হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২১৬) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

শোকরগোজারী দ্বারা নিয়ামত বৃদ্ধি পায় শোকর গোজার না করলে

নিয়ামত বন্ধ হয়

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সামনে অগ্রসর হলেন। কিছুদুর গিয়ে ধন-সম্পদশালীনী সেই মহিলার সাক্ষাত হলো। হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সে মহিলাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পয়গাম পৌঁছে দিলেন। বললেন, হে মহিলা! আপনি নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবেন না। তাহলে আপনার ধন-সম্পদ আপছে আপ কমে যাবে।

মহিলা বললেন, তা কিভাবে সম্ভব হতে পারে?

মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় না করে আমি কিভাবে থাকতে পারি? তিনি তো আমাকে অনেক নিয়ামত রাজী দান করেছেন। মহিলার কথায় মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন। ফলে উনার ধন-সম্পদ আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। সুবহানাল্লাহ!

জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সবশেষে অভাবগ্রস্থ মহিলার নিকটবর্তী হলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক শুনালেন এবং বললেন- হে মহিলা! তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া বেশী বেশী করে করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।  এ কথা শুনে উক্ত মহিলা দুঃখে, ক্ষোভে ফেটে পড়লো। বললো-আমি কিসের শোকরিয়া আদায় করবো। আমার তো কোন কিছুই নেই। আমার অর্থ কড়ি, ধন-দৌলত, ঘর-বাড়ী কিছুই তো নেই, আমি কিসের শুকরিয়া আদায় করবো? মহিলার কথা শেষ হতে না হতেই জোড়ে বাতাস প্রবাহিত হলো। মহিলাকে সহ তার যা ছিল সবকিছু বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেল। মহিলার অবস্থানের জায়গা, ঘর-বাড়ী কোন কিছু আর বাকী রইল না। সে সহ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। নাউযুবিল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই ইরশাদ মুবারক করেছেন।

لئن شكرتم لازيدنكم ولئن كفرتم ان عذابى لشديد

অর্থ: “যদি তোমরা শুকরিয়া কর, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমি (নিয়ামত) বাড়িয়ে দেব। আর যদি কুফরী কর (শুকরিয়া না কর) তাহলে জেনে রেখ, আমার আযাব অত্যন্ত কঠিন। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وقليل من عبادى الشكور

অর্থ: “আমার শোকর গোযার বান্দা খুবই কম।” (পবিত্র সূরা সাবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

শোকর উনার স্বরূপ

ইমামুল মুফাসসিরীন, ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, শোকর বা কৃতজ্ঞতার স্বরূপ হচ্ছে- নিয়ামতদাতা উনার নিয়ামত স্বীকার করা এবং নিয়ামতরাজী উনার মর্জি মুয়াফিক (ইচ্ছানুযায়ী) ব্যবহার করা। কারো দেয়া নিয়ামতকে তার মর্জি মুয়াফিক ব্যবহার না করা নাশোকর (অকৃতজ্ঞতা) বা নাফরমানী। কাজেই শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা শুধু মুখেই নয়, কর্মের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। কর্মগত কৃতজ্ঞতা হচ্ছে নিয়ামত দাতা উনার নিয়ামতকে উনার পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহার করা।

হযরত ফুযায়িল ইবনে আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার জলীলুর ক্বদর রসূল হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ মুবারক অবতীর্ণ হলো। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আরয করলেন- বারে ইলাহী! আমি আপনার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করবো? আমার মৌখিক কিংবা কর্মগত শুকরিয়া সেটাওতো আপনারই মহান দান। তার জন্যই তো শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব-আবশ্যক।

তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম! এখন আপনি আমার শুকরিয়া আদায় করেছেন। কেননা যথাযথ শুকরিয়া আদায়ে আপনি আপনার অক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর তা মৌখিক স্বীকৃতিও দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৬)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৭)

মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৮)