গাজায় যেখানে শিশুদেরও একবেলা খাবারেরও নিশ্চয়তা নাই প্রতি মুহুর্তেই মুহুর্মুহু বোমায় ঝলসে যাচ্ছে গাজাবাসী সেখানে সৌদি আরবে হচ্ছে ডিজে পার্টি আর কাতারে হচ্ছে আতশ বাজি প্রদর্শনী সত্যিই গাজাবাসীদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা প্রদর্শন না করা- ইসরাইলীদের কিছু না বলা যেনো কারবালার সীমারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে আরব দেশগুলো ইসরাইলীদের পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন দরকার

সংখ্যা: ৩০২তম সংখ্যা | বিভাগ:

গাজায় কাজ করা ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার নেতারা জানান, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। খবর আল-জাজিরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শিশুরা দিনে একবেলারও কম খাবার পাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজায় চলমান ভয়াবহ ও নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে সহায়তা পৌঁছানোও হয়ে উঠেছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সেখানে কাজ করা ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করে ফেলেছে।

ডক্টর্স উইদআউট বর্ডারস-এর গাজা অঞ্চলের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্ডে বাজরোল বলেন, আমরা মানুষকে কষ্ট পেয়ে মারা যেতে দেখছি- যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অথচ আমাদের হাতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, খাদ্য কিংবা চিকিৎসাসামগ্রী।

তিনি আরও বলেন, এটা শুধুই মানবিক বিপর্যয় নয়, এটা রাজনৈতিকভাবে নির্ধারিত ও পরিকল্পিত অবরোধ, যা একটি জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, গাজা শহরে শিশুখাদ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের তীব্র ঘাটতির কারণে বহু শিশু ও নবজাতক অপুষ্টিতে ভুগছে। অনেকে চিকিৎসা বা খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে।

আল-আকসা হাসপাতালের সামনে সন্তান হারানো ফাদি আহমেদ জানান, আমার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল, শরীরে ছিল মারাত্মক অপুষ্টি। সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থাকার পর সে মারা যায়।

এক দাদি ইনতিসার হামদান জানান, আমার নাতি তিন দিন ধরে এক ফোঁটা দুধ পায়নি। শেষে ক্ষুধায় মারা গেল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে উপত্যকায় ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি সহায়তা কর্মী এবং ১,৩০০ জনের বেশি চিকিৎসাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার অন্যতম ভয়াবহ পরিকল্পনার অংশ হলো চলমান ‘গণহত্যা’ যা দখলদার ইসরায়েল নির্মম প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে অব্যাহত রেখেছে।

১৯৫১ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যা হলো, কোনো জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, গোষ্ঠীগত বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত কর্ম, যা নিম্নলিখিত যেকোনো কর্মকাণ্ড বোঝায়। যেমন-সম্প্রদায়ের সদস্যদের হত্যা করা, গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা, গোষ্ঠীর ওপর এমন জীবনযাপনের শর্ত আরোপ করা যা তাদের সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শারীরিক ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত, গোষ্ঠীর মধ্যে জন্মহার প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া, গোষ্ঠীর শিশুদের জোরপূর্বক অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিস বয়েলের মতে, ‘ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের নীতিগুলো গণহত্যা কনভেনশনের সব শর্ত পূরণ করে।’

এমন স্থানে এই গণহত্যা পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে নেই খাবার, ওষুধ, আশ্রয়, বিশুদ্ধ পানি কিংবা বিদ্যুৎ। তার ওপর সেখানে চলছে অবিরাম বোমা হামলা, প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর আসছে। সম্ভবত এটিই হবে পৃথিবীর ইতিহাসে ‘গণহত্যা’র শেষ অধ্যায়- যেখানে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ নিহত হচ্ছে, যা শিগগির লক্ষাধিক প্রাণহানিতে পরিণত হতে পারে। অথবা, তাদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হবে, যাতে তারা কখনোই ফিরতে না পারে।

ইসরায়েলের উন্মত্ত গণহত্যা, যা ফিলিস্তিনিদের জন্য এক দুঃস্বপ্ন, আর সেটাই কি বাস্তব হতে চলেছে? এখানে এসে পশ্চিমা জাতি, আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং তথাকথিত সভ্যতার রক্ষকদের মুখোশ চিরতরে খুলে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের মিথ্যাচারও এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যেমন- ইসরায়েল দুই-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান চায়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন মেনে চলে, হামাস হাসপাতাল ও স্কুলগুলোকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বলে শুধু সেগুলোতে বোমাবর্ষণ করা হয়, হামাস বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ আছে কারণ হামাস ট্রাকগুলো দখল করছে বা অস্ত্র পাচার করছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ হামাস ‘সন্ত্রাসী’ এবং হামাস অস্ত্র সংগ্রহ করছে ও নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করছে বলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গেছে-এসব শুধুই মিথ্যা বুলি, আর কিছুই নয়।

এসব মিথ্যার আড়ালে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়েছে, যা এর মধ্যেও প্রমাণিত হয় যে, তারা উত্তর গাজার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

আগুন-রক্ত-ধ্বংসের বিভীষিকায় রূপ নিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটি। দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বোমার আঘাতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। ধ্বংসস্তূপে প্রিয়জনদের মরদেহ হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন অনেকে। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ।

গাজায় এখন একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছে ছোট্ট শিশুরা। নেই খাবার পানি, বিদ্যুৎ, প্রয়োজনীয় কাপড়। চিকিৎসা নেয়ার জন্য যেই হাসপাতাল প্রয়োজন, তাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে নেতানিয়াহুর সেনারা। বোমার আঘাতে ধ্বংস করা হয়েছে উপত্যকাটির মসজিদগুলো।

 নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর এমন বর্বরতায় নীরব ভূমিকার জন্য কঠিন তীব্র সমালোচিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে, তখন আরব দেশগুলোতে চলছে নাচ-গান আর আতশবাজি উৎসব।

সম্প্রতি সৌদি আরবের আল-উলা’র জাবাল আল-ফিলে আয়োজন করা হয় ডিজে পার্টির। বিখ্যাত এলিফ্যান্ট রকের সামনে পাশ্চাত্য সুরে রাতভর নাচ-গানে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছে নেটিজেনরা।

এর আগে, উৎসবের আলোয় আলোকিত হয় কাতারের আকাশ। ইসরাইলি বোমার আঘাতে যখন ফিলিস্তিন জ্বলছে, ঠিক তখন আতশবাজি প্রদর্শনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশটি। লুসাইল শহরের এই উৎসবে অ্যাক্রোবেটিক শো, আতশবাজি ও রাতের আকাশে ড্রোনের সাহায্যে বিভিন্ন আলোর খেলা দেখানো হয়।

ডিসেম্বর ২০২১-এর আগে রিয়াদের বৃহত্তর ‘মিউজিক স্ট্রম কনসার্ট’ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত রিয়াদের  এ কনসার্টটিতে পুরো পৃথিবীর নামকরা ‘তারকা’দের আমন্ত্রণ করা হয়। ব্যয় করা হয়েছে শত শত কোটি ডলার। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি ছিল সর্ববৃহৎ নারী-পুরুষ মিশ্রিত ‘বিনোদন’ আয়োজন। সাত লাখের বেশি মানুষ সেখানে অংশগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ সৌদিআরব এক্ষেত্রে দুবাই, আবুধাবী এবং আগে থেকেই অনেকটা খোলামেলা পরিবেশে থাকা অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। এটি সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান হলেও এ ধরনের অনুষ্ঠান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদিআরবের বড় বড় নগরী রিয়াদ, জেদ্দাসহ অন্যান্য নগরীতে নিয়মিতই আয়োজন হচ্ছে।

নাচ-গানের এসব অশ্লীল অনুষ্ঠানে লাখ লাখ লোকের অবাধ সমাগম হলেও পবিত্র মক্কা শরীফ-মদীনা শরীফে কিন্তু এখনো প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত। মসজিদে যেতে ‘তাওয়াক্কালনা’ অ্যাপ, রওজা শরীফে সালাম পেশ করার পূর্বোনুমতিগ্রহণ, এরপর দীর্ঘ লাইন, মসজিদুল হারামের শুধু দোতলা ও ছাদে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার, হাজরে আসওয়াদ-হাতীম নিষিদ্ধ, কাবা শরীফের আশপাশে ঘেঁষতেও মানা, আবার সকল জায়গায় মাস্কের বাধ্যবাধকতা তো আছেই। কিন্তু নাচ-গানের বেলায় মহা সমাগমে কোভিডের কোনো ভয় নেই!

এ ধরনের অশ্লীল আয়োজন কিন্তু সৌদিআরবের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সে দেশে রয়েছে মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র দুটি স্থান মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা। পুরো বিশ্বের মুসলিমদের হৃদয়ের সম্পর্ক এ স্থানগুলোর সাথে। এ স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ সৌদি সরকার নিজের হাতেই রেখেছে। এমনকি সৌদিআরবের বাদশাহগণ নিজেদের রাজকীয় খেতাব হিসেবে ‘খাদিমুল হারামাইনিশ শারীফাইন-দুই পবিত্র হারামের সেবক’ বাক্যটিও গ্রহণ করেছে।

সৌদি আরব এবং তার শাসক পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমান বা ‘এমবিএস’-এর উপর গাজায় ইজরায়েলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট চাপ রয়েছে এবং ইজরায়েলি পদক্ষেপের ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছেন। যাই হোক, রাখঢাক করে হলেও সৌদি নেতৃত্বের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছে যে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলা উল্লেখযোগ্য বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বেশিরভাগ না হলেও এই অঞ্চলের বেশ কিছু আরব রাষ্ট্র হামাসের বিলুপ্তি দেখতে চায়। ৭ অক্টোবরের হামলার আগে – হামাস সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইজরায়েলিদের আটক করে রেখেছে- সৌদিরা ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা চালিয়ে এসেছে। আরও বিস্তৃত রিয়াদ-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা চুক্তির বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিটির ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ)

গাজাবাসীদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা প্রদর্শন না করা। ইসরাইলীদের কিছু না বলা। যেনো কারবালার সীমারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে আরব দেশগুলো। ইসরাইলীদের পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন দরকার।

-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান আরিফ।

 শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -২১

দাইয়্যূসদের জন্য শাইখুল হাদীছ, খতীব, মুফতী,মুফাস্সিরে কুরআন,মাওলানা পরিচয় আদৌ ফায়দাকর নয় কারণ, দাইয়্যূস বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা

এভাবেই বিরোধীদের হাক্বীক্বত প্রকাশ পাবে ॥  আর আল বাইয়্যিনাত-এর যথার্থতা প্রমাণিত হবে

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, না জনসংখ্যা সংকোচন ॥ ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণার অন্তরালে সত্য কথা

মতামত শিরোনাম