তাফসীরুল কুরআন

সংখ্যা: ২১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

হিংসার অপকারিতা ও ভয়াবহ পরিণতি

হিংসা মানুষের অন্তরের একটা কঠিন রোগ। হিংসা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। হিংসা অর্থাৎ কারো সম্মান-মর্যাদা কিংবা অর্থ সম্পদ দেখে ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করা। এই হিংসার কারণে পৃথিবীতে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, কাটাকাটি, খুনাখুনি, রক্তপাত ইত্যাদি নানাবিধ মহা অনিষ্টের সৃষ্টি হয়। কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য হিংসা থেকে বেঁচে থাকা ফরয-ওয়াজিব।

খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক তিনি সূরা ফালাক্ব-এর ৪নং আয়াত শরীফ-এর মধ্যে হিংসুকের হিংসা থেকে বান্দাদেরকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-

ومن شر حاسد اذا حسد

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

اياكم والحسد فان الحسد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب

অর্থ: “তোমরা হিংসা হতে বেঁচে থাক। কেননা নিশ্চয়ই হিংসা নেকীগুলিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করে দেয়, যেমন আগুন লাকড়ীকে ধ্বংস করে দেয়।” (আবূ দাউদ শরীফ)

স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুআ করেছেন-

اللهم اجعلنى محسودا ولا تجعلنى حاسدا

অর্থ: আয় আল্লাহ পাক! আমাকে হিংসাকৃত করুন কিন্তু হিংসাকারী করবেন না।

হিংসার অনিষ্ট সম্পর্কে ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, এক লোক ছিল। সে প্রত্যেকদিন বাদশাহর দরবারে যেয়ে একটা ঘোষণা দিত। সে বলত, ‘নেক লোকদের সাথে তোমরা সদ্ব্যবহার কর আর যারা দুষ্ট-দুরাচার, ফাসিক-ফুজ্জার তাদেরকে তাদের আমলের উপর ছেড়ে দাও। তাদের আমলই তাদের বিচার করবে।’ এ ঘোষণা দেয়ার কারণে বাদশাহ লোকটাকে খুব পছন্দ করতো এবং পুরস্কার দিত। বাদশাহর সভাসদের কিছু লোকদের মধ্যে হিংসা হলো। এ লোকটাকে বাদশাহ এত ইনআম (পুরস্কার) দেয় অথচ সে কিছুই করেনা, সে শুধু এ কথাটা বলে। তাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ঐ লোকটা চলে যাওয়ার পর বাদশাহর সভাসদদের মধ্যে এক লোক বাদশাহর কানে কানে গিয়ে বলল, হে বাদশাহ! এই যে লোকটা আপনার এখানে আসে, এখান থেকে বের হয়ে সে আপনার দুর্ণাম করে। আপনার দুর্ণাম করে সে বলে, বাদশাহর মুখে দুর্গন্ধ। বাদশাহ বললেন, এর প্রমাণ কি? প্রমাণ যদি আপনি চান, তাহলে কালকে আপনি তাকে ডাকান, দেখবেন কালকেই সে মুখে রূমাল দিয়ে আসবে। বাদশাহ পরের দিন তাকে সংবাদ দিলেন। সত্যিই দেখা গেল, লোকটা তার মুখ রূমাল দিয়ে ঢেকে বাদশাহর কাছে আসলো। বাদশাহ তার গোস্বাকে হজম করে কিছুই বললেননা। একটা চিঠি লিখে দিলেন। চিঠি লিখে দিয়ে ঐ লোকটাকে বললেন, তুমি এ চিঠিটা অমুক লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দিও। লোকটা চিঠি নিয়ে বের হয়ে গেল। সাধারণত বাদশাহ নিজ হাতে কাউকে চিঠি লিখেননা, বাদশাহ যদি নিজ হাতে কাউকে চিঠি লিখেন তাহলে তাকে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। ঐ সভাসদ (যে হিংসা করত) দূর থেকে দেখল, বাদশাহ তাকে একটা চিঠি লিখে দিলেন। ঐ সভাসদ তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, ভাই তোমাকে যে চিঠিটা বাদশাহ দিয়েছেন, সে চিঠি তুমি কোথায় নিয়ে যাবে? লোকটা বলল, এ চিঠি আমাকে অমুক লোকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেই হিংসুক সভাসদ বলল, ঠিক আছে, তোমার পৌঁছানোর দরকার নেই। আমার কাছে দিয়ে দাও, আমি এটা নিয়ে পৌঁছায়ে দেব। সে চিঠিটা নিয়ে গেল। পরের দিন সকালে আবার সেই লোকটা আসল বাদশাহর দরবারে। বাদশাহ তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। কি ব্যাপার! তুমি আসলে কি করে। সে বলল, হুযূর! আমি প্রত্যেকদিন যেভাবে আসি আজকেও সেভাবে এসেছি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে আমি যে চিঠিটা দিয়েছিলাম সে চিঠিটা কোথায়? সে বলল, হুযূর! আপনার সভাসদ অমুক ব্যক্তি চিঠিটা নিয়ে গেছে এবং সে চিঠিটা সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দেবে। বাদশাহ বললেন, হ্যাঁ, সে তার সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দেবে সত্যিই; তবে জিনিসটা অন্য রকম হয়ে গেল। লোকটি বলল, কেমন? বাদশাহ বললেন, চিঠিটা লিখেছিলাম তোমার সম্পর্কে। আচ্ছা, তুমি একটা কথা বল তো, তুমি কি বাইরে একথা বলে থাক, বাদশাহর মুখে দুর্গন্ধ? সে বলল না, আমিতো কখনও একথা বলিনি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যদি একথা নাই বলে থাক তাহলে গতকাল তুমি যখন আমার কাছে আসলে, তখন তোমার মুখ রূমাল দিয়ে ঢাকা ছিল কেন? সে বলল হুযূর! আপনার সভাসদ ঐ লোকটি আপনার এখানে আসার পূর্বে তার বাড়ীতে আমাকে দাওয়াত করেছিল। কিছু পিয়াঁজ মিশ্রিত তরকারী আমাকে খেতে দেয়, যার কারণে আমার মুখে দুর্গন্ধ হয়। আমার মুখের দুর্গন্ধটা যেন আপনার নাকে না যায়, সেজন্য আমি রূমাল দিয়ে আমার মুখ ঢেকেছিলাম। বাদশাহ বললেন, তাহলে তো তোমার কথাই সত্যে পরিণত হয়েছে। কি কথা হুযূর! বাদশাহ বললেন, তোমার প্রতি গোস্বা হয়ে চিঠিতে লিখেছিলাম, জল্লাদ! এ চিঠি বহনকারী চিঠি পৌঁছানো মাত্রই তাকে হত্যা করবে এবং তার চামড়াগুলির মধ্যে ভুষি ভর্তি করে আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু সে ঠিকই পৌঁছিয়ে দিয়েছে; তবে তোমার লাশ নয়, সেই সভাসদের লাশ। তুমি যে বলতে প্রত্যেকদিন, ‘নেককারদের সাথে সদ্ব্যবহার কর আর যে দুষ্ট-দুরাচার তাকে ছেড়ে দাও তার আমলের উপর। তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হবে।’ সত্যিই তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হয়েছে। সে যে তোমাকে হিংসা করেছিল, তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছিল; এই হিংসা-বিদ্বেষের কারণে তার মৃত্যুদণ্ড হয়ে গেছে।

তাফসীরুল কুরআন: হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণকে ‘আমাদের মত বাশার’ বলা কাফিরদের স্বভাব

তাফসীরুল কুরআন: হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণকে ‘আমাদের মত বাশার’ বলা কাফিরদের স্বভাব

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী