রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ভয়াবহ। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু রূপপুর অজ্ঞতার আঁধারেই রয়ে গেছে? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি বিশেষভাবে আমলে নিতে হবে। প্রয়োজনে সচেতন জনগণকেই প্রতিহত করতে হবে (২)

সংখ্যা: ২৬৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

বর্তমানে সারাবিশ্ব পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতা উপলব্ধি করছে এবং সচেতন হচ্ছে। সম্প্রতি ভিয়েতনাম নিউজসহ ভিয়েতনামের সরকারি অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলোর সুত্রে জানা গিয়েছে, রাশিয়া ও জাপানের সহযোগিতায় নির্মিতব্য দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করেছে  ভিয়েতনাম। খবরে আরো বলা হয়, এই প্রকল্প পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে। প্রকল্পের ক্ষতিকর দিক দেশ কাটিয়ে উঠতে নাও পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এসব বাতিল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ভিয়েতনামের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, দেশের উন্নয়নের আগে দেশ রক্ষার প্রতি আগে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ দেশই যদি ধ্বংস হয় তাহলে উন্নয়ন কোথায় প্রতিফলিত হবে।

বলতে হয়, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পে হাত দিয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চুড়ান্ত চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে আর সমক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে।

এই প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রকৃতির উপর ভয়ানক দানব হিসেবে আবির্ভূত হবে। কারণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ইউরেনিয়াম-২৩৮। এই জ্বালানি শতভাগ ব্যবহৃত হয় না। যেটুকু বাকী থাকে সেটাকেই বলা হয় তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য। এই বর্জ্য খুবই বিপজ্জনক। এর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিরাপদ পর্যায়ে আনার জন্য কয়েক যুগ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হয়। তারপর আবার পরিশোধণ করে কিছু ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এই সংরক্ষণ ও পরিশোধণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ ও উচ্চতর প্রযুক্তিনির্ভর। তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে তা থেকে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অনেক বছর ধরে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো দুর্ঘটনায় যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটবে তা সামাল দেয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। জাপানের মতো উন্নত দেশও এখন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয় এড়াতে পারছে না। চেরনোবিল, থ্রি মাইল আইল্যান্ডের মতো বড় বড় দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রযুক্তির দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থানকারী দেশগুলোতে। যারা নিজস্ব দক্ষতাকে কেন্দ্র করে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল। আর বাংলাদেশের মতো দেশের যেখানে সামান্য পানি, তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো দুদিন পরপর বিকল হয়ে যায় এবং মেরামতের অভাবে পড়ে থাকে বছরের পর বছর সেখানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রযুক্তি ভালোভাবে চলবে সেটা কল্পনাও করা যায় না।

এছাড়া, এছাড়া এই প্রকল্পে বাংলাদেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার ঋণ নিচ্ছে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। তবে এ জন্য সুদে আসলে রাশিয়াকে ফেরত দিতে হবে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। যা বাজেটের প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে এই ঋণ শোধের দায়ভার পুরোটাই চলে আসবে জনগণের ঘাড়ে। বেড়ে যাবে দ্রব্যমূল্যের দাম। বাড়বে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য। ধ্বংস হবে দেশের স্বাভাবিক বাজার অর্থনীতির ধারা।

এছাড়া প্রকল্পের প্রযুক্তি, লোকবল, ব্যয়, বিদ্যুতের খরচ কী ও কেমন হবে তা পরিস্কার হয়নি। এজন্য যেমন ফিজিবিলিটি স্টাডি হওয়ার দরকার তা করা হয়নি। এমনকি এ নিয়ে জনগণের মতামত গ্রহণ বা মানুষের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারটিও ঘটেনি। এত কিছু নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এগোচ্ছে এবং উত্তরোত্তর বাধা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অথচ প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়নের পথে হাটছে বলা যায়। যার অর্থ হলো প্রকল্পটি বিদ্যুৎ খাতের নীতিমালাকে অনুসরণ করছে না। বরং এটা অ্যাডহক ভিত্তিতে ও আরবিটরি পথেই হচ্ছে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে জনগণকে জানিয়ে কিছু করা হচ্ছে না।

সর্বপরি এটি একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। এই প্রকল্প ঘিরে রয়েছে অনেক ধরনের আশংকা। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করে যে আমরা সক্ষম হবো বৈদ্যুতিক খাতে তারও কোন আশা নেই। এই কেন্দ্রের বর্জ্যগুলো কোথায় যাবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই বর্জ্য তেজস্ক্রিয় এবং এটা ভয়ংকর। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিপদ রয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো এ থেকে বেরিয়ে আসছে। কারণ এই বিপদ মোকাবেলা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর আমাদের দেশে যদি এর কারণে কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তা থেকে বেরিয়ে আসতে নানা ভয়ংকর দুর্দশার মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সবসময় নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে দাবী করে থাকে। তাদের দাবী, তারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে প্রতিনিয়ত নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। তাদের এই দাবীগুলোর প্রসঙ্গে বলতে হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে পাকিস্তানি শাসকদের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য রক্ত ঝরিয়ে শহীদী মর্যাদা লাভ করেছেন। কিন্তু তাদের সেই আত্মত্যাগের ফল এই স্বাধীন বাংলাদেশ কেন বিদেশী শক্তির প্ররোচনায় এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্টতায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শিকার হবে? রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয় ও ক্ষতির উদাহরণগুলো যেখানে জনগন ও সরকারের কাছে পরিস্কার ভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে সেখানে কেন সরকার এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো বিভিন্ন প্রকল্প হাতের নেয়ার আগে দেশের স্বার্থ সর্বাগ্রে দেখে। দেশের ভূ-প্রকৃতি যাতে কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই দিকে তারা কড়া নজির রাখে। যার উদাহারণগুলোর মধ্যে হলো, এই ভিয়েতনাম।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে দেশের যে ভয়াবহ ক্ষতি হবে সে বিষয়টি নিরক্ষর জনগণ বুঝতে পারলেও দেশ চালকরা বুঝতে পারেনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, এই প্রকল্প নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের পরিবেশ ধ্বংস করবে, তাই প্রকৃতি বিনাশী এই সর্বনাশা প্রকল্প নির্মাণকাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা আহ্বান জানায়।

তাই দেশবান্ধব সরকারের জন্য উচিত হবে, ভিয়েতনামের মতো নিজের দেশের জন্য ক্ষতিকর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করে দেশকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা। যা দেশের প্রতিটি নাগরিক সরকারের কাছ থেকে আশা করে। (৫ পর্বে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ)

-মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬০

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-৯

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-২৮

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৯ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

 মতিভ্রমদুষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হতে পারে; কিন্তু রাজাকার কখনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না।  যেমনটি ইসলামের ইতিহাসে পরবর্তিতে অনেকেই ছাহাবী হয়েছেন।  অনেকে অনেক জিহাদও করেছেন। কিন্তু বদরী ছাহাবী তিনশ’ তের জনই।  ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কেউ বদরী ছাহাবী হতে পারবে না। সে মর্যাদা পাবে না।  অপরদিকে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীরা স্বাধীনতার সুফল পেতে পারে না।  স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো স্থানে তারা সমাবেশের অনুমতি পেতে পারে না।  মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোন অনুষ্ঠান করা, ইসলামের     দৃষ্টিতে বড় ধরনের প্রতারণা, মিথ্যা ও মহা বেঈমানী ও চরম মুনাফিকী।  মুক্তিযোদ্ধার নামে কোনো অনুষ্ঠান করতে চাইলে জামাতীদের আগে প্রকাশ্যে     তওবা করতে হবে।  তার আগ পর্যন্ত রাজাকার জামাতীদের কোনো ধরনের সমাবেশ করার অনুমতি       দেয়া সরকারের উচিত নয়। মুক্তিযোদ্ধা কেনার হাটের অনুমতি দেয়া উচিত নয়।  মুক্তিযোদ্ধা কেনার প্রক্রিয়াও বরদাশত করা উচিত নয়। কারণ তা সংবিধানে     সম্মত নয় এবং ইসলাম সঙ্গত তো নয় আদৌ।