتوا بر هانكم ان كنتم صدقين.
অর্থঃ- “যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে দলীল পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১) অথচ তারা তাদের এই সমস্ত হারাম ও কুফরী আমলের পক্ষে কোন দলীলই পেশ করতে পারেনা ও পারবে না ইনশাআল্লাহ্। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেন,
قل ان هذى الله هو الهدى ونن اتبعت اهوا ءهم بعد الذى جاءك من العلم ما لك من الله من ولى ولا نصير.
অর্থঃ- “আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর হিদায়েতই প্রকৃত হিদায়েত। আপনার কাছে সত্য ইল্ম (অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম) আসার পরও যদি আপনি (ইহুদী, খ্রীষ্টান বা বিধর্মীদের) নফ্সের বা তাদের দ্বারা রচিত মনগড়া নিয়ম-নীতির অনুসরণ করেন তবে আপনার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই বা পাবেন না।” (সূরা বাক্বারা/১২০)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, বিধর্মী, বিজাতীয় বা নফ্সের অনুসরণ করা যাবে না বা বিধর্মী বা বিজাতীয়দের কোন নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা যাবে না বরং শুধুমাত্র কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী আমল করতে হবে।
যদি কেউ বিধর্মী বা বিজাতীয়দের অনুসরণ ও অনুকরণ করে তবে তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (মিশকাত)
এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় নিম্নলিখিত ঘটনা উল্লেখ করা যায়, হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ্ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযূর্গ ব্যক্তি তাকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ্ পাক-এর ওলী! আপনি কেমন আছেন?” তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার ইন্তিকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশতাদেরকে বলেন, “হে ফেরেশ্তাগণ! তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বলেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূজা করেছে।” এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগল। তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু পেশ করলাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময় আপনার এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “তুমি সেই দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূজা হচ্ছিল। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে, “হে গর্দভ! তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি এই হোলি পূজার দিনে, আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূজা করা হয়নি?” তুমি কি জান না,
من تشبه بقوم فهو منهم
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে। সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।”
যখন আল্লাহ্ পাক এ কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি।” কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ, তোমাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হয়েছে।”
আরো বর্ণিত রয়েছে, বণী ইসরাঈল আমলে আল্লাহ্ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম-এর উপর ওহী নাযিল করলেন, হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ষাট হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত (গোমরাহ)। তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! ষাট হাজার লোক সরাসরি গুনাহে লিপ্ত তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে; কিন্তু বাকী চল্লিশ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা ও ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে আর গুনাহের কাজে বাধা দেয় না, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে” এবং তাই হয়েছিল। উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ এবং তার ব্যাখ্যার দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, বিজাতীয়-বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-ছূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। যদি কেউ করে, তবে তার থেকে সেটা আল্লাহ্ পাক গ্রহণ করবেন না বা কোন ছওয়াবও দিবেন না এবং আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকে কোন মদদও সে পাবেনা। বরং তার ফলে সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। শুধু এতটুকুই নয় বরং পরকালে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে এবং তার অবস্থানও তাদের সাথে হবে যাদেরকে সে অনুসরণ করত। কাজেই কুশপুত্তলিকা তৈরী করা ও দাহ্ করা বা ফাঁসী দেয়া কোন মতেই জায়িয নেই। “আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বণী নজির ইহুদী গোত্রের খেজুর গাছ পোড়ানোর সাথে কুশপুত্তলিকা দাহ্ করাকে তারা তুলনা করেছে।”
এটাও তাদের কাট্টা কুফরী হয়েছে এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা তোহ্মত দিয়েছে। কারণ তিনি কুশপুত্তলিকা তৈরীও করেননি এবং দাহ্ও করেননি।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নামে মিথ্যা বলার পরিণাম সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার নামে স্বেচ্ছায় মিথ্যা কথা বলে সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী, মিশকাত) অর্থাৎ সে কাট্টা কাফির হয়ে জাহান্নামী হয়। কাজেই যা আল্লাহ্ পাকের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, মূর্তি তৈরী ও বিজাতীয়-বিধর্মীদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা তা আজকালকার যেসব লোক করে থাকে তারা একদিকে যেমন হারাম কাজ করবে অপরদিকে কুফরী করবে। তাদেরকে এর থেকে খালিছ তওবা করতে হবে। আর যদি এটাকে হালাল জেনে করে তবে তা কুফরী হবে। সুতরাং আমাদের কোন কাজ করতে হলে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস অনুযায়ী করতে হবে তথা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হতে হবে। সেই জন্য আল্লাহ্ পাক বলেন,
يايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولاتتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। কারণ শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বাক্বারা/২০৮) আর ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হতে হলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। যেমন, আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে বলেন,
ما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.
অর্থঃ- “তোমাদের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা এনেছেন তা আঁকড়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর/৭) অতএব, যারাই এ কুফরী ও হারাম কাজে জড়িত থাকবে, সমর্থন যোগাবে তাদের সকলকেই খাছ তওবা করতে হবে। কারণ কোন মুসলমান কুফরী করলে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা খুবই কঠিন। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের কুফরী করা হতে সতর্ক বা সাবধান থাকা উচিৎ।
নিম্নে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের ফায়সালা বর্ণনা করা হলো।
মুরতাদের মাসয়ালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্ব বাতিল হয় যদি সে হজ্ব করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম) আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اوئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন (কুফরীর পরিবর্তে) পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য কোন ধরণের সাহায্যকারী নেই। (সূরা আলে ইমরান/৯১) {দলীলসমূহঃ (১) কুরতুবী, (২) আহ্কামুল কুরআন, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) রুহুল মায়ানী, (৬) কবীর, (৭) তাবারী, (৮) ইবনে কাছীর, (৯) খাযিন, (১০) বাগবী, (১১) দুররে মানছূর, (১২) বুখারী, (১৩) মুসলিম, (১৪) নাসাঈ (১৫) আবু দাউদ (১৬) মিশকাত (১৭) আহ্মদ, (১৮) তিরমিযী, (১৯) ইবনে মাযাহ্, (২০) ফতহুল বারী, (২১) উমদাতুল ক্বারী, (২২) ফতহুল মুলহিম, (২৩) শরহে নববী, (২৪) আউনুল মা’বুদ, (২৫) বজলুল মাযহুদ, (২৬) তুহফাতুল আহওয়াযী, (২৭) মুসনদে শাফিয়ী, (২৮) মুসনদে বাজ্জার, (২৯) মুস্তাদরিকে হাকিম, (৩০) শরহে আক্বাঈদে নছফী, (৩১) আক্বাঈদে হাক্কা, (৩২) তাকমীলুল ঈমান, (৩৩) দুররুল মুখতার, (৩৪) খানিয়া, (৩৫) কাজীখান, (৩৬) বাহ্রুর রায়িক, (৩৭) আলমগীরী, (৩৮) জামিউল ফুছুলীন, (৩৯) আল বায্যাযিয়া, (৪০) হিদায়া, (৪১) বিনায়া, (৪২) আন কারোবিয়া, (৪৩) আল ফিক্বহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া, (৪৪) শরহে ফিক্বহ্ ে আকবর, (৪৫) ফতওয়ায়ে আল বারুরিয়া, (৪৬) Brewers Dictionary, (৪৭) Oxford Dictionary, (৪8) Encyclopaedia of Britannica ইত্যাদি। } সাইয়্যিদ মুহম্মদ মোক্তাদুল ইসলাম (মিলন) রঈসুল মজলিশ- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সুবহানীঘাট, সিলেট। সুওয়ালঃ রেযাখানী মুখপত্র ডিসেম্বর/২০০০ ঈঃ সংখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী, গুনিয়াতুত তালেবীন, রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সহীহ্ মুসলিম শরীফসহ” অনেক নির্ভরযোগ্য কিতাবে নফল নামায বিশেষতঃ ক্বদর ও বরাতের নফল নামায জামাত সহকারে আদায় করা বৈধ….।”
আর আপনারা “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” লিখেছেন, “তারাবীহ, ছলাতুল কুছুফ (সূর্য গ্রহণের নামায), ছলাতুল ইস্তিস্কা (বৃষ্টির নামায) এই তিন প্রকার নামায ব্যতীত যেমন লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাত, তাহাজ্জুদ, চাশ্ত, আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামাযসমূহ ইমামের সাথে চারজন মুক্তাদীসহ জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।” কোনটি সঠিক? আর “বুখারী, মুসলিম শরীফে” কি “ক্বদর” ও বরাতের” নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করার কথা উল্লেখ আছে? দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে “তাফসীরে রুহুল বয়ান, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, গুনিয়াতুত্ তালেবীন এবং রেজভীয়া” কিতাবের বরাত দিয়ে নফল নামায বিশেষতঃ “শবে বরাত”, “শবে ক্বদরের” নফল নামায আযান-ইক্বামত ছাড়া জামায়াত সহকারে আদায় করা যে বৈধ বলেছে, তা আমরা আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর বিগত সংখ্যাগুলোতে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রমাণ করেছি যে, “তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, জালিয়াতী ও প্রতারণামূলক।” কেননা, রেযাখানীরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে। (ধারাবাহিক)
বর্তমান সংখ্যায় রেযাখানীদের দলীলবিহীন ও মনগড়া বক্তব্য খন্ডন করা হলো
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “কোন কোন ভন্ড ….. ঢালাওভাবে মাকরূহে তাহরীমার গরম গরম ফতোয়া দিয়ে …. নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ….” এর জবাবে বলতে হয় যে, বিগত সংখ্যায় আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতে দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুল রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী। এ ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা গরম গরম ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক তাদের গুরু রেযা খাঁই গরম গরম ফতওয়া দিয়েছে এবং ঢালাওভাবে মাকরূহ্ তাহরীমার গরম গরম ফতওয়া দিয়ে রেযা খাঁও নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। দ্বিতীয়তঃ “শবে বরাত, শবে ক্বদর, লাইলাতুল রাগায়িব, তাহাজ্জুদ” ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা গরম গরম ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তাহলে বলতে হয়, রেযাখানীদের বক্তব্য মুতাবিক মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেবও গরম গরম ফতওয়া দিয়েছে এবং ঢালাওভাবে মাকরূহ্ তাহরীমার গরম গরম ফতওয়া দিয়ে মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেবও নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। কারণ, মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেব তার “বাহরে শরীয়ত” কিতাবে শবে বরাত, শবে ক্বদর, রাগায়িব ইত্যাদি নফল নামায জামায়াতের সহিত আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ ও নাজায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছে। যেমন, মৌলভী আমজাদ আলী তার“বাহারে শরীয়ত” কিতাবে উল্লেখ করেছে,
صلوۃ الر غائب کہ رجب کی پھلی شب جمعہ اور شعبان کی پندر ھویں شب اور شب قدر میں جما عت کے ساتھ نفل نماز بعض لوگ ادا کرتے ھیں فقھاء اسے ناجائز ومکروہ بدعت کھتے ھیں …
অর্থঃ- “রাগায়িবের নামায যা রজবের প্রথম জুমুয়ার রাত্রি ও শা’বানের ১৫ই রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাত এবং শবে ক্বদরে জামায়াতের সাথে কিছু লোক নফল নামায আদায় করে থাকে। ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতের সাথে আদায় করাকে নাজায়িয, মাকরূহ তাহরীমী এবং বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ বলেছেন। ….” তৃতীয়তঃ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা গরম গরম ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে রেযাখানাীদের বক্তব্য মুতাবিক পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ঢালাওভাবে মাকরূহ্ তাহরীমার গরম গরম ফতওয়া দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা করেছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্) কেননা, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “গুনিয়াতুত্ তালেবীন” কিতাবে উল্লেখ আছে, “নফল নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” যেমন, “গুনিয়াতুত্ তালেবীন”-এর উর্দূ অনুবাদ কিতাবটিতে উল্লেখ আছে,
جماعت کے ساتھ نفل ادا کر نا مکروہ ھے.
অর্থঃ- “নফল নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী।” চতুর্থতঃ উক্ত নফল নামাযগুলো জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী ফতওয়া দেয়ার কারণেই যদি তা গরম গরম ফতওয়া হিসেবে সাব্যস্ত হয় তাহলে রেযাখানাীদের বক্তব্য মুতাবিক মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঢালাওভাবে মাকরূহ্ তাহরীমার গরম গরম ফতওয়া দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা করেছিলেন কি? (নাউযুবিল্লাহ্) কেননা, কাইয়্যুমুয্ যামান, মাহ্বুবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, হযরত শায়খ আহ্মদ ফারুকী সিরহিন্দি মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ও বিশ্ববিখ্যাত কিতাব “মাক্তুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
جننا چاھئے کہ نوافل کو جماعت تمام کی ساتھ ادا کرنا مکروہ اور بدعتوں میں سے ھے. اور نوافل جماعت کے ساتھ ادا کرنا فقہ کی بعض روایات میں مطلق طور پر مکروہ ھے اور بعض روایات میں کراھت تداعی اور تجمیع یعنی بلانے. اور جمیعت پر مشروط ھے پس اگر بغیر تداعی کے ایک دو أذمی مسجد کے گوشہ میں نفل کو جماعت سے اداکرے تو بغبر کواھت روا ھے.اور تین ادمیوں میں مشائخ کا اختلاف ھے. اور بعض روایت میں چار ادمیوں کا جما عت بالاتفاق مکروہ نھیں اور بعض روایت میں اصح یہ ھے کہ مکروہ ھے.
অর্থঃ- “স্মরণ রেখ যে, নফল নামায পূর্ণ জামায়াতের সাথে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতের অন্তর্ভুক্ত। এবং নফল নামায জামায়াতের সাথে পড়া কোন কোন ফিক্বাহ্বিদগণের মতে, সর্ব অবস্থায় মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর কারো কারো মতে, ঘোষণা দেয়ার সাথে শর্ত যুক্ত। সুতরাং যদি কেউ বিনা ঘোষণায় মসজিদের এক কোনায় নামায পড়ার সময় দু’একজন ইক্তিদা করে তবে মাকরূহ ছাড়াই আদায় হবে। আর তিনজন পড়ার ব্যাপারে মাশায়িখগণের মতবিরোধ রয়েছে। চারজন ইক্তিদা করলে কেউ কেউ বলেন- মাকরূহ্ নয়, কিন্তু সর্বসম্মত ও ছহীহ্ মত হলো, মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। অতএব, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য দলীলবিহীন ও মনগড়া বলেই প্রমাণিত হলো এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃতপক্ষে রেযাখানীরাই অবৈধ কাজকে বৈধ বলে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে নিজের খ্যাতি চমকানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। (চলবে)
মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান
মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্
মুহম্মদ আসাদুর রহমান,
মুহম্মদ মাইজুর রহমান ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামা-ই-কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।” অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো- (ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে। (খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন। (গ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন। (ঘ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঙ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও। (চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত। (ছ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত। (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইল বন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে। কুরআন-সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি।
জাওয়াবঃ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون يأتونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ)
উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মেছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোন দিন শুনেও নাই। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।
(ধারাবাহিক)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০০তম সংখ্যা থেকে ১০৫ তম সংখ্যায় সুওয়াল-জাওয়াবে প্রদত্ত নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য হাদীস শরীফ, হাদীস শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার প্রায় শতাধিক কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, প্রকাশ্যে ঘরে রাখা তা পর্দার মধ্যেই হোক অথবা দেয়াল কিংবা বিছানার মধ্যে হোক এবং প্রাণীর ছবির ব্যবসা করা ইত্যাদি সবই বিনা শর্ত-শারায়েতেই অর্থাৎ মুতলক বা সাধারণভাবে হারাম ও নাজায়িয। যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা তোলায় সে ব্যক্তি চরম ফাসিক। সে যদি ইমাম হয়ে থাকে তবে তার পিছনে নামায পড়াও মাকরূহ্ তাহরীমী। তাকে ইমামতি থেকে অব্যহতি দেয়া জরুরী। আর সে যদি পীর দাবীদার হয়ে থাকে তবে তার নিকট মুরীদ হওয়াও হারাম। কেউ মুরীদ হয়ে থাকলে তাকে তরক করে একজন হক্বানী পীর ছাহেবের নিকট মুরীদ হওয়া ফরয। আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে তা পর্দায় হোক, বালিশে হোক, বিছানায় হোক, দেয়ালে ঝুলানো হোক, বা আলমারীতে সাজানো হোক সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা। আর উক্ত ঘরে নামায পড়াও মাকরূহ্ তাহরীমী।
উল্লেখ্য, মাসিক আল বাইয়িনাতে “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার” ব্যাপারে যে সকল দলীল-আদিল্লাসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে, তাতেই মূলতঃ রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত আপত্তিকর বক্তব্য সমূহের জবাব এসে গেছে। অর্থাৎ তাতেই প্রমাণিত হয়েছে যে, রেযা খানীরা তাদের মুখপত্রের নভেম্বর সংখ্যায় প্রাণীর ছবি জায়িয করার উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য প্রদান করেছে তা সম্পূর্ণই ভুল, বিভ্রান্তিকর প্রতারণাপূর্ণ ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। এরপরও আমরা প্রশ্নে উল্লেখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্যগুলো পর্যায়ক্রমে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে খন্ডন করবো, যাতে সাধারণ ও সরলমনা মুসলমানগণ তাদের উক্ত শরীয়ত বিরোধী বক্তব্যের কারণে বিভ্রান্তিতে না পড়েন। সাথে সাথে প্রাণীর ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে থাকা রেযাখানীরাও যেন তার থেকে ইবরত বা নছীহত হাছিল করে বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযা-খানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খন্ডন মূলক জবাব- (১)
প্রাণীর ছবি সম্পর্কে সিহাহ্ সিত্তাহ্সহ হাদীস শরীফের কিতাবসমূহে শত শত হাদীস শরীফ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও রেযাখানীরা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সেগুলোকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিম্নোক্ত দুখানা হাদীস শরীফ প্রথমতঃ উল্লেখ করেছে, নিম্নে তাদের পত্রিকা থেকে হাদীস শরীফ দু’খানা তাদের করা অনুবাদসহ হুবহু উল্লেখ করা হলো- “ ………. প্রিয়নবী রহমতে আলম হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
لاتدخل الملائكة فيه كلب وصورة.
অর্থাৎ- রহমতের ফেরেশ্তারা ঐ সব ঘরে প্রবেশ করে না যাতে কুকুর ও ছবি থাকে।” (ছহীহ বুখারী ও মুসলিম)
عن زيد بن خالد عن ابى طلحة صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الملائكة لاتدخل بيتا فيه صورة قال بسر ثم اشتكى زيد فعدناه فاذا على بابه ستر فيه صورة قال فقلت لعبيد الله الخولانى ربيب ميمونة زوج النبى صلى الله عليه وسلم الم يخبرنا زيد عن الصور يوم الاول فقال عبيد الله الم تسمعه حين قال الا رقما فى ثوب.
অর্থাৎ- “যায়েদ ইবনে খালেদ বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা। (বর্ণনাকারী বলেন) বুসন বলেছেন- হযরত যায়েদ অসুস্থ হলে আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম, তখন তাঁর ঘরের দরজায় ছবি ওয়ালা পর্দা দেখতে পাই। আমি উবায়দুল্লাহ খাওলানী (যিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এর ছেলে) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যায়েদ আমাদেরকে কি পূর্বে ছবি থেকে নিষেধ করতেন না? হযরত উবায়দুল্লাহ বল্লো-তুমি কি শুননি যে, তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।” (ছহীহ বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৪৫৮পৃঃ, ২য় খন্ড, ৮৮১পৃঃ)
এ প্রেক্ষিতে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো নিষিদ্ধ থাকার পরও উল্লিখিত হাদীস শরীফগুলো গোপন রেখে “ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করা” সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখ করে রেযাখানীরা মূলতঃ সরলমনা মুসলমানদের সাথে চরম প্রতারণা করেছে। তারা তো উক্ত দু’খানা হাদীস শরীফ উল্লেখ না করে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ দু’খানাও উল্লেখ করতে পারতো! যেখানে স্পষ্টভাবে “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানোকে কঠিন আযাবের কারণ বলা হয়েছে।” যেমন হাদীস শরীফ ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى كريب عن ابى معاوية ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)
عن عائشة قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقدسترت بقرام على سهوة لى فيه تصاوير فنزعه وقال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরের আঙ্গিনায় প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, “মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরী করে।”(মুসলিম ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাযাহ্ ২৬৮ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।)
এতে কি এটাই প্রমাণিত হয়না যে, রেযাখানীরা মূলতঃ চরম প্রতারক ও জালিয়াত।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, রেযাখানীরা মূলতঃ চরম জাহিল ও মুর্খ তাই তারা তাদের উল্লিখিত হাদীস শরীফ দুখানার বাইরেও যে, প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস শরীফ রয়েছে তার কোনই খবর রাখেনা। আর তারা চরম জাহিল বা মুর্খ বলেই প্রথম হাদীস শরীফে بيتا শব্দটি বাদ দিয়েছে, আর দ্বিতীয় হাদীস শরীফ খানার الارقما فى ثوب বাক্যের মনগড়া তরজমা বা অর্থ করেছে। ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী সংখ্যায় এর সঠিক তরজমা সহ ছহীহ্ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। আর তখনই রেযাখানীদের দলীলের রহস্য প্রকাশ পেয়ে যাবে। (চলবে)
মুহম্মদ সাইফুল হাবীব আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, বগুড়া
সুওয়ালঃ আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করা নাকি বিদ্য়াত ও নাজায়িয? দয়া করে দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে বিদ্য়াত ও নাজায়িয বলা গোমরাহী ও জিহালতী। কারণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের কোথাও আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়নি, বরং কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- নামাযের বাইরের যে কোন মুনাজাতে হাত উঠানো সুন্নত। অতএব, আযানের পর উভয় হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। তবে এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (فعل)আমল দ্বারা প্রমাণিত নেই কিন্তু মুনাজাতের সময় হাত উঠানো সম্পর্কে বহু فعلى (ফে’লী) এবং قولى (ক্বওলী) হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। অতএব, আযানের পর হাত তুলে মুনাজাত করাকে বিদ্য়াত বলার কোনই অবকাশ নেই।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
استفيد من هذا الحديث والذى قبله- انه يسن رفع اليدين اى السماء فى كل دعاء ……. وقال النووى ومن ادعى حضرها فقد غلط غلطا فاحشا (مرقات شرح مشكوة)
অর্থঃ- “(দোয়াতে হাত উঠানো সংক্রান্ত হাদীস শরীফ দ্বারা) এটাই প্রমাণিত হয় যে, সকল দোয়াতেই হাত উঠানো সুন্নত। …. ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি বলে, কোন বিশেষ দোয়াতে হাত উঠানো নাজায়িয, তবে নিশ্চয়ই তার এ দাবী ভ্রমাত্মক।” (মিরকাত শরহে মিশকাত)
يرفع هما لمطلق الدعاء فى سائر الامكنة والازمنة على طبق ما وردت به السنة.
অর্থঃ- “হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে সকল স্থানে, সকল সময়, সমস্ত দোয়াতে হাত উঠানো প্রমাণিত হয়।” (শামী)
ووجهه عموم دليل الرفع للدعاء ويجاب بانه مخوصة بما ليس فى الصلوة لاجماع على ان لا رفع فى دعاء التشهد.
অর্থঃ- “দোয়ার মধ্যে হাত উঠানোর দলীল কোন দোয়ার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট নয়। সকল দোয়াতেই হাত উঠানো জায়িয। তবে নামাযের মধ্যস্থিত দোয়াতে হাত উঠানো বিধেয় নয়, কেননা সর্বসম্মত মত হলো- তাশাহ্হুদের দোয়াতে হাত উঠানো জায়িয নয়।” (ফতহুল ক্বাদীর)
سوال: کیا فرماتے ھیں علماء دین وخلفاء شرع متین اس مسئلہ میں کہ دعا مانگنا ھا تھ اڈھاکر بعد اذان کے کیسا ھے؟
অর্থঃ- “সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা সম্পর্কে উলামায়ে দ্বীনের রায় কি?”
جواب: بالتخصیص دعاء اذاں مین ھاتھ اڈھانا تو نھیں دیکھاگیا مگر مطلقا دعا میں ھاتھ اڈھانا احادیث قولیۃ، فعلیۃ، فعلیۃ، مرفوعۃ، موقوفہ کثیرہ شھیدہ سے ثابت ھے من غیر تخصیص بدعاء دون دعاء. پس دعاء اذان میں بھی ھاتھ اڈھانا سنت ھوگا. لاطلاق الدلائل.
অর্থঃ- “জাওয়াবঃ বিশেষভাবে আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা পরিলক্ষিত হয়না। তবে সাধারণভাবে (যে কোন) মুনাজাতের সময় হাত উঠানো সম্পর্কে বহু ক্বওলী, ফে’লী, মরফূ’, মওকূফ ও বহু প্রসিদ্ধ হাদীস শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। কোন দোয়াকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। সুতরাং আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাও সুন্নত প্রমাণিত হয়। কেননা দলীলসমূহ মুত্লক্ব (ব্যাপক)।” (ইমদাদুুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ-১০২)
سوال: اذان کی دعا میں ھاتھ اڈھا کر دعاپرھے مسنون کیاھے؟
অর্থঃ- “সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করবে কি?” সুন্নত তরীক্বা কোনটি?
جواب: ھر طرح درست ھے.
অর্থঃ- “জাওয়াবঃ প্রত্যেক অবস্থায় জায়িয আছে। অর্থাৎ হাত উঠিয়ে এবং না উঠিয়ে উভয় অবস্থায় জায়িয।” (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ৯৫)। (তবে হাত উঠানোই উত্তম, কেননা দোয়াতে হাত উঠানো আদবের অন্তর্ভুক্ত)।
سوال: بعد اذان رفع یدین کرکے مناجات کرنا ثابت ھے یانھیں؟
অর্থঃ- “সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা প্রমাণিত আছে কি?”
جواب: خصوصیت کے ساتھ اس موقع پر رفع یدین ثابت نھین ھے اگر چہ عموما دعاء مینں رفع یدین کا مستحب ھونا اسکے استحباب کومقتضی ھے.
অর্থঃ “জাওয়াবঃ বিশেষভাবে আযানের মুনাজাতে হাত উঠানো প্রমাণিত নেই। তবে সাধারণভাবে যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো মুস্তাহাব, তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণই বহণ করে। (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ১১০) সুতরাং আযানের দোয়াতেও হাত উঠানো জায়িয ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত হবে।
اذان کے بعد کی دعا میں ھا تھ اڈھانا منقول نھیں ھے ویسے مطلقا دعا میں ھاتھ اڈھانا قولی اور فعلی (حدیث) سے ثابت ھے. لھذا دعائے اذان میں ھاتھ اڈھانے کو سنت کی خلاف ورزی نھیں کھا جائیگا.
অর্থঃ- আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা (আমল দ্বারা) বর্ণিত নেই। তবে সাধারণভাবে মুনাজাতে হাত উঠানো ক্বওলী এবং ফে’লী (উভয় প্রকার হাদীস শরীফ) দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। তাই আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে সুন্নতের খিলাফ (বিপরীত) বলা যাবেনা। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়া, ৩য় জিঃ পৃঃ১৬)
سوال: اذان کے بعد ھاتھ اڈھاکر مناجات کرنا کیسا ھے….؟
جواب. اذان کے بعد جو الفاظ ادا کیئے جاتے مین وہ دعاکے الفاظ ھین اور رفع یدین اداب دعا میں سے ھے. لس لئے ھاتھ اڈھانے میں مضائقہ نھیں.
অর্থঃ- “সুওয়ালঃ আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা কিরূপ?” জাওয়াবঃ “আযানের পর যে সকল শব্দসমূহ পড়া হয়, সেগুলো দোয়ার শব্দ। আর দোয়ার সময় উভয় হাত উঠানো আদবের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাতে কোন ক্ষতি নেই।” (কিফায়াতুল মুফতী, ৩য় জিঃ পৃঃ৮)
سوال: اذان کے بعد مناجات کیسی ھے؟
جواب. اذان کے بعد دعاء وسیلہ مستحب ھے.
کذا فی درمختار ج1 صفہ 412.
অর্থঃ- “সুওয়ালঃ আযানের পর মুনাজাত করা কি?” জাওয়াবঃ আযানের পর দোয়ায়ে উছীলা পড়া (অর্থাৎ মুনাজাত করা) মুস্তাহাব। অনুরূপ দুররুল মুখতার ১ম জিঃ পৃঃ ৪১২ উল্লেখ রয়েছে। (ফতওয়ায়ে মাহ্মূদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ৩২) “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে, দোয়া বা মুনাজাতের ক্বিবলা আসমান; তবে কেউ যেন আল্লাহ্ পাক আসমানে রয়েছেন বলে মনে না করে। আর দোয়ার সময় উভয় হাত সিনা বরাবর উঠাতে হবে এবং হাতের তালুদ্বয় লাগালাগি ও সোজা ভাবে রাখতে হবে। হাফিযে হাদীস, বাহ্রুল উলূম, ফক্বীহুল উম্মত, সাইয়্যিদুল মুনাজিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, শায়খুল মাশায়িখ, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত, আল্লামা, মাওলানা, শাহ্ ছূফী, শায়খ মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীর হাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি (খলীফায়ে ফুরফুরা শরীফ) তাঁর লিখিত “জরুরী মাসায়েল” কিতাবে উল্লেখ করেন, “আযানের পর হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়িয।” আযানের পর মুয়ায্যিন ও শ্রোতাদের হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। শুধু আযানের পর নয়, নামাযের মধ্যস্থিত (দোয়া কুনূত, দোয়ায়ে মা’ছূরা ইত্যাদি) দোয়া ব্যতীত সকল দোয়ার জন্য হাত উঠানো এবং উক্ত হাত মুখমন্ডলে মাসেহ্ করাও মুস্তাহাব। (ফতওয়ায়ে সিদ্দীক্বিয়া পৃঃ১৪৫) অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আযানের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয ও সুন্নত। এটাকে বিদ্য়াত ও নাজায়িয বলা সম্পূর্ণরূপে জিহালত বা মুর্খতা ও গোমরাহীর নামান্তর। {দলীলসমূহঃ (১) মিরকাত, (২) ফতহুল ক্বাদীর, (৩) দুররুল মুখতার, (৪) রদ্দুল মুহতার, (৫) শামী, (৬) ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, (৭) জরুরী মাসায়িল, (৮) ইমদাদুল ফতওয়া, (৯) ফতওয়ায়ে দেওবন্দ, (১০) ফতওয়ায়ে রহীমিয়া, (১১) কিফায়াতুল মুফতী, (১২) ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ইত্যাদি}
ছূফী মুহম্মদ আব্দুস্ সালাম যুব আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত,
রাজারহাট শাখা, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ ঈদের নামাযের পর কোলাকুলি করা শরীয়তসম্মত কিনা? জাওয়াবঃ মুয়ানাকা করা সুন্নত। কোন বিশেষ দিনে হোক আর বিশেষ দিন ছাড়া অন্য দিনেই হোক সব দিনেই মুয়ানাকা করা জায়িয এবং সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم زيد بن حارثة امدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى فاتاه فقرع الباب فقام اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم عريانا يجر ثوبه والله مارايته عريانا قبله ولابعده فاعتنقه وقبله.
অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যায়েদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফে আগমন করতঃ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমার ঘরে আসলেন এবং দরজায় করাঘাত করলেন। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনাবৃত শরীর মুবারকে চাদর টানতে টানতে তাঁর কাছে গেলেন। আল্লাহ্ পাক-এর কসম! আমি তাঁকে এর পূর্বে বা পরে কখনো অনাবৃত শরীর মুবারকে দেখিনি। তিনি (মুহব্বতের আতিশয্যে) তাঁর সাথে মুয়ানাকা করলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন।” (তিরমিযী শরীফ)
উল্লেখ্য, শরীয়তের ফতওয়া হলো- “কোন সুন্নতকে বিদ্য়াত বলা কুফরী।” যারা ঈদের দিনে মুয়ানাকা করাকে বিদ্য়াত বলে তারা বিনা দলীলে, মনগড়া এবং হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা ও মাসয়ালা না জানার কারণেই বলে থাকে। আবার যারা শুধু একবার বা একদিকে মুয়ানাকা করার কথা বলে, তারাও ঠিক একই কারণে বলে থাকে।
মূলতঃ ঈদের দিনে মুয়ানাকা করার সঠিক ইতিহাস হলো, পূর্ববর্তী যামানায় বর্তমান যামানার ন্যায় এলাকা ভিত্তিক এত ঘন ঘন ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হতোনা। বরং কোন স্থানে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অনেক দূর দূরান্ত হতে লোক সমাগম হয়ে নামায আদায় করতো। অতঃপর নামায শেষে অনেকের সাথে দীর্ঘ দিন পর দেখা-সাক্ষাৎ হতো, তারপর খোজ-খবর ও পরিচয় নেয়ার পাশাপাশি সালাম বিনিময়, মুছাফাহা ও মুয়ানাকা করতো। তখন থেকে ঈদের দিনে পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে সালাম-কালাম, মুছাফাহা, মুয়ানাকার ব্যাপক প্রচলন হয়ে আসছে। উপরোল্লিখিত প্রত্যেকটি আমলই খাছ সুন্নত যা মুসলমানদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি মুহব্বত বৃদ্ধি এবং আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের কারণ।
সুতরাং খালিছ বা নেক উদ্দেশ্যে মুয়ানাকা করা খাছ সুন্নত এবং আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির কারণ। মুয়ানাকা করার নিয়ম ঃ প্রথমে উভয়ের ডান দিকে গলায় গলায় মিলাবে এরপর একইভাবে বাম দিকে মিলিয়ে পুনরায় ডান দিকে মিলাবে এবং নিম্নোক্ত দোয়াটি বলবে,
اللهم زد محبتى لله ورسوله.
অর্থঃ- “আয় আল্লাহ্ পাক! আপনি আমার মুহব্বত বৃদ্ধি করে দিন আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টির জন্য।” (তিরমিযী শরীফ) হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن اوتيراء.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট বেজোড় থেকে নিষেধ করেছেন।”(ইবনে আব্দিল বার) সুতরাং একবার গলা মিলানো সুন্নতের পরিপন্থী। বরং তিনবার গলা মিলানোই সুন্নত। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) উমদাতুল কারী, (৩) ফতহুল বারী, (৪) ইরশাদস্ সারী, (৫) ফয়জুল বারী, (৬) তাইসীরুল কারী, (৭) তিরমিযী, (৮) শরহে তিরমিযী, (৯) শরহে নববী, (১০) মিশকাত, (১১) মিরকাত, (১২) আশয়াতুল লুমুয়াত, (১৩) লুমুয়াত, (১৪) শরহুত ত্বীবী, (১৫) তালীক্বুছ ছবীহ্, (১৬) মুযাহিরে হক্ব, (১৭) শরহুস্ সুন্নাহ্, (১৮) মাকতুবাত শরীফ, (১৯) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন নূরপুর, রংপুর।
সুওয়ালঃ গোলাম, জন্মান্ধ ও অবৈধ সন্তানের পিছনে নামায জায়িয কিনা? জাওয়াবঃ এই তিন শ্রেণীর লোকদের সম্পর্কে আম বা সাধারণ ফতওয়া হচ্ছে, এদের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। এর কারণ স্বরূপ ফিক্বাহ্র কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, (১) গোলামঃ গোলামকে যেহেতু সর্বদা গোলামীতে মশগুল থাকতে হয় সেহেতু তার পক্ষে ইল্ম তলব করা, ইল্ম চর্চা করা বা ইল্ম হাছিল করা সম্ভব নয় তাই তার পক্ষে শরয়ী মাসয়ালা ও মাসায়িল জানা ও পালন করা সম্ভব নয়। আর যে শরয়ী মাসায়ালা-মাসায়িল জানেনা সে মুর্খের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তার পক্ষে ত্বহারতের হুকুম-আহ্কাম ও নামাযের ফরয-ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাব সঠিকভাবে জানা ও পালন করা সম্ভব নয়, তাই তার ত্বহারাত বা পবিত্রতার মধ্যে ত্রুটি থাকা ও তার নামায ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। (২) জন্মান্ধঃ জন্মান্ধ ব্যক্তি যেহেতু চোখে দেখেনা সেহেতু তার পক্ষেও শরয়ী মাসায়ালা-মাসায়িল জানা ও পালন করা কঠিন তাই তার হুকুমও গোলামের অনুরূপ। (৩) অবৈধ সন্তানঃ অবৈধ সন্তানের যেহেতু পিতা নেই সেহেতু তাকে ইল্ম শিক্ষা দেয়ার কেউ না থাকাই স্বাভাবিক। সেহেতু তার পক্ষেও শরয়ী মাসায়ালা-মাসায়িল জানা ও পালন করা কঠিন। অতএব তার হুকুমও গোলাম ও জন্মান্ধের অনুরূপ। তবে কোন লোক যদি শুনে শুনে হাফিয হয় অথবা ক্বারী হয় তারপরেও তার জন্য ইমাম হওয়ার শর্ত হচ্ছে নামায ও ত্বহারাতের ফরয-ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাব সম্পর্কিত মাসয়ালা-মাসায়িল ভালভাবে অবগত হওয়া ও পালনে সক্ষম হওয়া। তাই ফিক্বাহ্র কিতাবে খাছভাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, যদি উপরোল্লিখিত তিন শ্রেণীর লোক তারা প্রত্যেকেই হক্কানী আলিম হয় তাহলে তাদের পিছনে বিনা সন্দেহে নামায পড়া জায়িয রয়েছে। এতে কোনরূপ মাকরূহ হবেনা। {দলীলসমূহঃ- (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) ফতহুল ক্বাদীর, (৪) গায়াতুল আওতার, (৫) শরহে বিক্বায়া, (৬) বাহরুর রায়িক, (৭) তাতারখানিয়া, (৮) আইনুল হিদায়া, (৯) হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, (১০) জামিউর রুমুয ইত্যাদি।}