সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুসাম্মত ঝরণা

ধামইরহাট, নওগাঁ

সুওয়াল: সৎ জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব: না, জায়িয নেই।

 

মুসাম্মত সাবিকুন্নাহার

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: গোসল ফরয হয়েছে এমতাবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করানো ও নিজে কিছু খাওয়া যাবে কিনা?

জাওয়াব: সন্তানকে দুধ পান করানোও যাবে এবং নিজেও পানাহার করা যাবে। তবে নিজে পানাহার করার পূর্বে গড়গড়ার সাথে কুলি করে নেয়া উত্তম।

 

আঙ্গুর আহমদ

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: অনেকে বলে, রমাদ্বান শরীফ উনার কাযা রোযা আদায় ব্যতীত শাওওয়াল মাসের নফল রোযা রাখা যাবে না। এটা কতটুকু দলীলসম্মত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেই শুদ্ধ ও দলীলসম্মত নয়। কেননা যদি কোন অসুস্থ ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে অথবা কোন মুসাফির ব্যক্তি সফরে থাকার কারণে ২৫ দিন রমাদ্বান শরীফ মাসে রোযা রাখতে পারলো না। অতঃপর অসুস্থ ব্যক্তি পরিপূর্ণ সুস্থ হলো এবং মুসাফির ব্যক্তি মুক্বীম হলো, এখন উক্ত সুস্থ ও মুক্বীম ব্যক্তির জন্য কি শাওওয়াল মাসের সুন্নত ছয় রোযার হুকুম সাকিত বা রহিত হয়ে যাবে? কস্মিনকালেও নয়।

কাজেই, ফরয রোযা উনার গুরুত্ব হিসেবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনাদায়ী ক্বাযা রোযা রাখতে হবে কিন্তু উক্ত রোযা ধারাবাহিকভাবে রাখা অথবা শাওওয়াল মাসের মধ্যেই রাখতে হবে, তা শর্ত নয়। তবে উক্ত ক্বাযা রোযা উনার সংখ্যা কম হলে সম্ভব হলে তা রেখে শাওওয়ালের ছয় রোযা রাখা ভালো। আর যদি মনে করে শাওওয়াল মাসে শুধু ছয় রোযাই রাখবে পরবর্তী মাসে রমাদ্বান শরীফ উনার ক্বাযা রোযা রাখবে, সেটাও করতে পারবে।

 

জান্নাতুল মাওয়া

ধামইরহাট, নওগাঁ

সুওয়াল: কোন মেয়ের পিতা যদি হারাম খাবার খায়, ঐ মেয়ে বিয়ের পর পিতার বাড়িতে খেতে পারবে কিনা?

জাওয়াব: বিবাহের পর হোক অথবা বিবাহের পূর্বে হোক কোন অবস্থাতেই কারো জন্যেই হারাম খাবার গ্রহণ করা জায়িয নেই। কোন হারাম খাবার খেলে দুআ ও ইবাদত কোনকিছুই কবুল হবে না। শুধু তাই নয়, হারাম খাবার অর্থাৎ খাদ্য-পানীয় গ্রহণকারী ব্যক্তি জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।

অতএব, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, সন্তান সবাইকে হারাম খাদ্য, পানীয় ও বস্ত্র পরিহার করতে হবে।

 

বিনতে রিয়াজ

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী ক্রীমে এলকোহল আছে, এই ক্রীম ব্যবহার করা যাবে যাবে কি?

জাওয়াব: ক্রীম হোক, পাউডার হোক, আতর হোক ইত্যাদি ব্যবহার্য দ্রব্য অথবা যেসব খাদ্য-পানীয় ইত্যাদির মধ্যে যদি এলকোহল থাকে তা ব্যবহার করা কখনো জায়িয নেই।

 

মুসাম্মত ফাতিমাতুয যাহরা

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: বাজারে যে গোল্ড মেহেদী পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: বাজারে গোল্ড মেহেদী হোক অথবা গোল্ড ছাড়া মেহেদী হোক; তা ব্যবহার জায়িয হওয়ার জন্য শর্ত দু’টি। (এক) উক্ত মেহেদী এলকোহল মুক্ত হতে হবে (দুই) তা ব্যবহারে যেনো নেইল পালিশের ন্যায় প্রলেপ না পড়ে। অর্থাৎ যে কোনো প্রকার মেন্দি বা মেহেদী হোক না কেন তা ব্যবহারের ক্ষেত্রেই উক্ত শর্ত দুটি লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ উক্ত দুই শর্ত মুক্ত হতে হবে। তাহলে মেন্দি বা মেহেদী ব্যবহার করা জায়িয হবে।

 

মুহম্মদ নাজির আলম

কক্সবাজার

 

সুওয়াল: মৃত ব্যক্তির বাড়ীতে রান্না করার সঠিক ফায়ছালা কি?

জাওয়াব: কোন ব্যক্তি ইনতিকাল করলে তার পরিবারস্থ লোকজন শোকাহত হন। সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে সাধারণভাবে কারো ইনতিকালে তিনদিন শোক পালন করার কথা বলা হয়েছে। তবে আহল বা স্বামীর জন্য তার আহলিয়া বা স্ত্রীর প্রতি শোক পালনের বিষয়টি আলাদা। অর্থাৎ আহলিয়া আহলের ইনতিকালে চার মাস ১০ দিন শোক পালন করবে। এ সময়ের মধ্যে আহলিয়া কোন রকম সাজসজ্জা করতে পারবে না। অলঙ্কার, আলতা, কুমকুম, মেহেদী, তেল, ¯েœা, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি বাইরে ঘুরাফেরা করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-সজনদের বাড়ীতেও যেতে পারবে না। বরং নিজ অবস্থান স্থলে থেকেই সাধাসিধেভাবে সময় অতিবাহিত করতে হবে।

এছাড়া মৃত ব্যক্তির ইনতিকালের কারণে পরিবারের অন্য লোকেরা শোকাহত হন এবং এ কারণে মৃত ব্যক্তির পরিবারস্থ মহিলারা রান্নাবান্না করার শক্তি ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে প্রতিবেশি ও নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজনরা মৃতব্যক্তির পরিবারের লোকজনের খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। সাধারণভাবে তিনদিন যেহেতু শোকের দিন সেহেতু তিনদিনই উক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।

তবে উক্ত শোকের দিনে রান্নাবান্না করা নিষেধ বা নাজায়িয নয়। কারো পরিবারে খাবার দেয়ার মতো যদি কেউ না থাকে, সেক্ষেত্রে উক্ত পরিবারের লোকজনকেই রান্না করেই খেতে হবে।

মোটকথা, কোন বাড়িতে কেউ ইনতিকাল করলে সেই বাড়িতে রান্না করা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ও নাজায়িয নয় বরং জায়িয রয়েছে।

 

মুহম্মদ বায়তুল ইসলাম

নওগাঁ

সুওয়াল: বিধর্মীদের হাত দিয়ে মাঠের কাজ অর্থাৎ জমি চাষ, ফসল ফলানো, ফসল কাটানো, মাড়ানো ইত্যাদি করে নেয়া যাবে কি?

জাওয়াব: হ্যাঁ, যাবে।

 

মুহম্মদ মোতাহার হুসাইন

নওগাঁ

 

সুওয়াল: জমি বন্ধক সম্পর্কে জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সমাজে প্রচলিত নিয়মে যেভাবে জমি বন্ধক নেয়া হয় শরীয়তে তা জায়িয নেই। কেননা জমির মালিক যত টাকা নিয়ে জমি বন্ধ রেখেছে তত টাকা বন্ধক গ্রহীতাকে না দেয়া পর্যন্ত সে বন্ধক খুলতে বা ছুটাতে পারে না। এভাবে যত বছর অতিবাহিত হোক না কেন বন্ধক গ্রহণকারী ব্যক্তি বন্ধকী জমির ফসল ভোগ করে থাকে। এটা সুদের শামিল। কেননা এক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতার টাকা সম্পূর্ণই অক্ষত বা জমা থাকে। আর জমির ফসল সে ভোগ করে অতিরিক্ত হিসেবে। এজন্য কোন বিনিময় সে প্রদান করে না। তার বিনিময় শুধু এতটুকু যে, সে জমির মালিককে কর্জের ন্যায় টাকা দিয়েছে। আর এরূপে টাকা দিয়ে তার বিনিময়ে ফায়দা হাছিল করা খালিছ সুদ গ্রহন করার নামান্তর। যা শক্ত হারাম।

কাজেই, জমি বন্ধক নিয়ে তার ফসল ভোগ করার জন্য শর্ত হচ্ছে, সে যত টাকার ফসল ভোগ করবে, তত টাকা জমির মালিককে দেয়া টাকা থেকে কাটা যাবে। আর বন্ধকগ্রহীতা যদি বন্ধকী জমির খাজনা দেয় সেক্ষেত্রে সে যত টাকা খরচ করবে, তত টাকারই ফসল ভোগ করতে পারবে। তার চেয়ে এক পয়সার ফসলও বেশি ভোগ করলে সেটাও সুদ হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।

 

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

চাঁদপুর

সুওয়াল: যেসব মালানা লম্বা টুপি, কোর্তার উপর কোর্ট পরে, নিজ বাড়িতে রঙিন টিভি, ডিস এন্টেনা রাখে, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে এবং বিভিন্ন জায়গায় মাহফিলের ভিডিও প্রদর্শন করানো হয় এবং সে ধারণকৃত ভিডিও স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ডিজিটাল পর্দায় মহিলাদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এখন আমার সুওয়াল হলো, উপরোক্ত চরিত্রের মালানাদের মাহফিলে সহায়তা করা, এদেরকে ইমাম নিযুক্ত করা, এদের পেছনে নামায আদায় করা, এদের ওয়াজ শোনার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: উল্লেখিত চরিত্রের মালানাদের মাহফিলে সহায়তা করা, তাদেরকে ইমাম ও খতীব নিযুক্ত করা, তাদের পিছনে নামায আদায় করা, তাদের ওয়াজ শোনা ইত্যাদি কোনটিই সম্মানিত শরীয়তসম্মত নয় বা জায়িয নয়। কারণ এসব মালানারাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উলামায়ে সূ, দাজ্জালে কাযযাব। এরা সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক বিরোধী আক্বীদা ও আমলের অধিকারী। এরাই হারামকে হালালকারী। এরাই যখন ছবি তুলে, ছবির সাহায্যে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, ভিডিও করে এবং তা নিজে দেখে ও অন্যদেরকে দেখার কথা বলে তখন সাধারণ মানুষ ছবি, টিভি, ভিডিও ইত্যাদিকে জায়িয মনে করে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ ছবি ও ছবি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় প্রদর্শনী বা প্রচার মাধ্যম সবই হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

كل مصور فى النار

অর্থ: ছবি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা প্রত্যেকেই জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-

ان اشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة الـمصورون

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তিকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে। (বুখারী শরীফ)

কাজেই, ছবি টিভি ইত্যাদি জায়িযকারী মালানাদের ওয়াজ শোনা জায়িয নেই।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم

অর্থ: নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ইলিমই হচ্ছেন সম্মানিত দ্বীন। অতএব কার নিকট থেকে তোমরা দ্বীন বা ইলিম গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো। (মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ যে মালানার ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুযায়ী নয় তাকে কখনোই অনুসরণ করা যাবে না, তার ওয়াজ শোনা যাবেনা, তাকে ইমাম বানানো বা তার পিছনে নামায পড়া যাবে না।

শুধু তাই নয়, অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم

অর্থ: তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে না পারে এবং ফিতনায় ফেলতে না পারে অর্থাৎ কুফরী ও হারাম কাজে মশগুল করে জাহান্নামী করতে না পারে। (মুসলিম শরীফ)

 

মুহম্মদ আতিকুর রহমান

পুরান বাজার, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  পবিত্র কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? পবিত্র কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে পবিত্র যিল হজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ এবং মোছ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن ام الـمؤمنين حضرت ام سلمة عليها السلام قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (পবিত্র কুরবানী না করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)

মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لـهذه الامة قال له رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بـها قال لا ولكن خذ من شعرك واظفارك وتقص شاربك وتحلق عانتك فذلك تمام اضحيتك عند الله.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু পবিত্র কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গোঁফ খাট করবেন এবং আপনার অন্যান্য অতিরিক্ত চুল কাটবেন, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা সম্মানিত কুরবানী করবে না, তাদের জন্যও পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার চাঁদ দেখার পর থেকে সম্মানিত কুরবানী করার আগ পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানী উনার ছওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ! {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহূদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহিরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ রাহাতুল আলম

সদর, রাজবাড়ী

 

সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?

জাওয়াব: পবিত্র যিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে-

وقيل ثلاث مرات

অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”  “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.

অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”

উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ এনামুল কবীর

নরসিংদী

 

সুওয়াল:   পবিত্র কুরবানী কার উপর ওয়াজিব? অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার নিছাব কি?

জাওয়াব:  পবিত্র যিলহজ্জ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।

 

মুসাম্মত উম্মু মা’রূফা

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।

জাওয়াব:  পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন

দিনাজপুর

 

সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।

ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত। উক্ত মাকরূহ ওয়াক্তের মধ্যে ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।

পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক  করতেন।”

“হযরত আবুল হুয়ায়রিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ মুবারক করেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায খুব সকাল সকাল পড়বেন এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বেন এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবেন।

কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

সদর, গাজীপুর

 

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর  পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া  পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

 

হাফিয মুহম্মদ কামাল হুসাইন

শাহাতলী, চাঁদপুর

সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কুরবানী উনার পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা পবিত্র কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি?

জাওয়াব: না, জায়িয নেই। কারণ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-

من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)

আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।

আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযীহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি পবিত্র কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ মাজেউল ইসলাম

গাইবান্ধা

সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও  আক্বীকা এক সাথে করা জায়িয হবে কিনা?

জাওয়াব:   হ্যাঁ, জায়িয হবে।  {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন

রাজারহাট, কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল:  বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে দেয়, তবে উক্ত গোশতের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুুক্ত হবে কি-না?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষভাবে পবিত্র কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ।

বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা ও তার পবিত্র কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।

কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শরহে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিক ও মুজাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ আজিজুর রহমান

গাজীপুর

 

সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী দিলে তার নিজের পবিত্র কুরবানী আদায় হবে কিনা?

জাওয়াব: না, আদায় হবে না। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই পবিত্র কুরবানী করতে হবে। যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে পবিত্র কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে পবিত্র কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা-মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)

বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

মুহম্মদ রফীকুল ইসলাম

মোমেনশাহী

 

সুওয়াল:  যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এক নামে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা?

জাওয়াব:  হ্যাঁ, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে পবিত্র কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ  বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।

গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে পবিত্র কুরবানী করলে কারো পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।

যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ৫০০ টাকা করে ২০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।

তদ্রƒপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।

এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে পবিত্র কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে পবিত্র কুরবানী করবে?

এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ পবিত্র কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, পবিত্র কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ  প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে পবিত্র কুরবানী করলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা, টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ পবিত্র কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে পবিত্র কুরবানী দিলে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নাম মুবারক-এও পবিত্র কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}

 

মুহম্মদ যাকারিয়া

ফরিদপুর

সুওয়াল:  হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অ-কোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।

 

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন

বানারীপাড়া, বরিশাল

 

সুওয়াল: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কি না? জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না তাদের সে কথা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই সম্মানিত শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ হাফিজুর রহমান

রাঙ্গামাটি

 

সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু পবিত্র কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? পবিত্র কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?

জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।

কাজেই, পবিত্র কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين

অর্থ: বান্দাদের প্রতি নির্দেশ মুবারক হলো তারা যেনো খালিছভাবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই ইবাদত করে। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

আর পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان الله لا يقبل من العمل الا ماكان خالصا وابتغى به وجهه.

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দার ওইসব আমল কবুল করেন না; যা খালিছভাবে করা হয় না এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে করা হয় না। (নাসায়ী শরীফ শরীফ, দায়লামী শরীফ)

অতএব, বান্দার জন্য ফরয হচ্ছে কুরবানীসহ প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে করা। মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্য ছাড়া বান্দা বিভিন্ন উদ্দেশ্য ও নিয়তে যে আমল করে থাকে তা সবই গইরুল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত। গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বান্দা যত বড় আমলই করুক না কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তা কখনই কবুল করেন না। উপরন্তু গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে আমল করার কারণে বান্দা মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি লাভ করে থাকে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فويل للمصلين. الذين هم عن صلاتهم ساهون. الذين هم يرائون.

অর্থ: ওই সকল নামাযীদের জন্য ধ্বংস-জাহান্নাম যারা উদাসীন-অন্যমনস্ক হয়ে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে। (পবিত্র সূরা মাউন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ  শরীফ ৪, ৫,৬)

প্রতিভাত হলো, কোন আমলই গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে করা যাবে না। সমস্ত আমলই করতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যে।

উল্লেখ্য, মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করার নাম হচ্ছে রিয়া। এই রিয়া সম্পর্কে পবিত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الرياء شرك خفى

অর্থ: রিয়া হলো গুপ্ত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان يسير الرياء شرك

অর্থাৎ, রিয়ার সামান্য অংশও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কাজেই, রিয়াকে বান্দার অন্তর থেকে দূর করে দিতে হবে। কারণ বান্দার মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত রিয়া বা লৌকিকতা এই বদ খাছলতটি বিরাজ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য কোন আমল করা সম্ভব হবে না।

একইভাবে সুনাম অর্জনের জন্য কোন আমল করাও জায়িয নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, কোন ব্যক্তি সম্মান-সুনাম হাছিলের জন্য যদি কোন আমল করে, তাহলে সে তার আমলনামা এতটুকু ক্ষতি করলো যেমন দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে একপাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করলো। নাউযুবিল্লাহ!

আর বিশেষ করে পবিত্র কুরবানীর উদ্দেশ্য কি হবে সে বিষয়টা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-

لن ينال الله لحومها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না। বরং উনার নিকট পৌঁছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (পবিত্র সূরা পবিত্র হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন

নূরাণীগঞ্জ

 

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয আছে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, উক্ত দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)

 

মুহম্মদ মি’রাজ হুসাইন

নোয়াখালী

 

সুওয়াল: সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলকারী ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানী উনার চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী বিধান ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মালানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল পবিত্র হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, সম্মানিত ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। পবিত্র ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। সন্ত্রাসী-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ তথা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কারণ।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لن ينال الله لحوموها ولا دماءها ولكن يناله التقوى منكم

“পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পৌঁছায় না। পৌঁছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” (পবিত্র সূরা পবিত্র হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)

কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গু-া-পা-া, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।

তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।

কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫/১ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পরÑ ২৯)

‘সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশ তো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

পঞ্চম প্রমাণ :

মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সম্মানিত ইলম মুবারক তলব করার কারণে, এর মাধ্যম দিয়ে রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করার কারণে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি ইলম মুবারকতো লাভ করলেনই, সারা পৃথিবীর কর্তৃত্ব মুবারকও লাভ করলেন, সাথে সাথে হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারকও লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ! তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কেউ যদি মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তলব করে, এর মাধ্যম দিয়ে রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করে, তাহলে সেই বান্দা-বান্দী, উম্মত, জিন-ইনসান কী নিয়ামত মুবারক লাভ করবে?” সুবহানাল্লাহ!

মূলত সেই বান্দা-বান্দী, উম্মত নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতের কর্তৃত্ব মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, ‘অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার জন্য ইতোপূর্বে কেউ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আরজী পেশ করেননি, জারী করার তো প্রশ্নোই আসে না। একমাত্র মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ অনন্তকালব্যাপী মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াত শরীফ পালন করার জন্য সম্মানিত আরজী মুবারক পেশ করেছেন এবং উনার সম্মানিত আরজী মুবারক কবূল করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লাভ করার কারণে উনার জন্য দায়িমীভাবে খুশি প্রকাশ করে যাচ্ছেন, উনার সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করে যাচ্ছেন এবং তা অনন্তকালের জারি করেছেন, এর মাধ্যম দিয়ে হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক তলব করে যাচ্ছেন। (সুবহানাল্লাহ)

মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্মানার্থে এই সম্মানিত মাহফিল মুবারক অনন্তকালব্যাপী চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর কখনও বন্ধ করা হবে না।” সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সারা পৃথিবী তো অবশ্যই; এমনকি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ব্যতিত সারা কায়িনাত বলতে যা বুঝায়, সেই সারা কায়িনাতব্যাপী কর্তৃত্ব মুবারক করবেন, সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ!

এই প্রসঙ্গে আরো বলতে হয় যে, একদা মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার একখানা সম্মানিত বিশেষ শান মুবারক উনার বহি:প্রকাশ মুবারক ঘটে। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ থেকে একখানা বিশেষ নূর মুবারক মুজাদ্দিদে আ’যম আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত বক্ষ মুবারক এসে পড়লেন এবং সেখান থেকে উক্ত সম্মানিত নূর মুবারক উনার আলো মুবারক দ্বারা সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে যা কিছু ছিলো সমস্ত কিছু আলোকিত হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ!

এখান থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে যে, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার সম্মানিত নূর মুবারক উনার দ্বারা সারা পৃথিবী তো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু আলোকিত হবে। অর্থাৎ তিনি সারা পৃথিবীতো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতব্যাপী সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ!

অতএব মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন ইনশাআল্লাহ!

উপরোক্ত সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক, সম্মানিত ইজমা ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তান নয়, ভারত নয়, এশিয়া নয়, বরং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবী তো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতব্যাপী সুদীর্ঘ ৩০-৪০ বৎসর যাবৎ সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক পরিচালনা করবেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় সারা পৃথিবীর সমস্ত জিন-ইনসান, পশু-পাখি, বাতাস তো অবশ্যই; এমনকি সারা কায়িনাতে যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক উনার অধীনে থাকবে এবং হুকুম অনুযায়ী চলবে। সুবহানাল্লাহ!

তখন এদেশ ও সারা পৃথিবীর অবস্থা যে কিরূপ হবে, তা সমস্ত জিন-ইনসান ও মাখলূকাতের চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ! তবে সংক্ষেপে বুঝার জন্য এতটুকু যে, তখন এমন সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে যে, এ দেশ ও সারা পৃথিবী হবে সম্মানিত জান্নাত উনার একখানা অংশ। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন নছীব করুন। আমীন!

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন, ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়ছালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খণ্ডন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রƒপ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে অসুস্থ অবস্থায় মসজিদে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) মসজিদে চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন কিনা অথবা তিনি কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رأيتمونى اصلى

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ,  মুসলিম শরীফ,  মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “বুখারী শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৯৪পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ ام المؤمنين حضرت عَائِشَةَ عليها السلام، قَالَتْ : أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبَا بَكْرٍ أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي مَرَضِهِ فَكَانَ يُصَلِّي بِهِمْ قَالَ عُرْوَةُ فَوَجَدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم من نَفْسِهِ خِفَّةً فَخَرَجَ فَإِذَا أَبُو بَكْرٍ يَؤُمُّ النَّاسَ فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ اسْتَأْخَرَ فَأَشَارَ إِلَيْهِ أَنْ كَمَا أَنْتَ فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِذَاءَ أَبِي بَكْرٍ إِلَى جَنْبِهِ فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يُصَلِّي بِصَلوَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلوَةِ أَبِي بَكْرٍ.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারিদ্বী (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশ অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে লোকজন উনাদেরকে নিয়ে নামায আদায় করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকজন উনাদের নিয়ে নামায আদায় শুরু করেন। হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ইতোমধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই কিছুটা সুস্থতাবোধ করলেন এবং নামাযের জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজন উনাদের ইমামতি করছিলেন। অতঃপর তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখে পিছনে আসতে চাইলেন; তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ইশারা করলেন যে, আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার বরাবর পাশে বসলেন। তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরন করে নামায আদায় করছিলেন আর লোকজন উনারা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনাকে অনুসরণ করে নামায আদায় করছিলেন।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৮৮-৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن حضرت انس بن مالك رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ركب فرسا فصرح عنه فجحش شقه الايمن فصلى صلوة من الصلوات وهو قاعد.

অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার ঘোড়ায় আরোহন করেন। অত:পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ায় উনার ডান পাজঁর মুবারকে ব্যথা পান। এমতাবস্থায় (অর্থাৎ উনার মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়)  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  যমীনে বসেই নামাযের ইমামতি করেন।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ حضرت جَابِرٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ رَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرَسًا بِالْمَدِينَةِ فَصَرَعَهُ عَلَى جِذامِ نَخْلَةٍ فَانْفَكَّتْ قَدَمُهُ فَأَتَيْنَاهُ نَعُودُهُ فَوَجَدْنَاهُ فِى مَشْرَبَةٍ لِعَائِشَةَ عليها السلام يُسَبِّحُ جَالِسًا قَالَ فَقُمْنَا خَلْفَهُ فَسَكَتَ عَنَّا ثُمَّ أَتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى نَعُودُهُ فَصَلَّى الْمَكْتُوبَةَ جَالِسًا

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে ঘোড়ার পিঠে আরোহন করার পর তার পিঠ থেকে খেজুর কাঠের উপর পড়ে গিয়ে স্বীয় পা মুবারকে আঘাত পান। অতঃপর (উনার মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়) আমরা উনাকে দেখতে এসে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফে তাসবীহ পাঠরত অবস্থায় দেখতে পাই। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উনার পেছনে দাঁড়াই, কিন্তু তাতে তিনি বাধা দেননি। অতঃপর আমরা (উনার মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়)  পুনরায় দেখতে এসে উনাকে ফরয নামায যমীনে বসা অবস্থায় আদায় করতে দেখি।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عَنْ حضرت جَابِرٍ رضى الله تعالى عنه قَالَ اشْتَكَى النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّيْنَا وَرَاءَهُ وَهُوَ قَاعِدٌ وَأَبُو بَكْر عليها السلام يُكَبِّرُ لِيُسْمِعَ النَّاسَ تَكْبِيرَه

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন,  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) যমীনে বসে নামায পড়ার সময় আমরা উনার পিছনে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করি। আর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি দ-ায়মান অবস্থায় মুক্তাদীগণ উনাদেরকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর বলেন।” (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ)

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-.

عَنْ ام المؤمنين حضرت عَائِشَةَ عليها السلام قَالَتْ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى بَيْتِهِ وَهُوَ جَالِسٌ فَصَلَّى وَرَاءَهُ قَوْمٌ قِيَامًا

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বর্ণনা করেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উনার মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায়) উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তিনি যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেন।  অতঃপর মুক্তাদীগণ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিছনে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করেছেন।

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে মসজিদে ও হুজরা শরীফ উভয়স্থানে যমীনে বসেই পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাকী

ধামইরহাট, নওগাঁ

সুওয়াল: জনৈক লা-মাযহাবীর লিখিত ‘ছহীহ হাদীছের আলোকে বিশ্বনবীর নামায’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, “ইমামের ক্বিরায়াতই মুক্তাদির ক্বিরায়াত” ইবনে মাজাহ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা নাকি একজন মিথ্যাবাদী রাবী দ্বারা বর্ণিত। উনার নাম জাবের জুফি। উনাকে যিনি মিথ্যাবাদী বলেছেন, তিনি নাকি স্বয়ং ইমাম আ’যম হযরত আবু হানীফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। অপরদিকে জানা যায় যে, উক্ত জাবের জুফি ২৩৫ হিজরী সনে জন্মগ্রহন করেছেন। এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লেখিত রাবী হযরত জাবির জুফি সম্পর্কে উক্ত লা-মাযহাবীর বক্তব্য যেরূপ দলীল প্রমাণবিহীন তেমনি সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, আক্বলহীন, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও চরম মিথ্যার শামিল। রাবী হযরত জাবির জুফি সম্পর্কে হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি লা-মাযহাবী ব্যক্তিটি চরম মিথ্যারোপ করেছে। হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে উক্ত কাযযাব, মুনাফিক ও মালউন লা-মাযহাবীর বক্তব্য যে অসত্য, চরম মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও দলীল-প্রমাণবিহীন তা জানা বা বোঝার জন্য খুব পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। বরং সাধারণ আক্বল সমঝই যথেষ্ট। তা হলো এই, মিথ্যাবাদী মুনাফিক, মালউন লা-মাযহাবীর লিখিত কিতাবের বিবরণ অনুযায়ী রাবী হযরত জাবির জুফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্ম ২৩৫ হিজরী সন। আর হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত শরীফ (জন্ম) হচ্ছে ৮০ হিজরী এবং বিছাল শরীফ (ইন্তিকাল) হচ্ছে ১৫০ হিজরী।

তাহলে হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ গ্রহনের ১৩৫ বছর পরে যে রাবী জন্ম গ্রহণ করেন উনাকে তিনি কি করে মিথ্যাবাদী বলতে পারেন?

হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং রাবী হযরত জাবির জুফি রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সম্পর্কে মিথ্যার তোহমত দিয়ে লা-মাযহাবী ব্যক্তি চরম লা’নতগ্রস্ত, চরম মিথ্যাবাদী বা কাযযাব ও প্রকাশ্য মুনাফিকে পরিণত হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لعنت الله على الكاذبين

অর্থ: মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।  (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)

অর্থাৎ ইবলীস যেরূপ লা’নতগ্রস্ত অর্থাৎ মালউন তদ্রƒপ উক্ত লা-মাযহাবীও লা’নগ্রস্ত বা মালউন।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

والله يشهد ان الـمنافقين لكاذبون

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনিই স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। অর্থাৎ মিথ্যা বলা হচ্ছে মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। (পবিত্র সূরা মুনাফিকুন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)

কাজেই, উক্ত লা-মাযহাবী মুনাফিকও বটে। আর মুনাফিকদের শাস্তি কাফির মুশরিকদের চেয়ে কঠোর ও ভয়ঙ্কর। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الـمنافقين فى الدرك الاسفل من النار

অর্থ: নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন বা নিকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে। নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৫)

মূল কথা হলো, মিথ্যা এমন একটি বদখাছলত বা বদস্বভাব, যেটা মু’মিন-মুসলমান উনাদের মধ্যে থাকতে পারে না।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ছফওয়ান ইবনে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মনি কি ভীরু হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উনাকে আরো জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন কি কৃপন হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উনাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, মু’মিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি বললেন না। (মুয়াত্তা মালিক শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন কোন বান্দা মিথ্যা বলে, তখন তার দুর্গন্ধে হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি তার নিকট থেকে এক মাইল দূরে চলে যান। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মিথ্যার ভয়াবহ পরিণতি বা শাস্তির কারণে স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি মিথ্যা থেকে বিরত থাকার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فاجتنبوا قول الزور

অর্থ: তোমরা মিথ্যা কথা পরিহার করো। (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)

মহান আল্লাহ পাক উনার উক্ত আদেশ মুবারক উপেক্ষা করে যারা মিথ্যা বলা থেকে, মিথ্যা লেখা থেকে বিরত না  হবে তারা ঈমান-ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মালউন, মুনাফিক হয়ে ইন্তিকাল করবে এবং জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اياكم والكذب فان الكذب يهدى الى الفجور وان الفجور يهدى الى النار ومايزال الرجل يكذب و ويتحر الكذب حتى يكتب عند الله كذابا

অর্থ: তোমরা মিথ্যা হতে বেঁচে থাক, নিশ্চয়ই মিথ্যা পাপাচারের পথে নিয়ে যায়। এবং নিশ্চয়ই পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর যে সবসময় মিথ্যা বলে এবং মিথ্যা বলতে চেষ্টা করে, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তাকে ‘কাযযাব’ (চরম মিথ্যাবাদী) বলে লিপিবদ্ধ করা হয়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অতএব, মুনাফিক্বী ও জাহান্নামী খাছলতের অধিকারী চরম মিথ্যাবাদী উক্ত লা-মাযহাবীর বক্তব্য ও লিখনী থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমান মাত্রই সকলের জন্য ফরয।

উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী বা রাবী উনাদের শুদ্ধতা সম্পর্কে বলতে হয় যে, এমন কোন হাদীছ শরীফ উনার কিতাব নেই, যে কিতাবের সকল হাদীছ শরীফ ছহীহ বা বিশুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছগণ একমত হয়েছেন। বরং কোন একখানা হাদীছ শরীফ উনাকে কোন একজন ছহীহ বলেছেন, অন্য একজন সেটাকে দ্বয়ীফ বলেছেন। যেমন এমন অনেক হাদীছ শরীফ রয়েছে, যেগুলো হযরত ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারা ছহীহ বলে গ্রহন করেন। কিন্তু ছিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য ইমামগণ সেগুলো ছহীহ নয় বলে পরিত্যাগ করেন।

আর তাই বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইমাম সাখাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আলফিয়া’ কিতাবের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন যে, ছহীহ বুখারী শরীফ উনার ৮০ জন ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনার ১৬০ জন রাবীর বর্ণনাকৃত হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উক্ত কিতাবদ্বয়ের ২০ জন রাবী অর্থাৎ বর্ণনাকারী মরজিয়া, ২৩ জন ক্বদরিয়া, ২৮ জন শিয়া, ৪ জন রাফিজী, ৯ জন খারিজী, ৭ জন নাসিবী ও ১ জন জহমিয়া। যারা সকলেই ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। (সায়িকাতুল মুসলিমীন)

কাজেই, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরের বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন একজন বর্ণনাকারীর ত্রুটির কারণে মুল হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা বা হুকুম বাদ হয়ে যাবে তা  কখনোই নয়।

মোট কথা, পবিত্র হাদীছ শরীফ হচ্ছেন সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তাই, রাবীদের ত্রুটির কারণে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনাকে ত্রুটিযুক্ত মনে করা যাবে না। যেমন এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

حدثوا عن بنى اسرائيل ولا حرج ومن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من  النار

অর্থ: বনী ইসরাইলের (ইহুদী-নাছারা) নিকট থেকে শুনেও তোমরা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতে পারো; এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেনো (দুনিয়ায় থাকতেই) তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল। নাউযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ