সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আবূ আব্দুল্লাহ মুবাশ্বির
দাড়িদহ, বগুড়া

 

সুওয়াল:  “আলহামদু, সুবহানা, ইংশাআ ইত্যাদি যে শব্দ মুবারক সমূহ সাধারণতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত হয়; তা মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে এবং উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে ব্যবহার করাটা শরীয়তসম্মত হবে কি না, জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার শানে ব্যবহৃত উক্ত ছানা-ছিফতমূলক শব্দ মুবারক সমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুবারক শানে ব্যবহার করা অবশ্যই শরীয়ত সম্মত।

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি খ্বালিক্ব মালিক রব হিসেবে কায়িনাত মাঝে একক। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে কায়িনাত মাঝে একক।

এককথায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি খ্বালিক্ব হিসেবে যেমন একক মর্যাদার অধিকারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সমকক্ষ যেমন কেউ নেই তেমনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখলূক্ব হিসেবে এবং মাখলূক্বাতের মধ্যে একক মর্যাদার অধিকারী এবং উনার সমকক্ষও কেউ নেই। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরও সমকক্ষ কেউ নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক শানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَيْءٌ

অর্থ: উনার মতো কিছুই বা কেউই নেই। (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيُّكُمْ مِثْلِىْ

অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ আমার মতো? অর্থাৎ কেউই নেই। (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَسْتُ كَاَحَدٍ مِّنْكُمْ

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তোমাদের কারো মতো নই। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)

একইভাবে হযরত আহলে বাইতে রসূল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক শানে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ

অর্থ: হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোনো মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

মোটকথা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ পুরুষ- মহিলা আলাইহিমুস সালাম-আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অন্য পুরুষ কিংবা মহিলা উনাদের কারোই মতো নন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ.

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সাথে কাউকে তুলনা করা যাবে না। (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল উম্মাল ১২/১০৪,

অত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম মাক্বাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

জানা আবশ্যক, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু খ্বালিক্বে কায়িনাত মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। এছাড়া মহান আল্লাহ পাক উনার যত ছিফত মুবারক রয়েছেন সমস্ত ছিফত মুবারকের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! আর মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন। এছাড়া উনার সমস্ত ছিফত মুবারকের অধিকারী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত ছিফত বা গুণ মুবারক উনাদের গুণে গুণান্বিত সে বিষয়টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একদা হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে এ বলে সালাম মুবারক পেশ করলেন-

اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا أَوَّلُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا اٰخِرُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا بَاطِنُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا ظَاهِرُ قَالَ فَأَنْكَرْتُ ذَالِكَ عَلَيْهِ وَقُلْتُ يَا حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَيْفَ تَكُوْنُ هٰذِهِ الصِّفَةِ لِمَخْلُوقٍ مِّثْلِىْ وَهٰذِهٖ صِفَةٌ لَا تَكُوْنُ اِلَّا لِلْخَالِقِ جَلَّ وَعَزَّ قَالَ يَا حَبِيْبَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِعْلَمْ أَنَّ اللهَ تَعَالٰى أَمَرَنِـيْ أَنْ اُسَلِّمَ عَلَيْكَ بِـهٰذَا السَّلَامِ لِأَنَّه اِخْتَصَّكَ بِهٖ دُوْنَ جَمِيْعِ الْـخَلْقِ فَسَمَّاكَ بِالْأَوَّلِ لِأَنَّكَ اَوَّلُ الْأَنْبِيَاءِ أَلْقٰى نُوْرَكَ فِيْ صُلْبِ اَبِيْكَ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُمَّ نَقَلَكَ مِنْ صُلْبٍ إِلٰى صُلْبٍ إِلٰى اَنْ أَخْرَجَه فِيْ اٰخَرِ الزَّمَانِ وَسَـمَّـاكَ الْاٰخِرَ لِأَنَّكَ اٰخِرُ الْأَنْبِيَاءَ فِي الْعَصْرِ وَخَاتَـمُ النَّبِيِّيْنَ إِلٰى اٰخِرِ الدَّهْرِ وَسَمَّاكَ بِالْبَاطِنِ لِأَنَّه قَرَنَ اِسْـمَكَ مَعَ اِسْمِهٖ فِيْ سَاقِ الْعَرْشِ مِنْ قَبْلِ اَنْ يـَخْلُقَ أَبَاكَ حَضْرَتْ اٰدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِاَلْفَىْ عَامٍ ثُمَّ اَمَرَنِـىْ بِالصَّلَاةِ عَلَيْكَ فَصَلَّيْتُ يَا حَبِيْبَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَ عَامٍ بَعْدَ أَلْفِ عَامٍ حَتّٰـى بَعَثَكَ اللهُ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّدَاعِيًا إِلَى اللهِ بِإِذْنِهٖ وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا وَسَمَّاكَ بِالظَّاهِرِ لِأَنَّه أَظْهَرَكَ عَلٰى جَمِيْعِ الْأَدْيَانِ وَعَرَّفَ نُبُوَّتَكَ وَفَضْلَكَ وَشَرْفَكَ أَهْلَ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاشْتَقَ لَكَ اِسْـمًا مِّنْ اِسْـمِهٖ وَصِفَاتَه مِنْ صِفَاتِهٖ فَرَبُّكَ مَـحْمُوْدٌ وَأَنْتَ مُـحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ فَضَّلَنِيْ عَلٰى جَـمِيْعِ خَلْقِهٖ حَتّٰـى فِيْ اِسْمِيْ وَصِفَتِيْ.

অর্থাৎ, আসসালামু আলাইকা ইয়া আউওয়ালু, আসসালামু আলাইকা ইয়া আখিরু, আসসালামু আলাইকা ইয়া বাতিনু, আসসালামু আলাইকা ইয়া যাহিরু। এভাবে সালাম মুবারক পেশ করাটা আমার নিকট আশ্চর্যজনক মনে হলো, আমি ইরশাদ মুবারক করলাম, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! এ সমস্ত ছিফত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক আমার ক্ষেত্রে কিরূপে প্রযোজ্য হতে পারে? এ সমস্ত ছিফত মুবারক তো যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য প্রযোজ্য। তিনি বললেন, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জেনে রাখুন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি এভাবে সালাম মুবারক পেশ করতে আমাকে আদেশ মুবারক করেছেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে শুধু আপনাকে এরূপ মুবারক গুণে বিভূষিত করেছেন। আপনাকে ‘আউওয়াল’ আখ্যা মুবারক দিয়েছেন এজন্য যে, আপনিই হচ্ছেন সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের আদি বা প্রথম। আপনার নূর মুবারক উনাকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে দেয়া হয়। অতঃপর একজনের পর একজন ক্রমাগত স্থানান্তরিত করে এই শেষ যামানায় আপনাকে প্রকাশ করা হয়। আপনাকে ‘আখির’ আখ্যা মুবারক দেয়ার কারণ হচ্ছে, আপনি যামানার দিক দিয়ে সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষ এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আপনিই সর্বশেষ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আপনাকে ‘বাতিন’ বলা হয়েছে এ কারণে যে, আপনার সম্মানিত পূর্বপিতা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে আরশে আযীম উনার খুঁটির মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার সাথে আপনার নাম মুবারক সংযুক্ত করে রেখেছিলেন। পরে আপনার প্রতি আমাকে ছলাত (দুরূদ) শরীফ পাঠ করার জন্য আদেশ মুবারক করেন। আপনার প্রতি আমি হাজার হাজার বছর ধরে দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলাম যেই পর্যন্ত না মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে বাশীর বা সুসংবাদ দানকারী, নাযীর বা সতর্ককারী মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে উনার দিকে আহ্বানকারী ও সিরাজুম মুনীর বা উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আর আপনাকে ‘যাহির’ আখ্যা দিয়েছেন এজন্য যে, তিনি আপনাকে সমস্ত দ্বীন উনাদের উপর প্রাধান্য বা আধিপত্য দিয়ে এবং আপনার মুবারক নুবুওওয়াত, মর্যাদা ও মহিমাকে সমগ্র আসমান ও যমীনবাসীর নিকট সুবিদিত করেছেন। এবং তিনি উনার নাম মুবারক থেকে আপনার নাম মুবারক বিন্যাস করেছেন এবং উনার মুবারক গুণে গুণান্বিত করেছেন। তাই আপনার সম্মানিত রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন মাহমূদ এবং আপনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সমস্ত প্রশংসা সেই মহিমাময় মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য যিনি আমাকে সমস্ত সৃষ্টির উপর সার্বিকভাবে মহাসম্মানিত নূরুল কুদরত বা ওজুদ মুবারক হিসেবে ফযীলত মুবারক দান করেছেন সাথে সাথে আমার মহাসম্মানিত ইসম মুবারক এবং আমার মহাসম্মানিত ছিফত মুবারক অর্থাৎ আমার নাম মুবারককেও এবং আমার মুবারক গুণ-বৈশিষ্ট্যসমূহকেও সমস্ত সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল মালায ওয়াল ই’তিছাম)

উপরোক্ত বর্ণনা মুবারকের আলোকে প্রতিভাত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীয় গুণে গুণান্বিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যিনি খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত মুবারকের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক কায়িনাতবাসীকে করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও ছানা-ছিফত মুবারকের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে এবং উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক করার জন্য উম্মতকে আদেশ মুবারক করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত ও আনুগত্য করার ব্যাপারে আদেশ মুবারক করা হয়েছে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত ও আনুগত্য করার ব্যাপারে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। পাশাপাশি মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেও মুহব্বত ও আনুগত্য করার ব্যাপারে আদেশ মুবারক করা হয়েছে।

মূলকথা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত ঈমানদার হওয়া যায় না।

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে আদেশ মুবারক হয়েছে-

اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ

অর্থ: ঈমান আন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৬)

মুহব্বত করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَحِبُّوا اللهَ لِمَا يَغْذُوْكُمْ مِّنْ نّـعْمَةٍ وَّاَحِبُّوْنِـىْ لـِحُبّ اللهِ وَاَحِبُّوْا اَهْلَ بَــيْـتِـىْ لِـحُبّـىْ

অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো, কেননা তিনি তোমাদেরকে নিয়ামতের মাধ্যমে খাদ্য-সামগ্রী দিয়ে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমাকে মুহব্বত করো। আর আমার মুহব্বত পাওয়ার জন্য আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো। (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরাকে হাকিম, ত্ববারনী শরীফ, শু‘য়াবুল ঈমান, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পেতে হলে উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করতে হবে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত পেতে হলে উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করতে হবে।

আনুগত্য বা অনুসরণের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আদেশ মুবারক হয়েছে-

اَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য করো এবং মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করো এবং উলিল আমর তথা মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য বা অনুসরণ করো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)

উল্লেখ্য, হিদায়েত লাভের ক্ষেত্রে পবিত্র, নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিত্ব ছাড়া কেউ অনুসরণীয় হতে পারে না। আর পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা মুত্বহহার ও মুত্বহহির অর্থাৎ মহাপবিত্র এবং পবিত্রতা দানকারী।

প্রতিভাত যে, ঈমান, মুহব্বত, ইত্বাআত অর্থাৎ

اَطِيْعُوْا . اَحِبُّوْا. اٰمِنُوْا

প্রত্যেকটি শব্দ মুবারক যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত হয়েছে। ঠিক একইভাবে মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত হয়েছে। অনুরূপভাবে মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক শানেও ব্যবহৃত হয়েছে।

উল্লেখ্য, اٰمِنُوْا (আমিনূ) শব্দ মুবারকটি اَحِبُّوْا (আহিব্বূ) শব্দ মুবারকের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত রয়েছে। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত না করা পর্যন্ত কেউ ঈমানদার হিসেবে গন্য হবে না।

স্মরণীয় যে-

(ছানাউন)ثَنَاء (মাদহুন)  مَدْحٌ (শুকরুন) شُكْرٌ

حَمْدٌ  (হামদুন)

ইত্যাদি শব্দ মুবারকসমূহ মুরাদিফ তথা সমার্থবোধক শব্দ এবং প্রতিটি শব্দ মুবারক ছানা-ছিফত বা প্রশংসার অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ سَعِيدِن الْـخـُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ لَّـمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَـمْ يَشْكُرِ اللهَ

অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে মানুষের শোকর বা প্রশংসা করতে পারে না, সে মহান আল্লাহ পাক উনারও শোকর বা প্রশংসা করতে পারে না। (তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ)

সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে বায়দ্বাবীতে সূরা ফাতিহা শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে-

تَقُوْلُ حَـمِدْتُّ زَيْدًا

অর্থ: তুমি বলে থাক, আমি যায়েদ নামক ব্যক্তির প্রশংসা করেছি।

অনুরূপ سُبْحٌ (সুবহুন) ও سُبْحَانَ (সুবহানা) সমার্থবোধক শব্দ মুবারক দুখানিও পবিত্র ও প্রশংসা অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন সূরা ফাতাহ শরীফ উনার ৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا

অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করো সকাল ও সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে। (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

একইভাবে شَاءَ (শাআ) শব্দ মুবারকের ব্যবহার মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত বান্দা বা উম্মতের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে। যেমন সূরা হামীম সাজদাহ শরীফ উনার ৪০ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক শানে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِعْمَلُوْا مَا شِئْتُمْ

অর্থ: আপনাদের যা ইচ্ছা আমল করুন।

এছাড়াও شَاءَ (শাআ) শব্দ মুবারক উনার রুপান্তরিত শব্দ মুবারক সূরা বাক্বারাহ শরীফ: আয়াত শরীফ নং ৫৮, পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: আয়াত শরীফ নং ১৫৫, সূরা কাহাফ শরীফ: আয়াত শরীফ নং ৭৭ ইত্যাদি সহ আরো বহু আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে।

জানা আবশ্যক,

اِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالٰـى

কালাম বা বাক্য মুবারকের অর্থ হচ্ছে, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি চান। আর যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চান বলা হয় তাহলে তার আরবী কালাম বা বাক্য কি হবে সেক্ষেত্রে তো এটাই বলতে হবে-

اِنْ شَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আর যদি হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম চান বলা হয় তাহলে তো উনার নামই বলা হবে। যেমন-

اِنْ شَاءَ مُرْشِدٌ قِبْلَهْ عَلَيْهِ السَّلَامُ

অর্থ: যদি হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি চান।

আর যদি হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম চান তাহলে উনার ক্ষেত্রে বলা হবে:

اِنْ شَائَتْ اُمُّ الْاُمَم ِعَلَيْهَا السَّلَامُ

অর্থ: যদি হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি চান।

উক্ত বিষয় সমূহ সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হওয়ার কোন কারণই হতে পারে না।

কেননা মানুষ পরস্পর কথোপকথনের মধ্যে তো বলেই থাকে, আপনি চাইলেই সেটা হবে। অথবা বলে, তিনি চাইলে সেটা হবে ইত্যাদি। তাহলে যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা এবং মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খলীফা বা প্রতিনিধি উনার শানে যদি বলা হয়, তিনি যদি চান তাহলে অবশ্যই তা হবে। সেটা শরীয়ত উনার খিলাফ হবে কেন? সেটা মোটেও শরীয়ত উনার খিলাফ নয়। বরং সম্পূর্ণরূপে সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান সম্মত।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, হযরত বাহলুল দানা রহমতুল্লাহি আলাইহি নামক একজন মজ্জুব ওলীআল্লাহ ছিলেন। তিনি উনার শায়খ বা মুর্শিদ  ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার জিজ্ঞাসা করলেন, হুযূর! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে তিনি বললেন, খুব ভাল। হযরত বাহলুল দানা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জানতে চাইলেন, কিরূপ ভাল। জওয়াবে উনার শায়খ বললেন, এরূপ ভাল যে, আমি যা চাই সেটাই হয়। আর আমি যেটা চাই না সেটা হয়না।” সুবহানাল্লাহ!

মুরীদ সবিনয়ে আরজ করলেন। হুযূর! বেয়াদবী ক্ষমা চাই। এটা কেমন হাল? আপনি যা চান তাই হয়, আর যা চান না, তা হয় না? দয়া করে এর হাক্বীক্বত বর্ণনা করবেন কি?

তখন শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি বললেন, মূলতঃ আমি আমার মতকে মহান আল্লাহ পাক উনার মতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান আমি সেটাই চাই। তাই সেটাই হয়। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেটা চাননা, আমিও সেটা চাইনা। তাই সেটা হয় না। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, সুওয়ালে উল্লেখিত প্রশংসামূলক শব্দ মুবারক সমূহ মহাম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে ব্যবহার করাটা সম্পূর্ণরূপেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান সম্মত।

অতএব, উক্ত কালাম বা বাক্যসমূহ একসাথে এভাবে বলা যেতে পারে-

اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَاَهْلِ بَيْتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

سُبْحَانَ اللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَاَهْلِ بَيْتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

اِنْ شَاءَ اللهُ وَرَسُوْلُه وَاَهْلُ بَيْتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অথবা আলাদাভাবেও বলা যেতে পারে। যেমন-

 (۱) اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ.

اَلْـحَمْدُ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

اَلْـحَمْدُ لِاَهْلِ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

اَلْـحَمْدُ لِـحَضْرَتْ‌ اِمَامِ الْاُمَمِ  عَلَيْهِ السَّلَامُ.

اَلْـحَمْدُ لِـحَضْرَتْ اُمِّ الْاُمَم ِعَلَيْهَا السَّلَامُ

۲) سُبْحَانَ اللهِ.

سُبْحَانَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

سُبْحَانَ اَهْلِ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

سُبْحَانَ حَضْرَتْ اِمَامِ الْاُمَمِ عَلَيْهِ السَّلَامُ

سُبْحَانَ حَضْرَتْ اُمِّ الْاُمَم ِعَلَيْهَا السَّلَامُ.

۳) اِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالٰـى

اِنْ شَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

اِنْ شَاءَ اَهْلُ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. اِنْ شَاءَ حَضْرَتْ اِمَامُ الْاُمَمِ عَلَيْهِ السَّلَامُ.

اِنْ شَائَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْاُمَم ِعَلَيْهَا السَّلَامُ.

উপরে উল্লেখিত দলীল সমৃদ্ধ আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয়েছে যে, আলহামদু, সুবহানা, ইংশাআ ইত্যাদি শব্দ মুবারক মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকেও ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। এমনকি ইলমে তাছাওউফ উনার দৃষ্টিতে এভাবে বলা অনেক ক্ষেত্রেই আদবের অন্তর্ভুক্ত। তা নাজায়িয, হারাম, কুফর, শিরক, বিদআত ইত্যাদি কোনটিই নয়। এ সবের কোন একটি কেউ বললে তাকে তার বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। অন্যথায় সে মিথ্যাবাদী ও লা’নতগ্রস্ত তথা মালউন হিসেবে গন্য হবে। নাউযুবিল্লাহ!

মুহম্মদ রহমতুল্লাহ, চান্দিনা. কুমিল্লা, মুহম্মদ হাফিজুল্লাহ, সাভার, ঢাকা

সুওয়াল: বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত জনৈক মালানা উল্লেখ করেছে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন অথচ উনার একজন আহলিয়া তিনি মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতেন, এমনকি তিনি যেদিন ঘাতকের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন তখনও উনার সেই আহলিয়া মসজিদে ছিলেন। এ ব্যাপারে নাকি  মুসনাদে আহমদ ও মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে, সত্যিই কি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া মসজিদে গিয়ে নামায পড়তেন?

জাওয়াব: ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল। ফার্সীতে একটি প্রবাদ আছে, “নীম হেকীম খতরে জান, নীম মোল্লা খতরে ঈমান।” অর্থাৎ আধা কবিরাজ বা ডাক্তার মানুষের জীবন নাশ করে আর আধা মোল্লা অর্থাৎ মালানা-মুফতে মানুষের ঈমান নষ্ট করে।

যার কারণে নামধারী মালানা, মুফতী, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িজ, মুফাসসিরে কুরআন, শায়খুল হাদীছ ইত্যাদি খেতাবধারী হলেই তাকে অনুসরণ করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত খিতাবধারী ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ অনুসারী না হবে অর্থাৎ তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী না হবে, পবিত্র সুন্নত উনার পাবন্দ না হবে এবং সর্বপ্রকার হারাম কাজ থেকে বেঁচে না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না।

প্রকাশ থাকে যে, মহিলাদের জন্য স্বীয় ঘর বা বাড়ীর বাইরে বের হওয়াটা আমভাবেই নিষেধ। তাদেরকে ঘর-বাড়ীতে অবস্থান করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَقَرْنَ فِىْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْـجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى

অর্থ: মহিলারা তোমরা তোমাদের ঘরে বা বাড়ির মধ্যে অবস্থান করো এবং তোমরা জাহিলী যুগের মহিলাদের মতো বেপর্দাভাবে বাইরে বের হয়ো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা   মুসলমান মহিলাদেরকে সাধারণতঃ ঘর-বাড়ী থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

জানা আবশ্যক, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরুতে মহিলাদের জন্য নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়াটা মুবাহ ছিল। যেমন এ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুাবরক করেন-

لَا تَمْنَعُوْا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ، وَلْيَخْرُجْنَ إِذَا خَرَجْنَ تَفِلَاتٍ أَيْ غَيْرِ مُتَطَيِّبَاتٍ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দীদেরকে মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে তোমরা নিষেধ করো না, তবে তারা সুগন্ধি ব্যবহার করা ব্যতীত সাধারণভাবে যদি যায়, যেতে পারবে। (মুহীতুল বুরহানী, শুবহাতুল ওয়ারদূদ ইত্যাদি)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার পর ফিতনার আশঙ্কায় মহিলাদেরকে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করা হয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنْكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِيْنَ

অর্থ: আর আমি অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের সম্পর্কেও জানি এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরবর্তীদের সম্পর্কেও জানি। (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা (মুসলমান) মহিলাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। নাযিল হওয়ার কারণ স্বরূপ বলা হয়, যখন মুনাফিকরা নামাযের জামায়াতে আসা মহিলাদের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করতে শুরু করে দিল তখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে না আসার জন্য উনাদেরকে উৎসাহ প্রদান করতঃ ইরশাদ মুবারক করেছেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةُ الْـمَرَأَةِ فِـيْ دَارِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِـهَا فِـيْ مَسْجِدِهَا وَصَلَاتُـهَا فِـيْ بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِـهَا فِـيْ دَارِهَا

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহিলাদের বাড়ির নামায তাদের মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বাড়ীর নামায অপেক্ষা ঘরের নামায উত্তম। (বাদায়িউস সানায়ি’ ৩য় খণ্ড ৮৭ পৃষ্ঠা, আহকামুল কুরআন জাসসাস ১ম খণ্ড ৩৩ পৃষ্ঠা)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ حُمَيْدٍ اِمْرَأَةِ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، أَنَّـهَا جَاءَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّيْ أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ، قَالَ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّيْنَ الصَّلَاةَ مَعِيْ، وَصَلَاتُكِ فِيْ بَيْتِكِ خَيْرٌ لَّكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِيْ حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِّنْ صَلَاتِكِ فِيْ دَارِكِ، وَصَلَاتُكِ فِيْ دَارِكِ خَيْرٌ لَّكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ مَسْجِدِ قَوْمِكِ، وَصَلَاتُكِ فِيْ مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَّكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ مَسْجِدِيْ قَالَ: فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَـهَا مَسْجِدٌ فِيْ أَقْصٰى شَيْءٍ مِّنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهٖ، فَكَانَتْ تُصَلِّيْ فِيْهِ حَتّٰى لَقِيَتِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ

অর্থ : হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাজির হয়ে আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সাথে নামায পড়ার আমার খুবই ইচ্ছে হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি জানি, আপনি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করেন। কিন্তু জেনে রাখুন, বদ্ধ ঘরে আপনার নামায পড়া খোলা ঘরে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা ঘরের নামায বারান্দায় পড়া নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। আর মহল্লার মসজিদের নামায আমার মসজিদের (মসজিদে নববী শরীফ) নামাযের চেয়ে উত্তম। এই ইরশাদ মুবারক শ্রবণের পর হযরত উম্মু হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি স্বীয় ঘরের সবচেয়ে নির্জন কোণে বিশেষভাবে নামাযের জায়গা তৈরি করেন এবং ইনতিকাল পর্যন্ত সেখানেই নামায পড়তে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা শরীফ, ছহীহ ইবনে হিব্বান শরীফ, সূত্র: আত তারগীব- ১/১৩৫)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ  حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَائِشَةَ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَأَنْ تُصَلِّيَ الْمَرْأَةُ فِيْ بَيْتِهَا خَيْرٌ مِّنْ أَنْ تُصَلِّيَ فِي حُجْرَتِـهَا، وَلَأَنْ تُصَلِّيَ فِيْ حُجْرَتِـهَا خَيْرٌ مِّنْ أَنْ تُصَلِّيَ فِي الدَّارِ، وَأَنْ تُصَلِّيَ فِي الدَّارِ خَيْرٌ مِّنْ أَنْ تُصَلِّيَ فِي الْمَسْجِدِ

অর্থ : হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, মহিলাদের বদ্ধ কামরার মধ্যে নামায পড়া খোলা কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর খোলা কামরার নামায বারান্দার নামাযের চেয়ে উত্তম। আর বারান্দার নামায মহল্লার মসজিদের নামাযের চেয়ে উত্তম। (তবারানী শরীফ- সূত্র: কানযুল উম্মাল শরীফ- ৮/২৬৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ أُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ قَالَ خَيْرُ مَسَاجِدِ النِّسَاءِ قَعْرُ بُيُوْتِـهِنَّ.

      অর্থ : উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসা হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ হলো তাদের বাড়ির গোপন প্রকোষ্ঠ। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা, মুসতাদরাকে হাকিম, সূত্র: আত তারগীব)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلٰوةُ الْـمَرْأَةِ تَفْضُلُ عَلٰى صَلَاتِـهَا فِـى الْـجَمْعِ خَـمْسًا وَّعِشْرِيْنَ دَرَجَةً

অর্থ : হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে একা নামায পড়ার মধ্যে পঁচিশগুণ ফযীলত বেশি রয়েছে। (দায়লামী শরীফ ২য় খণ্ড: ৩৮৯ পৃষ্ঠা)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ সমূহ উনাদের উপর ভিত্তি করেই আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার সম্মানিত খিলাফতকালে মহিলাদেরকে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিষেধ করেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّه  نَـهَي النِّسَاءَ عَنِ الْـخُرُوْجِ إِلَـى الْـمَسَاجِدِ فَشَكَوْنَ إِلٰ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَائِشَةَ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَقَالَتْ أُمُّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةُ عَائِشَةُ الصِّدِّيْقَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ لَوْ عَلِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا أَذِنَ لَكُمْ فِي الْـخُرُوْجِ.

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে বাইরে বের হয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। অতঃপর মহিলা ছাহাবীগণ উনারা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আয়িশাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে পেশ করলে তিনি জাওয়াবে বলেন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি (আপনাদের যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন) যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদের এ অবস্থা দেখতেন তাহলে তিনিও আপনাদেরকে নামাযের উদ্দেশ্যে ঘরে থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিতেন না। (মুহীতুল বুরহানী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ  حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ عَائِشَةَ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ لَوْ رَاٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ النِّسَاءُ مَا نَرٰى لَـمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِـيْ اِسْرَائَيْلَ

অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহিলাদের যে অবস্থা আমরা দেখছি তা যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দেখতেন তাহলে অবশ্যই তিনিও উনাদেরকে (মসজিদে আসতে) নিষেধ করতেন যেরূপ বনী ইসরায়ীল মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (ছহীহ ইবনে খুযাইমাহ, ছহীহ বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ عُمَرَةَ قَالَتْ : سَـمِعْتُ حَضْرَتْ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةَ عَائِشَةَ الصِّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ تَقُوْلُ : لَوْ رَاٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ بَعْدَه  لَـمَنَعَهُنَّ الْـمَسَاجِدَ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِـيْ اِسْرَائَيْلَ

অর্থ: হযরত উমরাতা রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বর্ণনা করেন, আমি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর মহিলাদের মধ্যে যে আধুুনিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা যদি তিনি দেখতেন তাহলে অবশ্যই তিনিও উনাদেরকে (মসজিদে আসতে) নিষেধ করতেন যেরূপ বনী ইসরায়ীল মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। (ছহীহ ইবনে খুযাইমাহ)

স্মরণীয় যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে আসার ব্যাপারে নিষেধ করার পর এবং উক্ত নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সত্যায়ন বা তাছদীক্ব করার পর সমস্ত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তা মেনে নেন। যার কারণে পরবর্তীতে এ ফতওয়ার উপর ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় যে, মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। কেননা উক্ত ফতওয়ার বিরোধিতা করার অর্থ হচ্ছে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বিতীয় খলীফাসহ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বিরোধিতা করা। যা স্পষ্ট কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাঊযুবিল্লাহ!

এখন সুওয়ালে উল্লেখিত মুসনাদে আহমদ ও মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবদ্বয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দুখানা ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করা হলো।

প্রথম বর্ণনা:

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ ، قَالَ  قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَأْذَنَتْ أَحَدَكُمُ اِمْرَأَتُه  أَنْ تَأْتِيَ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَمْنَعْهَا قَالَ  وَكَانَتِ اِمْرَأَةُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ تُصَلِّيْ فِي الْمَسْجِدِ فَقَالَ لَـهَا إِنَّكِ لَتَعْلَمِيْنَ مَا أُحِبُّ فَقَالَتْ  وَاللَّهِ لاَ أَنْتَهِيْ حَتّٰى تَنْهَانِيْ قَالَ فَطُعِنَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَإِنَّـهَا لَفِي الْمَسْجِدِ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমাদের কারো আহলিয়া মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে, তখন সে যেন তাকে নিষেধ না করে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার একজন সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি মসজিদে নামায পড়তেন। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বললেন, আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি কি পছন্দ করি। উত্তরে তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! আপনি আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি বিরত হবো না। বর্ণনাকারী আরো বলেন, অতঃপর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন ঘাতক কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হলেন তখনও উক্ত সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি মসজিদে উপস্থিত হলেন।

মুসনাদে আহমদ শরীফ কিতাবের মুছান্নিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার বর্ণনা এবং আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফরূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যামানার বর্ণনা অর্থাৎ উভয় বর্ণনা একত্রিত করে উল্লেখ করেছেন। (এক) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা; যাতে নামাযের জন্য মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ ছিল না বরং  অনুমতি ছিল। (দুই) আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার যামানা; যাতে নামাযের জন্য মহিলাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ ছিল। এ কারণেই তিনি উনার সম্মানিতা আহলিয়া উনাকে বলেন, আপনি তো জানেন, আমি কি পছন্দ করি অর্থাৎ আমি মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদে না যাওয়াকে পছন্দ করি। এরপর থেকে উনার সম্মানিতা আহলিয়া আর কখনো নামাযের জন্য মসজিদে যাননি। যার প্রমাণ নিম্নে বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন ঘাতক কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত হন সে সংবাদ পেয়ে উনার সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে গিয়েছিলেন। কিন্তু নামায পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি যাননি। বরং আমীরুল মু’মিনীন আলাইহিস সালাম উনার অবস্থা জানার জন্য গিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় বর্ণনা:

حَضْرَتْ عَبْدُ الرَّزَّاقِ عَنْ مَعْمَرٍ عَنِ الزُّهْرِيِّ أَنَّ عَاتِكَةَ بِنْتَ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ وَكَانَتْ تَـحْتَ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَانَتْ تَشْهَدُ الصَّلَاةَ فِي الْـمَسْجِدِ وَكَانَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَقُوْلُ لَـهَا وَاللهِ إِنَّكِ لَتَعْلَمِيْنَ مَا اُحِبُّ هٰذَا فَقَالَتْ وَاللهِ لَا أَنْتَهِيْ حَتّٰى تَنْهَانِـيْ قَالَتْ إِنِّـيْ لَا أَنْـهَاكَ قَالَ فَلَقَدْ طُعِنَ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَوْمَ طُعِنَ وَإِنَّـهَا لَفِي الْـمَسْجِدِ

অর্থ: হযরত আব্দুর রজ্জাক¦ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মা’মার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত আতিক্বা বিনতে যায়িদ বিন আমর বিন নুফাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অধীনে তথা আহলিয়া থাকাবস্থায় মসজিদে নামাযের জন্য উপস্থিত হতেন। আর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! নিশ্চয়ই আপনি জানেন যে, আমি এটা অর্থাৎ আপনার মসজিদে নামাযের জন্য উপস্থিত হওয়াটা আমি পছন্দ করি না। অতঃপর হযরত আতিক্বা বিনতে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আপনি আমাকে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি বিরত হবো না। তিনি আরো বললেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (আপনার পছন্দনীয় বিষয়টি) অবজ্ঞা বা প্রত্যাখ্যান করবো না। অর্থাৎ আপনার পছন্দনীয় বিষয়টি মেনে চলবো। বর্ণনাকারী আরো বলেন, অতঃপর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যখন ঘাতক দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হন তখন (উনার অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য) উক্ত সম্মানিতা আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি মসজিদে গিয়েছিলেন।

উক্ত বর্ণনাদ্বয় থেকে প্রতিভাত হয়েছে যে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত আতিক্বা বিনতে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহসি সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্বে নামাযের জন্য মসজিদে উপস্থিত হতেন। কিন্তু তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর উনার সম্মানিতা আহলিয়া তিনি আর কখনও নামাযের জন্য মসজিদে উপস্থিত হননি।

অতএব, উপরোক্ত বর্ণনাদ্বয় উনাদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করার পর সকল মহিলা ছাহাবী ও তাবিয়ী উনারা মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং উনার সম্মানিতা আহলিয়া তিনিও যাওয়া বন্ধ করেন। পরবর্তীতে কেউ কখনও যেতে চাইলে সেটাও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নিষেধাজ্ঞারোপ করেন এবং মহিলাদের মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত রাখেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ কিতাবের বিখ্যাত শরাহ উমদাতুল ক্বারী ৯ খণ্ড ৪৭৭ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-

وَكَانَ اِبْنْ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْمُ يَـحْصِبُ النِّسَاءِ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ يُـخْرِجُهُنَّ مِنَ الْـمَسْجِدِ

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহিলাদেরকে মসজিদ হতে বের করার জন্য পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

অনুরূপ বর্ণনা ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকেও বর্ণিত রয়েছে। যেমন মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বাহ ২য় খণ্ড ৩৮৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ عَمْرِو الشَّيْبَانِـىْ قَالَ رَاَيْتُ اِبْنَ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَـحْصِبُ النِّسَاءَ يـُخْرِجُهُنَّ مِنَ الْـمَسْجِدِ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ.

অর্থ: হযরত আবূ আমর শায়বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি দেখেছি যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহিলাদেরকে মসজিদ হতে বের করার জন্য পাথর ছুঁড়ে মারতেন।

প্রঙ্গতঃ উল্লেখ্য, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত আতিক্বা বিনতে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মসজিদে উপস্থিত হওয়া ও নামায পড়া সংক্রান্ত বিষয়ে দুখানা বর্ণনার মধ্যে একখানা বর্ণনা উনার বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। অথচ তিনি নিজেই মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ার ক্ষেত্রে যারা বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতেন উনাদের অন্যতম। এ বর্ণনা দ্বারাও স্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, মহিলাদের নামাযের জন্য মসজিদে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্বেকার। পরবর্তীকালের নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, সুওয়ালে বর্ণিত বাতিল ফিরক্বার উক্ত ব্যক্তিটি মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার পক্ষে দলীল হিসেবে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত আতিক্বা বিনতে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মসজিদে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টিকে উল্লেখ করেছে। অথচ হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে যিনি দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় খলীফা; যার সম্পর্কে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, আমার পর কেউ নবী হলে তিনি হতেন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম। এবং যার সুন্নত বা আদর্শ মুবারক তথা আদেশ নিষেধ মুবারক পালন করাটা অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে, তিনি যে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন সেটা সে উল্লেখ করেনি। শুধু তাই নয়, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক বর্ণনাও সে উপেক্ষা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ উনার বর্ণনা মুবারক প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বর্ণনারই শামিল। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি যে ফায়ছালা মুবারক প্রদান করতেন উক্ত মুবারক ফায়ছালাই প্রদান করেছেন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি।

স্মরণীয় যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অন্যতম একটি উছূল তথা মূলনীতি হচ্ছে-

اِذَا تَعَارَضَ الْـحَلَالُ وَالْـحَرَامُ غَلَبَ  الْـحَرَامُ

অর্থ: যখন হালাল ও হারাম তথা জায়িয ও নাজায়িয সংক্রান্ত বিষয়ে দ্বন্দ্ব হয় তখন হারাম বা নাজায়িয বিষয়টিই প্রধান্য লাভ করবে অর্থাৎ  হারাম বা নাজায়িযের পক্ষেই ফতওয়া হবে। (ই’লাউস সুনান)

অতএব, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক তাছদীক্ব বা সত্যায়ন ও মুবারক ফায়ছালার পর আর কারো কোন বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে মহিলাদের জন্য মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া নিষেধ; এ ফতওয়াই গ্রহণ করতে হবে এবং আমল করতে হবে। এর বিপরীত ফতওয়া গ্রহণ করা ও আমল করা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী এবং ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার কারণ।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর ৪৬)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক:

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন:

মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বদীম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদিও হাদেছ, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সংযুক্ত হওয়ার কারণে তিনিও ক্বদীম উনার অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করার পর উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরত মুবারক উনার মধ্যে রাখেন। সুবহানাল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْاَنْصَارِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ يَا رَسْوُلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاَبِـىْ اَنْتَ وَاُمِّىْ اَخْبِرْنِـىْ عَنْ اَوَّلِ شَىْءٍ خَلَقَهُ اللهُ تَعَالـٰى قَبْلَ الْاَشْيَاءِ قَالَ يَا حَضْرَتْ جَابِرُ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اِنَّ اللهَ تَعَالـٰى قَدْ خَلَقَ قَبْلَ الْاَشْيَاءِ نُوْرَ نَبِيِّكَ مِنْ نُّوْرِهٖ فَجَعَلَ ذٰلِكَ النُّوْرُ يَدُوْرُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللهُ تَعَالـٰى.

অর্র্থ: “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সম্মানিত পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, দয়া করে আমাকে এ বিষয়ে সংবাদ মুবারক দান করুন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত কিছুর পূর্বে সর্বপ্রথম আপনার যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নবী এবং রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক উনাকে অত্যান্ত মুহব্বত মুবারক উনার সাথে সম্মানিত সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ঘূর্ণায়মান ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুননিয়্যাহ, শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, ফতওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ ইত্যাদী)

সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেমন কায়িনাতের কোনো কিছুর মুহ্তায নন, ঠিক তেমনিভাবে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুর মুহ্তায নন। সুবহানাল্লাহ! তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার পরিপূর্ণ ক্বায়িম মাক্বাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার যেমন কোনো কোনো সময় কোনো কোনো মহাসম্মানিত শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটে থাকেন, ঠিক তেমনিভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও কোনো কোনো সময় কোনো কোনো মহাসম্মানিত শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন- দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করা, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল আযহার মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কোল মুবারক-এ) সম্মানিত তাশরীফ মুবারক রাখা, সম্মানিত সফর মুবারক করা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াতী এবং রিসালতী শান মুবারক প্রকাশ করা, আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ করা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হিজরত মুবারক করা, সম্মানিত জিহাদ মুবারক করা, সম্মানিত বিদায় হজ্জ মুবারক করা, দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর বিভিন্ন সময় উম্মতের বিভিন্ন হাজত পূরণ করা, উম্মতদেরকে দায়িমী দীদার মুবারক হাদিয়া করা এবং দায়িমীভাবে সর্বত্র হাযির-নাযির থাকা ইত্যাদি উনার বিশেষ বিশেষ মহাসম্মানিত শান মুবারক উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সুবহানাল্লাহ! তবে এক এক সময় উনার এক এক মহাসম্মানিত শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী
বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা
মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, আমরা প্রথমত: প্রমাণ করেছি যে, মসজিদের ভিতরে, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায পড়াও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতে কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। তাই চেয়ারে বসে নামায পড়া সুস্পষ্ট বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম।

তৃতীয়ত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ ক্বিয়াম করার সামর্থ থাকা সত্বেও চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে ফরয ক্বিয়াম তরক হয়। আর নামাযে ফরয তরক করলে নামায বাতিল  হয়।

চতুর্থত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে অনেক সময় চেয়ারে টেক লাগানো হয়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে দোহরানো ওয়াজিব।

পঞ্চমত: আমরা প্রমাণ করবো যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারো যুগেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে নামায পড়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। বিধায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়।

বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে নামায পড়ার তিন ছুরত।  অর্থাৎ (১) সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। (২) দাঁড়াতে না পারলে যমীনে বসে নামায আদায় করতে হবে। (৩) যমীনে বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।

স্মরণীয় যে, নামাযে দাঁড়ানো বলতে কোন কিছুর মধ্যে ঠেস বা হেলান না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানোকে বুঝানো হয়েছে। বসা বলতে নামাযে যেভাবে বসার নিয়ম; যমীনে বসা, অপরাগবশত চার জানু হয়েও বসতে পারে। একইভাবে শোয়া বলতে সাধারণভাবে শোয়াকে বুঝনো হয়েছে।

উল্লেখ্য, নামাযে দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এ তিন অবস্থা দ্বারা সরাসরি যমীনের উপর দাঁড়িয়ে যমীনের উপর বসে এবং যমীনের উপর শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। আর যমীন বলতে সরাসরি যমীন অথবা ঘরের মেঝে অথবা বিছানা হতে পারে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে নামায আদায় করা যায়।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِكُمْ

অর্থ: খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

অর্থ: “যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

বলার অপেক্ষা রাখে না, পবিত্র নামায হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِىْ

অর্থ: পবিত্র নামায আদায় করো আমার যিকিরের উদ্দেশ্যে। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

কাজেই, নামায পড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো, যমীনে বসা ও শোয়ার যে তরতীব বা নিয়ম পবিত্র কুরআন শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে সেভাবে দাঁড়িয়ে, যমীনে বসে ও শুয়ে নামায আদায় করতে হবে।

নিম্নে উল্লেখযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে কিছু আলোচনা করা হলো

قَوْلُه  تَعَالَى: {اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ} قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ  وَحَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا وَحَضْرَتْ اَلنَّخْعِيْ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ قَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ : هَذَا فِي الصَّلَاةِ يُصَلِّيْ قَائِمًا فَإِنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে  সাইয়্যিদুনা হযরত র্ক্রাামাল্লাহু ওয়াজহাহু ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিস সালাম, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা, হযরত ইমাম নাখয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ক্বাদাদা রহমাতুল্লাাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন; এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবে। অতঃপর কেউ যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে শুয়ে নামায পড়বে।” (কাজেই উক্ত আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য খোদ নামায । কেননা পবিত্র নামাযই মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির।)” (তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম- ইমাম হাফিয আবূ মুহম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আবী হাতিম রাযী- ৪র্থ খণ্ড ১০৫৬ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুন নাশর মাকতাবাতুল আছরিয়া)

)يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ) قَالَ حَضْرَتْ اَلْبَغْوِيْ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ حَضْرَتْ عَلِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اَلنَّخْعِيْ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ قَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ :هٰذَا فِىْ الصَّلَاةِ يُصَلِّىْ قَائِمًا فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَاِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে ইমাম বাগবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,  সাইয়্যিদুনা হযরত র্ক্রাামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা, হযরত ইমাম নাখয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ক্বাদাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন; এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। কাজেই ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবে। অতঃপর কেউ যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে বসে নামায আদায় করবে। আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে শুয়ে নামায পড়বে।”

(তাফসীরে মাযহারী, মুহম্মদ ছানাউল্লাহ আল উছমানী আল মাযহারী পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ১ম খণ্ড ৬৪৩ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারু ইহ্ ইয়ায়িত তুরাছিল আরাবিয়্যাহ্, বৈরুত)

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ …وَيَدُلُّ هٰذَا عَلٰى أَنَّ الْمُصَلِّيْ يُصَلِّيْ قَائِمًا، فَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَّـمْ يَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ، كَمَا ثَبَتَ لَدَىِ الْأَئِمَّةِ السِتَّةِ مِنْ حَدِيْثِ حَضْرَتْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ: كَانَتْ بِيْ بَوَاسِيْرُ، فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الصَّلَاةِ فَقَالَ: صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১) উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ …….এটাই দালালত করেন যে, নিশ্চয়ই মুছল্লিগণ ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করবেন। অতঃপর যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি যমীনে বসে নামায আদায় করবেন।

আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হন, তাহলে তিনি শুয়ে নামায পড়বেন। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছয়জন ইমাম উনাদের নিকট ছাবেত আছে যে,   হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি অশ্ব রোগে আক্রান্ত ছিলাম। এজন্য আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামায আদায় করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন, যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন তাহলে বসে আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে আদায় করবেন।” (আত্ তাফসীরুল মুনীর ফীল আকীদাহ্ ওয়াশ শরীয়্যাহ্ ওয়াল মিনহাজ, ৪র্থ খণ্ড ২১০ পৃষ্ঠা  প্রকাশনা: দারুল ফিকির দামেশ্কো)

قاَلَ اللهُ تَعَالَى :{ اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا} …..وَأَمَّا حَمْلُ الذِّكْرِ عَلَى الصَّلَاةِ فِيْ هٰذِهِ الْأَحْوَالِ حَسْبُ الْاِسْتِطَاعَةِ كَمَا قَالَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ لِعِمْرَانَ بْنِ الْحُصَيْنِ : صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَّـمْ تَسْتَطِعْ فَعَلٰى جَنْبٍ تُوْمَئ اِيـْمَاءً

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)…..অতঃপর উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত পবিত্র ‘যিকির’ দ্বারা সাধ্য অনুযায়ী দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এই অবস্থা গুলোতে  নামাযই প্রয়োজ্য। যেমন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, “আপনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবেন।  যদি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে না পারেন, তাহলে যমীনে বসে নামায আদায় করবেন। যদি তাও না পারেন, তাহলে শুয়ে  ইশারা করে নামায আদায় করবেন।” (আত্ তাফসীরু  আবী সাঊদ,  আবূ সাঊদ আমাদী মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুছ্ত্বফা, ওফাত ৯৮২ হিজরী, ২য় খণ্ড ১৩  পৃষ্ঠা)

قَالَ اللهُ تَعَالٰى: {اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ} إِنَّ الْمَقْصُوْدَ بِذٰلِكَ هُوَ الصَّلَاةُ، فَمَنْ لَّا يَسْتَطِيْعُ الصَّلَاةَ قَائِماً يُصَلِّيْ قَاعِدًا وَمَنْ لَّا يَسْتَطِيْعُ الصَّلاَةَ قَاعِدًا فَلْيُصَلِّ مُضْطَجِعًا .

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

নিশ্চয়ই উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা মকছূদ হলো পবিত্র ফরয নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি ফরয নামায দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যমীনে বসে নামায আদায় করবে। আর যে ব্যক্তি যমীনে বসেও নামায পড়তে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন শুয়ে নামায পড়ে।”

(তাফসীরে শা’রাবী, ১ম খণ্ড ১৩৩৬ পৃষ্ঠা)

قَوْلُه  تَعَالٰى: اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ قَالَ حَضْرَتْ عَلِىُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَحَضْرَتْ اِبْنُ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَاِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَقَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ هٰذَا فِيْ الصَّلاَةِ. يَعْنِيْ اَلَّذِيْنَ يُصَلُّوْنَ قِيَامًا فَإِنْ عَجِزُوْا فَقُعُوْدًا فَإِنْ عَجِزُوْا فَعَلٰى جُنُوبِـهِمْ وَالْمَعْنٰى أَنَّـهُمْ لَا يَتْرُكُوْنَ الصَّلَاةَ فِيْ حَالٍ مِّنَ الْأَحْوَالِ بَلْ يُصَلُّوْنَ فِيْ كُلِّ حَالٍ.

অর্থ: “খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন:

اَلَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبـِهِمْ

“যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯১)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে,  সাইয়্যিদুনা হযরত র্ক্রাামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা, এবং হযরত ক্বাদাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্ণনা করেন; এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা ফরয নামাযকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যারা ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করে। অতঃপর তারা যদি ফরয নামায দাঁড়িয়ে  পড়তে অক্ষম হন, তাহলে তারা যমীনে বসে নামায আদায় করবেন।

আর যদি যমীনে বসেও নামায পড়তে অক্ষম হন, তাহলে তারা শুয়ে নামায পড়বেন।” অর্থাৎ নিশ্চয়ই তারা  উল্লেখিত দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া এই অবস্থাগুলো থেকে কোন এক অবস্থাতেও নামায তরক করবেন না। বরং উল্লেখিত দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া উক্ত সকল অবস্থাতেই নামায আদায় করবেন।” (তাফসীরে খাযেন, আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইরবাহীম বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ১ম খণ্ড ৩৩২ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে নামায পড়ার তিন ছুরত।  অর্থাৎ (১) সাধারণভাবে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে হবে। (২) দাঁড়াতে না পারলে যমীনে বসে নামায আদায় করতে হবে। (৩) যমীনে বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে নামায আদায় করতে হবে। উক্ত তিন ছূরত ব্যতীত নামাযের চতুর্থ কোন ছূরত নেই। সুতরাং চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করা নামাযের কোন ছুরত নয়।

অতএব আমাদেরকে নামায পড়তে হলে উক্ত তিন ছূরতের যে-কোন একটি ছূরতেই নামায পড়তে হবে। এই তিন ছূরতই সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ছূরত। এই তিন ছূরতের বাইরে  অন্য কোন ছূরতে যেমন, চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে নামায পড়া জায়িয হবে না। এই তিন ছূরতের বাইরে অন্য কোন ছূরত বা নিয়মনীতি তালাশ করা যাবে না। কেননা খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ

অর্থ: “সম্মানিত ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহন করতে চাইলে তা কখনও কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।”

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ