পদ্মাসেতুতে না করা বিশ্বব্যাংক এখন নিজে যেচে ঋণ দিতে চাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ভালোর জন্য নয়। ঋণ দিয়ে সহায়তা নয়, বরং অর্থনীতির গতি কমানোই ওদের মূল উদ্দেশ্য। সোনার বাংলায় ঋণের কোনো প্রয়োজন নেই।

সংখ্যা: ২৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। সফরকালে সচিবালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সে জানিয়েছে- ‘আগামী দুই বছরে পুষ্টিখাতে বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার, আবহাওয়া ঝুঁকি এড়াতে ২ বিলিয়ন ডলার  ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। আগামীতে দারিদ্র্যবিমোচন, শিক্ষা, আবহাওয়া ও পুষ্টিখাতে খাতে বাংলাদেশকে আরো ঋণ সহায়তার কথা সে বলেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছে, এ ঋণ নিতে হলে বাংলাদেশকে তাদের বিভিন্ন কঠিন শর্ত মেনে নিতে হবে। এছাড়া এ ঋণ নিলে বাংলাদেশকে বাড়তি সুদের বোঝাও ঘাড়ে নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছে- ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বন্ধু হতে চায়’। কিন্তুমাত্র কিছুদিন পূর্বেও তো বিশ্বব্যাংককে কোনো বন্ধুত্বসূলভ আচরণ করতে দেখা যায়নি। যার একটি বড় উদাহরণ হলো, পদ্মাসেতু। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য ঋণ দিলেও উল্টো তারাই কানাডার আদালতে বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর নির্মাণাধীন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা করেছিলো। কিন্তু তারা এর পক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। কিন্তু এরফলেও তারা এই পদ্মাসেতুর কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলো। যার ফলে পরবর্তীতে সরকার শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ তহবিল বাতিল করে দিয়েছিলো। বর্তমানে তাদের মুখে ধুলো ছিটিয়ে দিয়ে দেশীয় অর্থায়নেই তৈরি হচ্ছে বৃহৎ পদ্মাসেতু।

এখন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে উন্নত একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু কার্যতঃ আমাদের দেশের উন্নয়নে তাদের ঋণ সহযোগিতার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ বাংলাদেশ আজ নিজ সক্ষমতায় উন্নত রাষ্ট্রের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যার উদাহরণ- বাংলাদেশের জিডিপি বর্তমানে ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় জনশক্তি খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আয় করেছে ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৬ সালে আরো বাড়বে বাড়বে বলে জানা গেছে। একই তথ্যে জানা গেছে, ৭৬ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে কর্মরত আছেন। তাদের বার্ষিক মাথাপিছু রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২ হাজার ১৩ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী কর্মীরা বছরে জনপ্রতি গড়ে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৫ টাকা দেশে পাঠায়। আর এ খাতের সবদিক দিয়ে হিসেব করলে তা বাজেটের অর্ধেক বলে গণ্য হবে।

এছাড়া বাংলাদেশের রয়েছে কর্মক্ষম জনশক্তি। যা দিন দিন ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বর্তমানে দেশে পনেরো বছরের অধিক বয়সী জনশক্তি রয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ। যা দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যয় হচ্ছে। আর এই কর্মক্ষম জনশক্তি মানব মূলধন হিসেবে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছে- বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের দারিদ্র্যবিমোচন হয়নি। এখনো বাংলাদেশের ৩ কোটি মানুষ না খেয়ে থাকে। এখনো রাজধানীতে বস্তিবাসীর সংখ্যা ৬০ লাখ। যারা প্রতিনিয়ত চরম বৈষম্য ও ভয়াবহ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। শুধু দারিদ্র্যই নয়; আয়বৈষম্যও বেড়েছে প্রকট হারে। জানা গেছে, রাজধানীবাসীর মোট আয়ের অর্ধেকর বেশি অংশ মাত্র ৫.৪ ভাগ মানুষের দখলে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ১৪৬৬ ডলার। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী দৈনিক মাথা পিছু আয় ১.৯ ডলারের বেশি না হলে সেই ব্যক্তি হতদরিদ্র। সে হিসেবে বাংলাদেশে ধনী থেকে হতদরিদ্র পর্যন্ত আয় বৈষম্যের চিত্র রীতিমত ভয়াবহ এবং স্পষ্ট। আর এসব ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের চিড়েভেজানো কথার দ্বারা বোঝা যায়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দারিদ্র্যবিমোচনের রোলমডেল বলে উৎসাহিত করে ঋণ দিয়ে তাদের ভয়াবহ সুদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আইএমএফের নতুন ঋণ প্রকল্প ছাড়াই চলেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। তখন মূল্যস্ফীতি, বাজেট ঘাটতিও কম ছিল, জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অব্যাহত ছিল। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে পোভার্টি রিডাকশন অ্যান্ড গ্রোথ ফ্যাসিলিটি (পিআরজিএফ) কর্মসূচির আওতায় ৬২ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয় আইএমএফ। এর শর্ত হিসেবে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় হার, বৈদেশীক মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ১২৫টি শাখা কমানো, রূপালী ব্যাংক বিক্রি করা, সোনালী, জনতা, অগ্রণীকে কোম্পানি করে ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেয়ার পথ তৈরি করার মতো কাজগুলো করিয়ে নেয়। এরপরও ৪৯ কোটি ডলারের বেশি হাতে পায়নি বাংলাদেশ।

এরপর ২০০৬ সালে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) নামের কর্মসূচি আনে আইএমএফ। এ কর্মসূচির অনুষঙ্গ পলিসি সাপোর্ট ইন্সট্রুমেন্টের (পিএসআই) কঠিন শর্তে বিরক্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির তখনকার প্রেসিডেন্ট ড. কাজী খলীকুজ্জমান ২০০৭ সালে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলো, ‘আমরা আইএমএফ চাই না, তারা কালই চলে যেতে পারে।’ অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছিলো, ‘আইএমএফকে বিদায় জানানোর কথা চিন্তা করার সময় এসেছে। আমরা আরেকটি পিআরজিএফ চাই না। এ ধরনের চুক্তিতে নীতি গ্রহণে দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করতে হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ২৩শ’ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে এবং এই ঋণের সুদের ফাঁদে পড়ে দেশের অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেও বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলেছেন। কিন্তু এখন বিশ্বব্যাংক উদ্দেশ্যমূলকভাবে নমনীয় হলেই তার কথায় গলে যাওয়া প্রজ্ঞার পরিচয় নয়।

তাই আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ যেহেতু নিজ সক্ষমতায় উন্নত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের উপর থেকে নির্ভরতা ঝেড়ে ফেলতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় বিশ্বব্যাংকের সহায়তার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক সততা। সেখানে বাংলাদেশ নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারলেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও দারিদ্র্য মুক্তি সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশ্বব্যাংক বয়কট করতে পারলে, কেন বাংলাদেশ পারবে না?

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস