পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি নারীদের উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা জাহিলিয়াতের যুগের ন্যায় নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলো না।”
পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ ছাড়াও পবিত্র সূরা নূর শরীফ, পবিত্র সূরা আন নিসা শরীফ ও পবিত্র সূরা মুমতাহিন শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি নারীদের সরাসরি ও শক্তভাবে পর্দার কথা বলেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরফ উনাদের আলোকে মুসলমান নারীরা তাই শরীয়তী পর্দা পালন করেন। উনাদের সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখেন, বোরকা পরেন। কিন্তু এ বোরকা তথা পর্দা তথাকথিত প্রগতিবাদী, নারীবাদীদের চক্ষুশূল। পর্দাকে নারী স্বাধীনতা ও নারী মর্যাদার হন্তারক বলে প্রচার করে তারা। নারী স্বাধীনতার দেশ বলতে তারা ইউরোপ-আমেরিকাকে বোঝায়। কিন্তু সেখানে প্রতি ছয় মিনিটে একজন নারী সম্ভ্রম হারায়। এমনকি আমেরিকায় ঊর্ধ্বতন নারী কর্মকর্তারাও পুরুষ সৈন্য দ্বারা সম্ভ্রম লুণ্ঠনের শিকার হয়। অর্থাৎ নারীর উচ্চশিক্ষা তথা উচ্চ সামরিক শিক্ষাও নারীর মর্যাদা বজায় রাখতে সহায়ক নয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ঘটনাপ্রবাহে স্বীকৃত হয়েছে যে- নারীর স্বল্প বসনই তার মর্যাদা হরণ তথা সম্ভ্রম লুণ্ঠনের মূল কারণ। এক্ষেত্রে তাই সম্ভ্রম লুণ্ঠন থেকে রক্ষা পেতে নারীকে স্বল্প বসন বা সংক্ষিপ্ত পোশাকের পরিবর্তে সাবলীল ও শালীন পোশাক পরতে আহ্বান করা হয়েছে। যা মূলত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বর্ণিত পর্দার ব্যবস্থাকেই সম্মানের সাথে গ্রহণ করা হয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।
নারীদের উগ্র পোশাক সম্ভ্রমহরণে উৎসাহিত করে। এমনটা মনে করে বিবস্ত্রপ্রায় তথা সাম্বা নাচের দেশ ব্রাজিলের বেশির ভাগ মানুষ। যে ব্রাজিল স্বল্প পোশাকে নারীদের সাম্বা নাচের দেশ, যেখানে সমুদ্র সৈকতে বিকিনি পরা নারীদের প্রাধান্য, নারীরা শরীর দেখাতে ভালোবাসে- সেখানকার মানুষের এই অনুভূতির কথা নতুন। নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে। এতে বলা হয়, ওই জরিপ পরিচালনা করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্স (আইপিইএ)। এতে দেখা গেছে, ব্রাজিলের শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ এ বিষয়ে একমত যে, নারীরা শরীর দেখানো পোশাক পরে সম্ভ্রমহরণকে উৎসাহিত করছে। এই জরিপে শতকরা ৫৮ ভাগ মানুষ বলেছে, যদি নারীরা কিভাবে আচরণ করতে হবে তা জানতো তাহলে অনেক কম সম্ভ্রমহরণ হতো। ২০১৩ সালের মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ৩৮১০ জন নারী ও পুরুষের উপর এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই নারী। ব্রাজিলের পত্রিকা ফোলহা ডি এস. পাউলো’তে জরিপের এ ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে, যৌন সহিংসতার জন্য বেশির ভাগ মানুষ দায়ী করেছে নারীদেরকে। তারা বলছে, নারীরা প্রলুব্ধ করার মতো পোশাক পরে। (নাঊযুবিল্লাহ)
আফ্রিকার ছোট্ট রাজতান্ত্রিক দেশ সোয়াজিল্যান্ডের রাজা আইন করে দেশটিতে নারীদের জন্য মিনি-স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ করেছে। নারীদের পরনের মিনি-স্কার্ট এবং পেট বা উরু উন্মুক্ত থাকে এমন জিন্স ‘সম্ভ্রমহরণকে উৎসাহিত করে’ বলে নারীদের নিরাপদ করতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মিনি-স্কার্ট পরা থেকে বিরত রাখতে দেশটির পুলিশ ঔপনিবেশিক আমলের প্রচলিত একটি আইন প্রয়োগ করছে। ১৮৮৯ সালের ওই আইনে বলা আছে- কোনো নারী জনসম্মুখে ‘অনৈতিক’ পোশাক পরিধান করতে পারবে না। বহুদিন ধরে দেশটিতে ওই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। কিন্তু সম্প্রতি আফ্রিকার একমাত্র পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মোনাজিতে নারীদের সমঅধিকার দাবি করে কিছু নারী মিনি-স্কার্ট পরে একটি বিক্ষোভে অংশ নেয়। আর তারপরই দেশটির পুলিশ নারীদের মিনি-স্কার্ট পরার ব্যাপারে বহু পুরনো এ আইনটি মনে করিয়ে দিয়েছে। কোনো নারী যদি মিনিস্কার্ট পরে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে ‘অনৈতিকতার দোষে’ গ্রেপ্তার করা হবে। আর সাজা হিসেবে ১০ ডলার জরিমানা অথবা ৬ মাসের জেল হতে পারে। পুলিশের মুখপাত্র ওয়েনডি হেটা খোলামেলা পোশাক পরার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, সম্ভ্রমহরণসহ নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা কমাতে পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। হেটা আরো বলেছে, ‘আমরা চাই না- আমাদের মেয়েরা নির্যাতিত হোক। তবে তাদের অবশ্যই গ্রহণযোগ্য আচরণ করতে হবে।’ আর সম্ভ্রমহরণে উৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখে বলেই আঁটোসাঁটো মিনি-স্কার্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে সে উল্লেখ করেছে। সে আরো বলেছে, কিছু স্বল্প বসনা মেয়ে অযথাই পুরুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। সে এটা না করার পরামর্শও দেয়। আর আইন ভঙ্গ করলে তাদের ‘অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে’ বলে জানায় সোয়াজিল্যান্ড পুলিশের এই মুখপাত্র।
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য রিচার্ড গ্রাহাম বলেছে, মিনি-স্কার্ট ও হাইহিল জুতা পরা নারীদের সম্ভ্রমহরণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। মিনি-স্কার্ট ও হাইহিল জুতা ব্যবহারে অভ্যস্ত নারীদের উদ্দেশ্য করে গ্রাহাম বলেছে, ‘তোমরা যদি মাতাল হও এবং ওই ধরনের পোশাক-আশাকে থাকো, তাহলে পরিস্থিতি এড়াবে কী করে? গ্লস্টারের ওই আইনপ্রণেতা সম্প্রতি দ্য সিটিজেন নামের স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করে।
গ্রেট ব্রিটেনের এক স্কুলে মেয়ে শিশুদের ছোট স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ করা হলো। ২০১৩ সাল থেকে এই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। স্কুলটির নাম ওরস্টারশায়ার কাউন্টির রেডিচ শহরে ওয়াকউড চার্চ অব ইংল্যান্ড মিডল। একই সঙ্গে ২০১৪ সাল বছর থেকে স্কার্টের উপর ব্লাউজের মতো পোশাক পরাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- স্কার্টে মেয়েদের দৃষ্টিকটু লাগে। তাছাড়া নির্দেশে আরো বলা হয়েছে যাদের বয়স ৯ থেকে ১৩ বছর তাদের এখন থেকে ট্রাউজার পরতে হবে। সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডেভিড ডাবটফায়ার বলেছে, ‘বড় মেয়েদের ছোট স্কার্ট পরার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল। তাই এ নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল। বড় বড় ছাত্রীরা ছোট স্কার্ট পরে ক্লাসে বসে, তখন তা দেখতে খুব দৃষ্টিকটু ও অশালীন লাগে। তাই আমরা স্কুলের নির্ধারিত পোশাক সহজ করতে চাই।’
শ্রীলঙ্কায় মিনি স্কার্ট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ আসার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী নিরমল রুবাসিঙ্গে। তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, শুধুমাত্র বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। রুবাসিঙ্গে কারো নাম উল্লেখ না করে বলেছে, সমাজের কয়েকটি গ্রুপের প্রতিনিধি জনসমক্ষে মিনি-স্কার্টের ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার মিনি-স্কার্ট নিষিদ্ধ এবং ড্রেস কোড ঠিক করার জন্য একটি কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে বলে দেশটির পত্র-পত্রিকায় যে খবর প্রকাশ হয়েছে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সে এ সব কথা বলেছে। এদিকে সমাজে বিশুদ্ধ নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে মিনি-স্কার্ট নিষিদ্ধ হবে বলেছে শ্রীলঙ্কার লাকবিমা প্রত্রিকা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাজা পাকসের সরকার সম্প্রতি সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা নারীদের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড রাস্তা-ঘাট থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
অভিনেতা থেকে রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হওয়া চিরঞ্জিত চক্রবর্তী সে নারী টিজিং থেকে নিরাপদ থাকতে নারীদের পোশাক-আশাকে শালীনতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। নারীদের উগ্র ও উত্তেজক পোশাক পরিধানও টিজিং বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূলের টিকিটে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়া এ তৃণমূল সাংসদ।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে সে আরো বলেছে, ‘নারী টিজিং নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরেই এগুলো চলছে। নারী টিজিং বৃদ্ধির জন্য নারীদের শর্টস্কার্ট ধরনের উত্তেজক পোশাক পরিধানও অনেকাংশে দায়ী। এগুলো কম বয়সী তরুণদের প্রলুব্ধ করে।’ পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের একটি থানায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় চিরঞ্জিত। সে বলেছে, ‘এ ধরনের কর্মকা- সমাজ থেকে দূর করা উচিত। একই সঙ্গে নারীদেরও পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে সংযত হওয়া উচিত।’
চীনের বেইজিংয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারী টিজিংয়ের ঘটনা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বেইজিং পুলিশ মেয়েদের বাস অথবা সাবওয়েতে চলাকালীন উগ্র পোশাক পরে যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। সরকারি দৈনিক চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিং পুলিশ এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অথরিটি যৌথভাবে মেয়েদের জন্য কিছু দিক-নির্দেশনা প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করার সময় মেয়েদের মিনি-স্কার্টের মতো স্বল্প বসনের যে কোনো উগ্র পোশাক পরিহার করা উচিত। এতে আরো বলা হয়, অসঙ্গত ছবি তোলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হতে মেয়েদের উচিত বাসের উপরের তলায় বসে না যেয়ে নিচের তলায় দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করা। এবং তাদের উচিত ব্যাগ, ম্যাগাজিন ও নিউজপেপার দিয়ে নিজেদের শরীর ঢেকে রাখা। ইদানীং বাস ও সাবওয়েতে মোবাইল দিয়ে লুকিয়ে ছবি তোলা ও জোর করে জড়িয়ে ধরার প্রচুর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এ কারণেই মূলত পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে নারী টিজিং রোধ করতে নতুন এ দিক-নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।
-আশরাফে মাহবূবে রব্বানী।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা