ফ্রান্সের পর এবার ভারত। এবারের কাহিনীও স্কুল ছাত্রীর মাথায় কাপড় দেয়া নিয়ে। তবে ফ্রান্সে মুসলিম বালিকার মাথায় কাপড় দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার চেয়ে ভারতে নিষেধাজ্ঞা এদেশবাসী মুসলমানদের তুলনামূলক বেশী মাত্রায় ক্ষুব্ধ করে। এ ক্ষুব্ধতার কারণও রয়েছে। প্রথমতঃ বাংলাদেশে হিন্দুরা এদেশে যে রকম স্বতঃফূর্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে ও মুসলমানদের পাশাপাশি নিবিঘœ জীবনযাপন করে একই সীমান্ত রেখার উপরে ভারতে মুসলমানদের সাথে সে তুলনায় চরম বিদ্বেষমূলক আচরণ করা হয়। দ্বিতীয়তঃ ফ্রান্স ইউরোপীয় রাষ্ট্র, মুসলিম অধ্যুষিত যে কোন রাষ্ট্র থেকে তার ভৌগলিক অবস্থান অনেক দূরে। সেহেতু মুসলিম মন-মানসিকতা ও আদর্শবোধ সম্পর্কে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের জন্য জ্ঞানশুন্যতার অবকাশ কোথায়? যেক্ষেত্রে প্রায় হাজার বছরের অধিককাল ধরে ভারতে মুসলমানগণ শৌর্য-বীর্যের সাথে বসবাস করে আসছে। মুসলমানদের কৃষ্টি-কালচার, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি তথা আমলের কথা ভারতীয়রা সম্যকভাবে অবগত; কিন্তু তারপরেও ভারতীয় আইন বিভাগ মুসলমানদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
সম্প্রতিঃ ভারতের মুম্বাই হাইকোর্ঁ এক রায়ে বিবৃত করেছে- মুসলমান ছাত্রীদের স্কুলে মাথায় হিজাব পরিধান থেকে বিরত থাকা তাদের মৌলিক অধিকার কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের বরখেলাপ নয়। ক্ষুব্ধ একজন মুসলমান ছাত্রীর একটি আবেদন নাকচ করে দিয়ে বিচারপতি আর.এস লোধা ও ডিবি ভোসলে সম্প্রতি এক রায়ে বলেছেন, কোন বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মুসলমান ছাত্রীদের মাথায় হিজাব পরিধান না করলে পবিত্র কুরআন শরীফের নির্দেশিত বিধানের বরখেলাপ হয়েছে তা কোন ভাবেই বলা যাবেনা। মুম্বাইয়ের শহরতলী কুবলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডার্ড সিক্স ক্লাসের ছাত্রী আবিদা ফাতেমা তার পিতার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালের একটি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পিটিশন দায়ের করে। আবিদাকে হিজাব পরিধান করে স্কুলে আসতে প্রিন্সিপাল নিষেধ করেন। বিচারপতিদ্বয় তাদের রায়ে বলেন, ইসলাম ধর্মে একান্তভাবে মেয়েদের স্কুলে অধ্যায়নরত একজন ছাত্রীর মাথায় হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক নয়। প্রিন্সিপালের নির্দেশকে বহাল রেখে বিচারকদ্বয় বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইসলাম ধর্মের আদর্শ ও সমাধানের মর্মবাণীর ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ নয়। আবেদনে বলা হয়, পবিত্র কুরআন শরীফে একজন বালিকাকে ৯ বছর বয়স হলে হিজাব পরিধানের বিধান রাখা হয়েছে, তাই, আবিদা ফাতেমা ২০০১ সালের জুন থেকে হিজাব পরিধান শুরু করে। কিন্তু গত ২০০১ সালের নভেম্বরে বিদ্যালয় থেকে তাকে এই হিজাব পরিধানে বিরত থাকার নির্দেশ জারি করা হয়। উল্লেখ্য, পর্দা সম্পর্কে ইসলামের কি বিধান সে সম্পর্কে কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হিফাযত করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে।” দ্রষ্টব্য, মাথায় ওড়না সম্পর্কে কুরআন শরীফে এরূপ স্পষ্ট বাণী থাকার পরও ভারতীয় হাইকোর্ঁ বলেছে যে, ‘মাথায় ওড়না না প্যাঁচানো ইসলামী রীতির খিলাফ নয়।’
বলাবাহুল্য, ভারতীয় হাইকোর্টের এই রায়ের প্রেক্ষিতে তুলকালাম কান্ড হতে পারত। বিরাঁ ইসলামী আন্দোলন হতে পারত। কিন্তু না, এদেশের মৌসুমী, ব্যবসায়ী তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীরা এ বিষয়ে বড়ই নীরব। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, গত ২৭ আগস্ট ভারতের হাইকোর্টের এই রায় বাংলাদেশী জাতীয় দৈনিকে বের হয়। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকায় অন্য একটি বিশেষ রিপোর্ঁ পত্রস্থ হয়।
তথাকথিত ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কথিত পীর মোসলেহউদ্দীনের ইন্তিকালের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সরকার দলীয় নেত্রীর সাথে মোসলেহউদ্দীন ছাহেবের তিনপুত্র ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা-কর্মীর সাথে সাক্ষাতের ঘটনা। বিরোধী দলীয় নেত্রী একাই একটি সোফায় বসেছিলেন এবং মৃত পীর ছাহেবের গুণধর পুত্র তথা ….. ঐক্যজোটের নেতা-কর্মীরা সবাই এক সাথে দাঁড়িয়ে নেত্রীর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে তাকিয়ে আলাপরত ছিলেন। মাঝখানে শাশ্বত ইসলামে বিবৃত পর্দার কোন ব্যবস্থা ছিলোনা। দ্বিতীয়ক্ষেত্রে বিষয়টি আরেকটু সক্রিয়। সেক্ষেত্রে এই নেতা-কর্মীরা নিজেরাই গিয়েছিলেন সরকার দলীয় নেত্রীর সাথে দেখা করতে এবং কোনরূপ পর্দার বালাই ছাড়াই তারা এই আলাপন করেছেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় ইসলামী ঐক্যজোটের অপর-কোন নেতা-কর্মী অথবা নামধারী কোন ইসলামী দলের মাঝেই কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি অর্থাৎ পর্দাপালন তাদের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচী থেকে এখন তিরোহিত হয়েছে। কাজেই বেপর্দার বিরুদ্ধে তাদের কোনই আওয়াজ নেই। বরং তারা নিজেরাই এখন বে-পর্দার মডেল হচ্ছে। সুতরাং এসব নেতাকর্মী, এসব নামধারী ইসলামী দল তাদের তথাকথিত ইসলামী কর্মসূচী দ্বারা কি করে ইসলামের প্রতিনিধি হতে পারে? তাদের দ্বারা কি করে ইসলামের কাজ আশা করা যেতে পারে। ভারতের মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয় ও তাদের রায়ের প্রতি প্রতিবাদ জানানোর পূর্বে কি এসব নামধারী ইসলামী ব্যবসায়ী, ইসলামী নেতা-কর্মীরাই অনেক বেশী ধিক্কারের পাত্র বলে গণ্য হয় না? মূলতঃ ইসলামের পরিভাষায় এদেরকে বলা হয়, উলামায়ে ‘ছূ’। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাই বলেছেন, “কিছুক্ষণ সময় ব্যবসায়ী, নামধারী আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’দের দোষত্রুটি তুলে ধরা ষাঁ বছরের বে-রিয়া নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
প্রসঙ্গ: গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার-৮
এম.পি, মন্ত্রী হওয়াই যে উহাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির মূললক্ষ্য তাহা এখন সকলেই সমঝিয়াছে