হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩৩) ক্বানায়াত বা অল্পে তুষ্টির মাক্বাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৭৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

ক্বানায়াত বা অল্পে তুষ্টির হাক্বীক্বত-২

হযরত শা’বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি একটি ময়না পাখি শিকার করলো। পাখিটি তাকে বললো, হে ব্যক্তি তুমি আমাকে শিকার করলে কেন? লোকটি বললো, আমি তোমাকে যবেহ করে, তোমার গোস্ত খাব। তখন পাখিটি বললো, আমার গোস্ত যেমন তোমার জন্য তৃপ্তিকর হবে না, তেমনি তোমার ক্ষুধাও মিটবে না। বরং তুমি আমার কাছে তিনটি উপদেশ গ্রহণ করো। যা তোমার অনেক উপকার দান করবে। তুমি অনেক লাভবান হবে। একটি উপদেশ দিব তোমার হাতে বন্দী অবস্থায়। দ্বিতীয়টি বলবো, বৃক্ষের ডালে বসে। আর তৃতীয় উপদেশটি শুনাবো পাহাড়ের উঁচু চুড়ায়।

লোকটি রাজী হলো। বললো, আচ্ছা তোমার উপদেশটি বলো। পাখিটি বললো, শোন, কোন কিছু হাতছাড়া হয়ে গেলে তার জন্য কোন আফসোস করবে না।

অতঃপর পাখিটি লোকটির হাত থেকে উড়ে গিয়ে গাছের ডালে বসলো। বললো, কখনো হয় না কিংবা হতে পারে না, তা হয় কিংবা হতে পারে বলে বিশ্বাস করবে না। একথা বলে পাখিটি গাছের ডাল হতে উড়ে গেল। পাহাড়ের চূঁড়ায় বসে বললো, হে নির্বোধ ব্যক্তি! যদি তুমি আমাকে যবেহ করতে তাহলে আমার পেটে দুটো মোতি পেতে। মোতি দুটির ওজন হতো বিশ মিশকাল। লোকটি পাখিটির মুখে একথা শুনে আফসোস করে বললো, যাক যা হবার হয়ে গেছে। আফসোস করে আর লাভ নেই। তবে তুমি আমাকে আরো কিছু উপদেশ দাও।

পাখিটি বললো, তোমাকে আর উপদেশ দিয়ে কি হবে? তুমি তো ওয়াদা ভঙ্গ করেছ। আমি কি বলিনি, যদি কোন কিছু হাতছাড়া হয়ে যায় তার জন্য আফসোস করবে না? আমি তোমার হাত থেকে বের হওয়ার পর তুমি আক্ষেপ করলে কেন? আর আমি বলেছিলাম, যা হয় না বা হতে পারে না তা হয় বা হতে পারে বলে কখনো বিশ্বাস করবে না। প্রকৃতপক্ষে কথা হচ্ছে, আমার গোস্ত, রক্ত, পালক সবকিছু মিলেও বিশ মিশকাল হবে না। তাহলে আমার পেটে বিশ বিশ চল্লিশ মিশকাল  ওজনের দুটো মোতি থাকবে একথা তুমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারলে? একথা বলে পাখিটি পাহাড়ের চূড়া হতে উড়ে অন্যত্র চলে গেল।

আলোচ্য ঘটনাটি মানুষের সীমাহীন লোভ লালসার একটি দৃষ্টান্ত। লোভ লালসা মানুষকে এভাবে অন্ধ ও নির্বোধ, বোকা বানিয়ে দেয়। যার ফলে তারা চিরন্তন সত্যকেও উপলব্ধি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

সেটাই বলেছেন, হযরত কা’ব ইবনে আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বর্ণনা করেন, একদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনে আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আলিম ব্যক্তি অনেক রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত তথা কঠিন পরিশ্রম করে ইলিম শিক্ষা করে। সেই কঠিন সাধনার ফসল ইলিমকে কোন বস্তু আলিমের অন্তর থেকে সলব (বের) করে দেয়। তখন তিনি বললেন, শুধুমাত্র দুনিয়ার লোভ এবং পার্থিব স্বার্থের পেছনে ধাবিত হওয়ার কারণে তাদের ইলিম সলব হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَا مِنْ اَحَدٍ فَقِيْرٌ وَّلَا غَنِـىٌّ اِلَّا وُدَّ يَوْمِ الْقِيَامَةِ اَنَّه اُوْتِىَ قُوَّتًا فِـى الدُّنْيَا

অর্থ: ক্বিয়ামতের দিন ধনী দরিদ্র সবাই পছন্দ করবে যে, হায়! আমার জন্য কতই না উত্তম হতো যদি আমি পার্থিব জীবনে কেবলমাত্র জীবন যাপন পরিমাণ সম্পদ কামাই করতাম। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ সম্পদ অর্জনে সন্তুষ্ট থাকতাম। তাহলে অতি উত্তম হতো। (মুকাশাফাতুল কুলূব-১৮২)

তিনি আরো বলেন-

اَلَا اَيُّهَا النَّاسُ اَجْـمَلُوْا فِـى الطَّلَبِ فَاِنَّه لَيْسَ لِعَبْدٍ اِلَّا مَا كُتِبَ لَه وَلَنْ يُّذْهَبَ عَبْدٌ مِّنَ الدُّنْيَا حَتّٰـى يَأْتِيَه مَا كُتِبَ لَه مِنَ الدُّنْيَا وَهِىَ رَاغِمَةٌ.

অর্থ: হে মানব সমাজ! তোমরা ধন-সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে সময় কমিয়ে দাও। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তিই ততটুকু লাভ করতে পারবে যা তার তাকদীরে (বরাদ্দ) রয়েছে। আর কেউই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার তাকদীর বা বরাদ্দকৃত রিযিক ভোগ না করবে। (মুসতাদরাকে হাকিম)

অর্থাৎ বরাদ্দের বেশি অর্জন করতে পারবে না। আর বরাদ্দকৃত সম্পদ ভোগ না করা পর্যন্ত কেউ ইন্তিকাল করবে না। কাজেই, ধন-সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে অধিক সময় ব্যয় করা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেটাই ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়াতে তারাই সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে যাদের আক্বল নেই বা বেয়াকুফ। নাউযুবিল্লাহ!

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)