মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ ও মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে- সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭০

সংখ্যা: ২৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩৩তম ফতওয়া হিসেবে

“মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব উনার মূল রাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত

দ্বীন ইসলাম প্রকাশ

ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জীবনী মুবারক আলোচনা শুরু করেছেন এভাবে ‘আল ইমামুল বাহর ফকীহুল উম্মাহ’ অর্থাৎ মহাজ্ঞানী ইমাম, উম্মতের ফকীহ ইত্যাদি বিশেষণ দ্বারা বিভূষিত করেছেন। উম্মতে মুসলিমার গৌরবময় ইতিহাসে লেখা রয়েছে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঐ সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম যুগে মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের মু’জিযাময় ঘটনাটি ইবনুল আছীর নিজ সনদে বর্ণনা করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি ওকবা ইবনে আবু মুআইতের মেষ চড়াতাম। একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনারা উভয়ে আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, প্রিয় বৎস! তোমার কাছে কি দুধ আছে? আমি উত্তরে বললাম, জী, তবে আমি মালিক নই, আমি শুধু আমানতদার। তখন তিনি বললেন, তোমার কাছে কি এমন বকরি আছে যার সঙ্গে এখনও কোনো বকরার মিলন হয়নি। তখন আমি এমন একটি বকরি উনার কাছে এনে পেশ করলাম, যার কখনো কোনো বকরার মিলন হয়নি। তিনি বকরিটি আদর করে ওলানে নূরুল মাগফিরাহ বা হাত মুবারক দিতেই ওলান দুধে ভরে গেল! সুবহানাল্লাহ!

তিনি দুধ দোহন করে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, পান করুন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি তৃপ্তি সহকারে পান করলেন। তিনি নিজেও পান করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এ বাণী শিক্ষা দিন। অপর বর্ণনায় এসেছে, আমাকে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিন। তখন তিনি আমার মাথায় নূরুল মাগফিরাহ বা হাত মুবারক বুলিয়ে বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার প্রতি রহমত করুন, আপনি এমন সন্তান যাকে ইলম শিক্ষা দেয়া হয়েছে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৩য় খণ্ড ২৭২ পৃষ্ঠা)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দায়িমী ছোহবত মুবারক লাভ

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সার্বক্ষণিকভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ছোহবতে থেকে ইলমে নববী উনার অমিয় সুধা গ্রহণ করতে থাকেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার পরিবারের এতই ঘনিষ্টতা ছিলো যে, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরে থেকে আসা লোকজন মনে করতেন, তিনি বুঝি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

قَدِمْتُ أَنَا وَأَخِيْ مِنَ الْيَمَنِ، فَمَكَثْـنَا حِيْـنًا مَا نُـرَى إِلَّا أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ رَجُلٌ مِّنْ أَهْلِ بَـيْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لِمَا نَـرَى مِنْ دُخُوْلِهٖ وَدُخُوْلِ أُمِّهٖ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏.‏

অর্থ: ‘আমি ও আমার ভাই ইয়ামান থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ এসে বেশ কিছু দিন অবস্থান করি। তখন আমরা মনে করতাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বুঝি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য। কেননা আমরা উনাকে এবং উনার সম্মানিত মাতা উনাকে অহরহ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফে যাতায়াত করতে দেখতাম। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৪৯১)

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাদৃশ্যতা

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে থেকে থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবস্থা এমন হয়েছিল যে, উনার চাল-চলন, আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র মুবারকও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মত হয়ে গিয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

مَا اَعْلَمُ أَحَدًا أَقْـرَبُ سَمْتًا وَهَدْيًا وَدَلًّا بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ اِبْنِ اُمِّ عَبْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

অর্থ: ‘আকার-আকৃতি, চাল-চলন, আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সর্বাধিক সাদৃশ্য রাখেন এমন ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ব্যতীত অন্য কাউকে আমি জানি না। (ছহীহ বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৪৯০)

মহাপবিত্র দ্বীনী ইলম অর্জন

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে এরূপ মুয়ামালা বা নিরবচ্ছিন্ন ছোহবত মুবারক উনার কারণেই সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শরীয়ত উনার আহকামাদি বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। উহুদের সেই কঠিন মুহর্তেও তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট দণ্ডায়মান ছিলেন।

হযরত আবুল আহওয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

شَهِدْتُّ أَبَا مُوْسٰى وَأَبَا مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْـهُمَا حِيْنَ مَاتَ اِبْنُ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ فَـقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهٖ أَتُـرَاهُ تَـرَكَ بَعْدَهٗ مِثْـلَهٗ فَـقَالَ إِنْ قُـلْتَ ذَاكَ إِنْ كَانَ لَيُـؤْذَنُ لَهٗ إِذَا حُجِبْـنَا وَيَشْهَدُ إِذَا غِبْـنَا

অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্তিম সময় আমি আবু মাসউদ ও হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পাশে ছিলাম। উনারা একে অপরকে বলছিলেন, কী মনে করুন উনার মত আর কাউকে কি তিনি (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেড়ে গেছেন? অন্যজন বলেন, আপনি একথা বলছেন, উনার অবস্থাই ছিল এমন যে, আমাদের বাধা দেয়া হত আর উনাকে অনুমতি দেয়া হত। আমরা অনুপস্থিত থাকতাম তিনি উপস্থিত থাকতেন। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৬১০৬)

আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক উনার শুরু থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান মুবারক পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে উনার তত্ত্বাবধানে ইলমে নববী উনার স্বাদ আস্বাদন করেছেন বলেই তিনি জানতেন কোন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর ইসলাম উনার শুরু যামানায় আমল হত কিন্তু পরবর্তীতে মানসুখ হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!

মহাপবিত্র ছোহবত মুবারক উনার বরকতে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইলমী মাক্বাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তিনি মুসলমানদের ইলমী বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বে পরিগণিত হন। এমনকি অনেক বড় বড় ছাহাবী উনারা মনে করতেন তিনি কোনো স্থানে অবস্থান করলে সেখানকার মুসলমানদের দ্বীনী প্রয়োজন পূরণে তিনিই যথেষ্ট। সুবহানাল্লাহ!

দূর দেশেও খ্যাতি অর্জন

হযরত আলকামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, (মৃত্যু ৬২ হি.) তাবিয়ী বলেন, “আমি সিরিয়া সফরকালে এক মসজিদে দু’রাকাত (নফল) নামায আদায় করে দোয়া করলাম, আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাকে একজন সৎ সঙ্গী মিলিয়ে দিন। দোয়া শেষে একজন বৃদ্ধকে আমার দিকে আসতে দেখলাম। তিনি ছিলেন হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি যখন আমার নিকট এলেন, আমি মনে মনে বললাম, আশা করি আমার দোয়া কবুল হয়েছে। তিনি কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথাকার বাসিন্দা? উত্তরে বলি, আমার ঠিকানা কুফা নগরীতে। তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র না’লাইন শরীফ, মহাসম্মানিত বালিশ ও অজুর পাত্র মুবারক বহনকারী (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) তিনি কি নেই? (ছহীহ বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৪৮৯)

অর্থাৎ তিনি থাকলে তো দ্বীনী প্রয়োজন পূরণের জন্য তিনিই যথেষ্ট ছিলেন। অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। সুবহানাল্লাহ!

যুগবরেণ্য ইমাম উনাদের মুখে উনার প্রশংসা

অনেক বড় বড় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপস্থিতিতে নিজেদের কাছে দ্বীনী মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করতেন।

হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-

لَا تَسْئَـلُوْنِيْ عَنْ شَيْءٍ مَا دَامَ هٰذَا الْـحَبْـرُ بَـيْنَ أَظْهُرِكُمْ

অর্থ: “তোমাদের মাঝে, এ জ্ঞানসমুদ্র (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থাকা অবস্থায় আমার কাছে কোনো মাসআলা জিজ্ঞেস করবে না। সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৬৭৩৬)

হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বলেন-

كُنْتُ أُجَالِسُهٗ اِبْنَ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَوْثَقَ فِيْ نَـفْسِيْ مِنْ عَمَلِ سَنَةٍ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মজলিসে উপস্থিত থাকা আমার নিকট এক বছরের ইবাদত থেকেও (দ্বীনী বিষয়ে) অধিক আস্থাশীল মনে হয়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা)

জলীলুল কদর তাবিয়ী হযরত মাসরুক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

شَامَمَتْ اَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّی اللهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ فَـوَجَدْتُّ عِلْمَهُمْ اِنْـتَـهٰى إِلٰى سِتَّةٍ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ وَزَیْدِ بْنِ الثَابِتِ وَاَبِی الدَّرْدَاءِ وَاُبَیِّ بْنِ کَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهمْ ثُمَّ شَامَمَتِ السِّتَّةُ فَـوَجَدْتُّ عِلْمَهُمْ اِنْـتَـهٰى إِلٰى عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ছোহবত মুবারকে থেকে দেখলাম, উনাদের সকলের ইলম বিশিষ্ট ছয়জনের মধ্যে এসে শেষ হয়েছে। উনারা হলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম (৪৫ পৃ. দেখুন)

সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যায়িদ  ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবু দ্বারদ্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। অতঃপর এ ছয়জনের ছোহবতে থেকে দেখলাম উনাদের ইলম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মধ্যে এসে শেষ হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ওয়ায়েল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমকক্ষ কেউ নেই। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা)

জলীলুল কদর তাবিয়ী ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

مَا دَخَلَ الْكُوْفَةَ اَحَدٌ مِّنَ الصَّحَابَةِ اَنْـفَعُ عِلْمًا وَّلَا اَفْـقَهُ صَاحِبًا مِّنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

অর্থ: কুফা নগরীতে প্রবেশকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অপেক্ষা ইলমের অধিকারী ও বড় ফক্বীহ আর কেউ ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা)

কুফা নগরীর ইলমী অবস্থা

সম্মানিত পাঠক! যারা কুফা নগরীর ভিত্তি এবং এই নগরীর ইলমী বিকাশ ও শান-শওকত সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা জানেন শত শত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ নগরীতে বসবাসের জন্য এসেছিলেন।

এ বিষয়গুলো সামনে রাখলে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কে ইমাম শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মন্তব্য, “কুফা নগরীতে প্রবেশকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অপেক্ষা ইলমের অধিকারী ও বড় ফক্বীহ আর কেউ ছিলেন না” এটা বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অছিয়ত মুবারক

ফক্বীহ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বিছালী শান মুবারক উনার পূর্বে উনাদের ছাত্রদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ছোহবত মুবারক গ্রহণ করে উনার থেকে ইলম অর্জন করার অছিয়ত মুবারক করে যেতেন। যেমন হযরত মুআয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার ছাত্র আমর ইবনে মাইমুন আলআওদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অসিয়ত মুবারক করেছেন, কুফায় গিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে ইলম শিক্ষা করতে। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন

মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনার এ মহান ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা উম্মতের সামনে তুলে ধরেছেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন-

قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏لَوْ كُنْتُ مُؤَمِّرًا أَحَدًا مِّنْ غَيْرِ مَشْوَرَةٍ لَأَمَّرْتُ اِبْنَ أُمِّ عَبْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ

অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, পরামর্শ ছাড়াই আমি যদি কাউকে আমীর নিযুক্ত করতাম তাহলে উম্মে আবদ উনাকে (সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আমীর নিযুক্ত করতাম। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৩৮০৯)

মোটকথা, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা ও ইলমের ব্যাপকতা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ, তারিখ, ত্ববাকাত ও ছাহাবীচরিত গ্রন্থে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যেগুলো তুলে ধরলে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

অসমাপ্ত- পরবতীর্ সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৮

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৯

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩০