মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বশান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। মূলতঃ যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকি ইসলাম ও সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মুসলমানদের দেশ, সম্পদ, স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে। সরাসরি ইসলামের উপর, মুসলমানদের উপর আক্রমণ করবে এ সাহস মার্কিন ইহুদী-খ্রীষ্টানদের নেই। কিন্তু আক্রমণ করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। অথচ বাইরে তাদের ভদ্র খোলস। এই খোলস আগলে রাখার জন্যেই তাদের দরকার একটু ছূতোর। আর সে ছূতোরও অভাব হয়না তাদের। কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের কর্নধার। মুনাফিকরা নিজেরাই এ ছূতো হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদেরকে উপলক্ষ্য করে পুরো দেশ ছারখার করে দিচ্ছে মার্কিনী ইহুদীরা। কিন্তু তাদের কিছুই হচ্ছেনা। যে উসামাকে আর উমরকে উপলক্ষ্য করে গোাঁ আফগানিস্তানকে তামা বানিয়ে ফেলা হয়, আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষকে বিপর্যস্থ করা হলো কিন্তু নটের গুরু উসামা আর উমরের কিছুই হলোনা। এখন একইভাবে সাদ্দামকে উপলক্ষ্য করে আমেরিকা ইরাক আক্রমণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, উসামার মত সাদ্দামও সি.আই.এ-এর চর। সেই মূলতঃ আমেরিকাকে আক্রমণের সুযোগ করে দিচ্ছে। যদিও বাইরে সাদ্দামের হম্বিতম্বি সাধারণ মুসলমানকে অনুপ্রাণিত করে আসলে এটাও খোলস মাত্র। যা মার্কিন ইহুদীদের সূক্ষ্ম ও গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অতীব দরকার। আর ওরা যে কত সুদূর প্রসারী ও গভীর ষড়যন্ত্র করে বাইরে দৃশ্যপট অন্য রকম রেখে ওদের পরিকল্পনা সফল করে তা ওদের অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে। এ ধারাবাহিকতায় ওদের ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে লিখা হচ্ছিলো। এ সংখ্যায় পরবর্তী বক্তব্য দেয়া হলো-
১৯৪৭ সালের ২৮শে এপ্রিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন বসে। ফিলিস্তিনের অবস্থা তদন্ত করে ঐ বছরই সেপ্টেম্বর নাগাদ জাতিসংঘের নিকট রিপোর্ঁ পেশ করার জন্য উক্ত অধিবেশনে এগার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটির সদস্য ছিল অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, চেকোশ্লোভাকিয়া, গুয়েতেমালা, ভারত, ইরান, নেদারল্যান্ড, পেরু, সুইডেন, উরুগুয়ে ও যুগোশ্লাভিয়া। ইহুদী সম্প্রদায় ঐ সময় চীৎকার করে বলতে থাকে যে, জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্তই করুক না কেন, ফিলিস্তিনে ইহুদীদের স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাবেই তারা সম্মত হবে না। যথাসময়ে কমিটি রিপোর্ঁ প্রদান করে। রিপোর্টে কমিটির সদস্যগণ দুু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দু’ধরণের সুপারিশ করেন। কানাডা, চেকোশ্লোভাকিয়া, পেরু, গুয়েতেমালা, নেদারল্যাণ্ড ও উরুগুয়ে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র কায়িম করার প্রস্তাব দেয়। অন্যদিকে ভারত, যুগোশ্লাভিয়া ও ইরান একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের সুপারিশ করে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ উভয় প্রস্তাবকে একটি এড-হক কমিটির নিকট পাঠিয়ে দেয়। এ কমিটিতেও গুয়েতেমালা ও উরুগুয়ে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার জন্য জোরদার ওকালতি শুরু করে। (পরবর্তীকালে এদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য বর্র্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রে গুয়েতেমালা ও উরুগুয়ের নামে অনেক রাস্তা-ঘাটের নামকরণ করা হয়েছে) পাকিস্তানের প্রতিনিধি এ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। তুমুল বিতর্কের পর ভোঁ গ্রহণ করা হয় এবং ২৯-১৩ ভোটে ফিলিস্তিন বিভক্তির প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। রাশিয়া ও আমেরিকা উভয়েই বিভাগের পক্ষে ভোঁ দেয়। কিন্তু সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে প্রস্তাবটি পাশ না হলে তা কার্যকরী হয় না বিধায় ১৯৪৭ সালের ২৬শে নভেম্বর তারিখে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি আবার বিবেচনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ তারিখ পর্যন্ত পরিস্থিতি ইহুদীদের অনুকূলে ছিল না। তাই বৃহৎ শক্তিগুলো নানা প্রকার টালবাহানা করে ভোঁ গ্রহণে বিলম্ব করতে থাকে। অন্যদিকে ইহুদী নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথকভাবে জাতিসংঘ সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি অনুকুলে আনার জন্য প্রবল চেষ্টা শুরু করে দেয়। আমেরিকাও ঐ সময় ইহুদীদের পক্ষে ভোঁদানের জন্য সদস্য দেশগুলোর উপর চাপ দিতে থাকে। ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত পরিস্থিতি ইহুদীদের অনকূলে এসে যায় এবং ঐ দিনই ৩৩-১৩ ভোটে ফিলিস্তিন বিভাগের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১০টি দেশ ভোঁ দানে বিরত থাকে এবং একটি দেশ পরিষদে অনুপস্থিত ছিল। প্রস্তাব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই পরিষদে প্রচণ্ড হাংগামা শুরু হয়ে যায়। আরব রাষ্ট্রগুলো এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে স্পষ্টতঃ অস্বীকৃতি জানায়। পরস্পর বিবাদমান রাশিয়া ও আমেরিকা ফিলিস্তিন বিভাগ প্রশ্নে সর্বপ্রথম একমত হয়।
এ সিদ্ধান্তের পর ফিলিস্তিনে ইহুদীদের অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে যায়! ইহুদী সন্ত্রাসবাদী দলগুলো জোর-জবরদস্তি করে মুসলমানদের বাড়ী-ঘর ও ধন-সম্পত্তি দখল করে নেয়। জাতিসংঘ এ প্রস্তাব গ্রহণের পর মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে ১৭ হাজার মুসলমান নিহত হয়। সমস্ত মুসলিম জাহান এ অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে। তাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আবার ’বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ২০শে এপ্রিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মার্কিন প্রতিনিধি ফিলিস্তিন বিভাগের বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে ফিলিস্তিনকে সামরিকভাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আনার প্রস্তাব পেশ করেন। এরপর বেশ কিছু দিন যাবৎ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিষয়টি সম্পর্কে আলাপ আলোচনার প্রহসন চলতে থাকে। ১৪ই মে রাত বারোাঁয় ফিলিস্তিনে বৃটেনের অছিগিরি শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল। তাই ঐ তারিখের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। এদিকে ইহুদী নেতা ওয়াইজম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিঃ ট্রু ম্যানের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করে একটা নয়া ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
নির্দিষ্ট সময় (১৪ই মে রাত ১২টায়) ফিলিস্তিনে বৃটেনের অছিগিরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ওয়াশিংটনের সময় মুতাবিক তখন সকাল ৬টা। এক মিনিট পরই ইহুদী নেতা বেন-গুরিয়ান স্বাধীন ইসরাঈল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করে এবং এর মাত্র দশ মিনিট পর ওয়াশিংটন সময় সকাল ৬টা ১১ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দান করে। ঠিক ঐ সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মার্কিন প্রতিনিধি কর্তৃক ফিলিস্তিনকে সাময়িকভাবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আনার প্রস্তাবটি সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। এদিকে শান্তি ও ন্যায়নীতির অপর দাবীদার রাশিয়া ও আমেরিকার পর পরই ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দান করে। এভাবে পৃথিবীতে শান্তি ও ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠার দাবীদার দুটি বৃহৎ শক্তি আরব মুসলিমদের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসরাঈল রাষ্ট্রকে মুসলিম জাহানের বুকে বিষাক্ত ছুরির মত বসিয়ে দেয়।
-সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর, ঢাকা।
প্রসঙ্গ: গণতন্ত্র; এখনই চরম সময়, বিষয়টি ভাবিবার-৮
প্রসঙ্গঃ ভারতীয় মুম্বাই হাইকোর্টের রায় এবং স্বদেশের নামধারী আলিম সমাজ
এম.পি, মন্ত্রী হওয়াই যে উহাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির মূললক্ষ্য তাহা এখন সকলেই সমঝিয়াছে