হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩৬) তাসলীমের মাক্বাম ও তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৭৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

পূর্ব প্রকাশিতের পর

تَسْلِيْمٌ (তাসলীম) শব্দের অর্থ: আত্মসমর্পন করা, গর্দান ঝুঁকিয়ে দেয়া। বিনা দ্বিধায় মেনে নেয়া। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হুকুম-আহকাম সমূহ বিনা দ্বিধায়, বিনা চু-চেরা ক্বীল-ক্বালে, সর্বান্তকরণে, সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া বা পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করাকে তাসলীম বলা হয়। তাসলীমের বিপরীত হচ্ছে, বাগী বা বিদ্রোহী হওয়া, বদ মেজাজী হওয়া। তাসলীমের মাক্বাম হাছিল না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিদ্রোহী ও বদ মেজাজী হয়। যে কোন সময় তার পদস্খলন হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল অভিশপ্ত ইবলীস। বনী ইসরাঈলের কথিত দরবেশ বালআম বিন বাউরা। তার ৩০০ শত বছর সাধনার ফসল হাতছাড়া হয়েছে। তার পদস্খলন হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, খালিছ ঈমানদার হওয়ার জন্য, খালিছ মুসলমান হতে হলে تَسْلِيْمٌ (তাসলীম) উনার মাক্বাম হাছিল করা আবশ্যক। কেননা তাসলীমের মাক্বাম হাছিল না করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি بَاغِىٌ বাগী বা বিদ্রোহী হয়, বদ মেজাজী হয়। যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ। দু একটি বদ খাছলতই মানুষের সব আমল নষ্টের কারণ হয়।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ سُوْءَ الْـخَلْقَ لِيُفْسِدُ الْعَمَلَ كَمَا يُفْسِدُ الْـخَلَّ الْعَسَلَ

অর্থ: নিশ্চয়ই বদ খাছলত আমলকে সেভাবে নষ্ট করে যেমন ‘সিরকা’ মধুকে নষ্ট করে। নাউযুবিল্লাহ! (ইবনে আবিদ দুনিয়া)

অভিশপ্ত ইবলীস হয়েছিল بَاغِىٌّ (বাগী) বিদ্রোহী। মরদুদ দরবেশ বালআম বিন বাউরা সে তাসলীমের মাক্বাম থেকে সরে গিয়েছিল। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারকের ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করেছিল। দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিল। সর্বান্তকরণে, সন্তুষ্টচিত্তে হুকুম-আহকাম মেনে নিতে পারেনি। ফলে মালউন তথা লা’নতগ্রস্ত হয়েছে।

বদ খাছলতের কারণে পাহাড় পরিমাণ নেক আমল করার পরেও জাহান্নামী হতে হয়। বদ খাছলতই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জাহান্নামী করবে। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبـِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ أَتَدْرُوْنَ مَا الْمُفْلِسُ ‏قَالُوْا الْمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ ‏ فَقَالَ‏ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هٰذَا وَقَذَفَ هٰذَا وَأَكَلَ مَالَ هٰذَا وَسَفَكَ دَمَ هٰذَا وَضَرَبَ هٰذَا فَيُعْطَى هٰذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهٰذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ

অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা কি বলতে পারেন, অভাবী বা নিঃশ্ব ব্যক্তি কে? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিনার- দিরহাম (টাকা-পয়সা), ধন-সম্পদ নেই সেই অভাবী। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি প্রকৃত অভাবী  বা নিঃস্ব যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন অনেক নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি নিয়ে হাজির হবে। সাথে সাথে অনেক বদ খাছলতও থাকবে। কাউকে অন্যায়ভাবে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাত করেছে, কাউকে হত্যা করেছে, কাউকে প্রহার করেছে ইত্যাদি। তারপর সে সকল ব্যক্তিদেরকে তার নেক আমল দ্বারা বদলা দেয়া হবে। এক পর্যায়ে তার নেক আমল শেষ হয়ে যাবে। অথচ পাওনাদার তখনও বাকী রয়েছে। তখন বদলা স্বরূপ ঐ ব্যক্তিদের ঐ পরিমাণ গুনাহ তাকে দেয়া হবে। পরিশেষে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। নাউযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নিয়াদুছস ছলেহী)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)