কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৮

সংখ্যা: ১৮৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

যে ইমাম  ও খতীব ছবি তোলে,

টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তার পিছনে নামায পড়ার হুকুম

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমাম ও খতীব হওয়ার জন্য হক্কানী আলিম হওয়া শর্ত। আর হক্কানী আলিম-এর সংজ্ঞা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

العلماء ورثة الانبياء

অর্থ: আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (মিশকাত শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

ان الله يبعث لهذه الامة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها دينا.

অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আখিরী উম্মতের জন্যে প্রত্যেক শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তিকে (মুজাদ্দিদকে) প্রেরণ করবেন, যিনি তাদের দ্বীন তথা আক্বীদা ও আমলের সংস্কার করবেন।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মানুষের আক্বীদা ও আমলের পরিশুদ্ধতার জন্যে আলিমগণের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সে কোন আলিম? আর আলিম কে?

প্রসঙ্গতঃ আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ  مِنْ عِبَادِهِ  الْعُلَمَاءُ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)

এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন, ৩য় হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশি আল্লাহভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলিম।”

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খুলাছায়” উল্লেখ আছে যে,

“العلماء” سے اصطلاحی عالم یعنی کتابیں پرہ لینے والے مراد  نهى بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کو نور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلے اللہ علیہ وسلم وارباب ولایت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نافع اعلی درجے کا تھا.

অর্থঃ- উক্ত আয়াত শরীফে العلماء শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত “আলিম” তারাই, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মা‘রিফাতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবূল ওলীআল্লাহগণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন।

উল্লিখিত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে কাছীর শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেন-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نور يجعله الله تعالى فى القلب.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর হযরত আহমদ বিন ছালিহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতিস্বরূপ। আল্লাহ পাক তা আলিমের অন্তকরণে দান করেন।”

উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে-

قال سفيان الثورى …. العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس بعالم بامرالله  وعالم بامرالله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامرالله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض.

অর্থঃ হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত: (১) আলিম বিল্লাহ অর্থাৎ যাঁরা শুধু আল্লাহ পাককেই জানেন। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যাঁরা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ ওয়া বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফারায়িয সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম)।

দ্বিতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

ومن ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলোÑ আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع الكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.

অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলতঃ হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তিনিই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

কাজেই হক্কানী আলিম হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকা। আর আক্বীদার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে বর্ণিত হারামকে হারাম ও হালালকে হালাল বলা ও জানা। কেননা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলা ও জানা কাট্টা কুফরীর অন্তর্র্ভুক্ত। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বায়িদে নাসাফী।)

স্মর্তব্য যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় ছবি তোলা হারাম। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরি করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরি করেছো, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দাও।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, ৮৮০ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২১০ পৃষ্ঠা)

এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

অর্থঃ হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”

عن سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى  النار يجعل له بكل  صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.

অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি তাঁর নিকটবর্তী হল। পুনরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরিকারীই জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে। অতঃপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون  بخلق الله.

অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরি করবে।” (মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

মিশকাত শরীফ এর ৩৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।

উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আজ জাওয়াজির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة  الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر

অর্থঃ ‘তাওজীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং কঠোর হারাম ও কবীরা গুনাহ।

 শরহে মুসলিম লিন নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم ايضا فيه  وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة  فهو فاسق  صاحب  ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরি বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে।

মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام   شديد التحريم وهو من الكبائر

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম ও কবীরা গুনাহ।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے اور رکھنا اسکا  ایسا ہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا ایسے فعل کا فاسق ہے اور امام بنانا اسکا حرام ہے اور  نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ہے.

অর্থঃ “আধুনিক যেকোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা তৈরি করানো, হাতে তৈরি করা বা তৈরি করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”

অতএব, যে সকল ইমাম ও খতীব ছবি তোলাকে জায়িয বা হালাল বলবে বা জানবে তারা হক্কানী আলিম হওয়া তো দূরের কথা তারা মুসলমানই থাকতে পারবে না। তাই তাদেরকে ইমাম ও খতীব হিসেবে নিয়োগ দেয়া ও তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয হওয়ারও প্রশ্ন উঠেনা।

দ্বিতীয়তঃ হক্কানী আলিম হওয়ার আরেকটি অন্যতম শর্ত হচ্ছে আমল বিশুদ্ধ থাকা। অর্থাৎ মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত তথা চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছেদ, চাল-চলন, আমল- আখলাক ইত্যাদি সব কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস অনুযায়ী হওয়া বা করা। যিনি হক্কানী আলিম হবেন তিনি ফরয ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করা তো দূরের কথা কোন মুস্তাহাবও ইচ্ছাকৃত তরক করবেন না।

পাশাপাশি কোন হারাম কাজ করা তো দূরের কথা ইচ্ছাকৃত কোন মাকরূহ কাজও করবেন না। যদি তাই হয় তবে যে সকল ইমাম ও খতীব শরীয়তে বর্ণিত সুস্পষ্ট হারাম কাজে মশগুল অর্থাৎ ছবি তোলে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তারা কি করে হক্কানী আলিম হতে পারে এবং তাদের পিছনে নামায কি করে শুদ্ধ হতে পারে?

মূলতঃ যদি তারা হারাম জেনে ছবি তোলে ও টিভি চ্যনেলে প্রোগ্রাম করে তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা চরম ফাসিক-এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা শরীয়তে ফাসিক বলা হয় তাদেরকেই যারা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করে বা হারাম ও কবীরা গুনাহে মশগুল থাকে।

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

والفاسق من فعل كبيرة او اصل على صغيرة.

অর্থঃ- ফাসিক ঐ ব্যক্তি, যে কবীরা গুনাহ করে অথবা ছগীরা গুনাহ বারবার করে। (ফতওয়ায়ে শামী ৪র্থ জিঃ পৃষ্ঠা-৫৩১)

আর হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يؤم فاجر مؤمنا

অর্থঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ফাসিক ব্যক্তি মু’মিন ব্যক্তিদের ইমামতী করবে না।” (ইবনে মাজাহ্)

আর তাই ফিক্বাহের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে যে,

فاسق شخص امامت کے لائق نہں اسکے اقتداء میں نماز مکروہ تحریمی ھوتی ھے لہذا ایسے امام کو بلا تاخیر کے معزول کردینا لازم ھے.

অর্থঃ ফাসিক ব্যক্তি ইমামতী করার উপযুক্ত নয়। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। তাই এরূপ (ফাসিক) ইমামকে অনতিবিলম্বে ইমামতী পদ থেকে সরিয়ে দেয়া আবশ্যক। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ্ ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৬৫)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি কবীরা গুনাহ্য় লিপ্ত অথবা সর্বদা ছগীরা গুনাহ করে অর্থাৎ যে ব্যক্তি ফরয, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বিনা শরয়ী ওজরে তরক করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে সে ব্যক্তি ফাসিক। আর হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাবের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবি তোলাও সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয, কবীরা গুনাহ ও ফাসিকী কাজের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আজ জাওয়াজির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة  الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر

অর্থঃ ‘তাওজীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং কঠোর হারাম ও কবীরা গুনাহ।

 শরহে মুসলিম লিন নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم ايضا فيه  وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة  فهو فاسق  صاحب  ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরি বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হবে।

মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام   شديد التحريم وهو من الكبائر

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম ও কবীরা গুনাহ।

ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے اور رکھنا اسکا  ایسا ہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا ایسے فعل کا فاسق ہے اور امام بنانا اسکا حرام ہے اور  نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ہے.

অর্থঃ আধুনিক যেকোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা তৈরি করানো, হাতে তৈরি করা বা তৈরি করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো, যে সকল ইমাম ও খতীব হারাম জেনে ছবি তোলে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তারা চরম ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা হারাম ও কবীরা গুনাহ্য় মশগুল। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো ফাসিকের ইমামতিতে নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে উক্ত নামায দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব।

যে পীর ছবি তোলে টিভি দেখে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে তার নিকট বাইয়াত হওয়া হারাম

স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বল্ব অর্জন করতঃ অন্ততপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

তাই অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে ইজ্তিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা ও হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করতঃ বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।

কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করা তথা অন্ততপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ আছে যে,

كل ما يترتب عليه الاثر من الفروض الاعيان فهو فرض عين.

অর্থঃ “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।”

হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহের কিতাব “দুররুল মুখ্তারে” উল্লেখ আছে যে,

ما لا يتم به الفرض فهو فرض

অর্থঃ “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না, সে ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয।”

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদের বা ওলী আল্লাহগণের ছুহ্বত লাভ করা বা তাঁদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেও রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালাম পাকে সূরা তওবার ১১৯ নম্বর আয়াত শরীফে বলেন,

يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الص‍ادقين.

 অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং ছদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফে ছদিক্বীন দ্বারা তাঁদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা যাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর কায়িম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে তাক্মীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন। এক কথায় যাঁরা আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হয়েছেন এবং সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল অর্থাৎ যাঁরা কামিল পীর বা মুর্শিদ, তাঁদেরকে বুঝানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক আরো বলেন,

واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم با الغداوة والعشى يريدون وجهه.

 অর্থঃ “আপনি নিজেকে তাঁদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধায় তাঁদের রবকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য।” (সূরা কাহাফ-২৮)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বল্বী যিকির করেন, তাঁর অনুসরণ ও ছুহ্বত ইখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ্ পাক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

واتبع سبيل من اناب الى

অর্থঃ “যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, তাঁর পথকে অনুসরণ কর।” (সূরা লোকমান-১৫)

কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.

অর্থঃ “আল্লাহ্ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কখনই কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেনা।” (সূরা কাহাফ-১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয় না তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। তাই সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বাইফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,

من ليس له شيخ فشيخه شيطان.

অর্থঃ “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নূরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

আর শায়খ বা পীর ছাহেবের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

الشيخ لقومه كالنبى فى امته

অর্থঃ “শায়খ (পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতের মধ্যে।” (দাইলামী, মাকতূবাত শরীফ)

অর্থাৎ নবী আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়, সেরূপ শায়খ বা পীর ছাহেবের দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়।

অতএব, নবী আলাইহিস্ সালাম-এর উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায়না, তদ্রুপ কামিল মুর্শিদ বা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত না হয়েও ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গুমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আর একারণেই জগদ্বিখ্যাত আলিম, আলিমকুল শিরোমনি, শ্রেষ্ঠতম মায্হাব হানাফী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আকবর, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

لولا سنتان لهلك ابو نعمان.

অর্থঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বৎসর না হতো, তবে আবু নু’মান (আবূ হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া)

অর্থাৎ আমি আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি আমার শায়খ বা পীর ছাহেব ইমাম বাকির ও ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত না হতাম, তবে (শয়তানী প্রবঞ্চনায়) ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কোন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বল্বে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বাল্বে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বাল্বে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হতে হবে।

আর তাই এ যাবত পৃথিবীতে যত ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আগমণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কোন না কোন একজন পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গাউছুল আ’যম, মাহ্বুবে ছুবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “সিররুল আসরারে” লিখেন,

ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القلوب فرض

অর্থঃ “ক্বাল্ব জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য “আহলে তালক্বীন” তালাশ করা বা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। অনুরূপ ফাতহুর রব্বানীতেও উল্লেখ আছে।”

তদ্রুপ হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব সমাদৃত কিতাব কিমিয়ায়ে সায়াদাতে, কাইউমুয্যামান হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মাকতূবাত শরীফে, আওলাদে রসূল, আশিক্বে নবী হযরত আহ্মদ কবীর রেফাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, “অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয।” অনুরূপ তাফসীরে রূহুল বয়ান, রূহুল মায়ানী ও তাফসীরে কবীরে উল্লেখ আছে।

মূলতঃ কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব হলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ বেলায়েত হাছিল করে মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ নৈকট্য লাভ করার এক বিশেষ ওয়াসীলাহ্ বা মাধ্যম। আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة.

 অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করার জন্য ওয়াসীলাহ তালাশ (গ্রহণ) কর।” (সূরা মায়িদা-৩৫)

এ আয়াত শরীফের তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় “তাফ্সীরে রূহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে,

الوصول لا يحصل الابالوسيلة وهى العلماء الحقيقة ومشائخ الطريقة.

অর্থ: “ওয়াসীলাহ ব্যতীত আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত ওয়াসীলাহ হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী আলিম বা মাশায়িখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।”

উপরোক্ত বিস্তারিত ও অকাট্য আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বাল্ব অর্জন তথা  কমপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য জরুরত আন্দাজ ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা যেরূপ ফরয তদ্রুপ একজন হক্কানী ও কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়াও ফরয।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কামিল বা হক্কানী-রব্বানী পীর বা মুর্শিদ কে? কামিল বা হক্কানী-রব্বানী পীর বা মুর্শিদ-এর আলামত কি? মূলতঃ কামিল বা হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব ও মুর্শিদ তিনিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ  مِنْ عِبَادِهِ  الْعُلَمَاءُ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)

এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশি আল্লাহভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলিম।”

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খুলাছায়” উল্লেখ আছে যে,

“العلماء” سے اصطلاحی عالم یعنی کتابیں پرہ لینے والے مراد  نهى بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کو نور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلے اللہ علیہ وسلم وارباب ولایت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نافع اعلی درجے کا تھا.

অর্থঃ উক্ত আয়াত শরীফে العلماء শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাসকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত “আলিম” তাঁরাই, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মা’রিফাতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবূল ওলীআল্লাহগণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাস আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন।

উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেন-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نور يجعله الله تعالى فى القلب.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর হযরত আহমদ বিন ছালিহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতিস্বরূপ। আল্লাহ পাক তা আলিমের অন্তকরণে দান করেন।’

উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে-

قال سفيان الثورى رحمة الله عليه العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس بعالم بامرالله  وعالم بامرالله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامرالله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض.

অর্থঃ হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত: (১) আলিম বিল্লাহ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ পাককেই জানেন। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ ওয়া বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফারায়িয সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম)।

দ্বিতীয়তঃ কামিল পীর বা মুর্শিদ তিনিই যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

ومن ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞোসা করলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলোÑ আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع الكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.

অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলতঃ হক্কানী-রব্বানী পীর-মুর্শিদ বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী পীর-মুর্শিদ বা নায়িবে নবী।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহিব বা মুর্শিদ-এর একটি অন্যতম আলামত হলো আমল বিশুদ্ধ থাকা অর্থাৎ, হারাম-নাজায়িয বা শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে বেঁচে থাকা। যদি তাই হয় তবে যারা ছবি তোলে ও ভিডিও করে ও টিভি দেখে প্রকাশ্য হারাম কাজ করছে তারা কি করে হক্কানী পীর হতে পারে?

অতএব, যে পীর ছবি তোলে, টিভি দেখে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগাম করে সে হক্কানী পীর নয়। কাজেই এরূপ পীরের নিকট বাইয়াত হওয়া কস্মিনকালেও জায়িয নেই বরং হারাম। যদি কেউ এরূপ কোন পীরের নিকট বাইয়াত হয়ে থাকে তবে তার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে উক্ত পীরকে ছেড়ে দিয়ে একজন হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত হওয়া।

পীরের ছবি ঘরে রাখা ও ছবি যুক্ত লকেট গলায় পড়া হারাম

আজকাল অনেককে দেখা যায় যে, তারা নিজ পীরের ছবি ঘরে সাজিয়ে রাখে এবং পীরের ছবি লকেটে তাবিজ করে গলায় পরে থাকে। তারা এটাকে বরকতের কারণ মনে করে। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলো সম্পূর্ণ হারাম, নাজায়িয ও ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা স্বয়ং নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণীর ছবি ঘরে রাখাও নিষেধ করে দেন এবং নিজেও ঘরে ছবি থাকলে তা নিশ্চিহ্ন করে ফেলতেন।  যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لاتدخل الملائكة بيتا فيه كلب ولا تصاوير.

অর্থঃ হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها حدثنا ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.

অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮০, মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقد سترت بقرام لى على سهوة لى فيه تماثيل فلما رأه رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكه وقال اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون بخلق الله. قالت فجعلناه وسادة او وسادتين. وفى رواية اخرى قالت قدم النبى صلى الله عليه وسلم من سفر وعلقت درنوكا فيه تماثيل فامرنى ان انزعه فنزعته.

 অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে তাশরীফ আনলেন, এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন, এবং বললেন, “ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত মানুষের কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত সৃষ্টি করে।” অতঃপর আমি ওটা দ্বারা একটা অথবা দুইটা বালিশ বানালাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে বাড়ি ফিরলেন এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ,পৃঃ ২০১)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لنا ستر فيه تمثال طائر وكان الداخل اذا دخل استقبله فقال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم حولى هذا فانى كلما دخلت فرايته ذكرت الدنيا.

 অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের পাখির ছবি যুক্ত একখানা পর্দা ছিল। প্রত্যেক লোক প্রবেশ করতেই উহা তাদের নজরে পড়ত। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পর্দাটি সরিয়ে ফেলতে বললেন। কেননা, আমি যতবার ঘরে প্রবেশ করি ততবারই ওটা দেখে আমার দুনিয়ার স্মরণ হয়। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০০)

عن زيد بن اسلم رضى الله تعالى عنه قال حدثنى ابى انه بنى على اخيه فدخل ابن عمر فرأى صورة فى البيت فمحاها اوحكها ثم قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا تدخل الملائكة بيتا فيه صورة ولا كلب.

 অর্থঃ হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন তার পিতা তার ভাইয়ের জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করেন। অতঃপর হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘরে প্রবেশ করে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর তিনি ওটাকে ধ্বংস করে ফেললেন অথবা নিশ্চিহ্ন করে ফেললেন এবং বললেন আমি হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।” (মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮ম জিঃ পৃঃ ২৯২)

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال نهى رسول الله صلى الله وسلم عن الصورة فى البيت ونهى ان يصنع ذلك.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরি করতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭)

عن عيسى بن حميد رحمة الله عليه قال عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.

অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত উকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ ২য় জিঃ পৃঃ ৪৬)

عن اسامة رضى الله تعالى عنه قال دخلت مع النبى صلى الله عليه وسلم الكعبة فرايت فى البيت صورة فامرنى فاتيته بدلو من الماء فجعل يضرب تلك الصورة. ويقول قاتل الله قوما يصورون ما لا يخلقون.

অর্থঃ হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে পবিত্র কা’বা ঘরে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি কা’বা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমে আমি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলাম।

হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ছবিগুলিতে পানি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “আল্লাহ পাক ঐ গোত্রের সাথে জিহাদ ঘোষণা করেছেন, যে গোত্র এরূপ প্রাণীর ছূরত তৈরি করে। যা সে তৈরি করতে অক্ষম অর্থাৎ জীবন দিতে পারেনা।” (মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ ৮ম জিঃ পৃঃ ২৯৬, তাহাবী ২য় জিঃ পৃঃ ৩৬৩)

فٹو  اور تصویریں قصدا مکان میں رکھنا حرام ہیں. بلا قصد کسی اخبار یا کتاب میں رہ جائے تو یہ حرام نہیں  مگر یہ بھی مکروہ ہے.

অর্থঃ ইচ্ছাকৃতভাবে  ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখা হারাম। এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি প্রাণীর ছবি কোন খবরের কাগজ অথবা বই পুস্তকে থেকে যায় তবে তা হারাম নয় বরং তা মাকরূহ তাহরীমী। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, পৃষ্ঠা ২২)

جاندار کی تصویر کسی حالت میں بھی رکھ نہیں سکتے کہ جاندار کی تصویر شرعا حرام ھے پھر چاہے وہ براق کی ہو یا  پیر پیغمبر کی ہؤ

অর্থঃ প্রাণীর ছবি কোন অবস্থায়ই ঘরে রাখা জায়িয নেই। কেননা প্রাণীর ছবি তৈরি করা, রাখা শরীয়তে হারাম। চাই ওটা বোরাকের হোক আর পীর, পয়গম্বরদের হোক। (ফতওয়ায়ে রহীমিয়াহ ২য় জিঃ পৃষ্ঠা ২২৭)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পীরের ছবিসহ যে কোন লোকের ছবি ঘরে রাখা ও গলায় ঝুলানো হারাম ও কাট্টা কুফরী। উল্লেখ্য যে, যে পীর ছবি তোলে এবং নিজ ছবি ঘরে ও গলায় ঝুলানোর অনুমতি দেয় সে কস্মিনকালেও পীর নয় বরং সে ভ- ও প্রতারক। অর্থাৎ পীর নামের কলঙ্ক। যদি কেউ এরূপ পীরের কাছে বাইয়াত হয়ে থাকে তবে তার জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে উক্ত তথাকথিত পীরকে তরক করে একজন হক্কানী-রব্বানী পীর, শায়খ বা মুর্শিদ-এর হাতে বাইয়াত হওয়া।

মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন-দাফন ইত্যাদির ছবি তোলা  ও ভিডিও করা হারাম

অনেকে স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে আত্মীয় স্বজন মারা গেলে তাদের গোসল, কাফন-দাফনের দৃশ্যাবলীর ছবি ক্যামেরা ও ভিডিওর মাধ্যমে ধারণ করে রাখে। (নাঊযুবিল্লাহ)

মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে জীবিত ব্যক্তির ছবি তোলা যেরূপ হারাম তদ্রুপ মৃত ব্যক্তির ছবি তোলাও হারাম ও নাজায়িয। কারণ হাদীছ শরীফ-এ  ছবি তোলার ব্যপারে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা ‘মুতলাক্ব’ বা ‘আম’ ভাবেই এসেছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে

ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরি করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরি করেছো, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দাও।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, ৮৮০ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২১০ পৃষ্ঠা)

এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

অর্থঃ হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”

কাজেই মৃত ব্যক্তির ছবি তোলাকে জায়িয মনে করার কোনই সুযোগ নেই। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন-দাফন ইত্যাদির ছবি তোলা বা ভিডিও করা সম্পূর্ণই হারাম ও কবীরাহ গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

বিবাহ, আক্বীক্বা, সুন্নতে খৎনা, কুরবানী, মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলসহ

সর্বপ্রকার অনুষ্ঠান-এর ছবি তোলা ও ভিডিও করা হারাম

বর্তমানে মুসলমানদের এমন বিবাহ খুব কমই পাওয়া যায়, যে বিবাহ অনুষ্ঠানে ভিডিও করা হয়না। অনেকে আবার সন্তানের আক্বীক্বা, সুন্নতে খৎনাসহ কুরবানী ও মীলাদ শরীফ মাহফিলের অনুষ্ঠানগুলোতে ভিডিও করে থাকে। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে উল্লিখিত প্রতিটি অনুষ্ঠানই ভিডিও করা হারাম। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবি তোলা সম্পূর্ণই হারাম ও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- এ প্রসঙ্গে উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আজ জাওয়াজির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة  الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر

অর্থঃ ‘তাওজীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং কঠোর হারাম ও কবীরা গুনাহ।

 শরহে মুসলিম লিন নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم ايضا فيه  وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة  فهو فاسق  صاحب  ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরি করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরি বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরা গুণাহে গুনাহগার হবে।

মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام   شديد التحريم وهو من الكبائر

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তোলা হারাম, এমনকি কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহ।

এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদির

শরয়ী ফায়ছালা

চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক সময় বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি তুলতে হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর ফায়ছালা কি?

এর জবাবে বলতে হয় যে, ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيْتُ لَكُمُ اِلاسْلَامَ دِيْنًا.

অর্থঃ “আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সমাপ্ত করলাম। তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সমাপ্ত করলাম। আর ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট রইলাম।” (সূরা মায়িদা-৩)

অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে সব বিষয়ের ফায়ছালাই রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ পাক যে শুধু দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন তাই নয়। বরং এর সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে সহজও করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ

অর্থঃ ‘আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য দ্বীনকে কঠিন করেননি।’ (সূরা হজ্জ-৭৮)

অন্যত্র আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,

يُرِيْدُ اللهُ  بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِكُمُ الْعُسْرَ

অর্থঃ ‘আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন চান না।’ (সূরা বাক্বারা-১৮৫)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,

لَاۤ اِكْرَاهَ  فِى الدِّيْنِ

অর্থাৎ “দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকার কাঠিন্যতা নেই।” (সূরা বাক্বারা- ২৫৬)

আর হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

ان الدين يسر

অর্থাৎ, ‘দ্বীন বা শরীয়ত হচ্ছে সহজ।’ (বুখারী শরীফ)

তাই ইসলাম কোন ক্ষেত্রেই যেমন বাড়াবাড়ি বা জোর জবরদস্তি করেনি বা করার অনুমতিও দেয়নি তেমনিভাবে কঠিনও করেনি।

বরং সহজ করে দিয়েছে। যেমন- ফরয নামাযের সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো হচ্ছে ফরয। এখন কেউ যদি এরূপ হয় যে, সে দাড়াতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো সে যদি দাঁড়াতে না পারে তবে সে বসে বসেই নামায আদায় করবে। যেহেতু সে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মাজুর বা অপরাগ।

অনুরূপভাবে হারাম খাওয়া সকলের জন্যই হারাম। কিন্তু কেউ যদি একাধারে তিনদিন না খেয়ে থাকে তার নিকট যদি কোন হালাল খাদ্য মওজুদ না থাকে তবে তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি? তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো- এমতাবস্থায় হারামটা তার জন্য মুবাহ হয়ে যায় জীবন রক্ষার্থে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,

فَاتَّقُوا اللهَ   مَا اسْتَطَعْتُمْ

অর্থাৎ, “তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর তোমাদের সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী। (সূরা তাগাবুন-১৬)

অর্থাৎ সাধ্যের বাইরে শরীয়ত কাউকে কোন আদেশ করেনি।

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,

لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا  اِلاَّ وُسْعَهَا

অর্থাৎ, “আল্লাহ পাক কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাক্বারা-২৮৬)

 আর উছুলের কিতাবে উল্লেখ আছে,

الضرورة تبيح الـمحظورات

অর্থাৎ, জরুরত হারামকে ‘মুবাহ’ করে দেয়। (উছূলে বাযদূবী, উছূলে কারখী)

শরীয়তের পরিভাষায় এরূপ অবস্থাকে ‘মাজুর বা অপারগতা’ বলা হয়। ফিক্বাহ-এর কিতাবসমুহে এরূপ অসংখ্য মা’যূর এর মাসয়ালা বর্ণিত রয়েছে।

অতএব, চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ছবি তোলা হয় তা মা’যুর-এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমরা মা’যুর অর্থাৎ কারো জন্য যদি এক্স-রে আল্ট্রা সনোগ্রাম ইত্যাদি করা জরুরত হয় তখন সে মা’যূর হিসেবে তা করতে পারবে। কেননা জীবন রক্ষা করা ও স্বাস্থ্যকে হিফাযত করা ফরয।

ইসলামের নামে গণতন্ত্র করতে গিয়ে ছবি তোলা মা’যূরের পর্যায়ে পড়ে কি?

ইসলামের নামে গণতন্ত্রকারী অনেক নামধারী মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, আমীর, খতীব ছবি তোলে তাদেরকে যখন বলা হয় ইসলামে ছবি তোলা হারাম আপনারা ছবি তোলেন কেন? তখন তারা বলে আমরা এ ব্যাপারে মা’যূর। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলতঃ ইসলামের নামে গণতন্ত্রকারী যে সকল মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, আমীর, খতীব ছবি তুলছে তারা কস্মিলকালেও মা’যূর নয়। কারণ এক্ষেত্রে সরকারসহ কারো পক্ষ থেকেই তাদেরকে বাধ্য করা হয়নি এবং হচ্ছে না। তাহলে তারা মা’যূর হলো কি করে?

কাজেই বলার অপেক্ষা রাখেনা যে তারা মূলতঃ মা’যূরের কথা বলে সাধারণ মানুষদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে তাদের সাথে চরম প্রতারণা করছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

من غش فليس منا.

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়। (মিশকাত শরীফ)

এরাই মূলতঃ হাদীছ শরীফ-এর বর্ণিত দাজ্জালে কায্যাব। অর্থাৎ মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বা উলামায়ে “ছূ”। এদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بمالم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে, তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

 عن انس رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربع الله تجارتهم.

অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে “ছূ” তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদদোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল)

এ সকল উলামায়ে ছূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবসায়ী মৌলবীদের থেকে উম্মতদেরকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)