[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-
২৮তম ফতওয়া হিসেবে
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ)। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,
وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.
অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরাহ গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই, যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দী হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পূণরায় প্রকাশ করা হলো।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
চট্টগ্রামস্থ পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার দেওবন্দী মৌলভীরা ভোটার আইডি কার্ডের জন্য ছবি তোলাকে জায়িয বলে সুস্পষ্ট কুফরী করেছে।
চট্টগ্রামস্থ পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত মুখপত্র “মাসিক আত তাওহীদ” আগস্ট’০৮ সংখ্যায় “ভোটার আইডি কার্ডের জন্য ছবি তোলা” সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে লিখেছে “…… ভোটার আইডি কার্ড যা ন্যাশনাল আইডি কার্ড হিসেবে পরিচিত। যা না হলে মানুষের রাষ্ট্রিয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়। তাই ফিক্বাহবিদগণ ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্য ফটো তোলা জায়িয বলেছেন এবং তাতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন সমস্যাও হবে না। (নাউযূবিল্লাহ)
(দ্বিতীয় অংশ)
পটিয়ার খারিজী দেওবন্দী মৌলভীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, তাদের বক্তব্য হলো “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন বা রাষ্ট্রের ফায়দার জন্য ছবি তোলা জায়িয।” নাউযূবিল্লাহ।
তাদের এবক্তব্য চরম জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন ও কুরআন-সুন্নাহর খিলাফ কুফরী হয়েছে। কারণ যদি রাষ্ট্রিয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িযই থাকতো তবে তা অবশ্যই হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতো। অথবা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খুলাফায়ে রাশিদীনগণ খিলাফত পরিচালনার ক্ষেত্রে ছবিকে ব্যবহার করতেন। যদিও তখন ক্যামেরা ছিল না তবে হাতে ছবি আঁকার মত অনেক অভিজ্ঞ ও পারদর্শী লোক ছিল। তথাপিও তারা কখনো ছবির ব্যবহার করেছেন বা করা জায়িয বলেছেন কেউ প্রমান করতে পারবে না।
তাছাড়া শরীয়তের ফায়ছালা হলো- হারাম কোন বিষয়ে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও কিছুটা ফায়দা থাকে তবুও তা গ্রহণ বা ব্যবহার করা জায়িয হবে না। যেহেতু ফায়দার চেয়ে গুণাহ বেশী। এটা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। যেমন- কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا.
অর্থঃ হে হাবীব! আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, এ দু’টির মধ্যে রয়েছে কবীরাহ গুনাহ। এবং মানুষের জন্য ফায়দাও রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুনাহই বড়। (সূরা বাক্বারা-২১৯)
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ পাক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুনাহ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। সুতরাং মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এগুলো হারাম।
মহান আল্লাহ পাক আরো বলেন-
وَالَّذِىْ خَبُثَ لاَ يَخْرُجُ اِلاَّ نَكِدًا.
অর্থঃ “যা নাপাক তা থেকে নাপাক ব্যতীত অন্য কিছু বের হয় না। (সূরা আ’রাফ-৫৮)
যেমন পেশাবের মধ্যে এসিড রয়েছে যার কারণে তা দিয়ে ময়লা কাপড় ধৌত করলে পরিষ্কার হবে, কিন্তু পাক হবে না। যদিও বাহ্যিকভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়, তথাপিও আভ্যন্তরীণ নাপাকীর কারণে তা পরিধান করে নামায পড়া জায়িয হবে না।
মূল কথা হলো- হারাম কোন বিষয়ে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই ফায়দা দেখা যাক না কেন যেহেতু তা হারাম এবং তাতে গুনাহ রয়েছে সেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে তা আমল করা সম্পূর্ণই হারাম। সে হিসেবে কথিত রাষ্ট্রিয় ফায়দার জন্যও ছবি তোলা বা ছবির ব্যবহার করা হারাম। কারণ যতটুকু ফায়দা তার চেয়ে ছবি তোলার মধ্যে গুনাহ বেশী। অর্থাৎ ফায়দার চেয়ে গুনাহ বড়। ছবি তোলা যে হারাম ও কঠিন গুনাহের কাজ তা বহু ছহীহ হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
যেমন-
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছো, সেগুলো মধ্যে প্রাণ দাও।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, ৮৮০পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২১০ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”
উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আজ জাওয়াজির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وفى التوضيح قال اصحبنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط او دينار اودرهم او فلس او اناء او حائط.
অর্থঃ ‘তাওজীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং কঠোর হারাম। এটা কবীরাহ গুনাহ। চাই ওটাকে যত্ন বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম।
শরহে মুসলিম, নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকীয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضا فيه وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.
অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্মন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হবে। (শরহে মুসলিম, নববী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ পৃঃ ৩৭৮)
قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب او بساط او دينار او درهم.
অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ গুণাহ। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোন স্থানে আঁকা থাকনা কেন তা সমান কথা। (মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠা)
تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے اور کہنا اسکا ایسا ہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا ایسے فعل کا فاسق ہے اور امام بنانا اسکا حرام ہے اور نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ہے.
অর্থঃ আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠা)
কাজেই, মদ ও জুয়ার মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ফায়দা থাকা সত্বেও এটাকে জায়িয বলা যেরূপ কুফরী। তদ্রুপ রাষ্ট্রিয় ক্ষেত্রে ছবির ব্যবহারে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কিছুটা ফায়দা পরিলক্ষিত হলেও এটাকে জায়িয বলাও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হবে।
হ্যাঁ, এখন কেউ বলতে পারেন যে, তাহলে পরিচয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?
মূলতঃ ছবি পরিচয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না। কারণ গলা কেটে ছবি পরিবর্তনের নজীর এদেশে বহু রয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিণ্ট পদ্ধতিই হচ্ছে ইসলাম সম্মত ও সবচেয়ে আধুনিক। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
তাই আমরা দেখতে পাই যে, ইহুদী-নাছারারা মুসলমানদেরকে ‘ছবিযুক্ত’ আইডি কার্ডের জন্য উৎসাহিত করলেও নিজেরা কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্টযুক্ত বা ছবিবিহীন আইডি কার্ড ব্যবহার করে। এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ছবিভিত্তিক আইডি কার্ড পরিহার করে ফিঙ্গার প্রিন্টভিত্তিক আইডি কার্ড তৈরি করা হোক!
অমুসলিম রাষ্ট্র সুইডেনে ছবিবিহীন আইডি কার্ড তৈরি করা সম্ভব হলে শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে হারাম ছবিভিত্তিক আইডি কার্ড তৈরি করার অপচেষ্টা কেন?
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন, “আমার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো, আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাকো। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।”
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “কিয়ামত দিবসে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ছবি আঁকে বা তোলে।” হাদীছ শরীফ-এ আরও ইরশাদ হয়েছে, “প্রত্যেক ছবি তুলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা জাহান্নামী।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
বর্তমান দেশ চলছে জরুরী আইনের অধীনে। দেশের সেনাবাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তথাকথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য তারা ইসলামে ছবি হারাম হওয়ার পরও ভোটার কার্ডের জন্য জনগণকে ছবি তুলতে বাধ্য করেছে এবং করছে। শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্যও ছবি তুলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে। ফিঙ্গার প্রিন্টের মত শরীয়তসম্মত পদ্ধতি থাকতেও তারা সেদিকে না এগিয়ে ছবির দিকে ঝুঁকছে। ছবিভিত্তিক আইডি কার্ডের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, ফিঙ্গার প্রিন্টভিত্তিক আইডি কার্ড এদিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে উপযুক্ত। যেমন- যমজ ব্যক্তির ক্ষেত্রে চেহারার মিল, বয়সের পরিবর্তনের সাথে সাথে চেহারার পরিবর্তন, দাড়ি-মোচ এবং চুলের কাটিং এর সাথে সাথে চেহারায় পরিবর্তন ইত্যাদি হলো ছবিভিত্তিক আইডি কার্ডের সীমাবদ্ধতা বা জটিলতা।
কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্টভিত্তিক আইডি কার্ড এসব সীমাবদ্ধতা ও জটিলতা থেকে মুক্ত। একজন ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট অন্য ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্টের সাথে কখনো মিলবে না। তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে কোন মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টে কোন পরিবর্তন আসে না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো চিন্তা করে অনেক উন্নত দেশে এখন আইডি কার্ডে আর ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফিঙ্গার প্রিন্ট পদ্ধতি বা অন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
উদাহরণঃ আমি বর্তমান সুইডেনের ‘স্টকহোম রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তে মাস্টার্স প্রোগ্রামের ছাত্র। আমি ‘ওয়াটার সিস্টেম টেকনোলজিতে পড়ছি। এই ইনস্টিটিউটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ব্যবহৃত হয় তাতে কোন ছবি নেই বা ছাত্র-ছাত্রীদের কোন ছবি ব্যবহৃত হয় না। কার্ডে শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রীদের নাম, জন্মতারিখ, কার্ড নম্বর, স্টুডেন্ট আইডি নম্বর, কার্ডের মেয়াদকাল উল্লেখ থাকে। কার্ডে একটি কোড নম্বর ব্যবহৃত হয়, যেটা কম্পিউটারভিত্তিক মেশিনে পানচ করলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিস্তারিত তথ্যাবলী কম্পিউটারে এসে পড়ে।
শুধু তাই নয়, ছাত্রÑছাত্রীরা যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং রিডিং রুম ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারে সেজন্য সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কম্পিউটার রুম এবং ডিপার্টমেন্টে ঢুকার জন্য একটি সিকিউরিটি কার্ড ব্যবহার করতে হয়। তাতে তো ছবি নেই-ই, এমনকি কোন নাম কিংবা কোন লিখাই নেই। শুধুমাত্র প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি করে কোড নম্বর বরাদ্দ থাকে। যারা সন্ধ্যা ৬টার পর ডিপার্টমেন্টে ঢুকতে চায় তারা এ সিকিউরিটি কার্ডটি দরজায় রক্ষিত মেশিনে পানচ করে নির্দিষ্ট কোড নম্বরটি টিপে দরজা খুলে ডিপার্টমেন্টে ও কম্পিউটার রুমে ঢুকতে পারবে। ডিপার্টমেন্টগুলোতে এদেশের মত কোন পাহারাদার কিংবা কেয়ারটেকার বা সিকিউরিটি গার্ড থাকে না। দরজা খুলার জন্য যখন সিকিউরিটি কার্ডটি পান্্চ করে কোড নম্বরটি টেপা হয়, তখন অটোমেটিক সেই ছাত্র-ছাত্রীর বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট কন্ট্রোল রুমে চলে যায় এবং কম্পিউটারে রেকর্ড হয়ে যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারে কোন ছাত্র বা ছাত্রী কখন কোন ভবনে ঢুকেছিল।
পাঠকদের সুবিধার্থে আমার আইডি কার্ড ও সিকিউরিটি কার্ডের ছবি বা নমুনা দেয়া হলো।
আইডি কার্ডের ছবি
ছবি ছাড়াও যে আইডি কার্ড করা সম্ভব এবং এর দ্বারা যে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি প্রতিষ্ঠানই নয় বরং একটি দেশও চালানো সম্ভব- এক্ষেত্রে সুইডেনের ‘স্টকহোম রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ এর ‘স্টুডেন্ট আইডি কার্ড’ পদ্ধতি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
একজন মুসলমান হিসেবে আমি আশা করব হারাম ছবিভিত্তিক আইডি কার্ডের পরিবর্তে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার মুসলিম প্রধান দেশের সরকার হিসেবে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন। মহান আল্লাহ পাক যার ভালাই চান, তাকে দ্বীনী ছহীহ্্ সমঝ দান করেন। (দৈনিক আল ইহসান ১৬ই জুলাই ’০৮ ঈসায়ী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল- ১. ছবি ছাড়াও ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে আইডি কার্ড বা পরিচয় পত্র বানানো সম্ভব। ২. বিধর্মীরা নিজেরা ছবির গুরুত্ব দেয় না অথচ মুসলমানদেরকে ছবিযুক্ত আইডি কার্ড করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, “ছবিযুক্ত আইডি কার্ড” মুসলমানদেরকে হারাম কাজে মশগুল করে দেয়া ইহুদী-নাছারাদের এক সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তারা ব্যবহার করছে দেশের সরকার ও দুনিয়ালোভী, ক্ষমতালোভী, উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী তথা পটিয়ার খারিজী, দেওবন্দী মৌলভী ও তার সমগোত্রীয়দেরকে।
পটিয়ার খারিজী দেওবন্দী মৌলবীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে পঞ্চমত: বলতে হয় যে, “তারা পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলাকে জায়িয বলেছে”, অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা হারাম ও কবীরা গুণাহ। উপরন্তু মহিলাদের জন্য ছবি তোলার গুনাহের সাথে সাথে বেপর্দার গুনাহও হবে। অর্থাৎ মহিলার ছবি যতজন পুরষ যতবার দেখবে ততটা কবীরাহ গুনাহ হবে। কাজেই মহিলারা ছবি তুললে ছবি তোলার গুনাহের পাশপাশি পর্দার ফরয তরক করার গুনাহও তাদের উপর বর্তাবে। অথচ শরীয়ত পর্দার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছে।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থঃ- “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুনাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন মিটিং মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে মিটিং-মিছিলের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+ ১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরাহ গুনাহ হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। আল্লাহ পাক না করুন সে যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবেনা। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয় তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা। তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪৪৭০০, যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪০৭৮০১টা।
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাত হাজার আটশ’ একটা।
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন মিটিং-মিছিলে যোগ দেয়, যে মিটিং-মিছিলে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ’ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশী হলে এবং বেশী সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
কাজেই যেসমস্ত মাওলানারা বেপর্দা হচ্ছে, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ্ করে থাকে তা আল্লাহ পাকই বেহ্তর জানেন।
এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة
অর্থঃ- “দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরকেও পর্দা করায়না।” (মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।
পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
النبى اولى بالمؤمنين من انفسهم وازواجه امهتهم.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ট এবং তাঁর আহলিয়াগণ তাদের মাতা।” (সূরা আহযাব-৬)
ما كان لكم ان تؤذوا رسول الله ولا ان تنكحوا ازواجه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর বেছাল শরীফের পর তাঁর আহলিয়াগণকে আক্বদ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।” (সূরা আহযাব-৫৩)
স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়াগণ হচ্ছেন মু’মিনগণের মাতা। যাদেরকে আক্বদ করা বা আক্বদের চিন্তা করাটাও উম্মতের জন্য হারাম ও কুফরী এবং সেটা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামীল এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর কাছে গুরুতর অপরাধ অর্থাৎ কুফরী। তারপরও উম্মুল মু’মিনীনগণ যে কিরূপ পর্দা করেছেন তা নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে অনুধাবন করা যায়।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ا ليس هو اعمى لا يبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما ا لستما تبصرانه.
অর্থঃ “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীনগণকে বললেন, আপনারা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদ)
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে ‘মু’মিনগণের মা’ বলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন। তাহলে সাধারণ লোকের জন্য পর্দার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। অর্থাৎ ইসলামে পর্দা করা ফরয। বেপর্দা হওয়া শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ।
কাজেই, মহিলাদের জন্য ছবি তোলা এবং সেই ছবি পর পুরুষকে দেখানো আরো কঠিন গুনাহ। অর্থাৎ সে দাইয়ূছ হিসেবে গণ্য হবে। আর দাইয়ূছের ফায়ছালা হলো সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সুতরাং কোন মহিলা ছবিযুক্ত আইডি কার্ড করলে যতজন পুরুষ যতটা দৃষ্টি দিবে ততটা কবীরা গুনাহ তার আমলনামায় লিখা হবে। নাউযুবিল্লাহ। তাই মহিলাদের জন্য ছবিযুক্ত আইডি কার্ড করা আরো কঠিন ও শক্ত গুনাহ।
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পটিয়ার খারিজী দেওবন্দী মৌলভীরা ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা প্রতারিত ও প্রভাবিত সরকারের নির্লজ্জ দালালী করে কিছু দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের লক্ষ্যে শরীয়তের সুস্পষ্ট হারামকে হালাল বলে কাট্টা কুফরী করেছে। কারণ আক্বাঈদের কিতাবে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, استحلال معصية كفر অর্থাৎ, “কোন গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল করা বা বলা কুফরী।” আর যে কুফরী করে সে ঈমানদার থাকতে পারে না বরং সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়ছালা হলো-
তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর এ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।
কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ ব্যভিচারী বা ব্যভিচারীনী যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে তাকে।
আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্তানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন