হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২২৪) তাওয়াক্কুল উনার মাক্বাম হাছিলের পথে ফানা বা বিলীন কতিপয় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, খাজায়ে খাজেগাঁ, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী লোক তিনি, যিনি কারো নিকট সাহায্য চান না এবং দুঃখ, কষ্টের সময় অভিযোগ করেও বেড়ান না। তিনি আরো বলেন, তাওয়াক্কুলকারীগণের উপর মুহব্বতের তাজাল্লী বর্ষিত হওয়াকালীন এমন এক হাল যাহির হয় যখন তাকে তলোয়ার দ্বারা টুকরা টুকরা করে ফেললে কিংবা কোনো প্রকার দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণা প্রদান করা হলেও তার কোনো খবর থাকে না।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া-৪/২৩২)

কুতুবুল আলম, ফরীদু যামানিহী, শায়খুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইবনে আহমদ খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি শাম দেশের কোনো একস্থানে ভ্রমন করছিলাম। পথে এক জায়গায় অনেক আনার (ডালিম) ফলের গাছ দেখতে পেলাম। তবে সেই স্থানের আনার ফল টক বলে প্রসিদ্ধ ছিল। আনার ফল দেখে আমার খাওয়ার খুবই ইচ্ছা হলো, কিন্তু টক বলে তা খেলাম না। কিছুদুর অগ্রসর হয়ে এক জঙ্গলে পৌঁছলাম। একজন বৃদ্ধ খুবই বিপদগ্রস্থ। উনার  দেহ কালো ও ক্ষত বিক্ষত। উনার পঁচা দেহ হতে কীট গড়িয়ে পড়ছে। উনার দেহের উপর ভোলতা ভন ভন করে উড়ছে, দংশন করছে। উনার এই অবস্থা দেখে আমার অন্তরে দয়ার উদ্রেক হলো। আমি উনাকে বললাম, আপনি চাইলে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে দোয়া করতে পারি। তিনি জাওয়াবে বললেন, আমি চাই না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন চান না? তিনি বললেন-

لان العافية اختيارى والبلاء اختياره وانا اختار اختياره على اختيارى

অর্থাৎ- সুস্থতা আমার পছন্দনীয়। আর বালা-মুছীবত (মহান আল্লাহ পাক) উনার পছন্দনীয়। আমি আমার ইখতিয়ার বা পছন্দের উপর উনার ইখতিয়ার বা পছন্দকে প্রাধান্য দিচ্ছি।”

আমি বললাম, আপনি বললে অন্তত এই বোলতাগুলোকে আপনার থেকে দূরে রাখতে পারি। তিনি বললেন, হে খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি! আগে মিষ্টি আনার ফলের আশা আকাঙ্খা মন হতে দূর করুন। তারপর আমার সুস্থতা কামনা করবেন। আগে নিজের দিলকে সুস্থ করুন, তারপর আমার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করবেন।

আমি বললাম, আপনি কিভাবে জানতে পারলেন যে, আমি হযরত খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মিষ্টি ফল খাওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করছি।

তিনি বললেন, যে  ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে চিনতে পারে তার নিকট কোন বস্তুই গোপন থাকে না। সুবহানাল্লাহ! আমি জিজ্ঞাসা করলাম এই বোলতা ও কীটগুলো আপনার দেহ মুবারককে ক্ষত বিক্ষত করছে। এমতাবস্থায় আপনার কিরূপ মনে হচ্ছে। তিনি বললেন, বোলতারা দংশ করে। আর কীটগুলো গোশত খায় বটে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন এতে সন্তুষ্ট তখন আমিও খুবই ভালো বোধ করছি। সুবহানাল্লাহ! (তাযকিরাতুল আউলিয়া-৩/১৭৯)

সাইয়্যিদুল মুতাওয়াক্কিলীন, কুতুবুল আলম, সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ ইসহাক ইবরাহীম খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, একবার আমি এক বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মধ্য দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় পথ ভুলে গেলাম। অনেক ঘোরা ঘোরি করেও পথ পেলাম না। এভাবে ঘোরাফেরা করতে করতে কয়েকদিন কেটে গেল। তবুও পথ পাওয়া গেলো না।

অবশেষে আমি একটি মোরগের আওয়াজ শুনে আনন্দের সাথে সেদিকে গেলাম। সেখানে একজন লোক দেখতে পেলাম। লোকটি আমাকে দেখে দৌঁড় দিয়ে আমার দিকে আসলো। এসে আমাকে এমন জোড়ে গলা ধাক্কা দিলো যে, আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। আমার মনে হলো যে, আমার ঘাড় ভেঙ্গে গেছে।

সহসাই আমার মুখ মুবারক থেকে বেরিয়ে এলো, বারে ইলাহী! আপনার উপর তাওয়াক্কুলকারীর এই পরিণতি! তখনই এক গাইবী আওয়াজ শুনতে পেলাম, যে পর্যন্ত আপনি আমার উপর তাওয়াক্কুল রেখেছিলেন সে পর্যন্ত আমার প্রিয় ছিলেন। এখন আপনি মোরগের আওয়াজের উপর নির্ভর করেছেন তাই গলাধাক্কা খেয়েছেন।”

আমি এই মনোকষ্ট নিয়েই সামনে অগ্রসর হলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর আবার একটি গাইবী আওয়াজ শুনতে পেলাম- “হে হযরত খাওয়াস রহমতুল্লাহি আলাইহি! দেখেন তো আপনি এই লোকটির দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিলেন কি না? আমি তাকিয়ে দেখলাম সত্যি তাই। যে ব্যক্তি আমাকে গলা ধাক্কা দিয়েছিল তারই ছিন্ন মাথা আমার সামনে পড়ে আছে।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া-৩/১৭৭)

 

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)