সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬১তম সংখ্যা | বিভাগ:

সুওয়াল-জাওয়াব

মুহম্মদ আবুল হায়াত

কক্সবাজার।

 

সুওয়াল:   পবিত্র যাকাত কখন দেয়া উত্তম?

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার বিশেষ রহমত মুবারক উনার কারণে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে প্রতিটি নেক কাজের বিনিময়ে সত্তরগুণ বেশি নেকী দান করেন সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই পবিত্র যাকাত প্রদান করতেন। যেমন- এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت السائب بن يزيد رضى الله تعالى عنه ان حضرت عثمان بن عفان عليه السلام كان يقول هذا شهر زكاتكم (شهر رمضان) فمن كان عليه دين فليؤد دينه حتى تـحصل اموالكم فتؤدون منه الزكاة.

অর্থ: “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস তোমাদের পবিত্র যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে সে যেন তার ঋণ পরিশোধ করে, যেন তোমাদের সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং তোমরা তা থেকে (সঠিকভাবে) পবিত্র যাকাত প্রদান করতে পারো।” (মুয়াত্তা শরীফ) উক্ত হাদীছ শরীফখানা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন।

পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান :

এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عن حضرت الـحسن البصرى رحمة الله عليه قال اذا حضر الوقت الذى يودى فيه الرجل زكاته ادى عن كل مال و عن كل دين الا ما كان ضمارا لا يرجوه.

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবায়দ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)

 

মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন

কুষ্টিয়া।

সুওয়াল: পবিত্র যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে?

জাওয়াব: পবিত্র যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে পবিত্র যাকাত উনার হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোনো একটি মাস ও তারিখকে পবিত্র যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। বাংলা বা ইংরেজি বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। পবিত্র যাকাতযোগ্য সমস্ত সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই পবিত্র যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশি যা-ই হোক। তবে ছদাকাতুল ফিতর-এর জন্য বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে ছদাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে যেকোনো দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ পবিত্র যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। তবে এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।

 

হুমায়রা খাতুন

কাপাসিয়া, গাজীপুর।

 

সুওয়াল: মহিলাদের জন্য পবিত্র তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যেকোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল মা’রূফ

মাদারীপুর

সুওয়াল: আমরা উলামায়ে দেওবন্দের অনেক কিতাবেই দেখতে পাই যে, তারা ফতওয়া দিয়েছে- “পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম।”

উপরোক্ত ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য, দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা সম্পর্কিত উলামায়ে দেওবন্দের উক্ত ফতওয়া অসম্পূর্ণ ও অশুদ্ধ। কারণ উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহ উনার বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

ان الـمفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

{দলীলসমূহঃ-  (১) বাহরুর রায়িক, (২) আলমগীরী, (৩) তাতারখানিয়া, (৪) ফতওয়ায়ে আযীযী, (৫) দুররুল মুখতার, (৬) আশবাহু ওয়ান্ নাজায়ির, (৭) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (৮) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (৯) কাশফুল গুম্মাহ, (১০) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১১) তাফসীরে আযীযী, (১২) তাফসীরে ইক্লীল ইত্যাদি।}

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

 

মুহম্মদ হুসাইনুজ্জামান

সিলেট।

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ নামাযে দু’ রাকায়াত ও চার রাকায়াতের পর কি দুয়া পড়তে হয়? এবং কত রাকায়াত পর পর মুনাজাত করার নিয়ম?

জাওয়াব: পবিত্র তারাবীহ্ নামাযে দু’রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

هذا من فضل ربى يا كريم الـمعروف يا قديم الاحسان احسن الينا باحسانك القديم ثبت قلوبنا على دينك برحمتك يا ارحم الرحمين.

উচ্চারণ: হাযা মিন ফাদ্ব্লি রব্বী, ইয়া কারীমাল মা’রূফ, ইয়া ক্বদীমাল ইহসান, আহ্সিন ইলাইনা বিইহ্সানিকাল ক্বদীম, ছাব্বিত কুলূবানা আলা দ্বীনিকা বিরহ্মাতিকা ইয়া র্আহামার রাহিমীন।

অর্থ: ‘ইহা (পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার পবিত্র রোযা ও তারাবীহ নামায) আমার মহান রব তায়ালা উনার অনুগ্রহ। আয় মহানতম মাশহুর অনুগ্রহকারী। আয় চির ইহসানকারী। আপনার চিরন্তন ইহসানের দ্বারা আমাদের প্রতি ইহসান করুন এবং আপনার সদয় অনুগ্রহের দ্বারা আমাদের দিল-মনকে আপনার দ্বীনের উপর কায়িম রাখুন হে শ্রেষ্ঠতম অনুগ্রহকারী।

আর চার রাকায়াতের পর নিম্নোক্ত দুয়া পড়তে হয়-

سبحان ذى الـملك والـملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والـهيبت والقدرة والكبرياء والجبروت. سبحن الـملك الحى الذى لا ينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الـملئكة والروح.

অর্থ: ‘আমি ঐ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত কর্তৃত্ব ও সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মালিক। আমি উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত ইজ্জত, আযমত বা মহত্ত্ব, হাইবত (প্রভাব), কুদরত, বড়ত্ব ও শক্তিমত্তার অধিকারী। আমি সেই চিরজীবি মালিক উনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি নিদ্রা যান না অর্থাৎ সদা জাগ্রত, যিনি কখনো বিছাল শরীফ লাভ করবেন না অর্থাৎ চির অমর, যিনি মহামহিম, পূত-পবিত্র, তিনিই আমাদের রব এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও রূহসমূহ উনাদের রব।’

উল্লেখ্য, যদি কারো উপরোক্ত দুয়া জানা না থাকে, তবে সে দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। পবিত্র তারাবীহ নামাযে চার রাকায়াত পর পর মুনাজাত করা নিয়ম। মুনাজাতটি নিম্নরূপ-

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.

رب ارحم هما كما ربيانى صغيرا. ربنا افرغ علينا صبرا وتوفنا مسلمين. ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.

اللهم انا نسئلك الجنة ونعوذبك من النار يا خالق الجنة والنار برحمتك يا عزيز يا غفار يا كريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار. اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا ارحم الرحمين.

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.

سبحن ربك رب العزة عما يصفون وسلم على الـمرسلين والحمد لله رب العالـمين.

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম। রর্ব্বিহাম হুমা কামা রব্বাইয়ানী ছগীরা। রব্বানা আফ্রিগ আলাইনা ছবরাঁও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমীন। রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুন্ইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা আযাবান্ নার।

‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা মা’দানিল জূদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্আলুকাল জান্নাতি ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার, ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান্ নার, বিরহ্মাতিকা ইয়া আযীযু, ইয়া গফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া র্বারু, আল্লাহুম্মা আর্জিনা মিনান নার, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু, ইয়া মুজীরু বিরহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা নাবিইয়িনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা আন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ইয্যাতি আম্মা ইয়াছিফূন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর; যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের পিতা-মাতা উনাদের প্রতি দয়া-ইহসান করুন। যেরূপ উনারা আমাদেরকে ছোট বেলায় দয়া-ইহসানের সাথে লালন-পালন করেছেন। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে ধৈর্যের উপর ইস্তিক্বামত করে দিন এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে ইন্তিকাল দান করুন। আয় আমাদের মহান রব তায়ালা! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ভালাই দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ দিন।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

আয় মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমরা আপনারই নিকট জান্নাতের আরজু করছি এবং আপনারই নিকট জাহান্নাম থেকে পানাহ তলব করছি। আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জান্নাত দান করুন এবং জাহান্নাম হতে পানাহ দান করুন হে জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টিকারী, হে ক্ষমতাশীল, হে অতিশয় ক্ষমাকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী, হে অপরাধ গোপনকারী, হে পরম অনুগ্রহপরায়ন, হে পরাক্রমশালী, হে সৃজনকারী, হে পরম অনুগ্রহকারী। আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনার সদয় অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিদান করুন, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী, হে মুক্তিদানকারী হে শ্রেষ্ঠতম দয়ালু মহান আল্লাহ পাক।

অর্থ: “আয় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক! আপনার ছলাত (খাছ রহমত মুবারক) ও সালাম (খাছ শান্তি মুবারক) আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষস্থল নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার আযওয়াজ, আহলে বাইত ও আছহাবগণ উনাদের উপরও।

সমস্ত ইজ্জত-সম্মানের মালিক আপনার মহান রব তায়ালা উনার জন্যেই। যিনি পবিত্রতম তারা যা বর্ণনা করে থাকে তা থেকে। সালাম বা খাছ শান্তি বর্ষিত হোক রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উপর। আর তামাম আলমের রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।’ (দলীল: সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ আতিকুল্লাহ

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  আমরা জানি যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত এবং  তা আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অথচ কেউ কেউ বলে, ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। কোন মতটি ছহীহ? তা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্যান্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

{দলীলসমূহ:  (১) আবু দাউদ শরীফ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা শরীফ, (২) সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী শরীফ, (৩) আল কবীর লিত্ তিবরানী শরীফ, (৪) আল জাওহারুন্নাকী শরীফ, (৫) নাইনুল আওতার, (৬) ইরশাদুস্ সারী, (৭) মিরকাত শরীফ, আওজাজুল মাসালিক, (৮) মা’আরিফে মাদানীয়া, (৯) ফতহুল বারী, (১০) উমদাতুল ক্বারী, (১১) বজলুল মাযহুদ, (১২) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১৩) নছবুর রাইয়াহ, (১৪) আইনী শরহে বুখারী, (১৫) আত্ তা’লীকুল হাছানাহ, (১৬) মুজাহিরে হক্ব, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) ইলাউস্ সুনান, (১৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২০) খুলাসাতুল ফতওয়া, (২১) মজমুয়াতুল ফতওয়া, (২২) বাহ্রুর রায়িক, (২৩) মারাকিউল ফালাহ্, (২৪) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (২৫) গুন্ইয়াতুত্ ত্বালেবীন ইত্যাদি}

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।

 

মুহম্মদ শাব্বীর হুসাইন

নূরানীগঞ্জ।

 

সুওয়াল: পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না।” তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল আছে কি?

জাওয়াব: যারা বলে থাকে যে, “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে পবিত্র রোযা অবস্থায় যেকোনো ইনজেকশন নিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খ-ের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج

অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ومن احتقن .. افطر

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

{দলীলসমূহ: (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত শরীফ, (৪) ফতহুল বারী শরীফ, (৫) উমদাতুল ক্বারী শরীফ, (৬) ইরশাদুছ্ সারী শরীফ, (৭) শরহে নববী শরীফ, (৮) ফতহুল মুলহিম, (৯) মুফহিম, (১০) মিরকাত শরীফ, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিক্বুছ্ ছবীহ্, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) মাবছুত, (১৭) মাবছুত্ লি সারাখসী, (১৮) ফতহুল ক্বাদীর, (১৯) আলমগীরী, (২০) বাহরুর রায়িক্ব, (২১) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২২) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (২৩) শামী, (২৪) বাদায়িউছ্ ছানায়ে, (২৫) খুলাছুতল ফতওয়া ইত্যাদি।

{বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

 

মুহম্মদ রুহুল আমীন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: ‘যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

আর খত্মে তারাবীহ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।

আর পবিত্র তারাবীহ নামায জামায়াত এ পড়া যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে।

আর মহিলাদের জন্য তো পবিত্র তারাবীহ্সহ সর্বপ্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে তারা খত্মে তারাবীহ কি করে পড়বে?

যে ব্যক্তি হাফিয নয়, সে খত্মে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোনো কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশি রাকায়াত পড়তে পারলো না। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলো না তা কিভাবে পড়বে?

খত্মে তারাবীহ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে খতমে তারাবীহ পড়ানোর মতো পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ ও সূরা তারাবীহ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টিই সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ পড়তে পারে। {দলীলসমূহ:  (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

 

মুহম্মদ আব্দুল হান্নান

টাঙ্গাইল।

 

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি সূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার কাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না।  (আলমগীরী)

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

গোড়ান, ঢাকা।

সুওয়াল: পবিত্র রোযা রেখে টুথপেস্ট, দাঁতের মাজন, কয়লা বা ছাই ইত্যাদি দ্বারা দাঁত মাজলে পবিত্র রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  উপরে উল্লিখিত মাজনের দ্বারা দাঁত মাজলে পবিত্র রোযা মাকরূহ হবে। তবে যদি মাজনের সামান্য পরিমাণ ভিতরে চলে যায়, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে এবং ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

 

মুহম্মদ রাকিব হাসান

বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রেখে নাকে পানি দেয়া ও গড়গড়া করা যাবে কিনা?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা অবস্থায় নাকে পানি দিয়ে উপরের দিকে টান দেয়া ও কুলি করার সময় গড়গড়া করার হুকুম নেই। বরং নিষেধ রয়েছে। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)

 

মুসাম্মত ছালিমা খাতুন

নূরসিবাদ

 

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

 

আবূ আহমদ মাহজূবা

নূরপুর (লক্ষ্মীপুর)।

 

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

মুসাম্মত শাহানা ইসলাম

ভোলা।

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ তরীকুল ইসলাম

কুমিল্লা

সুওয়াল:  পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

 

মুহম্মদ শহীদুর রহমান

মুন্সীগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ যদি পবিত্র রোযা অবস্থায় দিনে ঘুমায় এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হয়, তাতে পবিত্র রোযার কি কোনো ক্ষতি হবে?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রেখে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে, পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম

আমানবাড়িয়া।

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

মুহম্মদ হাদিউল ইসলাম

মুন্সিগঞ্জ।

সুওয়াল:  পবিত্র ই’তিকাফ  করার ফযীলত কতটুকু?

জাওয়াব:  পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিন (সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া) পবিত্র ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে দুটি পবিত্র হজ্জ ও দুটি পবিত্র ওমরাহ করার সমতুল্য ছওয়াব দান করবেন।

আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তার পিছনের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।

আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি একদিন পবিত্র ই’তিকাফ করবে, মহান আল্লাহ পাক তাকে জাহান্নাম থেকে তিন খন্দক দূরে রাখবেন। প্রতি খন্দকের দূরত্ব পাঁচশত বছরের রাস্তা।

(দলীলসমূহ: মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহিরে হক্ব, দুররুল মুখতার,  শামী, আলমগীরী ইত্যাদি)

মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন

কাপাসিয়া, গাজীপুর।

 

সুওয়াল:  অনেকে বলে থাকে, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষে তিনদিন বা একদিন পবিত্র ই’তিকাফ করলেই পত্রি সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ হয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?

জাওয়াব: পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত পবিত্র ই’তিকাফ করলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে। অন্যথায় একদিন, তিনদিন, পাঁচদিন এবং সাতদিন পবিত্র ই’তিকাফ করলে পবিত্র সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে না। অর্থাৎ ৩০শে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত ১০ দিন কিংবা ২৯শে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত ৯ দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবে না।

(দলীলসমূহ: মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আলমগীরী, ক্বাযীখান, শামী ইত্যাদি)

 

মুহম্মদ আশরাফুর রহমান

নীলফামারী

 

সুওয়াল: পবিত্র ই’তিকাফ উনার আহকাম সম্বন্ধে জানালে কৃতজ্ঞ হবো?

জাওয়াব: পবিত্র ই’তিকাফ উনার আভিধানিক অর্থ হলো গুনাহ হতে বেঁচে থাকা, অবস্থান করা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ রাখা, কোণায় অবস্থান করা।

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন দুনিয়াবী যাবতীয় কার্যকলাপ ও পরিবার-পরিজন হতে ভিন্ন হয়ে, আলাদাভাবে পুরুষের জন্য জামে মসজিদে ও মহিলাদের জন্য ঘরে ইবাদতকার্যে মশগুল থাকাকে পবিত্র ই’তিকাফ বলে।

পবিত্র ই’তিকাফ তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব, (২) সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, (৩) নফল। যিনি পবিত্র ই’তিকাফ করেন, তাকে বলে মু’তাকিফ। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশ দিন পবিত্র ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। প্রতি মসজিদে এলাকার তরফ হতে কমপক্ষে একজন মু’তাকিফ হলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে, আর যদি কেউই পবিত্র ই’তিকাফ না করে, তাহলে সকলেরই পবিত্র সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে।

পবিত্র ই’তিকাফ উনার শর্ত তিনটি- (১) পুরুষের জন্য মসজিদে, মহিলাদের জন্য ঘরের মধ্যে। (২) ই’তিকাফের জন্য নিয়ত করা, হদছে আকবর হতে পাক হওয়া। (৩) পবিত্র রোযা রাখা। তবে সাধারণভাবে পবিত্র ই’তিকাফ উনার জন্য বালিগ হওয়া শর্ত নয়। ই’তিকাফ অবস্থায় জাগতিক ফায়দাদায়ক কাজ করা অবস্থাভেদে হারাম ও মাকরূহ্ তাহরীমী। মু’তাকিফ ব্যক্তি মসজিদে এসে কোনো বেহুদা কথা বা কাজ করবে না বা চুপ করে বসে থাকবে না। বরং ঘুম ব্যতীত বাকি সময় ইবাদতকার্যে মশগুল থাকতে হবে। যেমন- নফল নামায, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, পবিত্র যিকির, সম্মানিত ইলম অর্জন ইত্যাদি। পবিত্র ই’তিকাফকারী বাইরে বের হওয়ার দুটি জরুরত হতে পারে- (১) শরয়ী, (২) তবয়ী।

শরয়ী জরুরত হলো- যে মসজিদে পবিত্র ই’তিকাফ করছে, সেখানে পবিত্র জুমুয়া হয় না, অন্য কোনো মসজিদে যেখানে পবিত্র জুমুয়া হয়, সেখানে  পবিত্র জুমুয়ার নামায পড়তে যাওয়া এবং পবিত্র নামায পড়ে চলে আসা। মু’তাকিফ যদি অহেতুক এক সেকেন্ডের জন্য মসজিদের বাইরে অবস্থান করে, তাহলে পবিত্র ই’তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

তবয়ী জরুরত হলো- পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির জন্য বের হওয়া এবং কাজ সেরে চলে আসা।

(দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, শামী ইত্যাদি সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

 

মুহম্মদ উমর ফারুক

কিশোরগঞ্জ।

 

সুওয়াল: অনেকে মনে করে, যাকাত দিলে সম্পদ কমে যায়। এ আক্বীদা কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যা মোটেও সঠিক নয়। বরং যাকাত দিলেই একদিকে তার সম্পদ এবং সে নিজে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে, আরেকদিকে তার সম্পদ আরো বৃদ্ধি হবে। সুবহানাল্লাহ! কারণ সম্মানিত যাকাত উনার দুটা অর্থের মধ্যে একটা অর্থ হচ্ছে বরকত ও বৃদ্ধি।

উল্লেখ্য, সম্পদ দেয়ার মালিক এবং সম্পদ হিফাযতের মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনিই।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا ۗ وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ.

অর্থ: আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের উপর উন্নিত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম। (পবিত্র সূরা আয-যুখরুফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সমৃদ্ধির জন্য যাকাতের ব্যবস্থা রেখেছেন। কিন্তু কেউ যদি যাকাত প্রদান না করে তাহলে সে কোনদিনই খাছভাবে সচ্ছল হতে পারবে না। প্রকৃত সচ্ছল হতে হলে ১. ধন-সম্পদ থাকতে হবে ২. সকল চাহিদা মিটতে হবে এবং ৩. অন্তরে পরিতৃপ্তি থাকতে হবে।

একটা মানুষের কোটি-কোটি টাকা থাকতে পারে, কিন্তু রাতে তার ঘুম আসে না। কারণ হচ্ছে তার চাহিদা পূরণ হয়নি। কোটি-কোটি টাকা, কোটি-কোটি চাহিদা, কাজেই একটা মানুষের বাহ্যিকভাবে যেমন টাকা-পয়সার প্রয়োজন তেমনি অন্তরের পরিতৃপ্তি প্রয়োজন। যে ব্যক্তি পবিত্র যাকাত আদায় করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন উভয় প্রকার পরিতৃপ্তি দান করবেন। তার মাল-সম্পদ অনেক গুনে বাড়িয়ে দিবেন। সুবাহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُوْنَ وَجْهَ اللّهِ فَأُولـئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

অর্থ: “আর তোমরা যারা যাকাত দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি কামনা কর; তাদেরই ঐ সম্পদ বহুগুণ বৃদ্ধি হবে।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৩)

যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করবে মহান আল্লাহ পাক তাকে ‘মুদ্বইফূন’দের অর্ন্তভুক্ত করে দিবেন। অর্থাৎ যে যাকাতের কাজ করবে (আদায় ও প্রদান করবে) তিনি নিজে সমৃদ্ধশালী হয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই যাকাত ব্যবস্থার আনজাম দেয়া ছাড়া কেউ কোনদিন খালিছভাবে ধনী হতে পারবে না।

বাস্তবে এরকম অনেক উদাহরন রয়েছে। যেমন- হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জিহাদ করে যাকাত ব্যবস্থা জারি করেছিলেন। হযরত ফারুকে আযম আলাইহিস সালাম তিনি হিসাব করে করে যাকাত আদায় করতেন। হযরত যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময় এমন অবস্থা যে তখন ঘরে ঘরে কোটি-কোটি দিনার-দিরহাম। সুবহানাল্লাহ!

হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যুননূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে আমাদের তখন এত ধন-সম্পদ যে আমরা তখন নাকের ময়লা পরিষ্কার করি কাততানের কাপড় দিয়ে। সুবাহানাল্লাহ! কাততানের কাপড় রাজা-বাদশারা একসময় তাদের পোষাক হিসেবে ব্যবহার করতো। (তুরষ্কের ‘টপকাপি ’মিউজিয়ামে সেম্পল রাখা আছে)। রাজা-বাদশাদের কাপড় দিয়ে যদি নাকের ময়লা পরিষ্কার করা হয় তাহলে অন্যান্য বিষয়ে উনারা কত দামী জিনিস ব্যবহার করেছেন তা বলাই বাহুল্য। সুবাহানাল্লাহ!

তখন এত ধন-সম্পদ, এত ঐশ্বর্য যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহুম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কান্নাকাটি করেছেন যে, হায় মহান আল্লাহ পাক! আমরা কি দুনিয়ার বুকেই জান্নাত পেয়ে গেলাম? পরকালে আমরা আসল জান্নাত পাবো তো! সুবাহানাল্লাহ! কাজেই ফিকির করতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক কুদরতীভাবে সে ব্যবস্থা জারি করে দিবেন। সুবাহানাল্লাহ! এটা কোন মানবরচিত মতবাদ যেমন ‘সোসালিজম’ বা ‘ক্যাপিটালিজম’ কোনোটা দিয়েই অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহ পাক যে যাকাত ব্যবস্থা দিয়েছেন এই যাকাত ব্যবস্থা কায়েম না হওয়া পর্যন্ত কোনদিন হাক্বীক্বী সচ্ছলতা আসবে না।

 

হাফিয মুহম্মদ ইবরাহীম

সদর, আমানবাড়িয়া।

 

সুওয়াল: পবিত্র যাকাত সম্পর্কে সঠিক ইলম না থাকার কারণে পূর্বে যাকাত প্রদান করা হয়নি। এখন পূর্বের অনাদায়ী পবিত্র যাকাত প্রদান করতে হবে কি না? হলে কিভাবে দিতে হবে?

জাওয়াব: অনাদায়ী যাকাত ঋণ স্বরূপ। পবিত্র যাকাত, ফিতরা, ওশর হচ্ছে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয এবং ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করাও ওয়াজিব। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী যাকাত, ফিতরা, ওশর আদায় করতে হবে। তবে কারো পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)।

বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি কারো অতীত যাকাত, ফিতরা, ওশর অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। যার কোন কাফফারা নেই। নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে এই ঋণ তার ওয়ারিসদের উপর বর্তাবে এবং তা বর্তমান বাজার দরে আদায় করতে হবে। যদি পূর্ববর্তী বৎসরগুলিতে যাকাত কত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা না হয়ে থাকে।

 

মুহম্মদ কাওছার আলম

সুনামগঞ্জ।

 

সুওয়াল: গরীব-মিসকীনদের মধ্যে যাদেরকে যাকাত দেয়া হয় তাদের আক্বীদা আমল শুদ্ধ হওয়ার শর্ত আছে কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

تَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

সুতরাং এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারনে তা লঙ্ঘন করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

১. যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। তারা নেককার-পরহেযগার নয়। তারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।

হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহ আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন।  যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦াতামুন নাবিইয়ীন’ অর্থাৎ শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করে না। নাঊযূবিল্লাহ! ১ টা শব্দ ‘শেষ’ না মানার কারনে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে তারা নবী বলে দাবী করে। নাঊযূবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।

এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে, (নাঊযূবিল্লাহ) যারা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই, (নাঊযূবিল্লাহ) যারা বলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, (নাঊযূবিল্লাহ)  যারা বলে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, (নাঊযূবিল্লাহ) যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মান নিয়ে নানা কথা বলে, (নাঊযূবিল্লাহ)। এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব একটা পশুর মতো (নাঊযূবিল্লাহ), একটা শিশুর মতো (নাঊযূবিল্লাহ) এবং একটা পাগলের মতো (নাঊযূবিল্লাহ) । সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরন দিতে পারে শরীয়তের ফতওয়া মতে তার ঈমান নেই।

ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযূবিল্লাহ!  কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযূবিল্লাহ! তারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالو من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلـم قال ما انا عليه واصحابى.

অর্থ : “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে কোন যাকাত, ফিতরা, উশর দেওয়া যাবে না। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।

এছাড়া আরো যাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:

১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।

২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমান উনাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে-

ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাতদাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।

৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাঈশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আকীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।

৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৭। দরিদ্র পিতামাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন পুরুষ অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৯। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।

১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।

১২। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৩। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ হয়েছে,

تَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرّ‌ وَالتَّقْوى ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الاِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ

অর্থ : “তোমরা নেকী ও পরহিযগারী কাজে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগীতা কর এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘন কাজে পরস্পর পরস্পরকে সহযোগীতা করনা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।

১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহির্ভুত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মান, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৩৫)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম:

আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যে, মহান খলীফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার বিশেষ পাঁচখানা সম্মানিত খুছূছিয়াত মুবারক বা বৈশিষ্ট্য মুবারক বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেন-

এক. عِنْدَ اِنْقَطَاع ٍ مّـِنَ الزَّمَانِ তথা “মহান খলীফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,  হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম তিনি যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন।” আর عِنْدَ اِنْقَطَاع مّـِنَ الزَّمَانِ তথা যামানার ক্রান্তিলগ্নে, যামানার শেষের দিকে বলতে পঞ্চদশ হিজরী শতক তথা বর্তমান যামানার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

দুই. ظُهُوْرٌ مّـِنَ الْفِتَنِ “যখন ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পাবে।”

তিন. رَجُلٌ مّـِنْ اَهْلِ بَيْـتِـىْ অর্থাৎ “মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন অর্থাৎ তিনি আওলাদে রসূল তথা সাইয়্যিদা শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক বংশধর হবেন।” সুবহানাল্লাহ!

চার. رَجُلٌ يُّقَالُ لَهُ السَّفَّاحُ অর্থ : “তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব মুবারক, এমন একজন মহান খলীফা উনাকে ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ বলা হবে।” ইহা একখানা সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারক।

এই সম্মানিত বিশেষ লক্বব মুবারকখানা উনার অসংখ্য অগণিত সুন্দর সুন্দর অর্থ মুবারক রয়েছেন- তার মধ্যে কয়েকখানা বিশেষ অর্থ মুবারক হচ্ছেন-

১. অধিক খুন বা রক্ত বহানেওয়ালা,

২. সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিদানকারী,

৩. মুক্তির দিশারী,

৪. সর্বশ্রেষ্ঠ আযাদদানকারী,

৫. অসীম দাতা,

৬. বড় উদার,

৭. অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী,

৮. সুবক্তা,

৯. সর্বোত্তম ওয়ায়িজ,

১০. সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী,

১১. সর্বোত্তম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকারী,

১২. সর্বোত্তম বর্ণনাকারী,

১৩. মিষ্টভাষী,

১৪. বিশুদ্ধভাষী,

১৫. বাগ্মী,

১৬. সাখী বা সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল,

১৭. কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, গুমরাহ,

মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে ধ্বংসকারী,

১৮. নাহক্বকে নিশ্চিহ্নকারী,

১৯. তাগুতী শক্তিকে বিলীনকারী,

২০. বিশুদ্ধ,

২১. খাঁটি,

২২. পূত-পবিত্র,

২৩. সর্বোত্তম ও সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী,

২৪. অনুসরণীয়,

২৫. উসওয়াতুন হাসানাহ,

২৬. পবিত্র অর্থাৎ নূরে মুকাররাম, নূরে মুয়ায্যাম,

২৭. মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হয়ে

কথা মুবারক বলনেওয়ালা,

২৮. সাখী বা হাবীবুল্লাহ,

২৯. অপরিসীম ফায়িযদানকারী,

৩০. বেমেছাল ইছলাহদানকারী ইত্যাদি। সুবহানাল্লাহ!

এই কথা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এই সকল সম্মানিত ছিফত বা গুণাবলী মুবারক উনাদের অধিকারী তো অবশ্যই; এমনকি প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে এই সকল সম্মানিত ছিফত বা গুণাবলী মুবারকগুলোই উনার অধীন। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রূ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।”(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন,“সুনানু ইবনে মাজাহ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের  ৮৭  পৃষ্ঠাায়  উল্লেখ আছে-

عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَيْهِما السَّلَام، قَالَ : لَمَّا مَرِضَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَرَضَهُ الَّذِىْ مَاتَ فِيْهِ، كَانَ فِى بَيْتِ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَةَ الصَّدِّيْقَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ، فَقَالَ: ادْعُوا لِيْ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامُ، قَالَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَة الصِّدِّيْقَة عَلَيْهَا السَّلَامُ : يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، نَدْعُو لَكَ حَضْرَتْ أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ؟ قَالَ: ادْعُوهُّ، قَالَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَفْصَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ : يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، نَدْعُو لَكَ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهَ السَّلَامُ؟ قَالَ: ادْعُوهُ، قَالَتْ حَضْرَتْ أُمُّ الْفَضْلِ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهَا: يَا رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،  نَدْعُو لَكَ حَضْرَتْ الْعَبَّاسَ عَلَيْهَ السَّلَامُ؟ قَالَ : نَعَمْ، فَلَمَّا اجْتَمَعُوا رَفَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ رَأْسَهُ فَنَظَرَ فَسَكَتَ، فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَام:

قُومُوا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ، ثُمَّ جَاءَ حَضْرَتْ بِلاَلٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ يُؤْذِنُهُ بِالصَّلاَةِ فَقَالَ: مُرُوا حضرت أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَام فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ فَقَالَتْ حَضْرَتْ اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ عَائِشَة الصِّدِّيْقَة عَلَيْهَا السَّلَامُ: يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِنَّ أَبَا بَكْرٍ عَلَيْهَ السَّلَامُ، رَجُلٌ رَقِيقٌ حَصِرٌ وَمَتَى لاَ يَرَاكَ يَبْكِي، وَالنَّاسُ يَبْكُونَ، فَلَوْ أَمَرْتَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يُصَلِّي بِالنَّاسِ، فَخَرَجَ حَضْرَتْ أَبُو بَكْرٍ عَلَيْهَ السَّلَامُ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ، فَوَجَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مِنْ نَفْسِهِ خِفَّةً، فَخَرَجَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، وَرِجْلاَهُ تَخُطَّانِ فِى الأَرْضِ، فَلَمَّا رَآهُ النَّاسُ سَبَّحُوا بِأَبِى بَكْرٍ عَلَيْهَ السَّلَامُ، فَذَهَبَ لِيَستَأَخَّرَ، فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ: أَىْ مَكَانَكَ، فَجَاءَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ فَجَلَسَ عَنْ يَـمِيْنِهِ، وَقَامَ حَضْرَتْ أَبُو بَكْرٍ عَلَيْهَ السَّلَامُ، وَكَانَ حَضْرَتْ أَبُوْ بَكْرٍ يَأْتَمُّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ، وَالنَّاسُ يَأْتَمُّونَ بِأَبِى بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قَالَ حَضْرَتْ ابْنُ عَبَّاسٍ عَلَيْهَما السَّلَامُ: وأَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مِنَ الْقِرَاءَةِ مِنْ حَيْثُ كَانَ بَلَغَ حَضْرَتْ أَبُو بَكْرٍ عَلَيْهَ السَّلَامُ، قَالَ حَضْرَتْ وَكِيْعٌ رحمة الله عليه: وَكَذَا السُّنَّةُ. قَالَ: فَمَاتَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ فِى مَرَضِهِ ذلِكَ.

অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিমাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, যে মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে ছিলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে আনুন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি হযরত হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে পাঠাবো? তিনি বললেন, উনাকে ডাকুন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন র্আ্ রাবিআহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে পাঠাবো? তিনি বললেন, উনাকে ডাকুন। হযরত উম্মুল ফদ্বল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, আমি আপনার কাছে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে পাঠাবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উনারা সবাই সমবেত হলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মাথা মুবারক উঠালেন এবং তাকালেন অতঃপর চুপ করে থাকলেন। তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনারা সবাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে উঠে যান। তারপর হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ছলাত সম্পর্কে অবহিত করলেন। তখন তিনি বললেন, আপনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বলুন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায় করেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তো একজন কোমল অন্তর ও নরম প্রকৃতির লোক। তিনি যখন আপনাকে দেখবেন না, তখন তিনি কেঁদে ফেলবেন এবং লোকেরাও (উনার সাথে) কাঁদবেন। আপনি যদি হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদের নিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায়ের নির্দেশ মুবারক দিতেন। এরপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বের হয়ে আসলেন এবং লোকদের নিয়ে সম্মানিত ছলাত আদায় শুরু করলেন। এসময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছুটা ছিহহাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন এবং তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধ মুবারকে ভর দিয়ে বের হলেন।  মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশের কারণে উনার দু’পা মুবারক মাটিতে লেগে যাচ্ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবূল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলেন, তখন উনারা তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে সতর্ক করে দিলেন। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তখন পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে স্বস্থানে  থাকার জন্য ইশারা মুবারক করলেন। অর্থাৎ আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের ডান দিকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে বরাবর পাশে রেখে যমীনের উপর বসে পড়লেন। আর তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। অতঃপর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইক্তিদা করলেন,  আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ইক্তিদা করলেন।

হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিমাস সালাম তিনি বলেন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ক্বিরা’য়াত পাঠে যে পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  তারপর থেকে ক্বিরায়াত পাঠ শুরু করেন।  হযরত ওয়াকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটাই হলো সম্মানিত সুন্নত তরীক্বা। বর্ণনাকারী বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার এই মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসেই সম্মানিত নামায আদায় করেছেন।

মুহম্মদ রাসেল

খুলনা।

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: “যাকাত” অর্থ বরকত বা বৃদ্ধি, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে।

‘মালী’ তথা মাল-সম্পদে বরকত হবে, বৃদ্ধি হবে, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে।

জিসমানী হচ্ছে তার দৈহিকভাবে বৃদ্ধি হবে, সে সুস্থ থাকবে, সব ধরনের পবিত্রতা হাছিল হবে। কোন বর্ধন তার হারাম দ্বারা হবে না।

‘রূহানী’ বৃদ্ধি হচ্ছে তার তাযকিয়া অর্জন হবে, রূহানী যে বাধাসমূহ থাকে তা কেটে যাবে। আর রূহানী পবিত্রতা মানেই হচ্ছে সে কামালিয়াত অর্জন করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে। সুবাহানাল্লাহ!

যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ কারও কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%।  কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোজা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমযান মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমযানের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি থাকে সে কারনে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُوا حَقَّه يَوْمَ حَصَادِه ۖ

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো।

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ:

যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

 

 

নং

 

জমির বর্ণনা

 

ফল/ফসল উৎপাদনের সময় (মাস/তারিখ

 

ফল/ফসলের নাম

 

উৎপন্ন ফল/ফসলের পরিমাণ

উশর বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (১০ ভাগের ১ ভাগ নিছফে-উশর পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (২০ ভাগের ১ ভাগ ফল/ ফসলের বাজার দর (টাকা)  

উশর-নিছফে উশর বাবদ বিক্রকৃত অর্থ (টাকা)

বাড়ির আঙ্গিনা   আম ৫০০টি ৫০ টি X ১০ ৫০০
অমুক জমি-১ বিঘা   ধান ১০০ মন X ৫ মন ৮০০ ৪০০০

অতএব, উক্ত ছক অনুযায়ী হিসাব রেখে যতবারই ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই পবিত্র উশর অথবা
নিছফু উশর তথা ফল-ফলাদির যাকাত প্রদান করতে হবে।

|

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ