বিশ্বকাপ ফুটবল ও প্রাসঙ্গিক কথা

সংখ্যা: ১০৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

গবেষণা কেন্দ্র, মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে বিবৃত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, এক মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবলে আনুমানিক প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওয়ার্কিং আওয়ার নষ্ট হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, হতদরিদ্রের এ দেশের ২০০ কোটি টাকা অনেক টাকা। যার সদ্ব্যবহারে দেশবাসী অনেক উপকৃত হতে পারত। কিন্তু সরকার, আমলা, বুদ্ধিজীবী তথা ইসলামী রাজনৈতিক নেতা, ওয়ায়েজ, তথাকথিত পীর ছাহেব, ইমাম ছাহেব, মুফতী ছাহেব, মুফাস্সির ছাহেব, মাওলানা ছাহেব, খতীব ছাহেব কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।

অথচ এই বিশ্বকাপ ফুটবল এদেশে হুযুগে মাতাল বাঙ্গালীকে যে কি রকম মাতোয়ারা করেছিল এবং এর পরিণতি যে ক্ষেত্র বিশেষে কত ভয়াবহ হয়েছিল কয়েকটি উদাহরণই এক্ষেত্রে যথেষ্ট- উদ্বোধনের দিনেই চট্টগ্রামে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়াতে গিয়ে এক যুবক বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মারা যায়। (জনকক্ত, যুগান্তর, ইনকিলাব ১ জুন/০২)

 আর্জেন্টিনার পরাজয় সইতে না পেরে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে লিটন নামে এক যুবক। এসময় তার গায়ে আর্জেন্টিনার পতাকা জড়ানো ছিল। (আজকের কাগজ ৮ জুন/০২)

অনুরূপ ঢাকায় এক হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে(বেলডাঙ্গা, নাচোল, চাঁপাই নবাবাগঞ্জ-এর) লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তি উত্তেজনায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। (আজকের কাগজ, যুগান্তর ১৫/৬/০২) যশোরের অভয়নগরে, পড়াশুনা বন্ধ করে শুধু খেলা দেখাতে মা বকুনি দেয়ায় আত্মহত্যা করে মেয়ে। (ইত্তেফাক ৮/৬/০২)

 এদিকে ঢাকা লালমাটিয়া হাইস্কুলের এক মেয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। (ইনকিলাব ১৪/০৬/০২)।  ইনকিলাবে ১৫/৬/০২ ঈসায়ীতে ব্যক্ত করা হয় কোরীয় অন্ধ ফুটবল প্রেমিক শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে। কোরীয় দলের দ্বাদশ খেলোয়াড় হওয়ার উদ্দেশ্যে সে শরীরে আগুন দেয়। মরে ভূত হয়ে দ্বাদশ খেলোয়াড় হয়ে ভাল খেলার উদ্দেশ্যেই সে মরে যায়। অপরদিকে বিশ্বকাপে জার্মানী হেরে যাওয়ায় বোয়ালখালীতে যুবক বিষপানে আত্মহত্যা করে।

 (আজকের কাগজ ২ জুলাই/২০০২) “ভোরের কাগজ” ২রা জুন-এ বলা হয়, বিশ্বকাপ ফুটবল উম্মাদনার শিকার হয়ে টিভিতে খেলা দেখার উদ্দেশ্যে দরিদ্র এক রিকশা চালক তার একমাত্র আয়ের উৎস রিকশা বিক্রি করে টিভি ক্রয় করে। “মানবজমিন” ৩১শে মে বলা হয়, বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে (২৯শে মে/ ০২) রংপুরে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দুগ্রুপের সংঘাতে প্রায় ৩০ জন আহত হয়। উল্লেখ্য, এই সংঘর্ষ শুধু বাইরেই নয়, পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে যে, বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে এ সংঘর্ষ বেধেছে পরিবারেও। ভেঙ্গেছে অনেক সংসার। পত্রিকায় প্রকাশ, স্ত্রী আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে হওয়ায়, স্বামী পক্ষে হওয়ায়, আর্জেন্টিনা হেরে গেলে স্বামী ক্রোধে উম্মাদ হয়ে খোদ স্ত্রীকেই তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। এধরণের বিকৃত রুচির খবর আছে আরো ঢের।  “প্রথম আলো” ২রা জুন খবর পাওয়া গেছে, বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচের আগের দিন কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প এলাকায় ২০০ তরুণ একযোগে মাথা ন্যাড়া করেছে।

পাঠক! বিশ্বকাপের এই হুযুগ অতিশয় আশ্চর্য হলেও মূলতঃ একদিনে এই ক্রেজ তৈরী হয়নি। বিগত শতাব্দীর প্রথম থেকেই এ খেলা এ দেশে চালু হয়ে উঠে। এমনকি গ্রাম পর্যায়ে জাম্বুরা, মিল্কভিটার প্যাকেট ইত্যাদিতে কাপড় ভরেও এ খেলার অনুশীলন হত। বিস্তর মুরুব্বী এতে পৃষ্ঠপোষকতা করত। নামধারী আলিম সমাজরা তাতে দোষের কিছু পেতনা বরং পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মাঝেও এই খেলা সংক্রমিত হয়। যে কারণে আজকে অনেক মাদ্রাসায় ওস্তাদের সক্রিয় ভূমিকায়ই এ খেলার চল আছে। আর আলিম নামধারীদের এরূপ সমর্থন তথা সহযোগিতাই সাধারণ মানুষকে আজকের উম্মাতাল পর্যায়ে এনেছে। অথচ এ খেলা সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক স্পষ্টভাষায় বলেছেন, “আমি নভোমন্ডল ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি, আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝেনা।” (সূরা দুখান/৩৮, ৩৯)

“আকাশ পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত।” (সূরা আম্বিয়া/ ১৬, ১৭)

আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন, “আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। কিয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব, পরম অবজ্ঞার সাথে ওদের খেলাধুলা উপেক্ষা করুন।” (সূরা হিজর/৮৫)

কাজেই এরপরেও যখন নামধারী আলিম সমাজ এ ব্যাপারে নীরব থাকে, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা করে তখন তারা মিছদাক হয় ঐ হাদীস শরীফের- “যে কেউ একটি কাজের সূচনা করল, যতজন লোক ঐ কাজের সাথে জড়িত হল তাদের সকলের বদী যে দেখিয়েছে তার উপরই বর্তাবে।” পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে কেউ বদ কাজ করলে, পশ্চিম প্রান্ত থেকে সমর্থন করল সেও সমান বদী হবে।

হাদীস শরীফের ভাষায় তাই এসব নামধারী আলিমদের মূলতঃ বদী আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ পাক এদের হাত হতে উম্মাহকে হিফাজত করুন। (আমীন)

-মুহম্মদ আব্দুর রউফ, ঢাকা।

“ফজলুর জিহালতীর জবাব” সত্যিই রাজারবাগীদের নিকট ‘দ্বীনে রেযাখানী’ নিরাপদ নয় সংশোধনী না সূক্ষ্ম প্রতারণা?

“ভারতে মুসলমানদের উপর হিন্দুদের বর্বরতা ও পৈশাচিক আক্রমণ; প্রাচীন কাল হতেই হিন্দুদের এই নির্মম প্রবণতা” ঐতিহাসিক দলীল সম্বলিত একটি অনুসন্ধানী রচনা-৩

শুধু আজকের প্রেক্ষাপটে নয়, অতীত ইতিহাস হতেই ইহুদী-খ্রীষ্টানরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু মুসলিম সন্ত্রাসবাদ নয়, মার্কিন হামলার পিছনে কি ইহুদী-খ্রীষ্টানরাই দায়ী নয়? -১০

ইল্মে আক্বলিয়ার দৈন্য এবং বিলায়েতের অনুপস্থিতির কারণে প্রকৃত আলিমে দ্বীন তৈরী হচ্ছে না

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার- ৬