শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি আদব (৪)
স্বীয় শায়েখ হযরত উছমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি এরূপ শ্রদ্ধাবোধ উনাকে বিহ্বল করে তুললো। হযরত উছমান হারুনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবেগে কেঁদে ফেললেন। সালাম মুবারক পেশ করার নির্দেশ মুবারক দিলেন। নির্দেশ মুবারক পেয়ে তিনি বললেন, আছছালাতু আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাথে সাথে পবিত্র রওজা শরীফ থেকে জাওয়াব আসলো-
وعليكم السلام يا قطب الـمشائخ
অর্থ: “হে মাশায়িখগণের কুতুব তথা পথ প্রদর্শনকারী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক।” সুবহানাল্লাহ! (গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি পূর্ণাঙ্গ জীবনী-৬৭)
যিনি স্বীয় শায়েখ উনার আদেশ নির্দেশ মুবারক ব্যতীত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও পর্যন্ত সালাম মুবারক পেশ করেননি তিনি আদব উনার মাকামে কোন স্তরে পৌছেছেন তা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভালো জানেন।
গাউছুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত
কুতুবুল মাশায়িখ হযরত খাজাবাবা গরীব নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাগদাদ শরীফে ফিরে এসে যখন দেখলেন উনার মুর্শিদ বাগদাদ শরীফে নেই বরং উনারই সন্ধানে বেরিয়েছেন তখন তিনিও আবার উনারই সন্ধানে বাগদাদ শরীফ ত্যাগ করার চিন্তা করতে লাগলেন। দূরে যাওয়ার পূর্বে তিনি হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাৎ করার বাসনা নিয়ে “কছবা হবল” (বাগদাদ শরীফের প্রান্ত দেশে একটি ক্ষুদ্র শহরে) গমন করলেন।
হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত খাজাবাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। মুহব্বত ও স্নেহের পরশ দিয়ে আলিঙ্গন করলেন এবং অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীমের সাথে উনাকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করলেন।
তিনি উনাকে এক বিশেষ মেহমানের আসনে স্থান দেন। শুধু খাদিমদের উপর নির্ভর না করে নিজে উনার দেখা শুনা করেন। কিন্তু হযরত খাজাবাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এতো খিদমত ভালো লাগছিলো না। তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করার জন্য ইরাদা করলেন। এ কথা জানতে পেরে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে মেহমান খানায় এসে জিজ্ঞেস করলেন:
হে কুতুবুল আলম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি নাকি চলে যেতে চাচ্ছেন?
হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন:
আমার মন মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে, আমি উনার সন্ধানে বের হবো।
হে দ্বীনের সাহায্যকারী! আজকের রাতটা থেকে যান, আমি আপনার রূহের গেজার (আত্মার খোরাক) জন্য সা’মা শরীফ উনার ব্যবস্থা করেছি।
সম্মানিত কাদেরীয়া সিলসিলা বা তরীকায় যদিও ‘সামা’ শরীফ উনার প্রচলন নেই তবুও মেহমানের সম্মানে এ ‘সামা শরীফ’ প্রথমবারের মতো খোদ তরীকার ইমাম উনার দ্বারা উনারই খানকা শরীফে মাহফিল হচ্ছে।
এ কথা ঝড়ের বেগে শহরে প্রচারিত হয়ে গেলো যে, আজ রাতে হযরত বড় পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খানকা শরীফে সামা শরীফের মাহফিল হবে।
এছাড়াও হযরত গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজের মুরীদানদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা ‘সামা শরীফ’ শুনতে চাও তারা মাহফিলে অবস্থান করো। আর যারা সামা শরীফ শুনতে না চাও তারা আমার সাথে যিকিরের মাহফিলে বসতে পার।
তিনি খাদেমদেরকে বললেন, যারা ‘সামা’ শরীফ শুনতে চায় তাদের সকলকে ইশার নামাযের পর মাহফিল শরীফে উপস্থিত থাকতে বলো। উনার এ ঘোষণায় বাগদাদ শরীফের অসংখ্য মুত্তাক্বী ও পরহেযগার লোকদের মধ্য হতে অসংখ্য লোকের সমাবেশ ঘটলো এবং সকলের মধ্যে একটা উৎফুল্লভাব পরিলক্ষিত হলো।
একদিকে হযরত গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার খানকা শরীফে মুরিদানদেরকে যিকিরের ‘দরস’ (শিক্ষা) দিচ্ছিলেন। অপরদিকে মাহফিল শরীফে সামা শরীফ উনার আওয়াজ উচ্চ হতে উচ্চতায় পৌঁছতে ছিলো।
রাত দ্বিপ্রহরের পর হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কামরার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন:
হে দ্বীনের সাহায্যকারী! আমি কি ভিতরে আসবো?
হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বসম্মানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলেন:
হুযূর! আপনি ভিতরে আসবেন এতে অনুমতির কোন প্রয়োজন আছে কি? দয়া করে প্রবেশ করুন। হযরত গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং হযরত খাজাবাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বসতে বললেন। উভয়ে বসে কিছুক্ষণ বাক্যালাপ করার পর হযরত গাউছুল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, কাল সকালে আপনার সাথে হয়তো দেখা হবে না, আপনি চলে যাবেন তাই দেখা করতে এলাম।