মানতিক শাস্ত্রের বড় ইমাম হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইলমে মানতিকেই ব্যাপৃত থাকার ফলে তাছাউফ শিক্ষা তাঁর হয়ে উঠল না। তবে তাছাউফ হাছিল ছাড়া যে মৃত্যুর সময় শয়তান ঈমান হরণ করার জন্য শক্ত কঠিন ওয়াছওয়াছা দেয় সে কথা তাঁর অজানা ছিলনা। হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইল্মের ফখর ছিল। তিনি ভাবলেন শয়তান কি ওয়াছওয়াছা দিবে! কত ওয়াছাওয়াছা দিবে? তিনি স্বীয় ইল্ম খাটিয়ে তৈরী করলেন ১৭০টি গভীর প্রজ্ঞা সম্পন্ন যুক্তি বা দলীল যে, ‘আল্লাহ্ পাক এক।’ ভাবলেন, শয়তান একটি দলীল খণ্ডালে তিনি আরেকটি দিয়ে জবাব দিবেন।
বলাবাহুল্য, মৃত্যুর সময় তাই হলো। শয়তান এসে বললো, ‘ইমাম ছাহেব আল্লাহ্ পাক কয়জন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্ পাক- এক।’ শয়তান দলীল চাইলে ইমাম ছাহেব দলীল দিলেন। কিন্তু শয়তান মুহূর্তেই তা খণ্ডিয়ে দিল। এরপর ইমাম ছাহেব পরবর্তী দলীল দিলেন। ইবলিস তাও খণ্ডালো। এভাবে ইমাম ছাহেবের একে একে ১৭০টি দলীলের সবই ফুরালো। বলাবাহুল্য, বর্ণিত ঘটনা থেকে এই নছীহতেরও অবকাশ মিলে যে, ইবলিস একদিক থেকে না পারলে অন্যদিক থেকে কোশেশ করে। একটি দিয়ে না পারলে আরেকটি দিয়ে ঘায়েল করতে চেষ্টা করে এবং যারা কামিল ব্যক্তি নয় বা কামিল ব্যক্তির অনুসারীও নয় তাদের ক্ষেত্রে সে ঠিকই সফলতা লাভ করে। মূলতঃ শয়তানের এই শত্রুতা অতি গভীরে গ্রোথিত। মালাউন হবার মুহূর্তে সে দম্ভভরেই ঘোষণা করেছিল যে, আদম আলাইহিস্ সালামের কারণে তার এ অবনতি। কাজেই আদম সন্তানকে সে দেখে নেবে তথা জাহান্নামী বানিয়ে ছাড়বে। বলাবাহুল্য, এই জাহান্নামী বানানোর ক্ষেত্রেও শয়তানের ওয়াছওয়াছা বহুরূপী। এ জন্যই মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” উল্লেখ্য, ইবলিসের প্রধান লক্ষ্য থাকে আলিম সমাজ। হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মৃত্যুকালীন সময়ে শয়তান তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, “হে ইমাম ছাহেব, আপনি আমার কাছ থেকে নাযাত পেয়ে গেলেন।” তিনি বললেন, “তুই কি মৃত্যুর সময়েও আমার সাথে প্রতারণা করতে চাস; আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমানের সাথে ইন্তিকাল করব ততক্ষণ পর্যন্ত তোর ওয়াছওয়াছা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত নই।”
মূলতঃ আলিমদের স্তরভেদে শয়তানের ওয়াছওয়াছা সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হয়ে থাকে। যেহেতু ইবলিসের বয়স অনেক হয়েছে, অভিজ্ঞতাও তার বেশী তাই, সে একদিকে না পারলে অপরদিকে ফাঁদ পেতে থাকে। যেমনটি দেখা যায়, কথিত বা তথাকথিত আলিমদের ক্ষেত্রে ইবলিস নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বিষয় দিয়ে ওয়াছওয়াছা দেয়না। কিন্তু তাদেরকে এমন কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী করে তোলে বা যুগের দোহাই দিয়ে এমন এক আমলের সাথে জড়িত করে দেয় যে তার পরিণতি হয় স্পষ্ট জাহান্নাম। যেমন হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, বেহেশ্তের দরজায় লেখা রয়েছে, ‘দাইয়্যূছ কখনও বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা।’ এখন একটা লোক যদি ৫০ বছরেরও বেশী বুখারী শরীফের দরস্দাতা শায়খুল হাদীছ হয়ে থাকে, সে যদি সাইত্রিশ বছরেরও বেশী সময়ের ইসলামী পত্রিকার সম্পাদক হয়ে থাকে, সে যদি কয়েক যুগের মুফ্তী হয়ে থাকে, সে যদি কয়েক দশকেরও আন্তর্জাতিক ইসলামিক চিন্তাবিদ তথা মুফাছ্ছিরে কুরআন হয়ে থাকে, সে যদি আজীবনের খতীবও হয়ে থাকে- কিন্তু তারপরেও যদি শয়তান তাদেরকে দাইয়্যুছ বানাতে পারে তাহলেই শয়তান কামিয়াব। কারণ দাইয়্যূছী এমন এক আমল যার দ্বারা অন্য সব আমল বরবাদ হয়ে যায়।
বলাবাহুল্য, শয়তান এ আমলটি এমনি এমনিতেই করায় না বরং সে রংচং যুক্ত ওয়াছওয়াছা দেয় যে, বর্তমান যুগে বা সময়ের প্রয়োজনে ইসলামের কাজের কৌশল হিসেবে বেপর্দা হলে, মহিলাদের সাথে উঠাবসা করলে, ইফতার করলে, গাড়ীতে চড়লে, মঞ্চে বসলে, ঘন ঘন অফিসে দেখা করলে কোনই দোষ নেই। কারণ তা যে ইসলামের জন্যই করা হচ্ছে। মূলতঃ শয়তানের ওয়াছওয়াছার প্রাবল্যে বোধহীন হওয়ার প্রেক্ষিতে তারা তখন বুঝতে অক্ষম হয় যে, তারা বেপর্দা হওয়াকে যে ইসলামের কাজের কৌশল বলে মনে করছে তা আল্লাহ্ পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইসলাম নয়। কারণ আল্লাহ্ পাক সূরা আহযাবে, সূরা নিছায় স্পষ্টভাবে পর্দা ফরয ঘোষণা করেছেন, চৌদ্দজনের সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর হাদীছ শরীফেও শক্তভাবে বেপর্দার বিরুদ্ধে বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সে সীমা যারা অতিক্রম করে তারা আল্লাহ্ পাক এর ইসলাম করেনা, তারা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী মানে না। বরং তারা তাদের নিজেদের নফছের ইসলাম করে, নফছকেই তাদের রব মানে; তারা ইবলিসকেই তাদের নবী মানে।
তাই তাদের ছূরত বা পরিচিতি যত বড়ই হোক না কেন? তাদের পরিণতি স্পষ্টই জাহান্নাম। কারণ, বেহেশতের দরজায় স্পষ্টই লেখা আছে, দাইয়্যূছ কখনো বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
এভাবেই বিরোধীদের হাক্বীক্বত প্রকাশ পাবে ॥ আর আল বাইয়্যিনাত-এর যথার্থতা প্রমাণিত হবে
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, না জনসংখ্যা সংকোচন ॥ ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণার অন্তরালে সত্য কথা