প্রসঙ্গ: সড়ক দুর্ঘটনা- গৎবাঁধা কারণ উল্লেখের পরিবর্তে প্রকৃত ও ছহীহ পথে প্রতিকার করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ইসলামী মূল্যবোধ বিস্তারের বিকল্প নেই।

সংখ্যা: ২৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার মধ্যে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, চলতি ১৪৩৭ হিজরী সনের দুই ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪০১ জন।

লেখাবাহুল্য, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। ঘটছে নতুন নতুন ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করছে সারাজীবনের জন্য। অথচ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থাকলেও কোনোভাবেই তা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এতে সড়ক-মহাসড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা।

জানা গেছে, দেশে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার মানুষ নিহত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার মানুষ।

অন্যদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৪৩৭ হিজরী সনের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটিতে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯০ জনের। আর পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ছুটিতে প্রাণ গেছে ২১১ জনের। এর আগে ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, প্রত্যেক ঈদের সময় বিভিন্ন সংবাদপত্রে বড় বড় হেডিং হয় যে, ‘নাড়ির টানে মানুষ ছুটে চলেছে’। এখানে বলার বিষয় হলো, প্রত্যেক ব্যক্তিই চায় তার পরিবারের সাথে এলাকায় থাকতে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে পরিবার ছেড়ে তাদের থাকতে হয়। এক্ষেত্রে যদি যার যার স্থায়ী আবাসস্থলে বা স্থায়ী আবাসস্থলের কাছাকাছি স্থানে কাজের ব্যবস্থা করা হয়; তাহলে তাদেরকে আর নাড়ির টান ছিঁড়ে ঢাকামুখী হতে হয় না। কাজ করতে হয় না। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা হলো রাজধানী ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দেশের শিল্প-কারখানা, প্রশাসনিক ভবন শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক না করে জেলা-উপজেলাভিত্তিক ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে করে কোনো জেলার লোক তার জেলা ছেড়ে জীবিকা বা কর্মের খাতিরে রাজধানীতে ছুটে আসতে হবে না।

লক্ষ্মণীয় যে, গত পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটির সময়ে দুর্ঘটনার তুলনায় এবারের পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে ছুটির সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে বেশি। কারণ পবিত্র ঈদুল ফিতরে ছুটি ছিল ৯ দিন। ফলে লোকজন অপেক্ষাকৃত ধীরে-সুস্থে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ছাড়তে পেরেছিলো এবং আসতে পেরেছিলো। এতে যানবাহনে ওভারলোডিং কম হওয়ার কারণে দুর্ঘটনার মাত্রাও হ্রাস পেয়েছিলো। কিন্তু এবারের ঈদুল আযহা ঈদে ছুটির পরিমাণ কম থাকায়, মানুষ স্বল্প সময়ে পরিবারের সাথে ঈদ করে আবার কর্মস্থলে ফিরতে তাড়াহুড়ার মধ্যে পতিত হয়েছে। ফলে যাত্রাপথে ব্যাপক নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। ৬০ কি:মি: দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। সময় বাঁচিয়ে বেশি ট্রিপ দিতে ড্রাইভাররা বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়েছে। যার পরিণতি মৃত্যুর বহরে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২১১ জনের। যদিও এ হিসাব যথাযথ নয়; বরং প্রকৃৃত হিসাব তা চেয়েও অনেক বেশি। তাই পবিত্র ঈদুল আযহা ঈদের ছুটি ১২ দিন করলে এই মৃত্যুর বহর কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ইনশাআল্লাহ!

উল্লেখ্য, বর্তমানে চালকদের দক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র যান্ত্রিক অভিজ্ঞতাকেই মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণে হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক্ব সম্পর্কে কোনো ইলম দেয়া হয় না। ফলে অনেক চালক রয়েছে, যারা অধিক মুনাফার আশায় চরম ঝুঁকি নিয়ে বেশি ট্রিপ দিয়ে থাকে। কেউ কেউ, না ঘুমিয়ে ২-৩ দিন পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে থাকে। এসব কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা এবং করুণ মৃত্যুর হার মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের যদি হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক্ব সম্পর্কে ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হতো, তাহলে তারা শত শত লোকের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হতো না।

ইতিহাসে দেখা যায়, খালীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার যামানায় কাউকে ব্যবসা বা কোনো পেশায় নিযুক্ত করার আগে তাকে সেই ব্যবসা বা সংশ্লিষ্ট পেশা সংক্রান্ত মাসয়ালা-মাসায়িল ইত্যাদি জানা আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করতেন। যদি জানা না থাকতো, তবে তা না শেখা পর্যন্ত তাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালাতে অনুমতি দিতেন না। সব গাড়ি চালকের মধ্যে যান্ত্রিক দক্ষতার পাশাপাশি পবিত্র ইসলামী জ্ঞানের অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেকেই রক্ষক, তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” হক্কুল ইবাদ সম্পর্কিত শিক্ষা লাভ করা থাকলে চালক কখনো ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদেরকে মৃত্যুর মুখোমুখি করবে না। এতে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ফোরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তাহলে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।”

যদি একটি কুকুরের জীবনের এতো মূল্য হয়, তাহলে পবিত্র দ্বীন ইসলামে মানুষের মূল্য কত- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং মহাসড়কে মৃত্যুর বহর বন্ধে সর্বাগ্রে প্রয়োজন- চালকদের মধ্যে কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি হক্কুল ইবাদ সম্পর্কিত ইসলামী জ্ঞান শিক্ষা দেয়া।

-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুল্লাহ, ঢাকা

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬৪

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১৩

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-৩২

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-২২ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস