পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৫৭

সংখ্যা: ২৭৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত চার মাযহাব হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উনাদের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম উনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

 

সম্মানিত শরীয়ত অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের ফায়ছালা মতে প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান সকলের জন্য সম্মানিত চার মাযহাব উনাদের যেকোনো একটি সম্মানিত মাযহাব উনাদের অনুসরণ করা যেরূপ ফরয-ওয়াজিব তদ্রুপ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মাযহাব পরিবর্তন করা বা এক মাযহাবের অনুসারী হয়ে অন্য মাযহাবের উপর আমল করা জায়িয নেই।

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফ উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ উনার’ টিকায় এবং ইমাম তাহাবী ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের হাশিয়াতে লিখেন-

عَلَيْكُمْ يَا مَعْشَرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ اِتِّبَاعُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْـمُسَمَّاةِ بِأَهْلِ السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ فَأِنَّ نَصْرَةَ اللهِ وَحِفْظَه وَتَوْفِيْقَه فِيْ مُوَافِقَتِهِمْ وَخَذَلًالَّه وَسَخْطَه وَمَقْتَه  فِيْ مُـخَالِفَتِهِمْ وَهٰذِهِ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ قَدْ اِجْتَمَعَتِ الْيَوْمَ فِيْ مَذْهَبِ أَرْبَعٍ وَهُمُ الْـحَنَفِيُّوْنَ وَالْـمَالِكِيُّوْنَ وَالشَّفِعِيُّوْنَ وَالْـحَنَبِلِيُّوْنَ رَحِـمَهُمُ اللهُ وَمَنْ كَانَ خَارِجًا مِّنْ هٰذِهِ الْأَرْبَعَةِ فَهُوَ أَهْلُ الْبِدْعَةِ وَالنَّارِ.

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আপনারা নাজিয়া (নাজাতপ্রাপ্ত) দলকে অনুসরণ করে চলুন যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ নামে মশহূর। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য, হিফাযত ও তাওফীক্ব অর্জন সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব এবং মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি, গযব ও অপদস্ততা উনাদের সাথে বিরোধিতার কারণেই। আর ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত’ বর্তমান যুগে চার মাযহাবে বিভক্ত। উনারাই হলেন সম্মানিত হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব। আর যারাই বর্তমানে এ ৪ মাযহাব বহির্ভূত তারাই বিদয়াতী ও জাহান্নামী। (তাম্বিহ ৪৬৬ পৃষ্ঠা)

অনুসরণীয় সকল ইমাম মুজতাহিদ উনারা এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, অনুসরণীয় ও গ্রহণযোগ্য মাযহাব হচ্ছে চারটি। ১। হানাফী ২। মালিকী ৩। শাফিয়ী ৪। হাম্বলী।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ইমাম আ’যম ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত মালিকী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।

নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে উনাদের পরিচিতি ও সাওয়ানেহ উমরী মুবারক তুলে ধরা হলো-

সম্মানিত শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক:

ইমাম হযরত আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইদরীস আশ-শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামেই বেশী পরিচিত। উনাকে ‘শায়খুল ইসলাম’ হিসাবেও সম্বোধন করা হয় এবং তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রধান চারটি মাযহাব উনার একটি শাফিয়ী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম সেরা ছাত্র এবং তিনি নাজারাহ উনার  গভর্ণর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পবিত্র বিলাদত শরীফ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ১৫০ হিজরী সনে … অর্থাৎ ৭৬৭ সালের অগাস্ট মাসে ফিলিস্তিনের গাজা নামক শহরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

নসব নামা:

উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক ইদরীছ ও সম্মানিত দাদা উনার নাম মুবারক আব্বাস। উনার উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ্। নসবনামা: মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস বিন আববাস বিন উছমান বিন শাফিয়ী আল কুরায়েশী আশ শাফিয়ী আল মাক্কী”। উনার বংশ কুরাইশ বংশের অন্যতম আবদে মানাফ বিন কুসাই এর সাথে মিলিত হয়েছে। তাই ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বংশের মূল এবং নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  বংশ মুবারক একই। এ জন্য তিনি আল-মুত্তালাবী বলেও পরিচিত। তিনি কুরাইশ বংশের তাই কুরায়েশী এবং উনার দাদা “শাফে” ছাহাবী এর দিকে সম্পৃক্ত করায় শাফিয়ী, মক্কায় প্রতিপালিত হওয়ায় মাক্কী বলে পরিচিতি লাভ করেন ।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপাধি হল, ‘নাছিরুল হাদীছ’ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সাহায্যকারী বা সহায়ক, কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ সংগ্রহ, সংকলন, বিশেষ করে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার যাচাই-বাছাইয়ে তিনি সর্ব প্রথম অবদান রাখেন। তিনিই সর্ব প্রথম পবিত্র হাদীছ শরীফ শাস্ত্রের নীতিমালা প্রণয়নে কলম ধরেন ‘আর রিসালাহ ও আল উম্ম’ গ্রন্থদ্বয়ে। অতঃপর সে পথ ধরেই পরবর্তী ইমামগণ অগ্রসর হন।

বাল্যকাল:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাত্র ২ বছর বয়সেই সম্মানিত পিতা উনাকে হারিয়ে ইয়াতীম হয়ে যান। সম্মানিত পিতা উনার ইন্তিকালের পর অভিভাবকহীনতা ও অসচ্ছলতা ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। সম্মানিত পিতা ইন্তিকাল করে গেলে বিচক্ষণ মা উনাকে দু’বছর বয়সে পিতৃভুমি ইয়ামেনে নিয়ে আসেন । তিনি উনার ছেলেকে পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্ত করানোয় মনোনিবেশ করান এবং ৭ বছর বয়সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্ত করে ফেলেন। এর পাশাপাশি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে  সম্মানিত আলিম উনাদের শরণাপন্ন হয়ে বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ ও মাসয়ালা-মাসায়িল মুখস্থ করতে শুরু করেন। এর কয়েক বছর পরেই তিনি উনার মায়ের সাথে পবিত্র মক্কা শরীফ তাশরীফ নেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষানুরাগী এবং কঠোর জ্ঞান সাধনা করার ফলে ৭ বছরে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয এবং ১০ বছরে মুয়াত্তা হাদীছ শরীফ গ্রন্থ (সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মুয়াত্তা শরীফ” সর্বপ্রথম প্রামান্য হাদীসগ্রন্থ) হিফয করে ১৮ বছর বয়স মুবারক থেকে ফতওয়া প্রদান শুরু করেন। সাথে সাথে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আরবী পন্ডিতদের কাছে আরবী কবিতা ও ভাষা জ্ঞানে পূর্ণ পাণ্ডিত্ব লাভ করেন।

পবিত্র মদীনা শরীফ সফর:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছোটবেলায় একবার পবিত্র মদীনা শরীফ সফর করেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি সংকলিত গ্রন্থ মুয়াত্তা মুখস্ত করে উনাকে শুনান, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোট বয়সে এই প্রজ্ঞা ও প্রতিভা দেখে তিনি অভিভূত হন। এবং উনাকে স্নেহের পাত্র বানিয়ে নেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট জ্ঞান চর্চা শুরু করেন। পবিত্র মদীনাতুল মুনাওওয়ারার পর তিনি ইয়ামানে শিক্ষার উদ্দেশ্যে বের হন। সেখানে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন। জনসমাজে উনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তিনি বিদ্বেষীদের প্রকোপে পড়েন, ফলে তিনি ইয়ামেন ত্যাগ করে আবার পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন।

ইরাক সফর:

সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরাকে দু’বার সফর করেন, প্রথমবার রাজনৈতিক কারণে খলীফা হারুনুর রশীদ উনাকে ইরাকে জোরপূর্বক পাঠান । সেখানে গিয়ে তিনি ইরাকের প্রসিদ্ধ জ্ঞানীদের নিকট শিক্ষা সমাপন করে আবার পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন এবং পূর্ণদমে দরস-তাদরীস ও ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজে একটানা নয় বছর আত্মনিয়োগ করেন। সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর ১৯৫ হিজরীতে সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবারো ইরাক সফর করেন। প্রথম সফর ছিল জ্ঞান শিক্ষা গ্রহণের আর এ সফর হলো ইলম হাছিলের পাশাপাশি শিক্ষাদানের জন্য। সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, হযরত হুসাইন কারাবাসী আমার কাছে আসলেন এবং বললেন যে, আমাদের মাঝে একজন পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ (আহলু হাদীছ) এসেছেন চল আমরা উনার কাছে গিয়ে একটু পরীক্ষা করি। হযরত আবূ ছাওর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমরা উনার কাছে গেলাম, হযরত হুসাইন কারাবাসী ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করলেন। জবাবে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উদ্ধৃতি মুবারক দিয়ে জবাব দিতে থাকলেন এভাবে রাত হয়ে গেল। তখন আমরা উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অগাধ পান্ডিত্ব দেখে আশ্চর্য হলাম, শেষটায় আমরা উনার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। এ সফরেই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাৎ মুবারক করেন।

মিশর সফর:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার  ইরাকে অবস্থান যেমনি প্রশংসনীয় তেমনি আবার অপরদিক হতে কালো মেঘ নেমে আসতে লাগল। মু’তাযিলারা রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ দখল করায় কথিত খলীফা হারুণসহ সে সময়ের আববাসীয় খলীফাগণ ফালসাফা ও তর্কবিদ্যা-মানতিকে প্রভাবিত হয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ মাখলুক বা মুতাজিলা বিশ্বাস পোষণ করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমাম যেমন- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের উপর নির্যাতন শুরু করে, যার ফলে বাধ্য হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরাক ত্যাগ করে মিশরে চলে আসেন।

মিশরে আগমন করলেই মিশরবাসী উনাকে অভিনন্দন জানান ও মিশরের বিখ্যাত মসজিদ হযরত আমর বিন আল আস মসজিদে কিছু আলোচনা পেশ করলে সকলেই উনার আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে যান এবং তারা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, মিশরের বুকে এমন প্রতিভাবান ব্যক্তির কখনও আগমন ঘটেনি, যিনি কুরাইশ বংশোদ্ভুত, উনার ছলাতের ন্যায় উত্তম ছলাত আদায় করতে কাউকে দেখিনি, উনার চেহারা মুবারকের ন্যায় সুন্দর চেহারা মুবারক খুব কমই আছে, উনার বক্তব্য ও বাচন ভঙ্গির মত আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধূর কাউকে দেখিনি। সুবহানাল্লাহ!

উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ গবেষণা ও চর্চায় যারা হানাফী বা মালিকী মাযহাব উনার অনুসারী ছিলেন, উনাদের অনেকেই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে ইসলাম চর্চার সুযোগ লাভে ধন্য হন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত মিশরেই অবস্থান করেন এবং উনার মূল্যবান গ্রন্থসমূহ সেখানেই সংকলন করেন।

আকীদাহ্-বিশ্বাস:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামায়াহ উনার ইমাম। যিনি ছিলেন পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনদের একনিষ্ঠ অনুসারী, আক্বীদাহ্-বিশ্বাস, আমল-আখ্লাক্ব, ইবাদাত-বন্দেগী সকল ক্ষেত্রে তিনি সব কিছুর উর্দ্ধে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ উনাদেরকে প্রাধান্য দিতেন এবং আঁকড়ে ধরতেন, তিনি কালাম পন্থী যুক্তিবাদী বিদয়াতীদের ঘোর বিরোধী ছিলেন। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের আকীদাহ্-বিশ্বাসই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আকীদাহ্-বিশ্বাস।

শিক্ষকবৃন্দ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় যুগে বিভিন্ন দেশে অগণিত আলিম হতে শিক্ষালাভ করেন। তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য:

(১) ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত- ১৯৮ হিঃ) (মাক্কী)।

(২) ইমাম ইসমাঈল বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত ১৭০ হিঃ) (মাক্কী)।

(৩) ইমাম মুসলিম বিন খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত ১৭৯ হিঃ) (মাক্কী)।

(৪) ইমাম মালিক বিন আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত ১৭৯ হিঃ) (মাদানী)।

(৫) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত ২০০ হিঃ) (মাদানী)।

(৬) ইমাম হিশাম বিন ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি – (ওফাত ১৯৭ হিঃ) (ইয়ামানী)।

(৭) ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ – রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৯৭ হিঃ) (কুফী)।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্রবৃন্দ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার  ছাত্র হওয়ার যারা সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের সংখ্যা ও বর্ণনা দেয়া অসম্ভব । কারণ তিনি যে দেশেই ভ্রমণ করেছেন এবং শিক্ষার আসরে বসেছেন সেখানেই অগণিত ছাত্র তৈরী হয়েছে।

নিম্নে কয়েকজন প্রসিদ্ধ ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হল:

(১) ইমাম রবী বিন সুলায়মান আল মাসরী।

(২) ইমাম ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল মুযানী আল মাসরী।

(৩) ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ্ আলফাকীহ আল মাসরী।

(৪) ইমাম আবূ ইয়াকূব ইউসুফ বিন ইয়াহইয়া আল মাসরী।

(৫) ইমাম আবুল হাসান বিন মুহাম্মদ আয্যাফরানী।

আলিম সমাজের মন্তব্য:

সম্মানিত দ্বীন ইসলামে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি উনার ইলম মুবারক, বুদ্ধি মেধাকে কাজে লাগিয়ে ইসলাম উনাকে প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন।

সম্মানি দ্বীন ইসলাম বিশেষজ্ঞদের চোখে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি:

(১) ইমামুল মাদীনাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন : “আমি এ যুবক ইমাম শাফিয়ী এর মত অধিক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান আর কোন কুরাইশীকে পাইনি।” সুবহানাল্লাহ!

(২) ইমাম আবূল হাসান আয্যাফরানী বলেন : ‘‘আমি ইমাম শাফিয়ী উনার ন্যায় অধিক সম্মানী, মর্যাদাশীল, দানশীল, আল্লাহ ভীরু দ্বীনদার ও অধিক জ্ঞানী আর কাউকে দেখিনি’’ । সুবহানাল্লাহ!

(৩) ইমাম ইসহাক বিন রাহ্উয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন : আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ পবিত্র মক্কা শরীফে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গেলাম, উনাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলাম তিনি খুব ভদ্রতার সাথে সাবলীল ভাষায় সব প্রশ্নের জবাব দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

(৪) একদল আলিম বলেন: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হলেন স্বীয় যুগে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী জ্ঞানী মানুষ। সুবহানাল্লাহ!

(৫) ইমাম ইসহাক বলেন : আমি যদি উনার পবিত্র কুরআন শরীফ পান্ডিত্ব সম্পর্কে আগে অবগত হতাম তাহলে উনার কাছে শিক্ষার জন্য থেকে যেতাম। সুবহানাল্লাহ!

গ্রন্থাবলী

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রেখে গেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

(১) “কিতাবুল উম্ম” মূলতঃ এটি একটি হাদীছ শরীফ গ্রন্থ, যা ফিকহী পদ্ধতিতে স্বীয় সনদসহ সংকলন করেছেন, এটি একটি বিশাল গ্রন্থ। যা ৯টি বড় খন্ডে প্রকাশিত।

(২) “আর রিসালাহ” এটা সেই গ্রন্থ যাতে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উসূলে হাদীছ ও উসূলে ফিকহে সর্বপ্রথম কলম ধরেছেন।

(৩) ‘‘আহকামুল কুরআন’’।

(৪) ‘‘ইখতিলাফুল হাদীছ’’।

(৫) ‘‘ছিফাতুল আমরি ওয়ান্নাহী’’।

(৬) ‘‘জিয়াউল ইলম’’।

(৭) ‘‘বায়ানুল ফারয’’।

(৮) ‘‘ফাযাইলু কুরাইশ’’।

(৯) ‘‘ইখতিলাফুল ইরাকিয়ীন’’।

(১০) ইখতিলাফু মালিক ওয়া শাফিয়ী। ইত্যাদি আরো বহু গ্রন্থ রয়েছে।

পবিত্র বিছাল শরীফ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারী ২০৪ হিজরীর রজব মাসের শেষ দিন জুমআর রাত্রিতে ৫৪ বছর বয়স মুবারকে পৃথিবী হতে বিদায় গ্রহণ করেন অর্থাৎ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

অসমাপ্ত-(পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন)

 

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁ, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩২