সংখ্যা: ২৬০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সম্পাদকীয়

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

১৯৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকেছে পেছনের দরজা দিয়ে। ১৯৭০-এর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিলো না। বরং ছিলো- ‘পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’-এ প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতিই ২০০৮ এবং ২০১৪-এর নির্বাচনে পুনঃউচ্চারিত হয়েছে মাত্র। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশে উচ্চারণের প্রয়োজন হয় না। রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ‘ইসলাম’ উনার দেশেও প্রয়োজন হয় না। কারণ মুসলমান- ওই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের উপর বিশ্বাস করেই মুসলমান, যে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে অন্যসব ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনের সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধিবাসী থাকলেই অমুসলমানদের ধর্মনিরপেক্ষতা দাবির প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতা বিধিবদ্ধ থাকলেই যে নিরপেক্ষতা পালন হয় না, আমেরিকা-ভারত-ইংল্যান্ডসহ বড় বড় কথিত ঐতিহ্যবাহী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশগুলো তার নিকৃষ্ট প্রমাণ। সেখানে ‘মুহম্মদ’ নাম দেখলেই তার উপর হাজারো নির্যাতন। পবিত্র নামায পড়ার সুযোগ নেই।

সম্মানিত ইসলামী পোশাক পরার অবকাশ নেই। পবিত্র ঈদ উনাদের ছুটি নেই। মুসলমানিত্ব প্রকাশ করার অধিকার নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত হলেই যে ধর্মনিরপেক্ষতা কার্যকর হবে তা নয়। বরং সবক্ষেত্রে এখন এ অবস্থাই দৃশ্যমান যে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকেই কাটছাঁট করা হয়। মুসলমানকে অমুসলমানী কালচারে ভাসতে বাধ্য করা হয়।

এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। তাদের দ্বীন- পবিত্র ‘ইসলাম’। আর ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ তথাকথিত অন্যান্য ধর্মের মতো নয়। পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। অন্য কোনো ধর্মই খেলাধুলা, নির্বাচন, গান-বাজনা, মূর্তি, অভিনয়, উলঙ্গপনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। সে সুবাদে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও ধর্মের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতাউত্তর এদেশে গান-বাজনা, কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, সিনেমা এগুলোকে সরকারি পর্যায়ে শুধু সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়নি;

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাতে অন্যান্য বিধর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে পারে, সেজন্যও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে ও হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! এক্ষেত্রে শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশের জনগণের পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অস্বীকার্য থেকে যায়। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু এদেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানরা কী মানতে পারে যে, তাদের দ্বীন- পবিত্র ‘ইসলাম’ উনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র স্বীকার করবে না?

এদেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানরা কী মানতে পারে যে, তাদের প্রাণাধিক প্রিয় দ্বীন- পবিত্র ‘ইসলাম’ উনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র সম্মান করবে না। এদেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানরা কী সহ্য করতে পারে যে, তাদের ঈমান- পবিত্র ‘ইসলাম’ উনাকেকে রাষ্ট্রযন্ত্র পদে পদে ধিকৃত করবে?

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে খেলাধুলা হারাম। কিন্তু তারপরেও রাষ্ট্রযন্ত্র দেশের কোটি কোটি নাগরিককে না খাইয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হারাম খেলাধুলার পিছনে ব্যয় করে; তখন এদেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানরা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে কী ধরনের আশাহত ও চরম বিপরীতমুখী আচরণের মুখোমুখি হয়, তা কী ভাবা যায়?

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় যখন সিনেমাসহ যাবতীয় অশ্লীলতার অবাধ অনুশীলন হয়; তখন এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের দ্বীনী অনুভূতিতে কত চরম আঘাত হানা হয়, তাও কী সম্যক উপলব্ধি করা যায়?

দিনে দিনে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এদেশের ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানকে কু-প্ররোচনা দিচ্ছে- কীভাবে কত সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা যেতে পারে, মদ ধরা যেতে পারে, পরকীয়া, লিভ-টুগেদার তথা অবাধ যৌনাচারে ভাসা যেতে পারে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ মুসলমানগণ উনাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে এগুলো কঠিন হারাম এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চরম বিরোধী।

৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী কাজগুলোই হচ্ছে অবাধে, ব্যাপক উৎসাহে এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সাহায্যে। নাউযুবিল্লাহ! এতে করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছে বিপন্ন। মুসলমান হচ্ছে বিপর্যস্ত থেকে বিভ্রান্ত, হতাশাগ্রস্ত থেকে নেশাগ্রস্ত। অর্থাৎ এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের দ্বীনী অনুভূতি রাষ্ট্রযন্ত্রে স্বীকৃত নয়।

এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান হলেও তারা তাদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে নিরাপদ নয়। অনৈসলামিক কাজে বাধা দিলে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও শাস্তি থেকে মুক্ত নয়।

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে, মুসলমান হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি অনৈসলামিক কাজে বাধা দেয়া ফরয। কিন্তু এ ফরয কাজ স্বাধীনতাউত্তর থেকেই মুসলমানরা করতে পারছে না।

অথচ পাকী যালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা যুদ্ধ করা ফরয ছিলো; সেটি এদেশের নামধারী ও ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসী-জামাতীরা ব্যতীত সত্যিকার মুসলমানরা যথার্থরূপে উপলব্ধি করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু সে ফরয আদায়ের অভিজ্ঞতা বিস্তারে রাষ্ট্রযন্ত্র বাধা দিয়ে রেখেছে।

সঙ্গতকারণেই তাই প্রশ্ন জোরদার হয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকার করে? নাকি করে না? স্বীকার কি করবে? নাকি করবে না? রাষ্ট্রযন্ত্র কী মুসলমানদের দ্বীনী অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাবে? নাকি দেখাবে না? রাষ্ট্রযন্ত্র কী তবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম আর মুসলমান বাদ দিয়ে অন্যসব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের প্রতিই চরম সম্মান দেখাবে এবং পরম পৃষ্ঠপোষকতা করবে? কারণ অন্যসব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী রাষ্ট্রযন্ত্র খেলাধুলা থেকে সিনেমাসহ সব ধরনের অশ্লীলতার অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।

কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান সেখানে হয়ে যাচ্ছে অপাঙ্তেয় এবং এটা হচ্ছে কথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ সুবাদে।

দেখা যাচ্ছে, কথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ অন্যসব ধর্ম তথা সব অনৈসলামীপানার প্রভূত পরিচর্যা করে; কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর শুধুই আঘাত হানে। সঙ্গতকারণেই দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানরা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র এ অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়।

মূলত, সম্মানিত ইসলামী প্রজ্ঞার অভাবে কোনো সরকারই এ সত্যটি আদৌ উপলব্ধি করতে পারেনি। সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, সরকারেরও প্রয়োজন রয়েছে নেক পরামর্শ তথা নেক ছোহবত মুবারক, রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত মুবারক হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়