ইল্মে আক্বলিয়ার দৈন্য এবং বিলায়েতের অনুপস্থিতির কারণে প্রকৃত আলিমে দ্বীন তৈরী হচ্ছে না

সংখ্যা: ১০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

(চতুর্থ পর্ব)

মিরাজুল বাহারাইন কিতাবে লিখিত রয়েছে, “তাছাউফের সকল মহৎ ব্যক্তিত্ব আহ্লে সুন্নতের অনুসারী ছিলেন। বিদয়াতী কখনো আল্লাহ্ পাক-এর মা’রিফত অর্জন করতে পারেনা। বিলায়েতের নূর তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনা।” মাকতুবাত শরীফের ৬৯ নং মাকতুবে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখিত রয়েছে।

ইরশাদুত তালিবিন কিতাবে লিখিত আছে, “যখন কোন মুর্শিদে কামিল ইন্তিকাল করেন, তিনি ফয়েজ দান বন্ধ করে দেন না বরং আরো অধিক হারে ফয়েজ দান করেন। কিন্তু ফানা ও বাকার মর্তবায় উপনীত ব্যক্তি ছাড়া এত ফয়েজ হাছিল করা অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। জীবিত অবস্থায় যেহেতু মুর্শিদ তালিম-তালকিন দান করে তাদের আমল-আখলাক শুদ্ধ করেন তাই তারা অধিক হারে ফয়েজ প্রাপ্ত হয়।”

হযরত ইমাম গায্যালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আইয়্যুহাল ওয়ালাদ কিতাবের শেষভাগে  উল্লেখ করেছেন, “প্রত্যেক মুসলমান মুর্শিদের মুখাপেক্ষী। কারণ তাঁদেরকে আল্লাহ্ পাক আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম-এর স্থলাভিষিক্ত করেছেন।”

দাইলামী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “মুরীদের কাছে শায়েখ তদ্রুপ যেমন উম্মতের কাছে তাদের নবী।”       ইমামে রব্বানী কুদ্দীসা সিররুহু তাঁর ২৬০ নম্বর মাকতুবে বলেন, “মুর্শিদের ক্বলব থেকে যে ফয়েজ এবং নূর বিচ্ছুরিত হয় তা সূর্য রশ্মির ন্যায় সবাইকে আলোকিত করে। এই ফয়েজ তাঁদের দিলেই প্রবেশ করে যাঁরা মুর্শিদকে মুহব্বত করে ও শরীয়তের পায়রবী করে। তাঁরা ফয়েজ প্রাপ্তি সম্বন্ধে বেখবর। তাঁরা বুঝতেও পারেনা এর ফলে তাদের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়েছে। তরমুজ যেমন সূর্যের নীচে থেকে পেঁকে যায় তারাও ফয়েজ পেয়ে পূর্ণতা লাভ করে। হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছোহবতের ফলেই পূর্ণতা এবং কামালত লাভ করেছিলেন। যে জিনিস মুসলমানদের ফয়েজ থেকে বঞ্চিত করে তা হলো বিদয়াত।” মাকতুবাতে মাছূমিয়ার ১১২নং মাকতুবে একটি হাদীস শরীফ উল্লেখ রয়েছে, “আল্লাহ্ ওয়ালার সাথে বসাও ইবাদত।”

কানযুদ দাকায়িকে হাদীস  শরীফ উল্লেখ রয়েছে, “শায়খের চেহারা মুবারক দেখাও ইবাদত।” যেহেতু তাঁদের দেখলে আল্লাহ্ পাক ও আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা স্মরণ হয়। তাই সেটা যিকিরের মধ্যে শামিল এবং ফয়েজ প্রাপ্তির কারণ।             যেমন, হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর যিয়াউল ক্বুলুব কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, রাবেতার মাধ্যমে যে পরিমাণ ফয়েজ হাছিল হয় অন্য কোন ভাবে তা হয়না।” হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাকতুবাত শরীফের ৮১ নম্বর মাকতুবে বলেন, “ওলীর কল্পনা বা খেয়াল করা চশমা তুল্য, এ চশমার মাধ্যমে আমাদের রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আল্লাহ্ পাককে দেখা উচিত।”

রাবেতার জন্য মুর্শিদের হুবহু আকৃতি হওয়া শর্ত নয়। কেউ যদি নিয়মিত রাবেতা করতে থাকে তখন তাঁর ছূরত তার কাছে হাজির হবে এবং স্বপ্নের মত তার সাথে কথা বলবে এবং তাকে ফায়দা দান করবে।

হাদীসে কুদসি থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, যদি কোন মুসলমান কোন আল্লাহ্ পাক-এর ওলীকে জানে এবং মুহব্বত করে, তাঁকে কাকুতি-মিনতি করে ডাকে তবে আল্লাহ্ পাক সেই ওলীকে তার ডাক শুনিয়ে দেন এবং সে ওলী অনুপস্থিত থাকুন অথবা অবর্তমান থাকুন তিনি তার কাছে আসেন এবং সাহায্য করেন। কোন ওলী যদি পূর্বের বা পরের কোন ঘটনা জানতে চান আল্লাহ্ পাক তাঁদেরকে তা জানিয়ে দেন। হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর প্রতি আল্লাহ্ পাক-এর এ সকল অনুগ্রহ এবং দানকে কারামত বলে।

হযরত বদরুদ্দীন সেরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর হাযেরাতুল কুদস কিতাবে স্বয়ং দেখা ও শুনা, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর হাজারেরও অধিক কারামত বর্ণনা করেছেন। গাউসুল আ’যম, ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ অন্যান্য আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের কারামতের কথা সবারই জানা।

বাংলাতে এ বিষয়ে তাযকিরাতুল আউলিয়া, হালতে মাশায়েখে নকশবন্দসহ অনেক কিতাবাদি রয়েছে। লা-মাযহাবী, ওহাবী ফিরক্বাসমূহ কারামত এবং ওলী আল্লাহ্গণকে অস্বীকার করে গোমরাহ হয়েছে।

আবার অন্যদিকে শিয়া, মূর্খ সূফী, ভন্ড মারিফতী ফিরক্বাসমূহ ওলী আল্লাহ্দের ‘আলিমুল গইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ’ ইত্যাদি বলে আক্বীদাকে কলুষিত করে গোমরাহ হয়েছে।     পক্ষান্তরে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতই সঠিক আক্বীদা পোষণ করে, শরীয়তের পায়রবী করে, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর প্রতি হুসনে যন রেখে নুবুওওয়াত ও বিলায়েতের ফয়েজ হাছিল করে ক্বলব ইসলাহ করে হাক্বীক্বী তাক্বওয়া ও ইখলাস হাছিলের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক-এর মা’রিফত-মুহব্বত ও সন্তুষ্টি হাছিল করেছে।            ক্বলব যখন ফানা হবে, তখন ক্বলব থেকে আল্লাহ্ পাক ব্যতীত যাবতীয় কিছু দূর হয়ে যাবে এবং ক্বলব আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকিরে মশগুল থাকবে এবং অন্য সকল কিছু ভুলে যাবে। কিন্তু মস্তিষ্ক, চিন্তা-ভাবনা, স্মরণ শক্তি সহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবকিছুই ঠিক থাকবে। এ অবস্থায় সে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতই দ্বীনদুনিয়ার সমস্ত কাজই করবে। তবে তার সমস্ত কাজই হবে একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। তখন তার সবকিছুই আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে পরিণত হবে। আলিম হতে হলেও বাইয়াত হয়ে এই অবস্থা অর্জন করতে হবে।            কারণ আল্লাহ্ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই, আসমান-যমীনের সৃষ্টিতে এবং দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে উলীল আলবাব (আলিম, জ্ঞানী)দের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়ানো, বসা, শোয়া অর্থাৎ সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ পাক-এর যিকির করে, অতঃপর ফিকির করে।”

তাই আলিমে দ্বীন হতে হলে যেমন ইল্মে মানকুলার সাথে সাথে মাকুলাও হাছিল করতে হবে; ঠিক সেভাবে বাইয়াত হয়ে রিয়াজত-মুজাহিদা করে তাওয়াজ্জুহ-ফয়েজ হাছিল করে কমপক্ষে ফানায়ে-ক্বলব লাভের মাধ্যমে দায়িমী তাক্বওয়া ও ইখলাছ অর্জন করতে হবে।

-সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুনিস মুর্শেদ, মিরপুর, ঢাকা

“ফজলুর জিহালতীর জবাব” সত্যিই রাজারবাগীদের নিকট ‘দ্বীনে রেযাখানী’ নিরাপদ নয় সংশোধনী না সূক্ষ্ম প্রতারণা?

“ভারতে মুসলমানদের উপর হিন্দুদের বর্বরতা ও পৈশাচিক আক্রমণ; প্রাচীন কাল হতেই হিন্দুদের এই নির্মম প্রবণতা” ঐতিহাসিক দলীল সম্বলিত একটি অনুসন্ধানী রচনা-৩

শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -১০

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ৬

আকবরের আমলের উলামায়ে ‘ছূ’দের উত্তরাধিকারী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে॥ দ্বীনে ইলাহীর আদলে দ্বীনে জুমহুরী প্রচলনে তারা এক হয়েছে-১