সংখ্যা: ১৭৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যায়) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭.  এবং ১৬১তম সংখ্যা থেকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পাশাপাশি ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায়  বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” এমন সব লেখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।  বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো- ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে।  স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই. ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে।  আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়। অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে। কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)        অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।  অনরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দর এ কুফরীমূলক বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول (ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্র নিকট শুনেছি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)  উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغير هم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ “তাওজীহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরাম বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলমায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজাম, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম- নাজায়িয হওয়ার অকাট্ট প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুণরায় প্রকাশ করা হলো।

 (পূর্ব প্রকাশিতের পর) ‘ছবি’ কাকে বলে?  ‘ছবির’ শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা! টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভি ইত্যাদি অবশ্যই ‘ছবির’ অন্তর্ভূক্ত

‘ছবি’ কে আরবীতে تصوير – তাছবীর صورة- ছূরত, تصاليب-তাছালীব, تماثيل – তামাছীল বলা হয়। আর যে ‘ছবি’ আঁকে বা তোলে তাকে مصور -মুছাব্বির’ বলা হয়। হাদীছ শরীফ, তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহের কিতাব সমূহেও ছবি-এর ক্ষেত্রে উল্লিখিত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن عيسى بن حميد قال سال عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.

অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত- হযরত ওকবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

 عن جابر قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الصورة فى البيت وهى ان يصنع ذلكى.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিযি ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭)

عن جابررضى الله  تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمربن الخطاب زمن الفتح وهوا بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يدخلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে হুকুম করলেন, তিনি যেন পাথর দিয়ে ক্বাবা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন।

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বাবা ঘরের মুর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলেন না। (আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯)

عن ابى عثمان قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان ابن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثيل فامربه فحكى.

অর্থঃ হযরত আবু উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, লুবাবাহ তার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, তার মাতা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খেদমতে ছিলেন, আর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন। অতঃপর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আদেশে ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা হলো। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

 عن عائشة رضى الله تعالى عنها حدثته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يتركى فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.

অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

عن ابى حجيفة رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب التغى ولعن اكل الربى وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور.

অর্থঃ হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাহার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ‘মুছাব্বির’ অর্থাৎ ছবি অংকন করে, এদের সবার ওপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত দিয়েছেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১) অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবসমূহেও ‘ছবি’র ক্ষেত্রে ضورة-تصوير ইত্যাদি শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشدالتحريم وهم من البائر سواء سنعه لما يمتهن اولغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط اودينار اودرهم اوفلس او اناء او حائط.

অর্থঃ ‘তাওজীহ্’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ হারাম) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। চাই ওটাকে যত¦ বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানায়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ্র সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম। (উম্দাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া পৃঃ ৩৭৮, আয্ জাওয়াজির  ২য় জিঃ, পৃঃ৩৩)

وهذه الاحاديت صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضافيه وما من لم بقصدبهاالعبادة ولمضاهاة فهو فاسق صاح ذنب كبير.  অর্থঃ উক্ত হাদীছসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে॥ যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানায়ে থাকে তবুও সে ফাসেক হবে এবং কবীরাহ্ গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (শরহে মুসলিম, নববী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃঃ ৩৭৮)

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام شديدالتحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكورفى الاحاديث سواء صنعه فى ثوب اوبساط اودينار اودرهم.

অর্থঃ আমাদের মাশায়েখগণ ও ওলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ্ গুনাহ্। কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে কি টাকা॥পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকনা কেন তা সমান কথা। (মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ পৃঃ ৩৭৯, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, পৃঃ১০৫)

جاءت الاحاديث الصحبحة الصريحة بالنهى عن صنا عة التماثيل وعن تصوير ما فيه روح سواء اكان انسافا ام حيوانا ام طيرا.

 অর্থঃ ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে। ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম। (ফিকহুস সুন্নাহ ৩য় জিঃ, পৃঃ ৪৯৮)

واما تصوير الحيوان ان كانت كاملة الاعضاء فانها لاتحل (يعنى حرام)

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, যদি তা পূর্ণ দেহ বিশিষ্ট হয়। (কিতাবুল ফিক্হ আলা মাযাহিবিল আরবায়াহ ২য় জিঃ, পৃঃ৪১) হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ‘ছবি’কে আরবীতে تصرير – তাছবীর, صورة -ছূরত تصاليب-তাছালীব, تماثيل তামাছীল বলা হয়। যার অর্থ হচ্ছে- ছবি, প্রতিকৃতি, সদৃশ্য, মূর্তি, প্রতিমূর্তি ইত্যাদি।  প্রশ্ন হচ্ছে তবে কি শরীয়তে সব কিছুর ছবি, প্রতিকৃতি, সদৃশ্য, মূর্তি, প্রতিমূর্তি অঙ্কণ করা, তৈরী করা বা বানানো নিষেধ? না শরীয়তে সবকিছুর ছবি অঙ্কণ করা বা তৈরী করা হারাম বা নিষিদ্ধ নয়। শুধুমাত্র প্রাণীর (যেমন-মানুষ, গরু, ছাগল, পাখি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদির) ছবি, প্রতিকৃতি, মূর্তি, প্রতিমূর্তি তৈরী করা, আঁকা, তোলা হারাম ও নিষিদ্ধ।  পক্ষান্তরে প্রাণহীন বস্তুর (যেমন-পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, তরু-লতা ইত্যাদির) ছবি আঁকতে বা তুলতে শরীয়তে কোন বাধা বা নিষেধ নেই। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, عن سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئكى بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لابد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.

অর্থঃ হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি তাঁর নিকটবর্তী হল। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং আল্লাহ্ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবি গুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

جاءت الاحاديث الصحيحة الصريحة بالنهى عن صنا عة التماثي وعن تصوير ما فيه روح سواء أكان انسانا ام حيوانا ام طيرا.

অর্থঃ ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে যে ছবি বা মূর্তি তৈরী করা নিষেধ করা হয়েছে তা মূলতঃ প্রাণীর ছবি বা মূর্তি। ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ সবগুলোই স্পষ্ট হারাম। (ফিকহুস সুন্নাহ ৩য় জিঃ, পৃঃ ৪৯৮) অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে যে تصوير বা صورة নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা হচ্ছে- تصوير الحيوان বা الحيوان صورة অর্থাৎ প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি। এখন প্রশ্ন হলো-‘তাছবীর, ছূরত বা ‘ছবি’ কাকে বলে? ছবির শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভি ইত্যাদিতে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী ‘ছবি’ কিনা? মূলতঃ টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভিতে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী অবশ্যই ছবির অন্তর্ভূক্ত। কেউ কেউ ছবির শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা না জানার কারণে এবং টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভি সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত ইলম না থাকার কারণে বলে থাকে যে, টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভিতে দৃশ্যমান দৃশ্যাবলী ছবি নয়।  (নাউযুবিল্লাহ) তাদের এ বক্তব্য ও ধারণা সম্পূর্ণই ভুল, অবান্তর ও দলীলবিহীন। বস্তুত ‘ছবির’ শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন তুলে ধরলে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হবে যে, টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভিতে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী অবশ্যই ‘ছবি’। তাই নিম্নে ‘ছবির’ সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো। ছবির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা  আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ ব্যতীত অন্য যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন, যদি কোন বস্তু বা জীব যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়, তবে সেই আকার আকৃতিটিকে শরীয়তের দৃষ্টিতে উহার ছবি বলে। পক্ষান্তরে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্তু বা জীব যেখানেই যে অবস্থায়ই থাকুক, আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ বা উভয়ের মাধ্যমে যদি তা যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয় তবে সেই আকার আকৃতিটি ছবি নয়।          ছবির ধারনাকে ভালভাবে বোঝানোর জন্য আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয় আলোচনা করা হল। (ক) আলোর  প্রতিফলন ঃ- আলোকরশ্নি যখন বায়ু বা অন্য কোন স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায়, তখন দুই মাধ্যমের বিভেদ তল থেকে কিছু পরিমান আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। আলোর বাধা পেয়ে এই ফিরে আসাকে ‘আলোর প্রতিফলণ’ বলে।       আরও সুক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করলে বলা যায় যে আলো হচ্ছে এক প্রকার ঊষবপঃৎড়সধমহবঃরপ ধিাব এই ধিাব এর নির্দিষ্ট ঋৎবয়ঁবহপু থাকে। আলোর ক্ষুদ্রতম অংশকে বলে ‘ফোটন’ (চযড়ঃড়হ)। এই আলো যখন কোন বস্তুর উপর পড়ে তখন সেই বস্তু থেকে অসংখ্য প্রতিফলিত ‘ফোটন’ বের হয়। যাদের ঋৎবয়ঁবহপু ভিন্ন রকম। ফলে আমরা বস্তুটির বিভিন্ন অংশকে বিভিন্ন রকম দেখতে পাই। অর্থাৎ বস্তুটিকে আমরা হুবহু ঐ বস্তুর মত দেখতে পাই। আলোর এই প্রতিফলণ নির্ভর করে প্রতিফলকের গুণাগুণের উপর। এগুলো হল (১) প্রতিফলকের স্বচ্ছতা ও মসৃনতা (২) আলোর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করা এবং (৩) প্রতিফলকটির আলো শোষন না করার ক্ষমতা । অর্থাৎ কোন বস্তু যত বেশী স্বচ্ছ ও মসৃণ হবে এবং সেটাতে যদি আলো ভেদ না করতে পারে এবং আলো শোষন করার ক্ষমতা যত কম হবে, সেই বস্তু তত ভাল ‘আলোর প্রতিফলণ’ ঘটাতে পারে। আলোর প্রতিফলণ যত ভাল হবে প্রতিফলিত আলোর ঋৎবয়ঁবহপু তত কাছাকছি হবে। (খ) আলোর প্রতিসরণ ঃ- আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় দুই মাধ্যমের বিভেদ তলে আলোকরশ্মি দিক পরিবর্তন করে। একে আলোর প্রতিসরণ বলে। একই মাধ্যমে ঘনত্বের তারতম্যের কারণেও প্রতিসরণ হয়ে থাকে।     আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরনের ব্যবহারঃ-  (১) আয়না, স্থির পানি, মসৃণ ধাতব পৃষ্ঠ ইত্যাদিতে আলোর প্রতিফলন হয়। স্থির পানি, মসৃন ধাতব পৃষ্ঠ (যেমন ঃ- চকচকে লোহা) ইত্যাদি প্রতিফলকের চেয়ে রূপালী প্রলেপ দেয়া আয়না বেশী ভাল প্রতিফলকের কাজ করে। ফলে সূর্যের আলো আয়নার মধ্যে পড়ে অনেকটা একই ঋৎবয়ঁবহপু  তে প্রতিফলিত হয়। (অবশ্য ১০০% নয়) । মূলতঃ আয়না এত ভাল প্রতিফলক যার মধ্যে অল্প আলো পড়লেও সেটা প্রতিফলিত হতে পারে। ফলে সূর্যের আলো যখন কোন বস্তুর উপর পড়ে, তখন সে বস্তু থেকে যে বিভিন্ন ঋৎবয়ঁবহপু এর ফোটন বের হয়। সেটা যদি আবার আয়নার মধ্যে পড়ে তবে এই পুনরায় প্রতিফলিত আলোর ফোটনের ঋৎবয়ঁবহপু একই হয়। ফলে কোন বস্তুকে সরাসরি যে রকম দেখি, আয়নার মধ্যে সেটাকে একই রকম দেখি।        মূল কথা হল, কোন বস্তুকে সরাসরি দেখা এবং আয়নার মধ্যে দেখার মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। এক্ষেত্রে  শুধুমাত্র প্রতিফলণের সংখ্যা একবার বৃদ্ধি পায়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসুল হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গামলার পানির মধ্যে এবং দর্পনে নিজ চেহারা মুবারক দেখেছেন।      কাজেই আয়না, পানি এবং এ জাতীয় মসৃণ পৃষ্ঠে আামরা যা দেখি, তা কখনও ‘ছবি’ হতে পারেনা। (২) পেরিস্কোপের মাধ্যমে দূরবর্তী বস্তু বা জীবকে কাছে বা বড় এবং স্পষ্ট দেখা যায়। এই যন্ত্রে আলোর প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ উভয়টিই ব্যবহৃত হয়। ম্যাগনিফাইং গ্লাসে এবং চশমার মাধ্যমে যথাক্রমে ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা এবং অস্পষ্ট বস্তুকে স্পষ্ট করে দেখা হয়। এখানেও ‘আলোর প্রতিসরণ’ ব্যবহৃত হয়।  অনুবীক্ষন যন্ত্রেও (গরপৎড়ংপড়ঢ়ব) আলোর প্রতিসরণের কারণে বস্তুর আসল আকারের চেয়ে অনেক বড় একটি চুড়ান্ত অবাস্তব প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়।  দূরবীক্ষণ যন্ত্র (ঞবষবংপড়ঢ়ব) যার দ্বারা অনেক দূরবর্তী বস্তু খালী চোখে দেখা যায়, তাতে আলোর প্রতিফলণ ও প্রতিসরণ দু’ পদ্ধতিই প্রয়োগ করা যায়। এজন্য দূরবীক্ষণ যন্ত্র দু’ প্রকার ঃ- (১) প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র (জবভৎধপঃরহম বষবংপড়ঢ়ব)  (২) প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র (জবভৎধপঃরহম বষবংপড়ঢ়ব) (গ)  প্রতিবিম্বঃ- কোন বিন্দু থেকে নিঃসৃত আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হয়ে যদি দ্বিতীয় কোন বিন্দুতে মিলিত হয় বা দ্বিতীয় কোন বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়, তাহলে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্র্রথম বিন্দুর প্রতিবিম্ব (ওসধমব) বলে।     (ঘ) ক্যামেরা (ঈধসবৎধ)ঃ- এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে বস্তুর নেগেটিভ চিত্র পাওয়া যায়। যাকে পরে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দ্বারা পজিটিভ বা প্রকৃতচিত্র তৈরী করা হয়। (ঙ) টেলিভিশন (ঞবংবারংরড়হ)ঃ- টেলিভিশনের মাধ্যমে শব্দ শোনার সাথে সাথে বস্তুর ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বৃটিশ বিজ্ঞানী লজি বেয়ার্ড ১৯২৩ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। ১৯৪০ সালে টি,ভি বর্তমান অবস্থায় উন্নত হয়। ঞ.ঠ/ঈষড়ংবফ ঈরৎপঁরঃ ঞ.ঠ/ঠরফবড় ঈধংংবঃঃব জবপড়ৎফবৎ/ঠরফবড় ঈধংংবঃঃব ঢ়ষধুবৎ ইত্যাদির কার্যাবলীকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা ঃ- (১) ঞৎধহংসরংংরড়হ  বা প্রেরন (২) গবফরঁস বা মাধ্যম (৩) জবপবঢ়ঃরড়হ বা গ্রহন ঞ.ঠ. এবং ঠ.ঈ.জ বা ঠ.ঈ.চ এর ক্ষেত্রে প্রথমে কোন বস্তুর ছবি তুলে সেই ছবির বিভিন্ন অংশের, আর ঈষড়ংবফ ঈরৎপঁরঃ ঞ.ঠ. এর ক্ষেত্রে কোন বস্তুর সরাসরি বিভিন্ন অংশের প্রতিফলিত ফোটনের ঋৎবয়ঁবহপু আনুযায়ী একধরনের ঊষবপঃৎরপধষ ঝরমহধষ তৈরী হয়। সেই ঝরমহধষ কে আরও চৎড়পবংংরহম এর পর ঞৎধহংসরঃ করা হয়। ঞ.ঠ এর ক্ষেত্রে ঞৎধহংসরঃ করা হয় বাতাসে। আর ঠ.ঈ.জ এবং ঈষড়ংবফ ঈরৎপঁরঃ ঞ.ঠ. এর ক্ষেত্রে তারের মধ্যে। মাধ্যম বাতাসই হোক আর তারই হোক সেটা ৎবপবরাবৎ (অর্থাৎ ঞ.ঠ.) এ যখন আসে তখন সেটা ৎবপবরাব করার পর কিছু চৎড়পবংংরহম করা হয়, এই ঝরমহধষ গুলো ঞ.ঠ. তে অবস্থিত একটি ঊষবপঃৎড়হরপ এঁহ কে নিয়ন্ত্রন করে। ফলে এই এঁহ টি ঞ.ঠ. এর পর্দার যে অংশে যতটুকু ঊষবপঃৎড়হ ছাড়লে হুবহু ঞৎধহংসরঃ করা ছবির মত হবে সে অংশে ততটুকু ইলেকট্রন ছাড়ে। এই ঊষবপঃৎড়হ গুলো রাসায়নিক প্রলেপ পতিত হয়ে উজ্জল ও অনুজ্জল বিন্দুর সমম্বয়ে ছবি তৈরী করে। এই ছবি ক.গ.এর পর্দায় দেখা যায়। অর্থাৎ ঞ.ঠ/ঠ.ঠ.জ/ঠ.ঈ.চ/ঈষড়ংবফ ঈরৎপঁষঃ ঞ.ঠ. সবক্ষেত্রেই পর্দায় যা আসছে সেটা সুস্পষ্ট এবং বিশেষভাবে অঙ্কিত ছবি।         অনেকে অজ্ঞতাবশঃত টেলিভিশনকে পানি ও আয়নার সাথে তুলনা করে থাকে। মূলতঃ টেলিভিশন পানি ও আয়নার মত নয়। তারা টেলিভিশনে কিভাবে ছবি আসে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে অজ্ঞতাপ্রসূত ফতওয়া দিয়েছে যে টেলিভিশন আযানের মত। তাদের ফতওয়া সম্পূর্ণরূপেই ভুল ও পরিত্যাজ্য। সিনেমা/চলচ্চিত্র/ছায়াছবিঃ মুই ব্রীজ নামক বিজ্ঞানী ১৮৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্র তৈরী করে। সে একটি চলমান ঘোড়ার বিভিন্ন অবস্থানের ২৪টি ছবি তৈরী করেন। ছবিগুলোকে যখন দ্রুত চালানো হত, তখন ঘোড়াটা দৌড়াচ্ছে বলে মনে হত। ১৮৯৩ সালে টমাস এডিসন মুইব্রীজের আবিষ্কারকে আরও উন্নত করেন। সেই সর্বপ্রথম সবাক চলচ্চিত্র আবিষ্কার করে। চলচ্চিত্র প্রকৃতপক্ষে আলোকচিত্রেরই উন্নত সংস্করণ। কোন জিনিসের অনেকগুলো স্থির ছবি ধারাবাহিকভাবে ঋরষস  বা এক প্রকার স্বচ্ছ পদার্থের উপর সাজান হয়। যন্ত্রের (চৎড়লবপঃড়ৎ) মাধ্যমে আলোর প্রক্ষেপণের দ্বারা এই সকল ছবি বৃহত্তররূপে প্রতিবিম্বত হয়ে পর্দার (ঝপৎববহ) উপর পড়ে। প্রতিটি ছবি সেকেন্ডের সামান্যতম অংশ সময়ের জন্য স্থিরভাবে পর্দায় পড়ে এবং এটা মুছে যাওয়ার সাথে সাথে আর একটা পর্দার উপর পড়ে এবং এভাবে ক্রমাগত পড়তে থাকে।       চোখের মাধ্যমে যদি আমাদের মস্তিষ্কে কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব অনুভূত হয়, তবে সেটা মুছে যেতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন তার পূর্বেই যদি আর একটা প্রতিবিম্ব তৈরী হয়, তবে এই প্রতিবিম্বগুলোর পার্থক্য নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একারণেই চলচ্চিত্রের স্থির ছবিগুলোর পার্থক্য দর্শকের কাছে ধরা পড়েনা। দর্শকের কাছে মনে হয় একই ছবি এবং ছবিতে যা দেখান হয় তা বুঝি চলমান। মূলতঃ তা ঠিক নয়, বরং স্থির ছবিই একটার পর একটা আসে যায়। যে জন্য একে চলচ্চিত্র বলে। ছবির উপর আলোর প্রক্ষেপণের মাধ্যমে এর (ছবির) ছায়া পর্দার উপর নিক্ষিপ্ত হয়, সেজন্য চলচ্চিত্রকে ‘ছায়াছবিও’ বলে।    উপরোক্ত আলোচনার পর বলা যায় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সচলতা বা স্থিরতা, উরৎবপঃ ঞবষব ঈধংঃ বা ওহফরৎবপঃ ঞবষব ঈধংঃ ঋরষস এর দ্বারা তৈরী বা  ঋরষস ব্যতীত তৈরী, স্থায়ীত্বতা বা অস্থায়িত্বতা ইত্যাদি কোনটাই ছবি হওয়ার জন্য শর্ত নয়। ছবির উপরোক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ ব্যতীত অন্য যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন, যদি কোন বস্তু বা জীব যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়, তবে সেই আকার আকৃতিটিকে শরীয়তের দৃষ্টিতে উহার ছবি বলে। পক্ষান্তরে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্তু বা জীব যেখানেই যে অবস্থায়ই থাকুক, আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ বা উভয়ের মাধ্যমে যদি তা যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয় তবে সেই আকার আকৃতিটি ছবি নয়।    অতএব, ‘ছবি’ কে আরবীতে تصوير (তাছবীর) صورة (ছূরত) تصاليب (তাছালীব) تماثيل (তামাছীল) বলা হয়। ইংরেজীতে চযড়ঃড়, চরপঃৎঁৎব, ওসধমব ইত্যাদি বলা হয়।    কিন্তু যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এবং যে কোন পদ্ধতিতেই তৈরী, আঁকা বা তোলা হোক না কেন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা ও ফতওয়া মোতাবিক সমস্ত প্রাণীর ছবিই তৈরী করা, তোলা, আঁকা, দেখা, রাখা ইত্যাদি নাজায়িয হারাম।       প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মধ্যে কোন প্রকার ইখতিলাফ (মতভেদ) নেই। কেননা ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে একাধিক ছহীহ হাদীছ শরীফ, হাদীছের শরাহ, সমস্ত মশহুর ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে সরাসরি উল্লেখ রয়েছে। অসমাপ্ত পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন।

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)