এ আবার কোন্ ঈদ? শরীয়তে দুই ঈদ ছাড়া কোন ঈদ নেই। এ ঈদ পালন করা বিদ্য়াত। কোনো যামানাই এ ঈদ পালিত হয়নি।” (নাঊযুবিল্লাহ)
এই হলো ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী, কওমী, সালাফী, যুদ্ধাপরাধী, জামাতীদের তরফ থেকে-
সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন সম্পর্কে বহুল অপপ্রচারণা।
কিন্তু এ যে-
কত ডাহা মিথ্যা,
কত নির্মম অসত্য,
কত বড় ধোকা,
কত মহা প্রতারণা
তা নিকট অতীত ইতিহাস থেকেও প্রমাণিত হয়।
ইতিহাস পাঠে জানা যায়,
মুসলমানগণ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিলাদত শরীফ পালন করে আসছেন। এবং শান-শওকতের সঙ্গে তারা এ অনুষ্ঠান উদযাপন করেন। ঐতিহাসিক মির্জা নাথন এই উৎসব উদ্যাপন উল্লেখ করেছেন।
ঐতিহাসিক ডা: এম এ রহিম তার সুবিখ্যাত ও বহুল পরিচিত ‘বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন, æবাংলার মুসলমানগণ যে খুব আড়ম্বর ও মহা ধুমধামের সঙ্গে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিলাদত শরীফ উদ্যাপন করতো, নবাব মুর্শিদকুলী খান কর্তৃক এই দিবস উদ্যাপনের নমুনা থেকে সে সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
নবাব এ দিনটি একটি বিরাট উৎসব আনন্দের দিনে পরিণত করেন। তিনি রবীউল আউয়াল মাসের প্রথম বারো দিন লোকদেরকে অভ্যর্থনা করতেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আতিথেয়তায় উপস্থিত হতেন। বিশেষ করে তিনি গরিবদেরকে অভ্যর্থনা করতে ভালবাসতেন। এই উপলক্ষে তিনি সমস্ত মুর্শিদাবাদ শহর ভগীরথী নদীর তীর পর্যন্ত আলোকমালায় সাজ্জিত করে তুলতেন। বারো দিনব্যাপী এই উৎসব ও আলোকসজ্জা অব্যাহত থাকত।
আলোকসজ্জার স্থানগুলোতে কুরআন শরীফ-এর আয়াতসমূহ এবং মসজিদ, বৃক্ষ, লতাপাতা ও ফলসমূহ প্রদর্শিত হতো। সেনাপতি নাজির আহমদের অধীনে এক লক্ষ লোক আলোক সজ্জার কাজে নিয়োজিত হতো।
কামান গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সড়ক ও নদী তীরের সমস্ত আলোক জ্বলে উঠত এবং সারা শহর ও ভগীরথী এক আনন্দময় রূপ ধারণ করত। মুসলমানদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত ঘোষণা করে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কামানগুলো গর্জন করে উঠত।
উল্লেখ্য, মুসলমান শাসনকর্তাগণ ও জনসাধারণ উপমহাদেশব্যাপী আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম, উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ দুই ঈদের চেয়ে মহা আড়ম্বরযুক্তভাবে পালন করত।
‘মীরাত-ই-সিকান্দরী’ অনুসারে, গুজরাটের সুলতান মুজাফ্ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৫১৫-১৫২৫ খিঃ) উলামা, সৈয়দ ও বহু শায়খদের ভোজে আমন্ত্রণ জানাতেন এবং তাদেরকে সংবৎসরের উপযোগী টাকা পয়সা ও কাপড়-চোপড় উপহার দিতেন। [মিরাত-ই-সিকান্দরী (অনুদিত), পৃষ্ঠা- ১২১,[প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা- ২৪৩]
গুজরাট সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ তদ্বীয় রাজপ্রাসাদে রবীউল আউয়াল মাসের প্রথম থেকে বারো তারিখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন উলামা ও শায়খদের সভার আয়োজন করতেন। তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাদীছ শরীফ আলোচনা করতেন এবং অতঃপর তাদেরকে ভোজে আপ্যায়িত করা হতো। ভোজানুষ্ঠানে সুলতান, তদ্বীয় মন্ত্রীবর্গ ও আমিরগণ উলামা ও শায়খদের সেবাযতœ করতেন। তিনি এসব বিদ্বান ও ধার্মিক মেহমানদেরকে এরূপ পরিমাণ স্বর্ণ ও পোশাক-পরিচ্ছেদ দান করতেন যাতে তারা এক বছরকাল চলতে পারেন।
দেখা যাচ্ছে, ইতিহাসে সবকিছুর বর্ণনা থাকার পরও ওহাবী-খারিজী, জামাতীরা সেটা জানে না।
‘আবুল হাকাম’ নাম ধারণের পরও বিরোধিতার কারণে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অভিহিত করেছিলেন ‘আবু জাহিল’।
সেই থেকে আজকে সারা বিশ্বব্যাপী তাকে আবু জাহিল বলেই চিনে, জানে।
ঠিক- কওমী, খারিজী, জামাতী মালানা নামধারীরা ঈদে আ’যম, ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিলাদত শরীফ-এর বিরোধিতা করে ও অজ্ঞতা জাহির করে প্রমাণ করলো যে, তারা পুরোপুরিভাবেই আবু জাহিলের বশংবদ। (নাঊযুবিল্লাহ)
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান
চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-২৬